(llbangla.org)
এখন দুনিয়ার সর্বত্র সিথ রোজেনের ‘দি ইন্টারভিউ, ২০১৪’ ফিল্মটি বিতর্কের সূচনা করেছে। ইহার প্রধান কারন হোল উত্তর কোরিয়ার উত্তরাধীকার সূত্রে ক্ষমতায় অধিস্টিত নেতা কিম জং উন সম্পর্কে নিন্দা সূচক দৃশ্য দেখানো হয়েছে। তাই সনি পিকচারের নেট ওয়ার্ককে হেক্ট করা হয়। এই ছবিটি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে নির্মান করা হয়েছে। তারা আরো বেশ কিছু প্রতিস্টানের সাইট ও হেক্ট করে। আরো হুমকি দেয় যদি এই ছবি প্রকাশ করা হয় তবে তারা আরো আক্রমণ করবে। এই কারনে কয়েকটি থিয়েটার হল এই ছবি প্রদর্শন না করার জন্য ঘোষনা করেছে। সনি এই ছবিটি প্রথমে প্রদর্শন না করার কথা বললে ও পরে তা থেকে তারা সরে এসে দেখানোর ঘোষনা করেছে। মার্কিনী ওবামা প্রশাসন এই ছবির মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে এবং কিম জং উন কে একটি সন্ত্রাসি রাষ্ট্রের ও সন্ত্রাসী প্রধান হিসাবে ছবিটিতে দেখানো হয়েছে। মার্কিনীরা যদিও উত্তর কোরিয়াকে হেকিং এর জন্য দায়ী করেছে । কিন্তু উত্তর কোরিয়া তা অস্বীকার করেছে। এ পর্যন্ত এর কোন প্রমান ও পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞ গন ও বলেছে উত্তর কোরিয়া এমন কিছু করেছে বলে মনে হয় না । এমন কি উত্তর কোরিয়া এই হেকিং এর জন্য দায়ী ব্যাক্তিদেরকে খোঁজে বেড় করার জন্য যে কোন প্রকারের সহযোগীতার আস্বাস দিয়েছে। তবে কে শোনে কার কথা। আর উত্তর কোরিয়া ই বা এই ধরনের হেকিং এর মত কাজ করতে যাবে কেন ? দুনিয়া জুড়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কর্ম কান্ডে তাদের খুব কমই ভুমিকা আছে । এই দেশটি কোন ভাবেই চীনকে ও রাগাতে চায় না কেনন না চীনের সাথে মার্কিনীদের ব্যাপক ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া অ্যামেরিকা থেকে উত্তর করিয়া বেশ কিছু সাহায্য ও পেয়েছে। মাত্র এক দশকের আগের কথা এশিয়ার মধ্যে উত্তর কোরিয়াই ছিল মার্কিন সাহায্য প্রাপ্ত সব চেয়ে আগ্রগামী দেশ । তারা ই মার্কিন সাহায্য বেশী পেয়েছে। যদি ও মাঝে মাঝে অভিযোগ উঠেছে যে ওরাই রেংগন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বোমা হামলা করতে পারে। সম্প্রতি কিছু গনমাধ্যম চিত্রায়ন করার চেষ্টা করেছে যে, উত্তর কোরিয়া কোন মাতাল রাষ্ট্র নয় । ইহা অন্যান্য সাধারণ রাষ্ট্রে মতই একটি দেশ। ইহা তার নিজে স্বার্থেই কাজ করে থাকে । তারা কাউকে আঘাত করতে চায় না । সম্ববত নিহিলিস্ট চক্র তাদের সুনাম বৃদ্বির জন্য এই হেকিং এর কাজ টি করতে পারে। আর উত্তর কোরিয়া এবং অ্যামেরিকার মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব লাগানোর মতলব ও থাকতে পারে। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার অতি উতসাহী অন্দ্ব অনুসারীরা ও এই ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে।
এই চলচ্চিত্র টি আগাম বার্তা প্রদান কারি হিসাবে নির্মিত হয়েছে। হলুদ সাংবাদিক স্কাইলার্ক (জেমস ফ্রাংকো), তাহার পরিচালক অরুন ( সিথ রিজিয়ন) এরা জানে যে, কিম নিজে কোন টেলিভিশন আলোচার বিষয় বস্তু হোক এটা তিনি পছন্দ করেন। তাই তারা অনেকটা উত্তর করীয়ার বিষয়টিকে তোলে আনার চেষ্টা করেছেন। দি ইন্টারভিউতে তাই দেখান হয়েছে। সকলকে অবাক করে দিয়ে কিম ও তাদের সাথে ঐক্যমত পোষন করেছেন। সি আই এর অবগতিতেই একজন সাংবাদিককে কিমের হত্যাকারী হিসাবে বিষ প্রদানের জন্য নিয়োজিত করা হয়। যখন সাংবাদিক উত্তর কোরিয়ায় আসেন তখন তার প্রয়োজনেই তাঁকে উত্তর কোরিয়ার গ্রামীন চিকিৎসা প্রাদান করা হয়। স্কাইলার্কের বিশেষ শো তে “মহামানব” হিসাবে দেখানো হয়। যখন কিম স্কাইলার্কের সামনে আসেন তখন তাঁকে স্কুল বালকের মত দেখায়। তারা দু জনকে খেলতে, কার রেস করতে, গল্প করতে, পান করতে ও আনন্দঘন পরিবেশে সময় কাটাতে দেখা যায়। তারা পরস্পর স্বীকার করে যে তারা কেটি ফ্রে কে ভালোভাসে। “তারা পান রত অবস্থায় বলে যে কেটি ফ্রে একজন গ্যা, তারা বলে আমরা তার শিকারে পরিণত হতে চাই না”, তারা সমস্বরে বলে উঠে অবশ্যই। স্কাইলার্কের সামনে কিম নিজেই স্বীকার সে একজন নিয়মিত গ্যা। অথচ কোরিয়ান সংস্কৃতিতে ইহা মোটেই গ্রহন যোগ্য নয়। কিম প্রকাশ্যে স্কাইলার্ককে চুমু খায়। স্কাইলার্ক ও তাই করতে থাকে অবিরত। স্কাইলার্ক কিমের বন্দ্বু হিসাবে পরিগনিত হন। তিনি কিম কে হত্যার পরিকল্পনা থেকে ফিরে আসেন। সে সি, আই, এর দেয়া বিষ কে নষ্ট করে ফেলে ।
স্কাইলার্ক এক সময় বুঝতে পারে যে তার সাথে প্রতারনা করা হয়েছে। সকল কিছুই মিথ্যা । এ পর্যন্ত যে সকল গাল গল্প হয়েছে সবই ভূয়া। কিম একজন পাগল ছাড়া কিছুই নয়। সে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ব চাপিয়ে দিতে চায়। সে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। কোরিয়ানরা কিম কে এক ভিন্ন ইমেজে গড়ে তুলতে চায়। দি ইন্টারভিউতে কিম বিরোধী মানুষকে বেড় করে আনার প্রায়স করেন। এই ছবিতে কিম কে একজন মিথ্যুক হিসাবে দেখানোর প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। জনতার মাঝে কিম বিরোধী মনোভাবে প্রদর্শন করতে থাকেন। দি ইন্টারভিউতে দেখানো হয় সাংবাদিক কিম কে হত্যা করে এবং সাংবাদিক পালিয়ে যায়। সি
আই এ কেবল মৃত কিম কেই পেল না বরং তারা বিপ্লবের রং ফিকে হতে দেখলো। স্কাইলার্ক এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এর পর এমন কোরিয়াকে দেখানো হলো যে, যারা সাম্রাজ্যবাদের শত্রু নয় বরং তারা তাদের বন্দ্বু।
এই ছবিটি উদারতাবাদিদের অন্যান্য ফালতু কাজের একটি, যা সাম্রাজ্যবাদকে শক্তিশালী করে দেয়। এই ফিল্ম টি আমারিকান টিমঃ বিশ্ব পুলিশ (২০০৪) এর মত একই ঢঙ্গে নির্মিত হয়েছে। যা উত্তর কোরিয়ার আদর্শের সাথে সরাসরি সাংগর্সিক হিসাবে গন্য। উত্তর কোরিয়া বিষয়ে নির্মিত এই দুইটি ছবিতেই মার্কিনীদের মুর্খতা প্রকাশ পেয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়া মার্কিনীদের এসবের জবাব খুব জোরালো ভাবে দেয় নাই। মার্কিনীরা বরাবরই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্বে প্রচার করে স্থানীয় যুব, উদার পন্থী বুদ্বিজীবীদেরকে আয়ত্বে আনার চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু তারা সর্বদাই ব্যার্থ হয়েছে। মার্কিনীরা উত্তর কোরীয়ার নানা সমস্যাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালালে ও কোন ফলাফল অর্জন করতে পারে নাই। এটা সত্যি যে উত্তর কোরিয়া সমাজতন্ত্রের জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই করছেন না। তারা চরম জাতিয়তাবাদি, জাতি গর্ভি ও সৌভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে ধার করা কিছু নীতি তারা মেনে চলেন। এটা ও সত্য যে এটা এক ধরনের রাজতন্ত্র। পিতার কাছ থেকে পুত্র ক্ষমতা গ্রহন করে থাকেন। তারা যদি ও দাবী করেন যে তারা স্বনির্ভর কিন্তু বিপুল পরিমান বেদেশী সাহায্য তারা গ্রহন করে থাকেন। এই দেশটি অনেক ক্ষেত্রেই হাস্যকর ভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। ধর্ম, ব্যাক্তিবাদ, এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা তাদের রাষ্ট্রের একটি বিশেষ অনুসংগ। নিজেদেরকে আবার খাটি মার্ক্সবাদি বলে ও দাবী করে থাকে। তারা মার্ক্সবাদের নামে কিমবাদ কায়েমে ব্যস্ত। এটা ও সত্যি যে এরা নিজেদের দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্পোরেশন গুলোকে অনুমোদন দিয়ে রেখেছে। শ্রমিকেরা সেখানে কাজ করে ও তেমন ভালো আয় করতে পারেন না। তথ্য বলছে এশিয়ার মধ্যে সব চেয়ে কম মুজুরী হলো উত্তর কোরিয়ায়। উত্তর কোরিয়ার মানুষের জীবন যাত্রার সাথে অ্যামেরিকার মানুষের জীবন যাত্রার তোলনা কোন পাগল ও করতে যাবে না। আজকের কোরিয়ানদের জীবনে যে যন্ত্রনা তার জন্য দায়ী তো এই অ্যামেরিকা ই। এই প্রসংগে নোয়াম চমস্কি লিখেছেন-
“১৯৪৫ সালে যখন অ্যামেরিকা কোরিয়ায় প্রবেশ করলো, তারা প্রথমেই স্থানীয় আন্দোলন সংগ্রামকে নিরুৎসাহিত করতে চাইলো। সেই আন্দোলন গুলো ছিলো জাপানী সাম্রাজ্যবাদের ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্বে। মার্কিনিরা জাপানীদের সহায়তায় সেই আন্দোলন গুলোকে নির্মম ও নির্দয়ভাবে কোরিয়ার মানুষের আশা আকাংখাকে দমন করে। সেই সময়ে প্রায় ১০০,০০০ মানুষকে তারা হত্যা করে। কেবল সুউজি দ্বীপে ৩০ -৪০,০০০ হাজার দরিদ্র কৃষক মারা যায় আগ্রাসী বাহিনীর হাতে”। (১)
১৯৫০ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের সময় প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। কোন কোন পরিসংখ্যান বলছে মার্কিন আগ্রাসনে ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যান। মার্কিনীরা গনহত্যা, রাষয়নিক অস্ত্র ব্যবহার এবং প্রকাশ্যে শহরে ও গ্রামে বমম্বিং করে মানুষ হত্যা করে। উদাহরন হিসাবে আমরা এখানে সিচুয়ান প্রদেশের কথা বলতে পারি, যেখানে জন সংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ লোককে হত্যা করা হয়েছিলো। যুদ্বের সময়ে কোরিয়ান রিফিউজিরা যখন দেশ ত্যাগ করছিলো তখন আমেরিকানরা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। কয়েক হাজার মানুষকে তারা কেবল রাস্তায় হত্যা করে । একটি স্বাধীন কমিশন মার্কিনীদের শীর্ষ ২০০ বৃহৎ আক্রমনের মধ্যে এটা ছিলো অন্যতম। যা তাদের সাধারণ জনগণের উপর বৃহৎ অপরাধ সমূহের অন্যতম। এছাড়া তাদের উত্তর কোরিয়ার উপর মার্কিনীরা ও তাদের দোষরদের আরোপিত অবরোধ কোরিয়ার হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। মার্কিনীদের আগ্রাসনের কারনে কোরিয়ান মানুষ কষ্ট করেছেন এখন ও করছেন। কেবল যে কোরিয়াই কষ্ট করছে তা নয়, বরং তৃতীয় বিশ্বের মানুষের বিরুদ্বে সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরতিহীনভাবে সামারিক ও অর্থনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। (২)(৩) এই ছবিটি দি ইন্টারভিউ সরাসরি ভন্ডামী করে যা প্রকাশ করলো তা কোন ভাবেই গ্রহন যোগ্য হতে পারে না। উত্তর কোরিয়ার চেয়ে বহু গুন বেশী পারমানবিক অস্ত্র অ্যামেরিকার কাছে আছে। যারা আমাদের সুন্দর দুনিয়াটাকে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে। আর আমেরিকাই হলো সেই দেশ যারা এ পর্যন্ত দুই স্থানে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে মানবতার বিরুদ্বে। হত্যা করেছে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ। উত্তর কোরিয়াকে অস্ত্রহীন করার চেষ্টা একেবারেই যৌক্তিক নয়। কেন না উত্তর কোরিয়া এখনো মার্কিন মুল্লুকে কাউকে হত্যা করেনি। কারো উপর পারমানবিক অস্ত্র ও ব্যবহার করেনি, এমন কি কোন দেশকে ও আক্রমন করেনি। আজকের দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ বা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে পরিমান সমস্যার সৃষ্টি করেছে সেই তুলনায় উত্তর কোরিয়া যা করছে তার তুলনা করলে দাঁড়ায় এক ফোটা পানির সাথে সমূদ্রের তুলনার মত। কেবল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়ায়
যত বোমা ফাটিয়েছে, গুপ্ত হত্যা করেছে, নির্বাচিত হত্যা, ও অবরোধ করে যত মানুষ নির্মূল করেছে তার সংখ্যা বিলিয়ন এর কম হবে না । এই ফিল্মটিতে মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত বিষয় ই তোলে ধরা হয়েছে। তবে উরা যাই করুক না কেন তাতে মূলত মার্কিনীদের মুর্খতারই বহি প্রকাশ ঘটেছে । মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে মার্কিনীরা যে চলচ্চিত্র নির্মান ও প্রদর্শন করেছে – তাতে কোন শিল্পের চাপ নেই, নেই কোন সৃজনশীলতা বরং এটা একটি বিরক্তিকর এঘেয়েমি মার্কা ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সিথ রোজেন্স এক জন নিম্ন মেধার মানুষ তার অন্যান্য কাজের মধ্যে “দি ইন্টারভিউ” ছবিটি ও একটি বস্তাপচা মাল হিসাবে পরিগনিত হবে । জনগণ তা প্রত্যাখান করবেন। ধিক্কার জানাবেন সারা দুনিয়ার মানুষ। শিহাব