গান্ধিঃ অহিংসাতত্ত্ব এবং সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তির প্রশ্ন

ghandi

(llbangla.org)

নরম্যান ফিংকেলস্টাইন একজন সম্মানীত চিন্তাবিদ। যিনি সাহসিকথার সাথে ফিলিস্তিনিদের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। একসময় আমরা তাঁকে অস্ত্র হাতে যুদ্বের মাঠে লড়াই কারীদেরকে সাহায্যকারী হিসাবে দেখেছি। যিনি ইসরাইলীদের বিনাশ কামনা করতেন রক্তাত লড়াইয়ের মাধ্যমে। সম্প্রতি তাঁর চিন্তাধারার ব্যাপক পরিবর্তনের কথা শুনে সত্যি অবাক হয়েছি। তিনি এখন বলছেন ফিলিস্তিনি সমস্যার সমাধান নাকি গান্দ্বিবাদী দর্শনে নিহিত। ফিংকলস্টাইন লিখেছেনঃ

“ ফিলিস্তিনিদের উচিৎ বিজয়ের জন্য একটি অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করা ( বানিজ্যিক কর বন্দ করে দেয়া এবং গন কমিটি গঠন করা) ইসরাইলী সরকারকে সহযোগীতা না করা। সরকার অচল করে দেয়া। তাদের উচিৎ একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এক দিকে তাদের নির্মিত দেয়াল দখল করা ও অন্য দিকে আই সি জে এর দলিল নিয়ে মামলা করা। আই সি জে এর দলিলে বলা হয়েছে ইসরাইলীদের দেয়াল অবৈধ এবং তা ভেঙ্গে ফেলার হুকুম দেয়ার কথা বলা আছে। এই ধরেন পদক্ষেপ আগেও  ফিলিস্তিনিরা গ্রহন করেছিলেন। যদি ইসরাইলীরা আইন না মানে তবে তা কে প্রয়োগ করবেন? এতে কোন সন্দেহ নেই যে ইসরায়েলী সৈন্যরা সেখানে গুলি চালাবেই। আনেক মানুষকে তারা মারবেই। তখন তাদের ভেতরেই জেগে ঊঠবে বিরুধিতা। হতে পারে এই ভাবে প্রায় ৫০০০ হাজার লোক মেরে ফেলবে তারা। তখন সারা দুনিয়া জোড়ে তৈরী হবে ইসরাইলী বিরোধী মনোভাব। হয়ত আরো কিছু লোক প্রান দিবেন। ফিলিস্তিনিদের সফলতার জন্য এই ধরনের কৌশল কাজে লাগতে পারে। এটা হলো মানবতার জন্য কিছু মানবিক মূল্য পরিশোধ করা। বৃহত্তর স্বার্থে কিছু মূল্য পরিশোধ করতে হবে না”?

সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে  স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আমরা একটি মাত্র কৌশলের কথা বলছি না। আমরা বিশ্বাস করি মহান কর্মের জন্য এক বা একাধিক কর্মকৌশল গ্রহন করা যেতেই পারে। সামাজিক সঞ্চালনের জন্য গন মত গঠনের জন্য অহিংস কার্যক্রম গ্রহন করা উত্তম পন্থা । এতে ফিলিস্তিনিদের জন্য অংশ নেয়া ও সহজ। লিডিং লাইট মনে করে জাতীয় মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রামে অনেক ক্ষেত্রে সসস্ত্র পন্থা গ্রহন না করলে তা ব্যার্থ হতে বাধ্য। জাতীয় মুক্তির জন্য সসস্ত্র লড়াই অনেক ক্ষেত্রেই পুর্ব শর্ত। বিদেশী আধিপত্তের অবসানে ও জনগণের সত্যিকার মুক্তি অর্জনে জন্য গন যুদ্বের মাধ্যমে বিদেশী শক্তির বিনাশ অপরিহার্য বিষয়। এই সংগ্রাম কেবল সাম্যবাদই সত্যিকার গনতন্ত্রীদের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে। আমরা পর্যালোচনা করব- আমরা এই রচনার মাধ্যমে গান্ধীবাদের তত্ত্ব ও বাস্তবতাকে বিশ্লেষণ করব।

গান্ধী উল্লেখ করেন-

ভারতীয় বহু মহান নেতাদের মত গান্ধীজি ও আইনী প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের অবসান করতে চেয়ে ছিলেন – তাই তিনি মিলিয়ন মিলিয়ন ভারতীয়কে সফলতার সাথে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে সচেস্ট ছিলেন। পশ্চিমাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এক জন ধর্ম গুরুর মত একটি উপনিবেশের নাগরিকের মত রক্তপাত হীন ভাবে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেম গান্ধীজি। পৃথিবীর বহু দেশেই গান্ধিজির আন্দোলনের উদাহরন দেয়া হয় – সসস্ত্র লড়াইকে নিরুৎসাহিত করার জন্য। অথচ তা একেবারেই একটি ভুল উদাহরন যা বিদেশীদেরকে তাদের আধিপত্যবাদ থেকে অপসারণের জন্য। কোন আধ্যপত্যবাদি শক্তিই অহিংস ভাবে অপসারিত হয় না । রক্ষনশীল দার্শনিকদের কাছে গান্ধিবাদ খুবই জন প্রিয় একটি বিষয়। তৃতীয় বিশ্বের মানব মুক্তির পথে –সসস্ত্র লড়াইকে পিছিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তারা নেতি বাচক ভুমিকা রাখছেন।

এটা সত্যি যে, গন জাগরন ও সামাজিক সঞ্চালনের জন্য এবং ভারতীয় স্বাধিনতার জন্য গান্ধী বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলেন ( যদিও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তাদের নিজস্ব আর্থনৈতিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ার কারনেই তারা ভারত ছেড়ে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিল)। তবে এটা ও ধারনা করা হয় যে সেই “স্বাধীনতার” আড়ালে গান্ধি পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্র ভারতে ইংরেজদের প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন। গান্ধির নেতৃত্বের পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাব যে,  পাতি-বুর্জোয়া ও সামন্তবাদিদের সুবিধা করে দেয়ার সাম্রাজ্যবাদিদের দোসরদের জন্য এবং প্রতিবিপ্লবী ভুমিকায় গান্ধির দর্শন আবর্তিত হতে থাকে। মুলত গান্ধী সাম্রাজ্যবাদেরই সেবা করে গেছেন।
গান্ধির বর্নবাদ

বেশ কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা, গান্ধী যখন আজানিয়ায় ( দক্ষিন আফ্রিকায়) ছিলেন, তখন তিনি বর্নবাদিদের পক্ষে কাজ করে গেছেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের সময়ে গান্ধী হিটলারের “বন্দ্বু” হিসাবে তাঁকে চিঠি লিখে  আক্রমনে করতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি তখন ব্রিটীশদেরকে হিটলার ও মুসলিনির নিকট সম্পুর্ন আত্ম সমর্পন করতে পরামর্শ দিয়ে নিবন্দ্ব প্রকাশ করেছিলেন। তিনিই আবার ইহুদীদেরকে আত্মঘাতি আক্রমণ করে নাজিদেরকে পরাজিত করতে আহবান জানিয়েছিলেন।

একটি কথা ব্যাপক ভাবেই প্রচলিত ছিলো যে, গান্ধী নিপিড়িত মানুষের বিপরীতে নিপীড়ন কারীদের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছিলেন। গল্প আকারে প্রচলিত ছিলো যে, গান্ধী যখন আইনজীবি হিসাবে ব্রটিশদের দখল কৃত আযানিয়ায় বসবাস করতেন তখন তিনি  সাদা লোকদের জন্য বহন কারী একটি রেলগাড়ি রাস্তা থেকে ফেলে দিয়েছিলেন। (সেই যুগে এমন কি এখনও তাঁকে “বর্নবাদি” হিসাবে বিবেচনা করা হয়- তাঁর অবস্থান  রাজনৈতিক ভাবে আফ্রিকানদের উপরে এবং ব্রিটিশদের নিচে)। সেই পরিস্থিতি নিপিড়িতদের পক্ষে লড়াই করা ক্ষেত্র তৈরি করে। আসল সত্য হলো যে, তিনি আবার তখন থেকেই ভারতীয় জনগণের সাথে ব্রিটিশদের একটি সমযোতার প্রয়াস চালাতে থাকেন। তবে তা ছিলো আফ্রিকানদের বিরুদ্বে।

২২শে আগস্ট,১৮৯৪ সালে গান্ধী ভারতীয় কংগ্রেসের প্রতিস্টা করেন এবং ঘোষণা দেনঃ “ উপনিবেশেই ইউরূপীয়ান ও ভারতীয়দের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের [দক্ষিন আফ্রিকায়] প্রয়াস চালানো হবে”। ৪ঠা জুন, ১৯০৪ সালে তাঁর ভারতীয়দের মতামত নামক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় এই বক্তব্য দিয়েঃ “ ভারতীয়দের মতামত পত্রিকাটি ইউরূপীর রাজা এডোয়ার্ড ও ভারতীয় প্রজাদের মাঝে একটি ঘনিস্ট সম্পর্ক স্থাপন করবে”। গান্ধি ভারতীয় ও ইউরূপীয়দের চাইতে আফ্রিকানদের নিচু মনে করতেন। ২৬ শে সেপ্টেম্বর ১৮৯৬ সালে তিনি আযানিয়ায় সাদা অভিবাসীদের বিরুধিতা করেন একটি শোভিনিষ্ট মন্তব্য দিয়েঃ

“  আমাদের চলমান সংগ্রামকে যারা ইউরূপীয়দের দ্বারা দুর্বল করতে চায় বা ধ্বংস করতে চায়, তারা আমাদেরকে এমন এক স্থরে নামিয়ে আনতে চায় যা নিচু জাতের স্থর, যারা  একটি  বউ কেনার জন্য কয়েকটি গরু শিকার করে আর আলস্য আর নেংটা জীবন যাপন করে কাটাতে চায়”।

১৯০৪ গান্ধী অত্যন্ত ক্রুদ্বভাবে  অভিযোগ আনলেন যে ভারতীয়দেরকে  সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বরং তাদেরকে “স্থানীয়” অলস অসভ্যদের সাথে মিলিয়ে দেখা হচ্ছেঃ

“ একটি উল্লেখ যোগ্য বিষয় হলো যে, স্থানীয়দেরকে কাজের জন্য তালিকা ভূক্ত করলেও তাদেরকে অনুপস্থিত দেখা যায় এমন কি তাদেরকে খুজে ও পাওয়া যায় না। এবং আরো বিষয় হলো – তাদেরকে পরিশ্রমি ও সুন্দর কাজের কথা বললে তারা নিজেদেরকে অপমানিত মনে করে। পক্ষান্তরে, ভারতীয়রা কঠোর পরিশ্রম করে এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক”।

৯ ই সেপ্টেম্বর ১৯০৫ সালে গান্ধী ভারতীয় মতামতে সম্পদকীয় লিখেন এই ভাবেঃ

“ এখন আমাদের উচিৎ ভারতীয় সমাজের প্রতি নজর দেয়া – যাদের সত্যিকার কোন প্রতিনিধি নেই। যারা রাষ্ট্রের তেমন কোন সুবিধা ও পায় না । অথচ স্থানীয় নিস্কর্মা লোকেরা নানা ভাবে সরকারের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় জনগণ তাদের মহান কাজের ও স্বীকৃতি পাচ্ছেন না”।

এখানে গান্ধী  সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভু ইউরূপীয়ানদের সমর্থন করেছেন – যারা ইউরূপ থেকে এসে দক্ষিন আফ্রিকায় নিজেদের আখের গোচিয়ে নিচ্ছেন। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা সুপ্রতিস্টিত করছেন তাদের পক্ষে ছিলো তাঁর অবস্থান। তিনি সেই সময়ে শ্রম জীবি মানুষের বিরুদ্বে ভূমিকা পালন করেন।

গান্ধির কাজের কৌশল ছিলো ক্ষমতাবান শক্তির সেবা করা ও তাদের আনুগত্য প্রকাশ করা ( বিশেষ করে বর্ণবাদি পাতি বুর্জোয়াদের প্রতি ইতিবাচক কাজ করা) প্রচলিত আন্দোলন সংগ্রামের বিপরিতে অবস্থান গ্রহন করা। কংগ্রেস প্রতিস্টার মাধ্যমে তাই তিনি করেছে জীবনভর। আফ্রিকার কালো মানুষ বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা সাদা রঙের মানুষের মতই অধিকার ভোগ করতে চাইছিল। কিন্তু মিঃ গান্ধী সর্বদাই সাদা লোকেদের দালালীর করে গেছেন। এমন কি সাদা অভিবাসীদের দ্বারা সৃষ্ট দাস প্রথা, গন হত্যা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভারতীয়দের পক্ষে কথা বললেও আফ্রিকানদের পক্ষে তিনি একটি কথাও বলেননি। বরং তাঁকে নানা সময়ে এদের বিরুদ্বে কথা বলতে দেখা গেছে। ইউরোপিয়ানদের দ্বারা আফ্রিকানদের ভুমি দখলকে গান্ধি আনন্দের সাথে সমর্থন করে গেছেন। তিনি এর সাথে সাথে সাদা মানুষের পক্ষ ও অবলম্বন করে গেছেন। তিনি ভারতীয় ধ্যন ধারনায় আফ্রিকান জনগণকে ও নানা বর্নে জাত বিজাতে বিভক্ত করে দেখেছেন। ২৪ শে সেপ্টেম্বর ১৯০৩ সালে তিনি ভারতিয়দের মতামত নামক পত্রিকায় নিম্নের বিবৃতি দেনঃ

“  ইউরূপীয় অভিবাসীদের মতই আমরাও বর্ন বা জাতির বিশুদ্বতায় বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি তারা তাদের সার্থেই সেবা করে যাবে। আমরা এটা ও বিশ্বাস করি দক্ষিন আফ্রিকায় কেবল সাদা মানুষেরাই উত্তম জাতি”।

গান্ধির আনুগত্য

আনুগত্য রাজনৈতিক একটি আদর্শ হিসাবে পরিগনিত হয় – তবে এই ক্ষেত্রে  উপনিবেশবাদের প্রতি আনুগত্য একটি অপরাধ হিসাবে দেখা হয়। গান্ধী ব্রিটিশ রাজের প্রতি অনুগত ছিলেন। তিনি অনেকটা আইরিশ জাতিয়তাবাদি এম পি জন রেমন্ডের মত ভূমিকা পালন করেছিলেন। গান্ধী এমন একটি সময়ে এসে সহিংস আন্দোলন পরিত্যাগ করেছিলেন – যা সেই সময়ে ছিল অতি আবশ্যক। তিনি সেই সময়ে ব্রিটিশদের পক্ষে উকালতি করছিলেন । যখন প্রথম বিশ্ব যুদ্বের পর ইংরেজদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়ে ছিলো। আইয়ারল্যান্ডের বিপ্লবী শহিদ পেড্রোজ পিইয়ার্স যাকে এখন ও চে বাদি হিসাবে গন্য করা হয় – তিনি যখন “ মুক্তির জন্য ত্যাগ” স্বীকার করার আহবান করেন তখন জন রেমন্ড এর বিপরিতে অবস্থান নেন। তা আজো আইরিশ জাতিয়তাবাদি মুক্তি আন্দোলনের জন্য একটি জগন্যতম অধ্যায় হয়ে রয়েছে। তারা নিজেদেরকে এখন মধ্যম পন্থী বিপ্লবী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। একই ভাবে গান্ধী ও ভারতে একজন অহিংসা আন্দোলনের দূত হিসাবে পরিগনিত হন। অথচ তিনি ই ১৯১৫ সালে একজন সন্ত্রাসের মেশিন ছিলেন। তিনি ই বলেছিলেন প্রতিটি গ্রাম থেকে “আমি মাত্র ২০জন  করে লোক” চাই – এটা কি ভন্ডামী ছিল ? না , তা পরবর্তীতে পুঁজিবাদের প্রতি অনুগত্যের রূপান্তরিত হয়ে যায়। গান্ধী বলেছিলেনঃ

“ আমি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কিছু রহস্য জানতে পেরেছি এবং আমি তাঁর প্রেমে পড়েগেছি”।

কিন্তু সেই সময়ে ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমাহীন শোষণ, হত্যা নিপিড়ন অব্যাহত ছিলো। তখন ও তিনি বলছেন যে তা তিনি সমর্থন করেন – ভালো বাসেন। তা কে বলতে পারে ? কেবল মানবতার শত্রু।

একজন প্রতি বিপ্লবী হিসাবে গান্ধী

গান্ধির দর্শন ছিলো মূলত রাশিয়ার কতিপয় অভিজাত ব্যাক্তির চিন্তাধারার মত এবং তাদের দ্বারা সমর্থিত। তিনি চাইতেন এই আন্দোলন ও লড়াই যেন এমন মাত্রায় না পৌছায় যাতে সম্পদ শালীদের ভিত্ত বৈভবে কোন প্রকার ঝুঁকি সৃষ্টি করে ( পাতি বুর্জোয়া ও ভূস্বামী  শ্রেনীর)। তার উদ্দেশ্য ছিলো দেশ স্বাধীন হবে কিন্তু এখানে শ্রেণী স্বার্থ ব্যাহত হবে এমন কিছু করা হবে না। তাদের ভুমিকা হবে সাম্রাজ্যবাদী দেশের পরগাছাদের মতই। পুঁজিবাদের সেবক। তারা নানা নৈতিক বানী প্রচার করে লড়াই সংগ্রামকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে দেবে। তারা সর্ব্দাই চেয়েছে ডান পন্থীদের হাতে স্বাধিনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব থাকুক। গান্ধী ধর্মীয় আবরনে পল্লী অঞ্চলের মানুষের মন অতি সহজেই জয় করতে পেরেছিলেন। অন্যদিকে তিনি ভু স্বামী ও বুর্জোয়াদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তা এই আন্দোলন তাদের স্বার্থের কোন প্রকার ক্ষতি করবে না এবং পুজিপতিরাই বেশী লাভবান হবেন। ১৯১৯ সালে সংগ্রাম – হরতালের সময়, ১৯২১- ১৯২২ সালে শ্রমিকদের মহা বন্দ্বের সময় এবং নৌবাহিনীর বিদ্রোহের সময় গান্ধী কেবল সংস্কারের প্রস্তাব করে। তিনি ব্রিটিশদের বিদায় করার পরিবর্তে সাশনের সংস্কারের পক্ষে উকালতি করেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৪০ সালে কমরেড রজনী পাল দত্ত্ব লিখেছলেনঃ

“ ভারতীয় রাজনীতির পরিবর্তনকালে ও সংগ্রামের প্রতিটি স্তরে বুর্জোয়াদের প্রতিভূ হিসাবে গান্ধিকে আমরা দেখছি। তাই আধুনিক ভারতীয় রাজনীতিতে এই ধরনের চরিত্র আমরা আরো দেখছি ( তবে তারা কোন ভাবেই শ্রেণী স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করেন না)।সকল বুর্জোয়া শ্রেনীর লোকেরা গান্ধীর দলে সমবেত হয়েছে তাদের কাজ হল নিজেদের স্বার্থ আদায় করা ও বিপ্লবের বিপদ থেকে ভারতকে রক্ষা করা”

“গান্ধিকে স্থানীয় বুর্জোয়াদের পাশা পাশি আন্তর্জাতিক বুর্জোয়ারা ও সমর্থন যোগীয়েছে। তিনি প্রানান্তকর প্রয়াস চালিয়েছেন, বুর্জোয়া ভুমি মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে । কেননা তারা পল্লী এলাকায় দরিদ্রদের দ্বারা বিপ্লবের ভয়ে আছেন। এই আসংকার কথা ১৯২৪ সালে লর্ড মেলকম হেলী ভারতীয় সংসদে নিজের এক ভাষনে প্রকাশ করেছিলেন”।

“ অন্যান্য দেশের মত ভারতে ও কোন বিপ্লব সংগঠিত হয় তবে শ্রেণী স্বার্থের প্রভাব পড়বে জাতীয় আইন সভায় ও; ভারতীয়রা লেখা পড়াহীন হলেও তাদের রাজনৈতিক বিপ্লব সামাজিক বিপ্লবে রূপান্তরিত হবে। আর এই রূপান্তর তামন কোন সময় ও নেবে না”।

“ মহাত্মা” গান্ধিকে পাওয়ার পর সাম্রাজ্যবাদী মেলকম হেলীদের তেমন কোন ভয় না থাকলেও গান্ধী নিজেই তাঁর প্রভূদেরকে নিশ্চিত করতে এবং ভারতের পল্লীর গরীব মানুষের রক্ত চোষাদের অভয় দিতে নিম্ন লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করেনঃ

“আমাদের দল কারো কোন ব্যাক্তিগত সম্পত্তি ন্যায় সংগত কারন ছাড়া অধিগ্রহন করব না। আমরা সকলকে এই মর্মে একমত করতে চেষ্টা করব যেন প্রতেকে তাদের প্রজাদেরকে কল্যানের জন্য জমি দান করেন… আমার স্বপ্ন হলো রাম রাজ্য কায়েম করা। আমি আপনাদের সকলকে এই মর্মে আস্বস্থ করতে চাই যে কোন ভাবে শ্রেণী সংগ্রামকে আমি প্রশ্রয় দেব না… আপনার জমির মালিকানা আমি কেড়ে নেবনা। আপনি আমাকে আপনার পক্ষে যুদ্বা হিসাবে সর্বদা পাবেন…আমাদের সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ হবে অহিংস, পুঁজিবাদী ও শ্রমিকের মাঝে থাকবে সম্প্রীতি, জমিদার ও রায়তের মাঝে থাকবে পারস্পরিক সহযোগীতা”।

গান্ধী এমন ভাবে ব্যাক্তিগত সম্পদের মালিকানায় বিশ্বাসী ছিলেন, যা শ্রমিক শ্রেণী  ও সাধারণ মানুষকে শোষণ করা যায়। তিনি লিখলেন,( সকল মানুষ সমান নয় তা বুদ্বি জ্ঞান ও বর্নের মাধ্যমে পৃথক)। তাঁর ভাষ্য হলো-

“ আমার সামাজিক তত্ত্ব হলো যে, যদি ও আমরা সমান ভাবে জন্ম গ্রহন করি, তাই বলা হয় সকলেরই সমান সুবিধা পাওয়া উচিৎ। তবে আসল কথা হলো, আমাদের সকলের সমান যোগ্যতা নেই। প্রকৃতি গত ভাবে আমরা সমান বর্ন, রং, ও সম ভাবে বুদ্বিমান নই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বেশী বস্তুগত বিষয় বেশী অর্জন করে থাকেন। আবার অনেকের বুদ্বি সুদ্বি ও অনেকের চেয়ে বেশী। যোগ্যতা অনুসারে কাজ করলে অন্যের জন্য ও কিছু ফায়দা দেয়া যায়। এই লোকেরাই অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বস্থ ও নির্ভরশীল হয়ে উঠে। আমাদের উচিৎ বুদ্বিমান লোকদেরকে বেশী বেশী কাজ করতে দেয়া । কোন ভাবেই তাদেরকে কাজ থেকে বিরত রাখা ঠিক নয়” ।

গান্ধির উক্ত ভাষ্যটি হলো একটি ত্রুটিপূর্ন গুনবাদ। যুক্তির খাতিরে নৈতিক পুজিবাদিরা তা মেনেও চলেন। তবে পুঁজিবাদ উৎপাদন চক্রের কাছে বন্দ্বি থাকে। যারা বেশী উৎপাদন করেন তারা কি সত্যিকার ভাবে বেশী পায় না। বরং যারা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ পায় বা ব্যবস্থা গত কারনে মুনাফা অর্জন করেন তারা তাঁকে তাদের জন্য উপহার হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। এই কথা গুলো প্রথম বিশ্বের জন্য ও প্রযোজ্য বেশী ( তাদের পুর্ব পুরুষেরা যে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ স্থাপন করে গেছেন তাঁর ফলা ফল আজ তারা ভোগ করছেন)। এই পরিস্থিতি ভারতের ক্ষেত্রে ও প্রযোজ্য। এখানে ও অনেকেই উত্তারাধিকার সূত্রে আভিজাত্য অবস্থান লাভ করেছেন (এমন কি মা বাবার সূত্রে নিজের বর্ন পরিচয় নিয়ে ও তারা গর্বিত বোধ করেন)। ভারতের কত মেধাবী মানুষ যে লিখা পড়ার সুযোগ না পেয়েই মারা গেছেন? আর কত মানুষ মেধাবী না হয়ে ও বিপুল সম্পদের মালিকানা লাভ করেছেন ?

গান্ধী ছিলেন একজন নিবেদিত প্রান সাম্যবাদ বিরোধী মানুষ। তিনি মনে প্রানে শ্রেণী সংগ্রামের বিরোধী ছিলেন, তিনি শ্রম জীবি মানুষ মজুরী দসত্ব থেকে মুক্তি পাক । তিনি যখন দক্ষিন আফ্রিকায় বসবাস করতেন তখন থেকেই একজন প্রতিক্রিয়াশীল লোক হিসাবে ভুমিকা পালন করেছেন। সর্বদাই তিনি  “লাল বিপ্লবের” বিপক্ষে অবস্থন নিয়েছেন।

“ একটি বিষয় আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, যা কারনে কংগ্রেসের লোকেরা ও বিশেষ ভাব প্রভাবিত হয়েছেন, আমি যখন ই জনতার প্রতি আনুগত্য ঘোষনা করেছি তখনই অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করেছি যে, সারা দেশের মালিক-শ্রমিক সহ সকল স্তরের মানুষ হরতালে স্বতস্ফুর্ত ভাবে অংশ গ্রহন করেছেন। আমি শ্রমিক শ্রেনীর সর্বপ্লাবী হরতালে সত্যি বলতে কি অপ্রস্তুত হয়েছি – তা আমাকে কিছুটা হতাশ ও করেছে। আমি আশা করি আমাদের আন্দোলনে কোন প্রকার নৈরাজ্য বা লাল সন্ত্রাস থাকবে না। আমরা কোন প্রকার শ্রেণী সংগ্রাম করছি না”।

গান্ধির সময়কার সহিংসতা

গান্ধী অহিংস আন্দোলন ভারতের রাজনীতিতে তেমন কোন অর্থই বহন করে না। এই একটি দেশ তিন ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের দুটির মধ্যে তো এখন ক্রমাগত যুদ্ব লেগেই আছে। কেবল ধর্মীয় কারনে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ দেশ ছাড়া হয়েছে। দেশের মানুষকে  শ্রেণীহীন সার্বজনীন ভাবে ঐক্যবদ্ব করার পরিবর্তে সামন্তবাদি ধ্যান ধারনার কারনে হিন্দত্ব বাদের উত্থান ঘটেছে। কোন কোন এলাকায় মুসলিমদেরকে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরীকে পরিণত করেছে। দেশ ভাগের পর ও সর্বত্র সামপ্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিলো। আমরা যদি ভারতের সাথে চিনের তুলনা করি আমরা দেখতে পাব সেখানে ভারতের তুলনায় সাম্যবাদের ছাতার নিচে মানুষ অনেক সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। তাদের মাঝে সম্প্রীতি অনেক বেশী রয়েছে।

গান্ধির  জীবনী ও কর্মকান্ড বিশ্লেষন করলে আমরা দেখতে পাব যে, তিনি অতি মাত্রায় ভারতীয় ভূস্বামী, পুঁজিপতি ও সাম্রাজ্যবাদিদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তিনি প্রচীন ধ্যান ধারনা বিশৃংখল ভাবনায় আবিষ্ট ছিলেন। তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির বাহিরে তেমন কিছু ভাবতেই প্রতেন না। তিনি ভারতীয় অর্থনীতির বিকাশে আধুনিক শিল্পের ব্যবহার সম্পর্কে তাঁর কোন উদ্যোগই দেখা যায় না। তিনি বরং ব্রিটিশদের শাসন সম্পর্কে ১৯০৯ সালে একটি অর্থহীন মন্তব্য করেছিলেনঃ

“ যারা ভারত শাসন করছেন তারা সাধারণ মানুষ নয়, এরা সভ্যতার প্রতীক তারা ই আমাদেরকে রেলপথ, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, এবং নানা প্রকার আবিস্কার প্রদান করেছেন, এরা আমাদেরকে উন্নত চিকিৎসা দান করেছে। দিয়েছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা….হাসপাতাল ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি আমরা পেইয়েছি এবং ব্যবহার করছি… আমরা যদি হাসপাতাল না পেতাম তবে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতাম। আমরা নানা ভাবে যন্ত্রপাতি পেয়ে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারছি”।

গান্ধী আধুনিক সভ্যতার অপব্যাখ্যা দাড় করিয়েছেন। সম্ভবত গান্ধী পুঁজিবাদের শিল্প ভিত্তিক কলকারখানা দেখে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েচপড়েছিলেন- তিনি ভুলে গিয়েছিলেন অস্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ভারতে ব্রিটিশ ভুমিকার কথা – কি ভাবে ভারতীয় সম্পদ লোটে নিয়ে নিজেদের উদ্বৃত্ব সম্পদের পাহাড় গড়ে নিজেদেরকে প্রতিস্টা করেছিলেন। গান্ধী অক্সফোর্ডে বুর্জোয়াদের টাকায় লিখা পড়া করেছেন। তিনি মিলিয়ন মিলিয়ন দরিদ্র ভারতীয়দের কথা বেমালুম ভূলে গিয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের নুন্যতম স্বাস্থ্য সেবার কথা ও তাঁর মনে ছিলো না । পুঁজিবাদের বিকাশ কে সামগ্রীক ভাবে তিনি ভারতীয়দের জন্য আশির্বাদ হিসাবে বিবেচনা করে ব্রিটিশ দের দালালী করেছেন।

গান্ধির সামাজিক শ্রেণী বিন্যাস কেবল এক্তি কথাই ছিলো না, তা বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারা দিয়ে গেছে। ১৯৪৯ সালে চীন এবং এর মাত্র দুই বছর আগে ভারত তাদের সার্ভভৌমত্ব ঘোষনা করেছে। দুটি দেশের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করলে দেখতে পাব যে চিনের তুলনায় ভারত অনেক দরিদ্র ও গরীব। আমাদের কাছে এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, চিনে সমাজতন্ত্র জনগণকে দিয়েছে- সম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গৃহ ও সুন্দর জীবনের গ্যারান্টি। এখানে এখন আর অনাকাংখিত মৃত্যু হানাদেয় না কোন জনপদে। ১৯৮৪,১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালের ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে-

জনসংখ্যা- ১৯৪৯

চীনঃ ৫৪০ মিলিয়ন
ভারতঃ ৫১০ মিলিয়ন

জনসংখ্যা ১৯৭৯

চীনঃ ৮০০ মিলিয়ন
ভারতঃ ৬৭২ মিলিয়ন
৫ বছরের নিচের শিশুর মৃত্যুর হার , ১৯৪৫
(প্রতি ১০০০ হাজার জনে)

ভারতঃ ৪৩০
চীনঃ ৫২০

শিশু মৃত্যুর হার, ১ বছরের নিচে -১৯৪৫
(প্রতি ১০০০ হাজার জনে)

ভারতঃ ২০৩
চীনঃ ২৮০

শিশু মৃত্যুর হার, ১ বছরের নিচে -১৯৮৫
(প্রতি ১০০০ হাজার জনে)

ভারতঃ ১০৫
চীনঃ ৩৬

মানুষের গড় আয়ু, ১৯৪৯

ভারতঃ ৩২
চীনঃ ৩২

মানুষের গড় আয়ু, ১৯৮৫

ভারতঃ ৫৭
চীনঃ ৬৯

প্রতিদিন ক্যালরী গ্রহনের হার, চাহিদা মোতাবেক -১৯৮৩

ভারতঃ ৯৬%
চীনঃ ১১১%

উপরোক্ত পরিসংখ্যান প্রমান দেয় যে সাম্যবাদ চীনের শত মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। আমরা শোষকের বিরুদ্বে, নিপিড়কের বিরুদ্বে ও অত্যাচারীর বিরুদ্বে সহিংসতাকে সমর্থন করি- তাদের শান্তি, সুযোগ সুবিধা নষ্ট হোক আমরা তা চাই- তাদের জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসুক । আশাহীনতা ও অহিংসার বানী পুজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাসরা প্রচার করে। গান্ধীর উপর সেই পুঁজিবাদী  নৈতিকতা ভর করেছিলো। তিনি সেই অর্থহীন নৈতিকতার বানী প্রচার করেছিলেন। সেই চিন্তাধারার ধারাবাহিকথায় আজো ভারতের মানুষ শোষণ থেকে মুক্তি পায়নি। এখন মিলিয়ন মিলিয়ন পল্লীর মানুষ দারিদ্রের যাতা কলে নিস্পিস্ট হচ্ছে। নানা অসুখ বিসুখ তাদের নিত্য সঙ্গী। হাজার হাজার কৃষক এখন আত্ম হত্যা করে প্রতি বছর। নারীদের যোগ্য সম্মান আজো পায়নি ভারতের নারী সমাজ। সাম্রাজ্যবাদ এখন ভারতের নানা বিষয়ে উল্লেখ যোগ্য ভুমিকা পালন করে। সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি এখন ভারতীয়দের গলার কাটা হয়ে আছে।

বিপ্লবী সহিংসতার প্রশ্নে লিডিং লাইটের অবস্থান

ব্রিটিশদের সাথে মিশে গান্ধী যে রাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠেছিলেন তা মূলত নিপিড়ক শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষার ই রাজনীতি ছিলো। বুর্জোয়ারা চায় অহিংস রাজনীতি বিকশিত হোক। তবে তা কেবল নিপিরীত শ্রেনীর জন্য। অ্যামেরিকার বক্সার মুহাম্মদ আলী যখন তাঁর অধিকার জোর করে আদায় করতে চাইলেন তখনই তারা শান্তির প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু আওরা যদি অ্যামেরিকার ইতিহাসের দিকে থাকায় আমরাকি আমারিকাকে অহিংস দেখতে পাই? অস্ত্রের জন্য তাঁরাই তো বেশী বিনিয়োগ করছেন। তারা কি কুরিয়াকে দখল করতে চায় না? তারা কি হিন্ডারাসেত নির্বাচিত নেতাকে পদচ্যুত করে নাই। তারা কি কংগোতে খবরদারী করছেন না ? তারা কি মুসলিম বিশ্বের মানুষকে পাগলা কুকুরের মত নির্বিচারে হত্যা করছেন না? সেখানে নারী ও শিশুরা কি নিরাপদ থাকতে পারছেন ?

অ্যামেরিকা, ইংল্যান্ড ও ইহুদীবাদি চক্র তাদের সাথে দ্বিমত পোষন কারীদেরকে পায়ের নিচে পিষ্ট করে হত্যা করতে চাইছে। আজ তাদেরকে নিরস্ত্র করার কথা কেহই সাহস করে বলছেন না। নিপিড়িত মানুষ যখন বাঁচার জন্য অস্ত্র হাতে নেয় তখনই তারা চিৎকার করে অহিংস রাজনৈতির বয়ান দিতে থাকেন।

পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদ একক ভাবে সারা দুনিয়ায় যুদ্ব লাগিয়ে সহিংসতা চালাচ্ছে। তারা অস্ত্র বিক্রির জন্য তৃতীয় বিশ্বে নানা ভাবে চাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন। তাঁরে তাদের অস্ত্র ব্যবসাকে শিল্প হিসাবে বিকশিত করেছেন। তারা তা থেকে বিপুল পরিমান মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন। লিডিং লাইট মনে করে সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন না করতে পারলে তাদের সেই খেলাথেকে তৃতীয় বিশ্ব বাঁচতে পারবে না। তাঁর জন্য দরকার হলে – মানবতার স্বার্থে অস্ত্র হাতে সাম্রাজ্যবাদ কে মোকাবেলা করার কোন বিকল্প  পথ আছে কি? মাওয়ের ভাষ্যঃ

“ যুদ্ব হলো দুই পক্ষ মিলে পস্পর খুন করা, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বিনাস করে ঠিকে থাকার লড়াই, এভাবেই মানব সমাজ এগিয়েছে। আগামীতে ও তাই হবে। অন্য পক্ষকে বিনাসের আর কোন পথ নেই। যুদ্ব দিয়েই যুদ্ব মোকাবেলা করতে হবে। জাতীয় প্রতিবিপ্লবকে বিপ্লবী যুদ্ব দিয়ে ধমাতে হবে। প্রতি বিপ্লবী শ্রেণী সংগ্রামকে বিপ্লবী শ্রেণী সংগ্রাম দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে…. যখন মানব সমাজ শ্রেণী রাষ্ট্রের বিলুপের জন্য যাত্রা করে, যেখানে থাকবেনা কোন শ্রেণী ও রাষ্ট্রের অস্থিত্ব তখন আর থাকবেনা কোন যুদ্ব, কোন প্রতিবিপ্লব বা বিপ্লবী আন্দোলন, থাকবেনা কোন ন্যায় বা অন্যায়ের জায়গা। আর তখনই হবে মানব ইতিহাসে শান্তির প্রকৃত সময়। আমাদের জ্ঞান, বুদ্বি বলছে যুদ্বের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হলে অবশ্যই আলোকিত সাম্যবাদের পথে এগোতে হবে। সকল যুদ্বের অবসানের জন্য একটি মহান যুদ্বের সূচনা করতেই হবে”।

আমরা অতিব পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করলাম সাম্রাজ্যবাদের সামনে চিলি থেকে নেপাল, ভারত থেকে পাকিস্তানে যখন বিপ্লবীরা তাদের অস্ত্র সমর্পন করলেন তখনই সাম্রাজ্যবাদ তাদের আসল খেলা শুরু করে দিল। জনগণ তাদের আজ্ঞাবহে পরিণত হলেন। তাই আমরা ফিলিস্তিন সহ তৃতীয় বিশ্বের সকল মানুষের আহবান জানাইঃ

“ অস্ত্র হাতে নিয়েই ক্ষমতা দখল করতে হবে, সকল বিরুধের অবসান হবে কেবল যুদ্বের মাধ্যমেই, প্রতিটি বিপ্লবের উচ্চতম স্তরই হলো যুদ্ব। সার্বজনীন ভাবে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের মূল শিক্ষা এটাই। তা যেমন চীনের জন্য সত্য অন্যান্য দেশের জন্য ও সত্য”।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দির্ঘজীবি হোক !
ভারতের স্বাধীনতা দির্ঘজীবি হোক !
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দির্ঘজীবি হোক!
জনতার স্বাধীকার লড়াই সফল হোক !

Leave a Reply