(llbangla.org)
সম্প্রতি, জামাত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহীদ এবং বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ১৯৭১ সালের সংগঠিত যুদ্বাপরাধ- খুন, হত্যা ও ধর্ষনের অপরাধের বিচারে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তাদের এই শাস্তি সঠিক ভাবেই প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে শাস্তি না দিলে আমাদের স্বাধীনতা পরিপূর্ন হবে না । স্বাধীনতার পর ও অনেক ইস্যু অমিমাংশিত রয়ে গিয়েছিলো। ১৯৭১ সালের পর থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা পথে এই শাস্তি প্রদানের ঘটনাটি উল্লেখ যোগ্য । এই শাস্তির ভেতর দিয়ে অনেক শহীদের আত্মা শান্তি পেল। তবে সামগ্রীক ন্যায় বিচার প্রতিস্টার জন্য আগামীতে আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখব। তবে এই পথ অনেক দির্ঘ।
এই প্রসঙ্গে আমরা অতীতের কিছু বিষয় স্মরন করতে চাই। আমাদের দেশ স্বাধীন হবার আগে ইহা পাকিস্তানের একটি উপনিবেশ ছিলো আবার একেই সাথে সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবও ছিলো প্রবল। বলা যায় এই দেশটা একটি কলোনীর ও কলোনী ছিলো। পুঁজিপতি ও ভূমিমালিকিরাই ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু ছিলো এই পাকিস্তানে। তারা নিজেদের ক্ষমতা কাঠামো ঠিকিয়ে রাখার জন্য সমাজের পশ্চাৎপদ অংশটিকে ব্যবহার করে নানা রকমের কুৎসিত কর্মকান্ড চালিয়ে গেছেন। সেই অংশটি ইসলামিক সংগঠনের নামে সাধারন মানুষের উপর সন্ত্রাসী কর্যক্রম চালিয়েছে। বহু ত্যাগ তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যুদ্বকালিন গন হত্যা সময়ে আমাদের কত লোক মারা গেছেন তা সঠিক ভাবে বলা সহজ নয়। তবে পরিসংখ্যান বলছে পাকিস্তানী ও তাদের দোসররা প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ নির্বিচারে হত্যা করেছে। ছাত্র/ছাত্রী, রাজনৈতিক কর্মী, সাধারন শ্রমিক ও কৃষক সহ সাধারন মানুষকে ওরা হত্যা করেছিলো। তারা পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগীতার জন্য আল বদর, আল শামস গঠন করেছিলো আমাদের দেশের মেধাবী মানুষ ও বুদ্বিজীবীদেরকে বিনাশ করে দেবার জন্য। পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পনের ঠিক আগে, ঢাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, রাজাকার ও বদর বাহিনী আমাদের শ্রেস্ট সন্তান ডাক্তার, প্রকৌশলী, অধ্যাপকগণকে অপহরন করে তাদেরকে হত্যা করে গণকবরে নিক্ষেপ করে যায়। যুদ্বের পর সেই সকল গন কবর সমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সকল গনকবরে আমাদের শত শত মা, বোন, কন্যাকে নির্মম ভাবে ধর্ষন করে হত্যা করে পুতে রেখে গেছে নর পশুর দল। মুক্তিযুদ্বের সময় আমাদের দেশ থেকে প্রান বাঁচানো জন্য প্রায় এক কোটি মানুষ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। যুদ্বের সময় আর্থিক কারনে অনেক লোক মারা যায়। এ ছাড়া ও ১৯৭০ সালে আমাদের দেশে সাইক্লোনের সময় পাকিস্তানীদের রিলিফ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কারনে অগনিত মানুষ মারা যায়। এই দেশে কি চলছে তা চাপা দেয়ার জন্য সাংবাদিক ও লিখকদেরকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে পাকিস্তানীরা । পাকিস্তানের রাস্ট্রপতি ইয়াহীয়া খান ঘোষনা করেছিলো, “ বাংগালীদেরকে হত্যা কর, আর যারা বেঁচে থাকবে তারা আমাদের হাতে খাবে”। সেই সময়ে পশ্চিমা দেশ সমূহ ও চীন পাকিস্তানের সকল অপকর্মকে এবং গনহত্যাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলো। সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন গোপন দলিলে দেখা যায়, বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনকে বিনাশ করে দেবার জন্য “পরিকল্পিত গণহত্যা” চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। হেনরী কিসিঞ্জার মাওয়ের সাথে মিটিং করে বাংলাদেশের নেতৃত্বকে চিলির সালভেদর আলেন্দের সাথে তোলনা করে তাদেরকে দমন করার সিদ্বান্ত নেয়। সেই সময়ে চীন পশ্চিমাদের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের সাম্রাজ্যবাদি নীতির সমর্থক হয়ে উঠেন। দুঃখের বিষয় হলো লিন পিয়াংয়ের মৃত্যুর পর চীন নিরিহ মানুষের উপর আক্রমনের সমর্থক হয়ে উঠে।
বহু নদী আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত, সেই নদীর পানি রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। বহু সাম্রাজ্যবাদি আমাদের দেশের কসাইদেরকে যুগে যুগে ব্যবহার করেছে কিন্তু আমাদের জনগণ স্বাধীনতাকেই বেঁচে নিয়েছে । আজ ও সেই পাকিস্তানী কসাইয়ের দল রাজপথে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের দেশে ও আরো অনেক কসাই যুদ্বাপরাধী হেসে খেলে ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই হম্বি তম্বি প্রকাশ করে । এই দুইজনের ফাঁসী আসলে তো কিছুই নয় এখন ও এদেশের মাঠিতে অনেক খুনি, যুদ্বাপরাধী ও গনহত্যাকারী মুক্তভাবে জীবন যাপন করছেন। আরো পরিতাপের বিষয় হলো যে, অনেক খুনি চক্র আজো তাদের খুন হত্যার ইতিহাসকে মাটি চাপা দিতে ভন্ডামী করে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করেই চলেছে । যখনই খুনিদারকে বিচার বিভাগ বিচার করতে চায় তখনই বিএনপি জা্মাত হরতাল ডেকে বসে। এই সময়ের মধ্যেই আইএস অত্র অঞ্চলে আবার তাদের আঞ্চলিক নেতা নিয়গের ঘোষণা করে বসেছেঃ
“ বাংলায় খেলাফতের সকল মুজাহীদদেরকে অনুরুধ করা হচ্ছে তারা যেন খলিফা ইব্রাহীম (হাফিজুল্ললাহ)কে অনুসরন করে কাজ করেন। তার পিছনে নিজেদেরকে জড়ো করেন, তার নির্দেশত পদবী ও প্রয়োজনীয় স্তর বিন্যাশ মেনে নেন। নিজেদের বেদাভেদ ভূলে গিয়ে মুজাহিদ হিসাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলেন। এই নির্দেশনা আইএস এর প্রধান নেতার নির্দেশ হিসাবে যেন সকলেই বিবেচনা করেন, লক্ষ্য বস্তুকে যেখানেই পাবেন সেখানেই খতম করে দিবেন….”
তাদেরকে বোকা ভাবার কোন কারন আছে কি ? এরা তো সেই চক্র যারা প্রাচীন ক্রোসেডার ও ১৯৭১ সালে আমাদের দেশকে রক্তে রঞ্জিত করার পাকিস্তানী চর। আয়নায় তাদের চেহেরা দেখলে সকলেই একমত হবেন এরা হোল সেই পুরাতন খুনি চক্র ১৯৭১ সালে যে ভাবে আমাদের দেশে ইসলামের নাম নিয়ে মানুষ মারার জন্য হামলে পরে ছিলো। আজো সেই পরিস্থিতিই তারা আবার সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের পিছনে সাম্রাজ্যবাদের ইন্দন বিদ্যমান। যারা ইসলামের নামে খুন হত্যায় মাতে এরা আসলে জনগণ ও পবিত্র ধর্মকেই অপমানিত করে ছাড়ে। ১৯৭১ সালে যেভাবে আমাদের মূল্যবান মেধা গুলোকে নির্মূল করে আমাদের সকল সম্ভাবনার দরজাকে বন্দ্ব করে দিতে চেয়েছিলো আজো তারা সাম্রাজ্যবাদের সহায়তায় তা করতে চাইছে ।
তারা আমাদের সমাজে এমন একটি শৃঙ্খল স্থাপন করতে চায় যেখানে মানুষ সাম্রাজ্যবাদের নিকট নিজেদেরকে বিক্রি করতে বাধ্য হবে, পুঁজিবাদী ও সামন্তবাদিদের করতলগত হবে সাধারন নারী পুরুষ। মানুষকে ওরা পশুর স্তরে নামিয়ে ফেলতে চায়। তাদের যে স্বপ্ন তা যদি বাস্তবায়ন হয় তবে তা এখানকার শ্রমিক, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গরীব মানুষ নর নারীর সর্বনাশ হবে। আমরা এখন সিরিয়া আর ইরাকের দিকে থাকালেই বুঝতে পারব যে ওদের বার বারন্ত হলে আমাদের জন্য কি পরিস্থিতি হতে পারে। কি পরিস্থিতি হয়েছিলো আমাদের ১৯৭১ সালে ? আমাদের নারী শিশুদের জীবনে কি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো ? তারা মৃত্যুর আহবান জানায় জীবনের জন্য তারা কি করতে চায় ? আমারা তো চাই প্রগতি, স্বাধীনতা, ন্যায় বিচার, শান্তি – তারা কি তা দিতে পারবেন ? আমরা চাই আমাদের সম্পদ আমাদের দেশে থাকুক – কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ চায় আমাদের সম্পদ কেরে নিতে । তারা নানা বাহানা তৈরী করতে চাইছে । পাকিস্তান, ভারত এরা কেহই আমাদের সত্যিকার বন্দ্বু নয় । এরা ও সাম্রাজ্যবাদের দোষর।
এক ধরনের সুক্ষ ষড়যন্ত্র চলছে। তারা আমাদের ভবিষ্যৎ চুরি করতে চায়। এদেরকে পরাজিত করতে চাইলে –সকল কিছুর উপর আমাদেরকে আলো ফেলতে হবে । ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে, গণতন্ত্রের নামে সকল প্রকার ভন্ডামীর অবসান করতে হবে । আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরকেই গড়তে হবে । মানুষ মেরে নয় মানুষের জীবন বিকাশের ভেতর দিয়েই মুক্তির পথ খোজতে হবে । আলোকিত মানুষ চাই সুন্দর আগামীর জন্য।
Source
http://bdnews24.com/bangladesh/2015/11/23/islamic-state-claims-they-now-have-a-regional-leader-in-bangladesh