ইরাকে আল ক্বায়দা, আই এস আই এস – ইসলামী রাজ্যের ভাবনা !

(llbangla.org)

ইরাক ইসলামী রাজ্য এবং আল সালাম (ইরাকে আল ক্বায়দা, Islamic State of Iraq and Syria Al salam – (ISIS) আই এস আই এস – ইসলামী রাজ্য ) কায়েমের প্রয়াস আজ নতুন ইস্যু নয় বহুবার তা করার চেষ্টা হয়েছে। কিছু দিন আগে ও ইহা পরিচিত  ছিলো “ আল ক্বায়দার ইরাক”। এবং এখন এদের নেতা যিনি কিছু দিন আগে ও তাঁর নাম ছলো “ আবু বাকার আল বাদাওয়ী” তিনি নিজের নাম পাল্টে খলিফা ইব্রাহীম ঘোষনা করেন । তিনি নিজেকে শীর্ষ নেতা হিসাবে ঘোষনা করেন। উত্তর ইরাকের ভুমি সংলগ্ন এলাকায় সিরিয়য়ার সিমান্ত নিয়ে সুন্নি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছে তাঁরা। খলিফা ইব্রাহীম ঘোষনা করেছেন সকল মুসলিমের উচিৎ তাকে অনুসরন করা তাঁর ইসলামী রাজ্যকে সমর্থন জানানো। আই এস আইএস কে বুঝার জন্য আমাদেরকে তাঁর কর্মপদ্বতি, ইতিহাস,সামাজিক ভিত্তি এবং এর শ্রেণী সংগ্রামের গতি প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা দরকার।

ISIS এর গৌত্রকেন্দ্রীক কর্ম কৌশল তৈরী করার আগে তাঁরা ইরাকী আল ক্বায়দার আবু মুসাবি আল যারক্বাওয়ীর নেতৃত্বাধীন ছিলেন। ISIS এর এই কর্ম কৌষল তৈরীর ক্ষেত্রে তাঁরা বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায়, নন –সুন্নি উপদল, জাতীয় ভাবে নিপীড়িত কুর্দি সম্প্রদায়ের লোকদেরকে সংগঠিত করে। এই ISIS  যখন ইরাকী আল কায়দা হিসাবে পরিচিত ছিল তাঁরা তখন ও শীয়া সুন্নি ইস্যু নিয়ে মারা মারা লাগাবার চেষ্টা করেছে। এখন ও সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে। ২০০৬ সালে তাঁরা ই আলাস্কারী মাজারে এবং শীয়া মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেদের বদনামের ভয়ে তখন তাঁরা তা স্বীকার করেনি। তাঁরা ক্রমাগত ভাবে শীয়াদের মসজিদে ও সুন্নিদের মাজার ও পবিত্র স্থান সমূহে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন ও তাই তাঁরা করে যাচ্ছে। ISIS কর্ম কৌষল হিসাবে ধর্মীয় দল উপদলের উপর না ভাবে   আক্রমণ করছে আর শরীয়া আইন কায়েমের বয়ান দিচ্ছে। ২০০৫ সালের আল কায়দার প্রধান জাওহারী নিজেই এই সকল ধর্মীয় উপ সম্প্রদায়ের উপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

“ আমরা বুঝতে পারছি না – মুসলিম কিভাবে আরেক মুসলিমের উপর আক্রমণ করছে। বিশেষ করে শীয়াদের উপর আক্রমণ আমাদেরকে অবাক করে দিচ্ছে। এই ধরেন আক্রমণ ইসলাম সমির্থন করেনা। তখন একটি সার্কূলার ও মুজাহিদিনদের মাঝে বিতঅরন করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল শীয়াদের সাথে বিরোধ থাকলে তা বিদূরিত করে ঐক্য গড়ার জন্য।বলা হয়েছিল এই ঐক্য মুজাহিদীনদের মাঝে শক্তি দৃদ্বি পাবে”।

ISIS কৌশল ও আশা ছিলো যে অ্যামেরিকা ইরাক থেকে চলে গেলে তাঁরা ই ক্ষমতায় আসবে। তাঁরা সাম্রাজ্যবাদকে শত্রু মনে করে না। তাঁরা প্রধান শত্রু হিসাবে বিবেচনা করে সুন্নি সম্প্রদায়কে। তাঁদের শসস্ত্র লড়াইয়ের প্রধান শত্রু সাম্রাজ্যবাদ নয়। তাঁরা তাদেরকে ইরাক থেকে বিদায় করতে চাইলে ও প্রধানত তাঁরা সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধি হিসাবেই কাজ করতে অধিক আগ্রহী। তাঁরা প্রতিনিয়ত মার্কিনীদের সাথে বুঝা পড়া করার কাজে ব্যস্ত ছিল।

ISIS এর সন্ত্রাস সরাসরি শীয়াদের বিরুদ্বে ছিলো না । এরা প্রধানত সুন্নি অধ্যুষিত এলাকায় গন হত্যা চালানোর প্রায়াস পেয়েছে।  ঘটনাক্রমে ২০০৭ সালে যখন সুন্নিরা আল কায়দার বিরুদ্বে বিদ্রোহ করে তখন মিডিয়া একে একটি সুন্নি বিদ্রোহ হিসাবে প্রকাশ করে। সেই সময় সুন্নিদের সামাল দিতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও তাঁদের ইরাকী এজেন্টরা বিপুল পরিমান ঘোষ প্রদান করে। সাময়িক ভাবে শরীয়া আইন চালু করে কিছু এলাকায়। সেখানে- কিছু আচরন নিষিদ্ব করে দেয়, বেত্রাঘতের আইন চালু করে, শীরোচ্ছেদ ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এমন কি নাগরিকদের উপর নির্বিচারে গোলা বর্ষন ও করে তাঁরা। ISIS ইরাকের মত সিরিয়ার গৃহ যুদ্বে ও একই কর্ম কৌশল অনুসরন করে। তাঁরা দ্রুত সেখানকার আসাদের বিরুদ্বে  যুদ্বরত দল উপদল গুলোকে নিজেদের দ্বারা প্রভাবিত করার প্রয়াস পায়। তাঁরা সেখানে ও শরীয়া কেন্দ্রীক একটি অঞ্চল গঠনের চেষ্টা করে। তাঁরা সেখানে সুন্নিদের বাহিরে শীয়া, আলাওয়ী, খৃস্টান এবং কুর্দিদের উপর সন্ত্রাসী কাজ পরিচালনা করে।

২০১৪ সালে, ISIS দ্রুত তাঁর শক্তি বৃদ্বি করে। তাঁরা নিজেদেরক নয়া সুন্নি খলিফা দাবী করে। তাঁরা তাঁদের নেতাকে ইসলামী রাজ্যের খলিফা ঘোষনা দেয়। উত্তর সিরিয়ায় তাঁদের শক্তি স্থিতিশীল করে ইরাকের কিছু অংশ – যেমন তিক্রিত, মসুল ইত্যাদি ও উত্তর সিরিয়ার কিছু অংশ সহ ইসলামী রাজ্য কায়েমের ঘোষনা দেয়। অন্য দিকে আরব বসন্তের কারনে জনগণের মাঝে একটি আঞ্চলিক ভাবে ক্ষমতা গ্রহনের প্রবনতা দেখা দেয়। তা ছাড়া ইরাক ও সিরিয়ায় কান্দ্রীয় সরকার গুলোর দুর্বলতা তাদেরকে শক্তি বৃদ্বির কাজে সহায়ক হয়। ফলে তাঁরা ইসলামী রাজ্যের নামে ক্ষমতা দখলের খেলায় মেতে ঊঠেছে।

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিস্টা কোন নাটকীয় বসয় নয়, ইহা কোন বিশেষ সময়ে ঘোষনার বিষয় ও নয়। ইহার বিজয় কেবল জনসমর্থন পেলেই সম্ভব নয়। ইসলামীক রাষ্ট্র চায় মানুষের আনুগত্য ও সামাজিক রূপান্তর। ISIS হলো খুবই ক্ষুদ্র জনসমর্থনের একটি রেজিমেন্টটেড দল। তাঁরা সন্ত্রাসী কাজে তাঁরা উস্তাদ। তাঁরা যখন কোন শহর আক্রমণ করে বা দখলে নেয় তখন সেখানকার জনগণ শহর ছেড়ে পলায়ন করে। তাঁরা ক্রমে শরনার্থীর সংখ্যা বৃদ্বি করছে। তাঁদের ভয়ে কেবল শীয়ারাই নয় বরং খৃস্টান সহ অন্যান্য মুসলিমরা ও তাঁদের শরীয়ার ভয়ে ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে পলায়ন করে থাকেন। তাঁদের সমলোচনায় অন্যান্য ইস্লামিক দল গুলো ও মাঠে নেমেছে। তাঁদের চরমপন্থার ধর্ম মুসলিমরাই মানতে অপারগতা প্রকাশ করছে। ISIS প্রতি সালাফিরা ও খুশি নন। তাঁরা মনে করেন যে, এরা খেলাফতের নামে ইসলামের বদনাম করছে। তাঁরা মনে করেন একটি ইসলামিক রাষ্ট্র ঠিকতে হলে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে সমর্থন থাকা চাই । এই ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতি এমন কি ইরানের ও সমর্থন নেই।

ISIS ইসলামিক রাষ্ট্রের নামে যা করছে তাকে ঠিক ইসলামী বলা কঠিন। কেননা তাঁরা অন্যান্য সকল ইসলামী দলের উপর প্রাধান্য বস্তারের জন্য তাঁদের নেতাদেরকে পর্যন্ত হত্যা করতে চাইছে। যা স্পষ্ট বারাবারি ও অনিসলামিক কাজ। ইস্লামিক চিন্তাবিদ গন ইতিমধ্যে তাঁদের বিরুদ্বে সতর্ক হওয়ার জন্য হুসিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। এমন কি আফগানিস্তানের তালিবান ও আল কায়দার প্রধান নেতারা ইসলামের নামে বারাবারি না করতে পরামর্শ দিয়েছেন। সালাফি ও সুন্নি ইমামগন ইসলামের নামে যে খেলাফতের ঘোশনা দেয়া হয়েছে তাতে তাঁরা সমর্থন জানান নি বরং এর বিরুধিতা করে সকল প্রকার সহিংসতার পথ পরিহার করতে আহবান জানিয়েছেন।

ISIS উত্থানের পিছনে যে সকল কারণ বিদ্যমান তা হলো – ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নানা আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব, ইরানের ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্বি, হিজবুল্লাহর কার্যক্রম, আসাদের শাসন ব্যবস্থা। এছাড়া মালিকী বনাম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের রেশা রেশী, ইসরায়েলের ও তুরস্কের কর্মকান্ড ইত্যাদী প্রধান। ইহা প্রতিস্টা লাভ করে মালিকি শাসনের প্রথমিক স্তরে এবং আসাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁর শক্তি বৃদ্বি ঘটায়। ইহা ক্রমে উন্নত যুদ্ব পরিচালনার জন্য বিশ্ববাসীর  দৃস্টি আকর্ষন করে। ইহার যুদ্বের কৃতিত্ব জিহাদি গ্রূপ ও অন্যান্য দল গুলোর সমর্থন লআভ করে নিজেদেরকে আরো শক্তি শালী করে তোলে । তাঁদের প্রচার প্রপাগান্ডা ও বেশ আকর্ষনীয় ও অভিজাত পুর্ন। তাঁরা বিশ্বের আনা স্থান থেকে উৎসাহী জিহাদি যুবকদেরকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলো থেকে লোকবল ও অর্থের যোগান পাচ্ছে বিপুল ভাবে। তুরষ্ক,ইসরায়েল,জর্ডান,ইউরোপীয়ান ইয়নিয়ন এবং অ্যামেরিকা সুন্নী মতাবলম্বী লোকদেরকে জর্ডানে ক্যাম্প স্থাপন করে সিরিয়ার যুদ্বাদের প্রশিক্ষন দিচ্ছে। তারা যেখানে তাদেরকে উন্নত যুদ্ব কৌশল এমন কি রাষায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের উপর বিশেষ প্রশিক্ষন দিয়ে চলেছে। তবে, ISIS এর প্রতি তাঁদের সহায়তা সকল সময় সরাসরি করে না বরং অন্যান্য কোন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বা মাফিয়া চক্রের সহায়তায় অর্থ ও উপকরন তথাকথিত সুন্নি চক্র প্রদান করে থাকে। অনেকের মতে, এরা সৌদি আরাবিয়ার ও কাতারের প্রক্সি চেহারা ।  এরা সৌভিয়েত আমলে যে ধারায় সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কাজ করেছে আজ ও সেই ধারায় তাঁরা ইসলামকে ব্যবহার করে পশ্চিমা দুনিয়ার তথা সাম্রাজ্যবাদী চক্রের দালালী করে যাচ্ছে।সৌভীয়েত বিরোধী কাজ করতে গিয়েই অ্যামেরিকা ও সৌদি লবি তালিবানি চক্রের জন্মদেয়। পরে তালিবানদের সাথে তাঁদের দ্বন্দ্ববাধে এবং আফগানিস্তান দখল করে নেয়। সেখানে পরবর্তীতে রক্তের বন্যা তৈরী করা ও লক্ষ লক্ষ মানুশকে খুন করা এখন ও অব্যাহত আছে। আরো কত কাল তাঁর খেশারত দিতে হবে তা কেবল সময়ই বলতে পারবে।

উন্নত বিশ্ব নিজেদের স্বার্থে কিছু বিশেষ দেশ এবং ইসলামী দল ও গ্রুপের সাথে সর্বদাই সূ সম্পর্ক রক্ষা করে চলে । সেই দেশ ও দল গুলো উন্নত দেশের ইশারায় নিজেদের কার্যক্রম করে থাকে। সেই দল ও গ্রুপ গুলোর কর্মকান্ড জিহাদী নামে পরিচালিত হলে ও যায়নবাদিদের স্বার্থ রক্ষা করায় তাঁদের একটি বিশেষ ভূমিকা লক্ষ্য করার মত।

কোন কোন সময় দেখা যায় কিছু ইসলামীক দল সরাসরি সাম্রাজ্যবাদের বিরুধিতা করছেন। তবে এটা দেখার বিষয় হলো তাঁরাই আবার সাম্রাজ্যবাদের সাহায্য নিয়ে থাকেন। ফলে এক সময়ে তাঁরা সাম্রাজ্যবাদিদের এক দুষরেই পরিণত হয়ে যায়।

Leave a Reply