আমেরিকার সিয়াটলে সোয়ানার বিজয় প্রসঙ্গ

(llcobangla.org)

সম্প্রতি আমেরিকার সিয়াটলে নগর কাউন্সিলের নির্বাচনে একটি সিটে সমাজতান্ত্রিক  গ্রুপ সমর্থক প্রার্থী  সোয়ানা বিজয় লাভ করেছেন। সিয়াটলের পি আই লিখেছে-

“ সিয়াটল কাউন্সিলের নির্বাচনে ক্যাসমা সোয়ানা সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছেন। তিনি চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতাসীন রিচার্ড কনলিন কে পরাজিত করেছেন।

এক বছর আগে থেকে সোয়ানা খুবই ক্ষমতাধর ড্যমোক্রেট, আইন সভার সদস্য ও স্পিকার মি, ফ্র্যাঙ্ক ছপ এর পক্ষে কাজ করছিলেন। বিলিয়ন ডলারের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং লাভ জনক কোম্পানী গুলোর বিশাল অংকের কর মওকুফ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এ ছাড়া ও বেশ কয়েক জন ক্ষমতাশালী সিনেটরের আশীর্বাদে তিনি বিজয় লাভ করেছেন।”
আমারিকার কয়েকজন সোস্যাল ড্যেমোক্রেট সোয়ানার এই বিজয়কে একটি বিরাট ঘটনা হিসাবে দেখছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল – এই জয় আসল বিপ্লবের জন্য কোন ভুমিকাই রাখতে পারবে না । চলমান এই সকল আলোচনা প্রকৃত বিপ্লবকে পথ ভ্রান্ত করতে পারে ।
প্রথমত – সোয়ানার রাজনৈতিক দল “ সমাজতান্ত্রিক বিকল্প” ড্যামোক্রেটিক পার্টির বাম ঘরনার বাইরে নয়। একই ভাবে ফেডারেল পর্যায়ে আর এক জন সমাজতন্ত্রী কংগ্রেসম্যান বার্নি সেন্ডারস স্বক্রিয়ভাবে ড্যামোক্রেটিক পার্টিতে কাজ করছেন। এই রাজনৈতিক নির্বাচন কোন বিপ্লবীকে নির্বাচিত করেনি বা কোন কমিউনিস্টকে ও ভোট দেয়নি। এই ধরনের রাজনীতি মুলত প্রথম বিশ্ববাদি বামপন্থার রাজনীতিরই বহি প্রকাশ । এটা হোল সেই রাজনীতি যা প্রচলিত সমাজ কাঠামোর সংস্কার করতে চায় কিন্তু সত্যিকার কোন পরিবর্তন চায় না । ইহা পুরাতন রাজনৈতিক শক্তির পরিবর্তে নতুন রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ চায় না । নির্বাচনী রাজনীতি বিপ্লবী পথ নয়। ইহার মাধ্যমে বড়জোড় কিছু ক্ষেত্রে  সংশোধন হতে পারে- অন্য কিছু নয়। পক্ষান্তরে, বিপ্লব হোল- সকল পুরাতন রাজনৈতিক শক্তির বিনাশ সাধন করে একটি নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা । বিপ্লব মানে- কেবল ক্ষমতা অর্জন  করে প্রচলিত ব্যস্থার খেদমত করা নয়। বিপ্লব মানেই হোল – এক নতুন শক্তির বিকাশ সাধন করা । লিডিং লাইট প্রতিস্টান সমুহের উদ্দেশ্য হোল- পুরাতন সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর ধংস সাধন করা । আসল কথা হোল- যারা বিপ্লবী শক্তিকে সংস্কারের কাজে নষ্ট করছেন তাঁরা ভুল পথে কাজ করছেন । ইহা প্রধানত প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিকে নতুন প্রান ও বৈচিত্র দান করবে- তা লাইফ লাইন পাবে। আরো বেশী দিন ঠিকে থাকার শক্তি পাবে।
দ্বিতীয়তঃ সোয়ানার একক বিজয় সামগ্রীক পরিসরে খুবই নগণ্য বিষয়। এই আমেরিকার রাজনীতিতে কোন গুনগত পরিবর্তন আনবে না- সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতিতে তেমন কোন ভুমিকাই রাখতে পারবে না । এই বিজয়টি ও ঘটেছে অপেক্ষাকৃত একটু বেশী উধার নগরী সিয়াটলে। এটা এমন ও নয় যে এই বিজয়ের ঢেঊ অন্যান্য শহরে ও নগরে আছড়ে পরবে। সোশ্যাল ড্যামোক্রেটরা নিজেদেরকে এক ধরনের সমাজতন্ত্রী বলে ও দাবী করে থাকেন। ইতি পুর্বে ও নানা সময়ে স্থানীয় স্কুল ও পৌরসভায় তাঁরা বিভিন্ন পদে নর্বাচিত হয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা আলাদা ভাবে উল্লেখযোগ্য কোন ভুমিকাই পালন করতে পারেন নি। তাঁরা বরং ঊদেরই মত দক্ষতার সাথে কাজ করে প্রচলিত ব্যবস্থা কে আরো বাচিয়ে রাখতে সহায়তা করে গেছেন।

তৃতীয়ত ঃ এই বিজয়কে বুর্জোয়ারা কোন গুরুত্বই দেয় না । সোয়ানা প্রথম বিশ্ববাদিদের সহায়কই হলেন- তিনি বিশ্ব দরিদ্রদের সংগ্রামের কোন অংশ নন। নন তিনি বিশ্ব সর্বহারা শ্রমিক শ্রেনীর কোন সহায়ক শক্তি।  বর্তমানে প্রথম বিশ্বে বিপ্লবের কোন উল্লেখ যোগ্য বস্তুগত পরিস্থিতি নেই । প্রথম বিশ্বের জনগণ আসলেই বিশ্ব বুর্জোয়াদের আদর্শে প্রভাবিত হয়ে গেছেন। সোশ্যাল ড্যামোক্রেটরা ও দুনিয়ার দরিদ্র মানুষের রক্ত-ঘামের উৎপাদনের ফল ভোগ করে আরাম আয়েশে দিনাতিপাত করছেন। তাঁরা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের শোষকে পরিনত হয়েছেন। প্রথম বিশ্বে বর্তমানে সত্যকার সমাজ বিপ্লবের ধরনাই অপাংতেয় হয়ে গেছে। বিপ্লবীরা এখন আর সামগ্রিক ভাবে ক্ষমতা দখল করতে চিন্তা ও করেন না । তাঁরা এখন কেঊ কেঊ গনতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছেন। যারা সেখানে ও উল্লেখ যোগ্য কোন স্থান পাচ্ছেন না । তাঁদের জীবনে রাজনৈতিক সাফল্য ও তেমন দেখছেন না । যদি ও তাঁরা মনে করছেন  তাঁদের যোগদান করা রাস্ট্রের জন্য ফলদায়ক হবে। সোয়ানার বিজয়টি ও অনেকটাই সেই ভাবে পর্যবশিত হবে।

চতুর্থত ঃ প্রথম বিশ্বের মানুষের জন্য সম্পদের ব্যবস্থা করার পরিবর্তে – প্রকৃত বিপ্লবের জন্যে শক্তি-সামর্থ নিয়োজিত করে সংঠন তৈরী, নতুন শক্তির বিকাশ, শৃঙ্খলার চর্চা, নেতৃত্ব গড়ে তোলা একান্ত কর্তব্য। বিপ্লবী বিজ্ঞান আমাদেরকে বলে পরবর্তী বিশ্বগনযুদ্বের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। প্রকৃত সমাজতন্ত্রী, প্রকৃত কমিউনিস্ট হলেন- লিডিং লাইট কমিউনিস্টগন । যারা স্বেচ্ছা প্রনোদিতভাবে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র জনগনকে সারা দুনিয়ায় – তাঁদের মুক্তির আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সর্বোচ্ছ ত্যাগ তিতিক্ষা প্রদর্শন করতে প্রস্তুত হচ্ছে। লিডিং লাইট সমগ্র দুনিয়ার মানুষের জন্য একটি নতুন পৃথিবী গড়তে চায়। যেখানে থাকবে – শান্তি, ন্যায় বিচার, সমতা, সুন্দর পরিবেশ সহ শোষণ মুক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এই ধরনের সমাজ কেবল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও স্কুল বোর্ডে নির্বাচিত হলেই বিনির্মান করা সম্ভব হবে না । দরকার হলো পরিপুর্ন বিপ্লব। আধুনিক দুনিয়ার সবচেয়ে প্রাগ্রসর বিজ্ঞানের অনুসারী লিডিং লাইটের নেতৃত্বে এই ধরনের সমাজ নির্মান করবেন বিশ্ব সর্বহারা  ও তৃতীয় বিশ্বের প্রকৃত প্রলেটারিয়েট শ্রেণী ।

Leave a Reply