গ্রীসে সিরিজা জিতেছে, এটা পরীক্ষা মূলক ঘটনা

001a (1)

(llbangla.org)

সিরিজা হলো রেডিক্যাল বামপন্থার একটি জোট যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জনপ্রীয় নেতা আলেক্স তেসিপ্রেসা, তারা বেশ একটা বড় মাত্রার বিজয় অর্জন করেছেন। গ্রীসের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সিরিযা ৩০০ আসনের প্রায় অর্ধেক অসনে বিজয়ী হয়েছে। এখন সিরিযা হলো এমন একটি দল যাতে নানা ধরনের মত ও পথের অনুসারী বামপন্থার মানুষ কাজ করছেন। ইহা ২০০৪ সালে একটি জোট আকারে প্রথমে যাত্রা করেছিলো। তবে তা ২০১৩ সালে এসে একটি পার্টিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই পার্টিতে সোস্যাল ডেমোক্রেট, মার্ক্সিস্ট লে্নিনিস্ট, ট্রটস্কিবাদি, পরিবেশবাদি, চরম বাম পন্থী ও কিছু মানবতাবাদি লোকের সমাহার ঘটেছে। সিরিজা এমন একটি পরিস্থিতে ক্ষমতায় এলো যখন পুঁজিবাদি বুর্জোয়া দল গুলো গ্রীসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে ব্যার্থ হয়েছে। মুলধারার সকল রাজনৈতিক দল ইউরূপীয় দেশসমূহ থেকে সাহায্য সহযোগীতা এনেও তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারছিলেন না । সিরিজা এমন একটি সময়ে ক্ষমতায় এলো যখন দেশে চলছে একটি মহা মন্দা ভাব ও সামাজিক, রাজনৈতিক অস্থিরতা।

সিরিজাকে ভালো ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করতে হবে কেননা এটাকে পরিক্ষা মূলক ভাবে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, উদার বাম পন্থী বা প্রথম বিশ্ববাদি চক্র পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। যদি সিরিযা নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিস্টতা অর্জন করতে না পারে তবে সেখানে গ্রীসের পুরাতন কমিউনিস্ট পার্টি কিছু আসন পেতে পারেন। এরা সিরিজার বিরুধিতা করতে পারেন। কতিপয় উদার বাম পন্থী কোন না কোন ভাবে এখন ও ক্ষমতায় বসে আছেন। এখন তারা এই পরিস্থিতিতে কি ভূমিকা পালন করেন তা ও দেখার বিষয়। আমাদেরকে এও দেখতে হবে যে সিরিজা তাদের রেডিক্যাল অঙ্গীকার পালন করেন না কি গতানুগতিক ভাবে সোসাল ডেমুক্রেটদের মতই সামাজিক সাম্রাজ্যবাদি ভূমিকা পালন করে। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, সিরিজা নামক এই সংগঠন টি নিজেদেরকে “কমিউনিস্ট” বলে পরিচয় দিয়ে থাকে । কেহ কেহ এই সংগঠনটিকে মাওবাদি বলে ও অভিহিত করে থাকেন। এদের মধ্যে গ্রীসের কমিউনিস্ট পার্টি অন্যতম। আমরা কি সিরিজাকে একটি রেডিক্যাল বামপন্থী হিসাবে বিশ্ব ব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও বিপ্লবী আন্দোলন সংগ্রামের সহযোগী হিসাবে দেখাতে পাব নাকি ফাকা আওয়াজ সর্বস্ব একটি পার্টি হিসাবেই দেখব ? এটাকি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে লড়াই সংগ্রামে বিপ্লবিদেরকে সহয়তা করবে না কি অন্যান্য সোসাল ডেমোক্রেট দলের মতই সাম্রাজ্যবাদিদের সাথে বন্দ্বুসূলভ ব্যবহার করবে ? গ্রীস কি বিশ্ব বিপ্লবের “ভিত্তি ভূমি হিসাবে” দায়িত্ব পালন করবে নাকি সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সহায়কের ভুমিকা পালন করবে ? ইহা কি বিশ্ব ব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে তৃতীয় বিশ্বকে সমর্থন দিবে না কি গ্রিস আগের মতই কাজ করে যাবে ?

আমাদের দৃস্টি ভঙ্গী হলো, প্রথম বিশ্বে আদর্শ হিসাবে কে নিজেদেরকে “রেডিক্যাল বামপন্থী” বলে পরিচয় দিলো তা কিন্তু বড় কথা নয়, সেখানে বস্তুগত সঙ্কট ও থাকতে পারে। এমন কি জনগণ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে ভোট ও দিতে পারেন, তাতে কিছুই আসে যায় না । কেননা সেখানে যারা থাকেন

তারা হলেন প্রথম বিশ্বের মানুষ। যারা ক্ষমতায় অসুন তারা সেখানে তেমন কিছুই করতে পারবেন না । কারন সেখানে বুর্জোয়া মানসিকতার লোকদেরকে পরিচালনা করতে হবে। যাদের প্রত্যাশা হলো সাম্রাজ্যবাদি ধ্যান ধারনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। প্রথম বিশ্বের জনগণকে যারাই নেতৃত্ব দিন না কেন হোক না তারা মাওবাদি, ট্রটস্কিবাদি এমন কি রেডিক্যাল বামপন্থী তারা কোন ভাবেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ভুমিকায় সমর্থন করবেন না এবং সত্যিকার প্রলেতারিয়েত বিপ্লবের সহযোগী হবেন না । যদি আমাদের ধারনা বা বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমান করা হয় তবে আমরা খুশি ই হব। আমরা এটা দেখতে পেলে খুবই আনন্দিত হব যদি প্রথম বিশ্বের মানুষ সত্যিকার ভাবেই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে এবং বিপ্লবের পক্ষে কাজ করেন বা নিদেন পক্ষে সমর্থন করেন।

তবে, আমরা যা দেখতে চাই আর বাস্তবতা সম্পূর্ন ভিন্ন বিষয়। সিরিজাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এটা আমাদেরকে নতুন ধারনা দিবে যে প্রথম বিশ্বে একটি রেডিক্যাল বাম পার্টি রাস্ট্রিয় ক্ষমতায় এলে কি কতটুকু করতে পারে তা বুঝা যাবে। ইহা আমাদেরকে প্রথম বিশ্বের প্রকৃতি ও ধরন বুঝতে নানা তথ্য উপাত্ত দিবে । আমরা প্রথম বিশ্ববাদ ভালো ভাবে বুঝতে পারব। রেডিক্যাল বামপন্থার পরিক্ষা হবে গ্রীসে। আমরা আগাম যা বলতে পারি তা হলো- সেখানে আদর্শিক বৈচিত্র বিরাজ করবে। মাওবাদ,ট্রটস্কিবাদ এবং পরিবেশবাদ ও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র ইত্যাদি। আসলে এগুলোর সমন্বয়েই সিরিযা গঠিত হয়েছে। প্যারিসে আমরা কি দেখেছি। ১৯৬৮ সালে বিপ্লব হতে পারেনি। তবে কিছু সংস্কার হলে ও রেডিক্যাল বামপন্থার রূপায়ন করা যায় নি। সেই ঘটনাবলী ও আমাদেরকে বলে যে, প্রথম বিশ্বে বিপ্লবের কোন সামাজিক ভিত্তি নেই। ইহা আরো স্পস্ট হয় যে প্রথম বিশ্বে কোন বিপ্লবের সূত্রপাত হবে না ।

লিডিং লাইট ও প্রথম বিশ্ববাদিদের মধ্যে একটি উল্লেখ যোগ্য পার্থক্য আমরা একটি ভবিষ্যৎ বানীর মাধ্যমে দেখালাম। আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ বানী যেন মিথ্যা পামানিত হয়। এখন পর্যন্ত যত তথ্য আছে, মডেল আছে তা বলছে, কেবল তৃতীয় বিশ্ব থেকেই বিপ্লবের সূত্রপাত হতে পারে। সেখানেই বিপ্লবের বস্তুগত পরিস্থিতি বিদ্যমান। আমরা আরো বলতে চাই যে, ভালো ইচ্ছা থাকা সত্বেও প্রথম বিশ্বে রেডিক্যাল বামপন্থার লোকেরা ও ফেইল করবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে দাঁড়াতে এবং প্রলেতারিয়েত বিপ্লবের পক্ষে সমর্থন দিতে। “শুনতে অবাক লাগলে ও এটাই বাস্তবতা” বস্তুগত অবস্থাই হলো আসল বিষয়। নেতারা যখনই রেডিক্যাল বামপন্থার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে যাবে তখনই প্রথম বিশ্বের কর্মীরা তার বিরুধিতা শুরু করে দিবে। প্রথম বিশ্ববাদের অনুসারী হয়ে হয়ত নেতা হয়ে থাকবেন বা মতান্ধতার বেড়াজালে আটকে যাবেন । তাই বলি সত্যিকার কিছু করতে চাইলে লিডিং লাইটে যুক্ত হোন। একেএম শিহাব।

Leave a Reply