জ্ঞানগত পঙ্গুত্ব প্রসঙ্গে-

thumb-1-300x300

(llbangla.org)

মানুষের জ্ঞানগত পঙ্গুত্ব প্রসঙ্গে জরাতুস্ট্রু মন্তব্য করেছেন, ফ্রেডারিক নিতসে আধুনিক শিক্ষিতদেরকে সমালোচনা করেছেন যাদেরকে সামাজে প্রতিভাবান হিসাবে সম্মানিত করা হয়ে থাকে।

“ সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা তেমন কিছুই জানেন না, তবে হয়ত কেবল কোন একটি মাত্র বিষয়ে একটু বেশী ই জানেন- আসলে তো মানুষ আর কিছু নয়, যার আছে দুটি বড় চোখ, বড় মূখ, একটি পেট অথবা আরো বড় জিনিসের মালিক। আমি তাদেরকেই জ্ঞানে পংগু হিসাবে বিবেচনা করে থাকি।

‘ এবং আমি যখন একাকিত্ব থেকে ফিরছিলাম এবং প্রথম যখন একটি পোল অতিক্রম করছিলাম আমি তখন আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমি বার বার দেখছিলাম এবং বলতে বাধ্য হলাম, ‘ একটি কান ! একজন মানুষের কান এত বড় ! অমি গভীর ভাবে দেখছিলাম – এবং সত্যি, কানের নিচ দিয়ে কিছু বিষয় চলে যাচ্ছিলো, তা এত ক্ষুদ্র, নগণ্য এবং তুচ্চ  বিষয়। এতে কোন সন্দ্বেহ নাই যে, এই আশ্চর্য্যজনক কানটি এত ক্ষুদ্র ও হালকা ভাবে মানুষের সাথে মিশে আছে ! যদি কেহ একটি আতস কাচের গ্লাস ব্যবহার করে কিছু দেখেন তখন তিনি অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যিনি ও দেখতে পাবেন; ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুজীবকে ও বৃহৎ আকারে দেখতে পাবেন। তবে, অনেকে আমাকে বলেন, মহান মানুষ কেবল শোনেই জ্ঞান অর্জন করে না, বরং তার মাঝে প্রতিভা ও বিদ্যমান। মানুষেরা যখন মহান ব্যাক্তিদের কথা বলেন তখন আমি তা একেবারেই বিশ্বাস করিনা । কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, এই ধারনা এক প্রকার জ্ঞানগত পঙ্গুত্ব। যারা অনেক কিছু ই জানেন কিন্তু কেবল একটি মাত্র বিষয়ে বেশী জানেন’।

যখন জরাতুস্ট্রু তার অনুসারী ও আদর্শ প্রচারকদেরকে প্রত্যাবর্তনের কথা বলেন, এবং তাদেরকে ফেরার তাগিদ দেন তখন তিনি তাঁদের নিকট গিয়ে বিনয়ের সাথে বলেন, ‘ আমার প্রিয় বন্দ্বুগন ! আমি মানুষের মাঝ দিয়ে, মানব শরীরের খন্ড বিখন্ড এবং মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্য দিয়ে বিচরন করেছি। তা ছিলো আমার জন্য বেদনা দায়ক, আমি তা দেখে সহ্য করতে পারছিলাম না, আমি দেখছিলাম মানুষের খন্ড বিখন্ড লাশের স্তূপ। সেটা কি কসাইদের বধ্যভূমি নাকি যুদ্বের মাঠ। আমি সেই মাঠের সর্বত্র একই দৃশ্য অবলোকন করেছি। আমি সেখানে মানুষ দেখিনি – দেখেছি কেবল মানুষের খন্ড বিখন্ড লাশের টুকরার স্তূপ”।

এমন রষায়নবিদ আছেন যিনি বেটোফেন সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এমন প্রকৌশলী আছেন যিনি কান্টের দর্শন পড়েন নি। এমন অর্থনীতিবিদ আছেন যিনি কখনও শেক্সপীয়ার পড়ে দেখেন নি। এমন ঐতিহাসিক আছেন যিনি আইনস্টাইন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। এমন শীল্পি আছেন যিনি কার্ল মার্ক্স পড়েন নি। এমন সমাজ বিজ্ঞানী আছেন যিনি নিঊটনের নিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। এমন অনেক পদার্থ বিজ্ঞানী আছেন যিনি শয়তানের অস্থিত্বে বিশ্বাস করেন।

বুর্জোয়া শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষী করনের প্রক্রিয়া উচ্চ মার্গে অবস্থান করছে। এর লক্ষ্যই হলো অতিমাত্রায় একজন মানুষকে একটি মাত্র ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ বানিয়ে দেয়া। এরা সাধারনত ব্যাপক বিস্তৃত পরিসরে কোন শিক্ষাকে উৎসাহিত করেনা। ইহা কেবল পদার্থ বিজ্ঞান বা প্রকৌশল বিদ্যার বেলায় নয় বরং সকল প্রকার মানবিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ও একথা প্রযোজ্য। এক জন ব্যাক্তি হয়ত তার নিজের চোখে দুনিয়াকে দেখে, এবং সে তার সাধ্যমত কাজ করে। প্রত্যেকে তার নিজস্ব দক্ষতানুসারে নিজের সমস্যাকে বিশ্লেষণ করে, তবে সে বৃহত্তর পরিসরে সমস্যাটা দেখতে পায় না। ইহা মানুষের জ্ঞান বুদ্বিকে একপেশে করে দেয়। মানুষকে তার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি সামগ্রীক বিশ্লষনী প্রক্রিয়া এখন আর শেখানো হয় না। এখন কার লোকেরা অনেক ক্ষেত্রেই বিচ্ছিন্ন ও সামঞ্জস্যহীন দুনিয়ায় বসবাস করতে অব্যস্থ হয়ে উঠছেন। এটা অনেকটা অন্দ্বত্বের মত। এই সুন্দর ভূবনের একটি মাত্র ক্ষুদ্রাংশ হয়ত ভালো ভাবে দেখতে পাবে, কিন্তু এই বিশাল দুনিয়ার অপার সুন্দর্য্য হয় দেখতেই পাবেন না।

এই পরিস্থিতিটা এখন বুর্জোয়া সামাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পরছে। আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশী শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত মানুষের দেশ হলো অ্যামেরিকা। সেখানে সম্প্রতি একটি জড়িপে দেখা গেছে যে, বেশীর ভাগ মার্কিনীরা আক্ষরিক অর্থেই বেহেশত ও দুযখ বিশ্বাস করেন এবং ডারউইনের বিবর্তনবাদের ত্বত্ত্বকে শয়তানী ত্বত্ত্ব মনে করেন। ৮২% বলেছেন তারা ইশ্বরে বিশ্বাসী। ৭২% বলেছেন তারা যীশুকে সয়ং ইশ্বর বা ইশ্বরের পুত্র মনে করেন। ৬২% বিশ্বাস করেন শয়তানে আর ৭৯% বিশ্বাস করেন অলৌকিকত্বে।

জরাতুস্ট্রু জ্ঞানগত পঙ্গুত্বের বর্ননা করতে গিয়ে সমাজকে “ মানব শরীরের খন্ড বিখন্ড ও অঙ্গ   পত্যঙ্গ”, “যুদ্বের মাঠ ও কসাই খানায় ধ্বংস প্রাপ্ত এবং বিক্ষিপ্ত” , “ একটি দুর্ঘটনায় ভয়ংকরভাবে খন্ড বিখন্ড মানব দেহ ও অঙ্গ পত্যঙ্গ – কিন্তু একটি ও মানুষ নেই”। নিতসের রাজনীতি যথার্থ না হলেও এক অর্থে তিনি সঠিক। তিনি পুর্নাংগ মানুষের কথা বলেছেন। যা পুঁজিবাদী সমাজে পাওয়া সম্ভব নয়। নিতসে কি দেখেছেন – “ কসাইয়ের বধ্য ভূমি ও যুদ্বের মাঠে” – সাম্রাজ্যবাদের নির্মম তাবায় সীমাহীন সহিংসতায়  মানবতার খন্ড বিখন্ড লাশের স্তূপ, পুঁজিবাদের শোষণ, বুর্জোয়া সমাজের মূর্খতা ও হীনমন্যতা ইত্যাদী। মানবতা এখন ভীত সন্ত্রস্ত্র – কেননা বুর্জোয়া সমাজ এখন তাঁদের মহান ব্যাক্তিদের দ্বারা, শয়তানী বুদ্বিতে ও আস্ত্র শস্ত্রে  সুসজ্জিত হয়ে দৈত্ত্বের রূপ ধারন করে  আছে। নিতসে তো মার্ক্সের কথাই বলে গেছেন, যখন তিনি বুর্জোয়া সমাজের অসঙ্গতি ও দ্বন্দ্বের কথা বর্ননা করলেন। তিনি বললেন, সমাজের বুদ্বিমত্ত্বায় ও বোকামীতে দ্বন্দ্ব, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও তাঁদের ব্যার্থতায় দ্বন্দ্ব তা যেমন সমাজে ঠিক তেমনি আবার ব্যাক্তি পর্যায়ে বিদ্যমান । আর ইহা হলো বুর্জোয়া সমাজের আসল চরিত্র।

নিতসের বক্তব্য ছিলো বিভ্রান্তি মূলক, যা নিহিলিজম,অযৌক্তিকতা,ব্যাক্তিবাদ এবং ঐতিহ্যবাদের একটি জগাকিছুরীর সমাহার। যরতুস্ট্রু তার কথা বলতে গিয়ে ও অস্পস্টতায় ভূগেছেন। তার ভাষায় ‘অতিমানব’ ত্বত্ত্ব মানুষকে অবদমিত করেছে। আর সেই কারনেই নিতসে তার চিন্তাধারায় জার্মান ফ্যাসিবাদকে প্রসঙ্গীকতা দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। ফ্যাসিবাদ নতুন একটি সমাজের সূচনার বা পুনঃ সূচনার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে দেয়। তা ছাড়া গুরুত্ববাদ, নায়কবাদ সহ নানা নেতিবাচক উপাদানের জন্ম দেয়। ইহা  সমাজকে,সংস্কৃতিকে ও বুদ্বিমত্তাকে বিকৃত করে। ফ্যাসিবাদ অসংখ্য প্রতিভাকে বিনাশ করে দেয়, এবং মানুষের জ্ঞানগত পংগুত্বকে বৃদ্বি করে। ইহা যুদ্বের কলা কৌশল ও যন্ত্রপাতিকে বিকশিত করে দেয়। মার্টিন হেইগার নাজি বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন এই আশায় যে, তিনি আধুনিক সমাজ ব্যবস্থাকে গোড়াতেই ধ্বংস করে দেবেন। তিনি অবশেষে বুঝতে পেড়েছিলেন যে, ফ্যাসিবাদ মূলত প্রকৌশলিক দর্শনের ই একটি ভিন্ন  ও যান্ত্রিক চিত্র। হেইগারের পর, হার্ভার্ট মার্কিঊস দেখালেন যে, পাশ্চাত্যের উদারতাবাদ ও সৌভিয়েত ইউনিয়নের সমাজ আদতে একই মূদ্রার এপিট উপিট ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি ও তারা স্ব স্ব দর্শন আলাদা আলাদা ভাবে হাজির করে ছিলেন। তাঁদের উভয়ই প্রকৌশলগত ( কি ভাবে) জ্ঞান অর্জনে যত তৎপর ছিলো তারা কেন ? জ্ঞানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গুরুত্বই আরোপ করেন নি। জ্ঞানের উদ্দেশ্য ছিলো আমরা কিভাবে সকল কিছু অর্জন করতে পারব। সকল কিছু কেন অর্জন করতে চাই তার প্রতি কোন নজরই দেয়া হয়নি। তারা উভয়ই “যান্ত্রিক ব্যবস্থার” উন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন – অন্য কোন দিকে তাঁদের তেমন কোন খেয়ালই ছিলো না।

সৌভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্র বিনির্মানের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ সমূহ খুবই কার্যকরী ছিলো। সৌভিয়েত উন্নয়নের কর্ম পরিকল্পনাটি প্রধানত উৎপাদন শক্তি ত্বত্ত্বের দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত ছিলো। যার ভিত্তিই ছিলো প্রকৌশলগত দিক সমূহ। ইহা বিপ্লবী শক্তি ও আদর্শগত দিক সমূহের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। যেমন- শ্রনী সংগ্রাম। এর অর্থ হলো  সাম্যবাদ বিনির্মানের জন্য যখন কেবল প্রযুক্তির উন্নয়ন নির্ভর হয় তখন তার প্রভাব শিক্ষা ও সংস্কৃতির উপর ও পরে। প্রযুক্তিই শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। পাশ্চাত্যে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি বিভাগ নির্ভর। তারা উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তির বাহিরে কিছুই ভাবতে পারেনা। সৌভিয়েত ও এক সময় এই পথে নিজেকে শপে দেয়। পরিনামে সংশোধনবাদ সেখানে দানাবাধে। নিজেদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য পাশ্চাত্যের ধাঁচে     তৈরী করার প্রয়াস চালায়। এই অবস্থায় যখন সৌভিয়েত নেতারা সমাজতন্ত্রে সিমাবদ্বতা দেখতে পান তখন তারা ধনবাদকে কায়েম করতে উৎসাহিত হয়ে উঠেন। যদিও সেই সময়ে চীনের মাওবাদিরা সেই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন কিন্তু পরে তারা ও সেই পথে হাটলেন এবং ধনবাদ কায়েম করলেন।

 মার্ক্স “যুদ্বের মাঠ অথবা একটি কসাইদের বধ্যভুমি”র সমাধান দিতে গিয়ে বলেছেন, ধনবাদকে সাম্যবাদের রূপান্তর করতে হবে। ধনবাদ নিজেই নিজের কবর খুড়েঃ প্রলেতারিয়েত তৈরী করে। ধনবাদের বিজ্ঞান একটি ও একমাত্র কর্মকৌশল, সে তার আওতাধীন জনগণকে যরাতুস্ট্রের ভাষায় জ্ঞানের পঙ্গু হিসাবে গড়ে তোলে। তবে বিজ্ঞান যখন বুর্জোয়া সমাজের মালিকানাকে অস্বীকার করে এগিয়ে যেতে চায় তখন ই আমাদের প্রচলিত সমাজ আঁতকে উঠেলে ও তার সম্ভব। অধুনিক সমাজের সম্ভাব্য বিপদ সমূহকে এড়ানো সম্ভব। একজন মহান বিপ্লবী নেতার সর্বদাই এক পা থাকে ধনবাদি সমাজের মাঝে আরেক পা থাকে প্রলেতারিয়ান সমাজে। মার্ক্স জন্মে ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারে আর বিয়ে করেছিলেন একটি ক্ষুদ্র অভিজাত পরিবারের কন্যাকে, পরে তিনি নিজে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। তিনি নিজেকে প্রলেতারিয়ানদের মুক্তির জন্য নিবেদিত করেন, লিখেন অতি মূল্যবান বই, পস্তক ও প্রবন্দ্ব। যা তাকে তিলে তিলে দারিদ্রতার দিকে নিয়ে যায়। মার্ক্সের  পা ছিলো উভয় সমাজের মাঝে। লেনিন ও বেশ উচু শ্রেণী থেকে এসেছিলেন। তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনি ও তার জীবনকে মানুষের সেবায় নিয়ূজিত রাখেন। হয়ে উঠেন বিপ্লবী এবং প্রলেতারিনাদের নেতা। মাওসেতুং এসেছিলেন একটি কৃষক পরিবার থেকে, তবে তারা বেশ স্বছল থাকায় শহরে এসে পড়া লিখা করতে পেরেছিলেন। তিনি তার সময়কার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পেরেছিলেন। লেনিন ও মাও এই দু জনের ও উভয় সমাজে বিচরন ছিলো। একজন বিপ্লবী নেতা হলেন সমাজের সেতু বন্দ্বন যিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করে সাধারণ মানুষের কাছে তা কে নিয়ে যেতে পারেন। এক জন সত্যিকারের লিডিং লাইট সমাজ পরিবর্তনের জন্য সেতু হিসাবে কাজ করেন। ধনবাদ নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনছে। ইহা মানুষের জ্ঞানের জগতকে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছে। প্রলেতারিয়ান লড়াই হলো সকল প্রকার নিপীড়ন ও নির্যাতনের অবসান ঘটানো। ইহা সামগ্রীকভাবেই সামাজিক পরিবর্তন সাধন করতে চায়। ইহা সমাজের বুদ্বিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক অসামঞ্জস্যতাকে চীর তরে উতপাঠন করতে বদ্বপরিকর। জ্ঞানগত পংগুদের পরিবর্তে প্রলেতারিয়ান বুদ্বিজীবীদেরকে সমাজে প্রতিস্টিত করতে চায়। একজন লিডিং লাইট হলো একজন গনযুদ্বা। তা পুরাতন শক্তিকে অপসারণ করা নতুন শক্তির জন্মদান করতে চায়। এই নতুন শক্তির মাঝে থাকবে একটি সুস্থ্য সংস্কৃতির চর্চা। সেখানে মার্ক্সবাদ জয়ী হবে যেখানে নিতসেবাদ ব্যার্থ হবে।

বিপ্লবী আন্দোলন একটি জটিল প্রক্রিয়া। সৌভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মহা পরজয়ের পর, প্রলেতারিয়েত আন্দোলন নিজেকে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করছে। লিডিং লাইট এই অন্দ্বকার অবস্থাটার অবসান করতে চাইছে। একটি বিপ্লবী বিজ্ঞান এবং সকল প্রকার শক্তি নিয়ে লিডিং লাইট কমিউনিজম পুনঃ এগিয়ে আসছে। এখন এর একটি রূপান্তর বা পরিবর্তীত প্রক্রিয়ার সময় চলছে। ইহা এখন নেতৃত্বের স্তর থেকে গন মানুষের স্তরে সঞ্চালিত হচ্ছে। ইহা একটি শক্তি শালী দু ধারী তলোয়ারের মত – যা জনগনের হাতে হস্তান্তর করা হচ্ছে। একটি নতুন শক্তির বীজ বপন করার কাজ চলছে। তবে এটা ও সত্য যে একেই সময়ে বুর্জোয়া সংস্কৃতির বিকাশ ও ঘটছে ব্যাপক ভাবে। তা সত্বেও আমাদের বিপ্লবী আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিদিন সফলতার দকে দাবিত হচ্ছে। শ্রেণী সংগ্রাম প্রতিনিয়ত জোরদার হচ্ছে তা বিপ্লবের পটভূমি তৈরী করছে। শ্রেণী শত্রুর দল আমাদের উপর উপর্যুপরি আঘাত হানলে ও তারা আমাদের  বিজয়কে ঠেকাতে পারবে না। উদাহরণ হলো – আমাদের শত্রুরা নানা ভাবে আমাদের মঝে কিছু ‘না করার মতবাদ’ এবং ‘কাপুরুষচিত সিংহবাদ’ এর জন্ম দিচ্ছে। এই দু টি ভূল ধরনা সামগ্রীক ভাবে জ্ঞান গত পঙ্গুত্ব জন্ম দিতে পারে । তা যেন কোন বিপ্লবী বাহিনীকে আক্রান্ত করতে না পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের সকলকেই।

বহু সংশোধন পন্থী মানুষ আছেন যারা প্রধানত মার্ক্সীয় পুস্তকাদী থেকে উদ্বৃতি ব্যবহার করেন। নিজেদেরকে গোড়ামীবাদি হিসাবে সকল ক্ষেত্রেই ভুমিকা নেন। তারা সামাজিক মাধ্যমে  ইতিহাস, সামাজতন্ত্র ও  রাজনৈতিক অর্থ নীতি বিষয়ে তর্কে  ও অংশ নেন । কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে  প্রয়োগের ক্ষেত্রে  এইসকল মার্ক্সবাদি – লেনিনবাদি – মাওবাদি রা সকলেই একই প্রকৃতির আচরন করেন। তারা ও ট্রটস্কীবাদিদের মত স্বর্গ থেকে নামতে চাননা বা কার্ম ক্ষেত্রে যেতে লজ্জিত হন। তারা মূখে বড় বড় কথা বলেন কিন্তু কাজ করেন খুবই কম। তারা বড় জোড় আনুষ্টানিকতা ও প্রথম বিশ্ববাদীদের  মত প্রদর্শনী মার্কা কাজ করে থাকেন। যিদিও তারা মার্ক্সের কার্যক্রমের নানা উদাহরন ও ব্যাখ্যা করে থাকেন তাতে মূলত তারা সেই দার্শনিকদের মতই যারা কেবল নানা ভাবে দুনিয়ায়াকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন তাকে বদলের জন্য চেষ্টা করেন না । তারা লেনিন ও মাওয়ের বই থেকে অনেক বক্তব্য উদৃত করেন কিন্তু তারা এর মর্মাথ বুঝতে পারেন না । তারা এটা অনুধাবনই করতে পারেন না যে এখন কি কি  করা উচিৎঃ বিপ্লব অর্থই হলো ক্ষমতা দখল করা । ইহার দাবী হলো সকল ক্ষমতা করায়ত্ব করা। ইহা কেবল মাত্র কথা বলা নয় বা মানুষকে স্বপ্ন দেখানো নয়। পেরুর কমরেডরা একটা শ্লোগান দিত- “ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়া, সকল কিছুই কল্পনা বিলাস”। তাই সকল বিপ্লবী আন্দোলন সংগ্রামের লক্ষ্যই হলো রাস্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। যদি আমরা ক্ষমতা দখল করতে না পারি, তবে আমাদের সকল কথা বার্তা, সকল পোস্টারিং কেবল স্বপ্ন বিলাস ই থেকে যাবে। আমরা ও বুদ্বিবৃত্তিক পংগুত্বে ভোগতে থাকব। আমরা এক দল বিপ্লবী তে পরিণত হব যারা কেবল পূর্বের বিপ্লব নিয়ে গর্ব করেই খালাস। আমরা গতানুগতকতায় ঘুরপাক খেতেই থাকব। নতুন ধারনার নতুন ভাবনার বা দর্শনের জন্ম দিতে পারবনা।

বিচ্যুতি সর্বদাই বিপ্লবী আন্দোলনকে নিশ্চল করে দেয়। বিপ্লবী নেতাদেরকে বিশেষভাবে সমাজে প্রদর্শন করা হয়। তাঁদের সামাজিক অবস্থান অস্থিত্বিই বড় হয়ে দেখাদেয়। সংগঠন সমূহ ও তাঁদের জন্ম দিবস পালন ইতিহাস নিয়ে মেতে থাকে। মার্ক্সের কার্যক্রম বর্তমান বিপ্লবীদের কাজের সাথে মোটেই মানানসই নয়। এখন কার বিপ্লবীরা কেবল  সমস্যার বিশ্লেষণ করে স্তুপিকৃত করছে। কিন্তু কোন কাজ নেই। কমিউনিস্ট মেনোফেস্টো শেষ করা হয়েছিলো সংশোধনবাদের বিশ্লষন দিয়ে – যাতে শ্রেণী চেতনায় ফেরত যাওয়া যায়। লেনিন তাকে আরো এগিয়ে নেন। মাও এর উপর আরো একটি বিশাল কাজ করে গেছেন- ‘দলীয় ভূলত্রুটি সংশোধনের ধারনা’।

জ্ঞানগত পঙ্গুত্ব বুর্জোয়া সমাজে থেকেই যাবে । অন্য দিকে কিছু মানুষ সুর চিৎকার কতেই থাকবেন। কাপুরুষ সিংহের দল গুঞ্জন চালিয়েই যাবে। কৌতক কারারীর দল কৌতুক করেই যাবে। আর এসব কিছু চলবে ধনবাদের রাজত্বে। আমাদেরকে বাস্তবতার আলোকে আমূল পরিবর্তনে উদ্যোগী হতেই হবে। ক্ষমতা গ্রহন করা ছাড়া সকল কিছুই স্বপ্ন বিলাস। আমরা বিজ্ঞানী এবং যুদ্বা – আমাদের হ্রদয় ও মেধা আছে। সংগঠন, নেতৃত্ব, বলিদান, দায়িত্ব পালন করা, সম্মান ও ইজ্জত দান করা এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করার সকল ব্যবস্থাই আমাদের আছে। ইহা অতি কথার ফুলঝুড়ি নয় – ইহা বিজয়ী হওয়ার মৌলিক উপাদান। জনগণকে সেবা করুন; পৃথীবীকে বাঁচাও । মানুষের জন্য পৃথিবীর জন্য বাচ ও মর। আমারা আমাদের জিবনকে বন্দুকের ট্রিগারে নিয়ে চলেছি। লিডিং লাইট দির্ঘ জীবী হোক ! আমাদের সূর্য উঠছে ! আমাদের দিন আসছে !#শিহাব          

Leave a Reply