ট্রটস্কী জিকির করছেন কারা ?

(llbangla.org)
ট্রটস্কী জিকির শব্দটি বর্তমানে প্রথম বিশ্বের জনপ্রিয় শব্দ ভান্ডারে  একটি প্রচলিত শব্দ। যদি ও এর রং লাল ও সেমেটিক বিরোধী । বিশেষ করে বুশ প্রশাসনের সময় এই শব্দটি বেশী জনপ্রিয়তা আর্জন করে। ইহা যথাযথ ভাবেই ট্রটস্কিবাদ এবং কিছু নীতি নিধার্নকারি গ্রুপ এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পরে ।এই প্রবণতা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের সময় ও রক্ষণশীল প্রজন্মের মাঝে দেখা দিয়েছিল। দি এস ডব্লিউ পি- ইউ এস এ, পার্টিতে ট্রটস্কিবাদী জিকিরের উৎপন্ন হয় । খুবই মোলায়েম ভাবে তারা ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্রকারি নয় বলে বয়ান করেন, যদি ও তারা লেন্ডন লা রুচি এবং পেট বোখাননের  আবিস্কৃত বিভ্রান্তিকর তত্ত্বের সাথে অঙ্গাংগি ভাবে জড়িত। যদি ও তারা মাথায় হাত রেখে শপথ করে তার বিরুধিতা করেন । কিন্তু তাত্ত্বিক ভাবে  ট্রটস্কিবাদ ও সাম্রজ্যবাদের মধ্যে একটি গভীর যোগসূত্র রয়েছে  । নতুন জিকির কারক স্টিপেন সোয়র্জ অতিব গর্ভ সহকারে ট্রটস্কিবাদকে তুলে ধরেন, তিনি এমন কথা ও  বলেন যে, আমি আমৃত্যু ট্রটস্কিবাদী থাকবো, তার জন্য আমি অনুতপ্ত নই।সৌভিয়েত ইউনিয়নে মহান লেনিন ও স্ট্যালিনের সময়ের বহু আগে থাকেই ট্রটস্কি নিজেই প্রলেতারিয়ান বিরোধী ক্ষমতার লড়াইয়ে মত্ত ছিলেন। ১৯২৬ সালের সূচনায় বিখ্যাত ক্লেমেন্সিও  ডিকলারেশনের সময় সৌভিয়েত ইউনিয়নে সাম্রজ্যবাদের আগ্রাসনকে ট্রটস্কি স্বাগত জানাতে চেয়েছিলেন স্বীয় ক্ষমতাকে পাকাপুক্ত করতে  ; ঠিক বলশেভিকরা প্রথম বিশ্ব যুদ্বের পর  যে ভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। ট্রটস্কি তাঁর বাহিনিকে ঠিক সেভাবেই প্রস্তুত করেছিলেন। ১৯৩০ সালে ইউরোপ বিভক্ত হয়ে পরেছিল ফ্যাসিবাদের পক্ষে  এবং বিপক্ষে। ট্রটস্কি নিজে যদিও ফ্যাসিবাদের সমালোচনা করেছেন কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে সেই ভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি । তিনি বরাবরের মত স্তালিনকে সৌভিয়েত ইউনিয়নের জন্য বিপদজ্জন বিবেচনা করেছেন, এমনকি দ্বতিয় বিশ্বযুদ্বের সময় ও তাঁর এই ধারনার কোন হেরফের হয় নি।  একদা ট্রটস্কিবাদ বলতে বুঝানো হত ইউক্রিনের স্বাধিনতা, ১৯৩৯ সালে ট্রটস্কি ইহার সমর্থক ছিলেন। ট্রটস্কি ইউক্রেনের স্বাধীনতার জন্য এমনকি সৌভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে গৃহ যুদ্ব বাধাতে ও রাজি ছিলেন, ইহা ও আবার নাযিবাহিনির আগ্রাসনের পুর্ব মুহুর্তে।” রাশিয়ার একটি বুলেটিন (৮২-৩) ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল,১৯৪০ নিম্ন লিখিত  বক্তব্য প্রকাশ করে যা সানডে এক্সপ্রেসে ও স্থান পায় …’আমি সৌভিয়েত ইউনিয়নের জন্য বিপদের কারণ হিসাবে স্তালিনকেই মনে করি, তাঁর একনায়কত্ব এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি খুবই বিপদজনক, তাই তাঁর বিরুদ্বে প্রকাশ্যে যুদ্বে নামা দরকার, জনমত রক্ষা ও সৌভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থে,।” এতে কোন সন্দেহ নাই যে, ট্রটস্কি ১৯১৭ সালের মতই ১৯২০ সালের ক্লেমেন্সিও ঘোষণাকে একই রকম  মনে করতেন। তিনি এও আশা করতেন যে, সৌভিয়েত ইউনিয়ন যেন নাজিদের মতই একটি আগ্রাসী দেশ হিসাবে আভির্বুত হয়। নাজিরা যেভাবে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকা পুক্ত করেছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্বের পর। ১৯১৭ সালের বিপ্লবোত্তর অবস্থায় ও সৌভিয়েত ইউনিয়ন ও সেই পথেই এগোবে। ট্রটস্কি গভীর ভাবে বিশ্বাস করতেন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্বকে বিপ্লবী লাল মোড়কে স্তালিন ও সৌভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিরোদ্বে চালিয়ে দিবেন। তিনি ভেবে ছিলেন নাজিদের ট্যাঙ্কের উপর ভর করে ক্ষমতায় অভিষিক্ত হবেন। যেমনটি লেনিন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্বকে পরাজয়বাদের নামে বিপ্লবী যুদ্বে পরিণত করেছিলেন। ট্রটস্কির এই কৌশলকে আমরা লেনিনের কাছ থেকে ধার করা পরাজয়বাদী প্রতি বিপ্লব বলতে পারি।এই ধরনের চরম পন্থার প্রতিক্রিয়াশীল কর্মকান্ড ছিলো ট্রটস্কির রাজনীতির এক বিশেষ উপাদান।

তবে, এখানেই ট্রটস্কিবাদের রাজনীতি শেষ নয়। ট্রটস্কি তাঁর চিন্তা ভাবনায় প্রতিনিয়ত স্ববিরুধিতা, দন্দ্ব, ও টানাপুরনে ভোগতেন । ফলে ট্রটস্কিকে একই সময়ে আবার সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্বে একজন ব্যক্তি হিসাবে আমরা দেখতে পাই। ইহা ট্রটস্কির অনুসারীদের মাঝেও আমরা দেখে থাকব। এদের মধ্যে ম্যক্স সেক্তম্যান উল্লেখযোগ্য । তিনি ট্রটস্কির পরাজয়বাদী প্রতি বিপ্লবকে অধিকতর বিকশিত করেন। তিনি বলেন, “স্তালিনবাদ হলো এক নতুন বর্বতাবাদ”। ১৯৩৯ সালে যখন সৌভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড দখল করে তখন সেক্তম্যান জেমস বার্নহ্যমকে সমর্থন করে আমেরিকাকে সৌভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক না রাখার আহবান জানায়। তাঁরা এও বলেন যে, সৌভিয়েত ইউনিয়ন এখন আর কোন সমাজতান্ত্রিক দেশ নয়, তাকে আর সমর্থন করা যায় না। সেক্তম্যান পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সুরমিলিয়ে সৌভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্বে লেগে গেলেন। ট্রটস্কির মত সেক্তম্যান ও স্তালিনকে দুনিয়ার জন্য বিপদ জনক ব্যাক্তি হিসাবে প্রচারে নামলেন । সেক্তম্যান ও সাম্রাজ্যবাদীদের মতই স্তালিন বিরোধী প্রচারে নামলেন এবং সাম্রজ্যবাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়ে স্তালিন বিরোধী কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িত করলেন। সেক্তম্যানের মত ট্রটস্কি বাদের জিকির কারীরা ক্রমে তাদের সমর্থক বাড়াতে লাগলেন এবং তথাকথিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক অনুস্টানের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্বের বিপক্ষ শক্তিকে সহায়তা করতে চাইলেন। ট্রটস্কিকে যদি বলা হয় ট্রটস্কিবাদের জিকির কারিদের পিতা তবে সেক্তম্যানকে বলতে হয় তাদের মাতা। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হোল যে, ইতিমধ্যে ট্রটস্কিবাদিদের দ্বিতীয় প্রজন্মের উন্মেষ ঘটেছে। তাঁরা উচ্ছ শিক্ষিত ও সামাজিক ভাবে মর্যাদা সম্পন্ন। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যারা ট্রটস্কিকে পছন্দ করতেন তাদের অনেকেই মার্কিনিদের দালালে পরিনত হইয়েছেন। ট্রটস্কিকে বলা হয় সাম্রজ্যবাদের সমর্থক তৈরির মেশিন, তিনি সর্বদাই এই কাজটি করেছেন। আজ ও তাঁর অনুসারীদেরকে আমরা প্রথম বিশ্ববাদের সমর্থক ও মেকি সমাজতন্ত্রের সমর্থক হিসাবেই দেখতে পাচ্ছি।

আমরা  সুযোগবাদি মানসিকতা ট্রটস্কির সাম্রাজ্যবাদের মাঝে দেখতে পাই, কিন্তু এর শিকর ট্রটস্কিবাদের অনেক গভীরে পুতিত রয়েছে এবং তা আমরা ট্রটস্কির নিজের আদর্শের মাঝেই দেখতে পাব। ট্রটস্কিবাদের মুল বক্তব্যই হোল উৎপাদন শক্তির বিকাশ এবং তাঁর যমজ ভাই নিরন্থর বিপ্লবের কর্মপন্থায়। উৎপাদন শক্তির প্রতিপাদ্য বিষয় হোল বিপ্লবকে এগিয়ে নেয়ার জন্য  কেবল মাত্র অর্থ- নৈতিক উন্নয়নের বিষয় গুলোকে জোরদার করা। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ভুল পাঠ যারা নিয়েছেন তাদের মতে, পশ্চিম ইউরোপের মত আর্থ- নৈতিক উন্নতি না হলে সমাজতন্ত্রের বিনির্মান সম্ভব নয়, অর্থাৎ সমাজতন্ত্র সমাজে কায়েম করতে চাইলে কম পক্ষে পশ্চিম ইউরোপের মত অর্থ নৈতিক উন্নতি চাই। এই দৃষ্টিভঙ্গী ট্রটস্কি নিজে পোষণ করতেন, তাঁর ভক্ত অনুরক্তরা ও তাই মনে করেন। তাদের কথা হোল সমাজতন্ত্রের আগে চাই -পশ্চিম ইউরোপের মত পুঁজিবাদ। প্রকৃত মাওবাদিরা এই সকল মেকি মাকর্সবাদিদেরকে প্রত্যাখান করেন। মহান মাওসেতুং দুনিয়ার মানুষের সামনে দেখিয়েছেন যে, নয়া- গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কিভাবে একটি আধা-সামন্ততান্তিক সমাজে সমাজতন্ত্র কায়েম করা যায়। মাও দেখিয়ে গেছেন কিভাবে সাধারন মানুষের ক্ষমতাকে পরিচালনা করে সাম্রজ্যবাদের পতন ঘটিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েম করা যায়। সকল সামজতান্ত্রিক ইতিহাসে মাওসেতুং এঁর পদক্ষেপ গুলোর সত্যতা পাওয়া যায়। ১৯৩০ সালে অনেক প্রতিকূলতা থাকা সত্বেও স্তালিনের নেতৃত্বে সৌভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের বিকাশ হয়েছিলো। স্তালিন বলেছিলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাজতন্ত্র কায়েম করা দরকার। স্তালিনের বিখ্যাত উক্তি হোল সৌভিয়েত ইউনিয়ন খুব তাড়াতাড়িই পশ্চিমকে ধররে ফেলবে বা তাদেরকে ও ছাড়িয়ে যাবে। সৌভিয়েত ইউনিয়নে কেবল মাত্র একটি শক্তি শালী অর্থ নৈতিক ভিত্তিই গড়ে তুলেনি তারা বরং ইতিহাসের সর্ব বৃহৎ প্রলেতারিয়ান গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও গড়ে তুলে ছিলেন। ১৯৩০ সালেই সৌভিয়েতের বিশাল অর্জন ও এর জীবন্ত উদাহরণ উৎপাদন শক্তি তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমান করে দেয়। ১৯৩০ সালের পরবর্তি সময়ে উৎপাদন শক্তি ও নিরন্থর বিপ্লব তত্ত্বকে সকলেই প্রত্যাখান করেন। কিন্তু আজ ও ট্রটস্কির অনুসারীদের মাঝে কেউ কেউ সেই বাস্তবতাকে না বুঝে -‘ একদেশে সমাজতন্ত্র’  এবং তাঁর পুর্ব শর্তাবলী মানতে পারছেন না। দার্শনিক হেরি হে হুড বলেছেন, ট্রটস্কিকে একজন কল্পনাবাদি ও পরাজয়বাদের অনুসারী বলা যায়।

“ ১৯২২ সালের পর, ট্রটস্কি সরাসরই লেনিনবাদি বিপ্লবী তত্ত্ব ও প্রলেতারিয়ান একনায়কত্ব ধারনার বিরোদ্বে আক্রমন করেছিলেন। তিনি দৃঢ় ভাবেই একটি মাত্র দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করা ও এর প্রয়োজনীয়তার বিরোধীতা করেছিলেন। এই বিরোধিতার মধ্যদিয়ে তিনি মার্ক্সীয় তত্ত্ব ও বিপ্লবী আন্দোলন সংগ্রামের পথ ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়ই তিনি তাঁর নিরন্থর বিপ্লবী তত্ত্বের প্রচার শুরু করেন। যার প্রধান বক্তব্য ছিলো সৌভিয়েত ইউনিয়নে নয় বরং অধিকতর অগ্রসর শিল্প উন্নত দেশেই সমাজতন্ত্র কায়েম করা সম্ভব।

সেই সময় তিনি নিজেই বাম সুর পাল্টে – শ্রেনি সংগ্রামের পথ বাদ দিয়ে পরাজয়বাদের পথ ধরেন এবং শ্রেনী সমন্বের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। উদাহরন হিসাবে ১৯২২ সালে তাঁর শান্তির জন্য কর্মসুচি উল্লেখযোগ্য। এতে তিনি বলেন, “ যেহেতু ইউরোপের দেশ সমুহে বুর্জোয়ারা ক্ষমতায় অধিস্টিত সেহেতু আমাদের উচিৎ অর্থ নৈতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বেড়িয়ে আসা এবং পুঁজিবাদী দেশ সমুহের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমাদের আর্থিক দুর্বলতা গুলো কাটিয়ে উঠা । আমাদের আরো এক কদম এগিয়ে যাওয়া  দরকার। রাশিয়ায় প্রকৃত সমাজতন্ত্রের সাফল্য আসবে তখনই যখন ইউরোপের অন্যন্য দেশে প্রলেতারিয়ানরা বিজয়ী হবে ও সমাজতন্ত্র কায়েম করবে।”

ট্রটস্কি ও তাঁর অনুসারীরা পশ্চাৎপদ  সৌভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র কায়েমের বিষয়টি একেবারেই নাকচ করে দিয়েছিলেন। আর কায়েম করলে ও সমাজতন্ত্রের বিকৃত রূপে যা ট্রটস্কির চিন্তাধারা ‘নিরন্থর বিপ্লব’ মোতাবেক যেটুকু সম্ভব। আর প্রকৃত সমাজতন্ত্র কায়েম হবে বলশেভিকদের সহায়তায় অন্য কোন শিল্পউন্নত দেশে।

যারা এখন ও এই চিন্তাধারা পোষণ করেন তাঁরা মনে করেন যে, প্রথম বিশ্বের সহায়তা ছাড়া তৃতীয় বিশ্বের কোন গরীব দেশে বিপ্লব সাধন করা সম্ভব নয়।  তাই তাঁরা ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় প্রথম বিপ্লব করার জন্য যুক্তি দেখান। সেই কারনেই ট্রটস্কি ও তাঁর আধুনিক অনুসারীরা চলমান দুনিয়ার প্রধান দ্বন্দ্ব সাম্রজ্যবাদ ও শোষিত জাতি সমুহের মাঝে দ্বন্দ্ব হিসাবে মানতে নারাজ। তাঁরা মনে করেন যে, জাতিয় স্বাধীনতার আন্দোলন সংগ্রাম তৃতীয় বিশ্বের প্রলেতারিয়ানদেরকে দুর্বল করে দিবে। তাঁরা হলেন প্রথম বিশ্ববাদের পূজারী, তাদের প্রধান কাজ হলো উৎপাদন শক্তি তত্ত্ব ও ট্রটস্কির নিরন্থর বিপ্লব তত্ত্বের প্রচারক। জেমস বার্নহ্যম ও ম্যাক্স সেক্তম্যান ট্রটস্কির সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন,  তাদের বক্তব্য হোল সৌভিয়েত ইউনিয়নের উৎপাদন প্রক্রিয়া  মোটেই সমাজতান্ত্রিক ছিলনা বরং তা  ছিল সম্মিলিত আমলাতান্ত্রিক, যা পুঁজিবাদের চেয়ে ও বিপদজনক। সেক্তম্যান আর ও এক কদম এগিয়ে গিয়ে বলেছেন এটা ছিলো দাস শ্রমিকদের বাজার। এই ধরনের দাবি কেবল মাত্র সাম্যবাদ বিরোধী ও বুর্জোয়ারাই করতে পারে। স্নায়ুযুদ্বের সময়ে ও কোন আমেরিকান এই রূপ মন্তব্য করেনি।  ট্রটস্কিবাদীরা এভাবেই পশ্চিমা সাম্রজ্যবাদীদের চাইতেও অগ্রসর হয়ে সামাজিক পরিবর্তন চাইছিল। তাদের মুল কথা ছিল সমাজতন্ত্রের পূর্বশর্ত হোল পশ্চিমা ধরনের আধুনিক পুঁজিবাদ। তাঁরা আর ও যুক্তি দেখায় যে, সাম্রাজ্যবাদ পশ্চিমা ধাঁচের পুঁজিবাদের ও আধুনিকতার আমদানি করেছে, সাম্রজ্যবাদ একটি প্রাগ্রসর বিষয় তাকে সমর্থন করা দরকার। এই লাইনটি ছিল মুলত সি,আই এর লাইন। অবাক হবার কিছু নেই যে, বেশ কিছু দিন আগে থেকেই কমিউনিস্টরা সমাজতন্ত্রে উপনিত হবার প্রচেষ্টা চেড়ে দিয়েছিল। সমাজতন্ত্রের পথ ছেড়ে ট্রটস্কিপন্থীরা সাম্রাজ্যবাদকে গ্রহন করে এবং পশ্চিমা উদারতাবাদ ও আধুনিকতা আমদানিতে লেগে যায়। তাঁরা মুক্ত দুনিয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠে।স্টিফেন সোয়ার্য মিঃ বুশের জাতি-ঘটনের মহাপরিকল্পনা ও ট্রটস্কির পশ্চিমা আধুনিকতার আমদানি  ও তাঁর মস্তিক জাত নিরন্থর বিপ্লবের একটি তুলনা করেছেন। বুশের দ্বিতীয় বারের উদ্বোধনী ভাষণে  বলেছিলেন- “ আমাদের দেশের স্বাধীনতার বিকাশ নির্ভর করছে অন্যান্য দেশের স্বাধীনতার সফলতার উপর’।  ইহা ট্রটস্কিরি।পুরাতন বোতলে নতুন মদ রাখার মতই ; সৌভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের বিকাশ নির্ভর করছে অন্যান্য দেশে সমাজতন্ত্রের বিকাশের উপর। ট্রটস্কিবাদের নতুন জিকিরকারি স্টিফেন  সোয়ার্স পরামর্শ দিয়েছেন, ‘যারা দুনিয়াময় গনতন্ত্রের জন্য কাজ করছেন তাঁরা যেন ট্রটস্কিকে গুরু হিসাবে গ্রহন করেন’।”  ট্রটস্কির তত্ত্ব উৎপাদন শক্তি, নিরন্থর বিপ্লব ও সমাজতন্ত্রের সমালোচনা সরাসরি প্রথম বিশ্ববাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এটা কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয় যে, ট্রটস্কিকে যারা গুরু মানেন তাঁরা এখন চরম ডানপন্থার নীতি নির্ধারক ও অনেক ক্ষেত্রে রক্ষনশীল ও বটেন। সৌভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদেরকে বলে য, অনেক বৈরী পরিবেশে ও সমাজতন্ত্র কায়েম করা সম্ভব। সত্যিকার অর্থে বৈরী পরিবেশই হোল বিপ্লবের উপযুক্ত সময় ও স্থান। মহান লেনিন বলেছেন, দুর্বল গ্রন্থি থেকেই বিপ্লবের সূচনা হয়। যখন পুরাতন সমাজ অচল হয়ে পর,  তখনই এর উৎপত্তি হয়। নতুন সমাজ সেই স্থান দখল করে। প্রলেতারিয়ান ও তাঁর সমর্থকগন খুবই দৃঢ় মনের অধিকারি হয়। তাঁরা জনগনকে বুঝাতে পারেন যে তাঁরাই চলমান সকল সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম।  স্ট্যালিনের সময়কালের শেষের দিকে সৌভিয়েত ইউনিয়ন পারমানবিক শক্তির অধিকারি হয়, এবং প্রযুক্তিগত ভাবে পশ্চিমা দুনিয়ার সমকক্ষ হয়ে উঠে। মানুষের গড় আয়ুস্কাল পশ্চিমা দেশের সমপর্যায়ে উন্নিত হয়। প্রকৃত সমাজতন্ত্রের চর্চা আমাদেরকে চোখে আঙ্গল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, উন্নয়ন ও জনগণের ক্ষমতায়ন সমাজতন্ত্রের সাথে বৈরী নয়। সৌভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে প্রলেতারিয়ান নেতৃত্বে যে অভুতপুর্ব উন্নতি লাভ করে তা বিগত কয়েক দশকেও সাম্রজ্যবাদের আওতায় তাঁরা তা করতে পারেনি। যারা সাম্রাজ্যবাদের ছায়য় আছেন তাঁরা ও কি তা পেরেছেন ?

ট্রটস্কি পন্থী স্টিফেন সোয়ার্সের মতে, রক্ষনশীলতাবাদ ও ট্রটস্কীবাদের মাঝে একটা ‘ মানসিক , আদর্শিক ও বুদ্বিবৃত্তিক  সম্পর্ক গড়ে উঠেছে’। কেউ কেউ হয়ত বলবেন যে, রাজনৈতিক ঘটনা চক্রে ট্রটস্কিবাদের সাথে রক্ষনশীলতাবাদের একটা সমন্বয় হয়ে গেছে। যদি ও এই রূপ সম্পর্কের সাক্ষাৎ মিলে কোন কোন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক বামদের ও মাঝে  । যারা কমুনিজমের সাথে সর্বদাই বৈরিতা বজায় রেখে চলেছেন। ট্রটস্কিবাদকে আমরা প্রথম বিশ্ববাদ বলেই মনে করি। কেননা, ইহা তৃতীয় বিশ্বের বিরুদ্বে এবং প্রথম বিশ্বের পক্ষে লড়াই করছে। এই অর্থে ইহা প্রথম বিশ্ববাদি ফ্যাসিবাদের ও সমর্থক। অনেক আগেই তাঁরা রক্ষনশীলতাবাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। ট্রটস্কিবাদ সাম্রাজ্যবাদ এবং সাদা জাত্যাভিমানের পক্ষে কর্মরত। সকল ট্রটস্কিবাদিই সর্বদা ট্রটস্কির জিকির করেন। একে এম শিহাব।

Leave a Reply