(llbangla.org)
তৃতীয় বিশ্ববাদিরা সাম্রাজ্যবাদি প্রথম বিশ্ববাদিদেরকে “সামাজিক ফ্যাসিবাদ” হিসাবে পরিগনিত করে থাকেন। আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যখন সাম্রাজ্যবাদি পুজিবাদিরা সারা দুনিয়ার সম্পদকে নিজেদের স্বার্থে পুঞ্জিভুত করছেন। ধনিক দেশ সমূহ গরীব দেশের সম্পদ লুন্ঠনের জন্য তাদের উপর নানা প্রকার নির্যাতন নিপীরন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গরীবদেশের মানুষর উপর খুন ধর্ষন ও দাসত্ব চাপিয়ে দেবার জন্য চালাছে অবিরাম বোমা বর্ষন। গরীব দেশের নেতা নেত্রীদের উপর নিয়ন্ত্রন কায়েমের জন্য প্রয়োগ করছেন নানা কৌশল। তারা সেই সকল নেতাদেরকে বাধ্য করতে চায় স্ব স্ব দেশের মানুষের শ্রম শক্তি ও প্রকৃতিক সম্পদকে তাদের নিকট বিক্রি করার জন্য। সামগ্রীক ভাবে প্রথম বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বের উপর চালাছে অবিরাম ধংস যজ্ঞ । প্রথম বিশ্বের হর্তা কর্তারা এখন আর এসব করার জন্য কোন রূপ ষড়যন্ত্র বা রাখ ডাক করছেন না। তারা এখন এসব কিছু প্রকাশ্যেই করছেন। দুর্ভাগ্যবশত, প্রথম বিশ্বের মানুষের এই ধরনের কাজকে তাদের সাধারন জ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। তার এদের কোন প্রকার অনুসূচনার উদ্রেক হয় না । এখন প্রথম বিশ্বের সম্পদ আহরনের প্রাথমিক উৎস হলো তৃতীয় বিশ্ব। প্রথমবিশ্ব তথা এখনকার শ্রমিকরা চায় আরো ভোগ করতে, তাদের জীবন যাত্রার মান আরো বৃদ্বি করতে, আরো বিলাশী জিবন যাপন করতে। তাদের এখন চাহিদা হলো ত্রি ডি দেয়ালের পর্দা সহ নানা ভোগ্য পন্য। তার জন্য তারা ও নির্ভর করেন তৃতীয় বিশ্বের মানুষের শ্রমের বার্তি মূল্যের উপর। তারা খুব সহজেই নিজেদেরকে পুজিবাদি সাম্রজ্যবাদের উপকার ভোগী হিসাবে নিজেদেরকে খাপখাইয়ে নিয়েছে। তারা দিনে দিনে আরো বিলাশী, আরো আয়েশী জীবনে অভ্যস্থ হচ্ছেনঃ অন্যদিকে যারা সম্পদের সৃস্টি করছেন, সম্পদের বৃদ্বি করছেন তারা মানবেতর জিবন যাপন করছেন। তারা যা উতপাদন করেন তা তারা ভোগ করা্রই সূযোগ পায় না ।
কার্ল মার্ক্স বলে ছিলেন, কাদেরকে আমরা বুর্জোয়া বলব আর কাদেরকে আমরা প্রলেতারিয়েত বলব । তিনি বলেছিলেন প্রলেতারিয়েত হলো তারাই যারা নিজেদের উৎপাদিত পন্যের মূল্যের চেয়ে কম পেয়ে থাকেন – যাদের শ্রম ছাড়া বিক্রি করার মত আর কিছুই নেই। তিনি কিন্তু প্রথম বিশ্বের বিশাল সংখ্যার মানুষ সম্পর্কে এমন কথা বলেন নাই। মার্ক্সের এই সংজ্ঞা কেবল তৃতীয় বিশ্বের সংখ্যা গরিস্ট মানুষের বালায় ই খাটে। মার্ক্সের মতে, বুর্জোয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ন বৈশিস্ট হলো তারা বেশী ভোগ করেন যা তাদের উৎপাদনের চেয়ে কম বা তারা একেবারেই কিছু উতপাদন করেন না। বিশেষ করা তারা কোন কায়িক শ্রম সাধ্য কাজ করেন না।
পৃথিবীর সকলেই জানেন যে, প্রথম বিশ্বের তোলনায় তৃতীয় বিশ্বে অনেক বেশী মানুষের বাস। যাদের অধিকাংশই দরিদ্র ও মানবেতর জীবন যাপন করে থাকেন। আমাদের উচিত হলো মার্কিনীদের প্রভাব বলয় থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করে নিপিড়িত মানুষকে সংগঠিত করা । এটাই আজকের বাস্তবতায় মার্ক্সীয় রাজনীতির প্রধান দ্বন্দ্ব।বিশ্ব প্রলেতারিয়েতদেরকে বিশ্ব বুর্জোয়াদের মোখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়া । আজকের বিশ্ব পরিমন্ডলে যারা সাম্যবাদি আন্দোলন সংগ্রামের কথা ভাবেন তাদের উচিত হলো – শ্রেনী ভিত্তিক নিপিড়ন কারীদের সামনে প্রলেতারিয়েত শ্রেনীকে দাড় করানো।
যারা এখন ও বিশ্ব ব্যাপী শ্রেনী দ্বন্দ্বকে অস্বীকার করেন তারা কমিউনিস্ট হতে পারেন না । এটা হাস্যকর বিষয় যে যারা নিজেদেরকে প্রথম বিশ্বের কমিউনিস্ট বলে প্রচার করেন। অথচ মূল সামাজিক দ্বন্দ্বটাই বুঝেন না । তারা ওয়াকিব হাল নয় যে সাম্রাজ্যবাদ নিজেদের শোষণের খেলা কি ভাবে পরিবর্তন করে ফেলেছে। তাই তাদের বুঝা উচিৎ বিশ্ব বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে কি ভাবে লড়াইটা চালানো দরকার। সত্যিকার বিষয় হলো সেই কমিউনিস্টগন প্রকারান্তরে বিশ্ব
প্রলেতারিয়েতের বিপরিতে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। যারা সাম্রাজ্যবাদি দেশে জন্মে তাদের আলো বাতাসে লালিত পালিত তারা নিজেদেরকে অভিজাত শ্রমিক মনে করেন। তাদের মধ্যে আরো চাই , আরো চাই একটা ভাব বিরাজ করে। তারা নিজেদের জন্য আরো সুবিধা আদায় করতে তৎপর রয়েছে। তাদের জীবন মান বিশ্লেষন করলে একথা বলার কোন উপায় নেই যে তারা দরিদ্র বা প্রলেতারিয়েত। তারা সেই শ্রেনী ও নয় ‘যাদের হারাবার কিছু নেই কেবল শৃংখল ছাড়া’ । তারা এখন তৃতীয় বিশ্বের অনেক ধনির চেয়ে বেশী সম্পদের মালিক।
মজুরীর জন্য গনযুদ্ব ( যার জন্য কতিপয় কমিউনিস্ট দল, উপদল বা গুষ্টি প্রথম বিশ্বে কাজ করছে), বা কেউ কেউ সাম্যবাদি বিপ্লবের কথা ও বলেন, আবার কেঊ কেঊ প্রথম বিশ্বে বিপ্লব সাধন করে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখেন অথচ সেখানে এর কোন সামাজিক ভিত্তি নেই। যেখানে সাধারন মানুষের মাঝে বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা থাকার কথা – সেখানে বিপ্লব সাধনের জন্য অবশ্যিই জনগনের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করতে হবে । তা না হলে বিপ্লব করার আশা কল্পনা বিলাস ছাড়া আর কিছুই নয় । এখন প্রথম বিশ্বের মানুষের কাছে বিপ্লব, সাম্যবাদ, প্রলেতারিয়েত এসকল বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই । অনেকের কাছেই এগলো হাস্যকর বস্তু।
প্রথম বিশ্ববাদিরা মূলত সামাজিক ফ্যাসিবাদি এরা প্রথম বিশ্বের উপর জনগণের দাবি আদায়ে কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করতে চায় না । তারা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য কোন চিন্তা ও করেন না । তারা নিজেদেরকে আরো ধনী করতে চায়ঃ দরকার হলে অন্যের সম্পদ আহরন করে হলে ও । প্রথম বিশ্ব আর প্রথম বিশ্ববাদিদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যই হলো যে, প্রথম বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদকে ধারন করে আর উরা তা করে না । তবে উরা কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের উপকারভূগী হিসাবে পরিগনিত । তাই এটা পরিস্কার যে কোন প্রথম বিশ্ববাদি দেশে “বিপ্লব” করা বা কোন প্রথম বিশ্বে সমাজতন্ত্র সামাজিক সাম্রাজ্যবাদে পরিনত হবে। প্রথম বিশ্ব সাধারন ভাবে একটি অসাম্রাজ্যবাদি সমাজতান্ত্রিক দেশ হবে নাঃ বরং নানা ভাবে সমস্যায় পড়বে। তারা সামাজতান্ত্রিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারবে না বরং দিনে দিনে সাম্যবাদে উপনিত হবার পরিবর্তে শুকিয়ে মরবে। তারা সাম্রাজ্যবাদের আওতায় থেকে যে সকল সুবিধা গ্রহন করেছে তা সাম্যবাদি বিপ্লবের পর আর পাবে না । তাই প্রথম বিশ্ব সর্বদা ই সাম্য ও প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর শত্রু। তাই তারা তাদের রং যতই বদলাক না কেন তারা সাম্যবাদি হতে সতিকার ও সামগ্রীক বিপ্লব সাধন করে আসতে হবে।
ঐতিহাসিক ভাবে দেখা গেছে যে সকল সময়েই বিপ্লব এসেছে কোন না কোন অন্দ্বকার জায়গা থেকে। তারা করেছে বিপ্লব যাদের হারাবার কিছুই ছিলো না –কেবল শৃংখল ছাড়া। যাদের বাঁচার মত আর কোন অবলম্বন ছিলো না। তারা লড়াই করেছেন তাদের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য, মর্যাদা এবং আত্মসম্মানের জন্য। খাদ্য, বস্ত্র ও সুন্দর পরিবেশের জন্য। শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য। এ পর্যন্ত কোন ধনি দেশেই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হয় নাই। বরং অপেক্ষাকৃত গরীব ও দরিদ্র দেশ সমূহেই বিপ্লব এসেছে । যে সকল দেশে বিপ্লব হয়েছিলো তাদের অনেকেই সাম্রাজ্যবাদিদের হুমকিতে ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদি শোষণের কারনে তাদের দেশের মানুষের জীবন ধংসের মূখে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু যখন বিপ্লব হলো তাদের জীবন মান উন্নত হলো তখন উরাই সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের দিকে ঝুকে পড়লো। বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের দিকে এগিয়ে গেলো। তারা বুর্জোয়াদের বন্দ্বুতে পরিনত হলো। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ক্ষমতা করায়ত্ব করে সাম্রাজ্যবাদের পরামর্শ মোতাবেক তাদের অর্থনীতি ও সমাজ কাঠামোকে নির্মান করল। তারা সকল আয়োজনের যবনিকাপাত ঘটিয়ে ছাড়লো।
প্রথম বিশ্ববাদি “কমিউনিস্ট”রা আদতে কোন কমিউনিস্টই নন। প্রথম বিশ্ববাদিরা সাম্রাজ্যবাদের ই দোষর । তারা সাম্রাজ্যবাদকে বহাল তবিয়তে রেখে নিজেদের সুবিধা প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করতে চায়। তারা বিজ্ঞান, বাস্তবতা, ও বস্তুগত উন্নতির বিষয় গুলো মোটেই আমলে নিতে চান না । তারা মতান্দতা, সংস্কারবাদকে আক্রে ধরে থাকতে পছন্দ করেন। তারা বিশ্ব ব্যাপী সম্পদের পুন বন্ঠনকে বাস্তবায়নে আগ্রহী নয়। “সংস্কারবাদ” হলো সাম্যবাদের আসল প্রানটাকে মেরে ফেলা। এখন প্রথম বিশ্ববাদিরা তাই করছেন। এই সময়ে আলোকিত সাম্যবাদিরাই হলো আসল সাম্যবাদি । লিডিং লাইট হোন! সমর্থন করুন ! প্রথম বিশ্ববাদকে বর্জন করুন!