স¤প্রতি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা অথবা লুলা আমাদের পরিবেশ সংকট ও প্রথম বিশ্বের দায়িত্ব সর্ম্পকে মন্তব্য করেছেন, লুলা বলেছেন যে, প্রথম বিশ্ব ও পশ্চিমা বিশ্ব তথা অ্যামাজানিয়ান দেশ গুলোকেই গাছ পালা নিধনের কর্মকান্ড প্রতিরোধের জন্য যথাযথ মূল্য পরিশোধ করতে হবে ।
“আমি চই না কোন প্রথম বিশ্বের কেহ এসে বলুক যে, আমাজানের লোকেরা গাছ তলায় না খেয়ে অনাহাওে মারা যাক…আমরাও গাছ পালা বাঁচাতে চাই, তাদেরকেই তার জন্য খরচ বহন করতে হবে, কারন আমরা তাদের মত পরিবেশ ধ্বংস করিনি, গাছ পালা কাটিনি তারাই তা কওে এসেছে বিগত কয়েক শতাব্দী যাবত ”। আমাজানিয়ান দেশগুলোর একটি সম্মেলনে তিনি এই মতামত প্রকাশ করেছেন ।
লুলার উপদেশক, র্মাকোঅঁরিলিও গার্সিয়া বলেন,
“ ইউরূপের প্রতিটি মানুষের আমাজান সর্ম্পকে নানা প্রাকার মতামত রয়েছে , তাদের অনেকেরই হলো ইহা একটি চিড়িয়াখানা এখানে প্রবেশের জন্য প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করতে হবে .. অথচ তারা জানেন না যে এখানে ৩০ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত আছেন ” ।
আমাজানে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করছেন, এবং ২৫ মিলিয়ন লোক বসবাস করছেন ব্রাজিলিয়ান আমাজান এলাকায়, আমাজানের ৬০% এলাকা ব্রাজিলে অবস্থিত যা সমগ্র পূর্ব ইউরূপের চেয়ে ও বড় হবে |
ব্রাজিলে অরণ্যনিধনের মাত্রা অনেক কমিয়ে এনেছে , ।এটা এ দশকের সর্বনিম্ন হার । এমন কি , অতীতে ৭০০০ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূমির গাছ পালা বিনাশ করা হয়েছে প্রতি বছরে যা আমেরিকার রাজ্য দিলওয়রের সমান । কারণ ব্রজিলের তুলনামূলক উন্নয়ন কৌশল, অরণ্য বিনাশ প্রতিরোধে কোন কোন দেশ কিছু মূল্য প্রদান করেছেন । উদাহরণ হিসাবে নরওয়ের কথা উলেখ করা যায় । নরওয়ে ব্রাজিলকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার প্রদান করবে অরণ্যবিনাশ প্রতিরোধের জন্য । আমাজান অরণ্য বাঁচাবার জন্য তহবীল গঠন কারী প্রথম দেশ হলো নরওয়ে । ব্রাজিল সরকারীভাবে ২১ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবীল গঠনের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেছে । যাতে তারা তাদের কাটুরে, কৃষক ও অন্যান্য লোকদেরকে সচেতন করে তাদের সমস্যার সমাধান করার জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রয়োজনীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে এবং পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করতে পারে । প্রথম বিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলো যেমন, জাপান,সুইডেন,জার্মানী, সাউথ কোরিয়া এবং সুইজারল্যান্ড ও এই তহবিলে অনুদান করার প্রদানের জন্য চিন্তাভাবনা করছে । এই অনুদান কারীদের তালিকায় আমেরিকার নাম দেখা গেলে অবাক হওয়ার কোন কারন নেই ।
মানবতার প্রতি প্রথম বিশ্বের পরিবেশ সংক্রান্ত ঋন সম্পর্কে কেবল মাত্র লুলাই বক্তব্য রাখেননি বরং আরো অনেকেই এরূপ মনোভাবের কথা প্রকাশ করেছেন । ঠিক লুলার মতই বক্তব্য রেখেছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের কর্মকর্তা জেন পিং তিনি গত বছর প্রথম বিশ্বকে তাদের পরিবেশ নষ্ট ও ধ্বংস করার অপরাধে জরিমানা প্রদানের আহবান জানিয়েছেন । হিসাব অনুসারে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কারণে যে গ্রীনহাউস গ্যাস উদগিরন হয় তা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মাত্র এক তৃতীয়াংশ দায়ী অথচ এর প্রভাবে কষ্ঠে পরবে সেখানকার ৮০% মানুষ । পিংএর মতে, কেবল মাত্র আমেরিকার টেক্সাসে বসবাস কারী ৩০ মিলিয়ন জনগণই এর চেয়ে বেশী গ্রীনহাউস গ্যাস উদগীরন করে থাকে । যা আফ্রিকার বিলিয়ন জনগনের চেয়ে ও বেশী হবে ।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্রাজিলের জনগনের তুলনায় প্রথম বিশ্বের বিশেষ করে আমেরিকার জনগণ অনেক অনেক ।উন্নততর জীবনযাপন করছে । প্রায় ৩৫%, ৬৭ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান জনগন দিনে ২ ডলারের ও কম আয় করে থাকে । বিশেষভাবে ব্রাজিলের গ্রাম গুলো মারাত্মক দারিদ্রতায় ভোগছে । ৫১% গ্রামীন জনগণ দিনে মাত্র ২ ডলারের ও কম রোজগারে বেঁছে আছে । অর্থাৎ ১৮ মিলিয়ন মানুষ এর চেয়ে বেশী রোজগার করতে পারছেন না ।এই অবস্থাই ব্রাজিলকে পশ্চিম গোলার্ধের একটি বিশাল জনসংখ্যার দরিদ্র মানুষের দরিদ্রতম দেশে পরিনত করেছে । উলেখ্য যে, ব্রাজিলের এই কষ্টকর দরিদ্র পরিস্থিতি প্রথম বিশ্বের কারনেই সূদীর্ঘ কাল বিরাজ করছে । অথচ প্রথম বিশ্বের সকল মানুষের আয় ই আর্ন্তজাতিক আয়ের ২০% এর মধ্যে পড়ে। প্রতিটি আমেরিকান নাগরীকের আয় আর্ন্তজাতিক আয়ের ১৩% এর মধ্যে পড়ে । একজন মার্কিন নাগরিক যিনি আমেরিকার তথাকথিত দরিদ্র রেখার নিছে বসবাস করেন, তিনি হলেন বিশ্বের ১৩% ধনীদের একজন । তিনি আর্ন্তজাতিক হিসাবে শির্ষ ২০% ধনী, বিশেষ করে প্রথম বিশ্বের সুবিধাভোগী যারা পৃথিবীর সম্পদের এক চর্তুথাংশ ভোগ করেন তাদের মধ্যে পড়েন । আর আমেরিকার কর্মরত প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যারা কাজ করে তাদের আয় শির্ষ ১০ শতাংশের মাঝে পড়ে । শির্ষ ধনী ১০ শতাংশের ব্যাক্তিগত ভোগের জন্য যে খরচ হয়, তা পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের অর্থাৎ ৫৯ % ভোগের সমান । অন্যদিকে, ব্রাজিলের দরিদ্র জনগন যারা প্রতিদিন ২ ডলার বা তার ও চেয়ে কম রোজগার করে অন্নহীন বস্রহীন ভাবে দিনাতিপাত কওে থাকে । অথচ আমেরিকার মাুষের গড় আয় বছরে ৩২,০০০ ডলার বা তার ও বেশী ।
প্রথম বিশ্বের মানুষেরা পৃথিবীর বেশীরভাগ সামাজিক উৎপাদন ভোগকরে থাকে । চলমান বিশ্ব ব্যবস্থা প্রথম বিশ্বকে সহায়তা করে থাকে তৃতীয় বিশ্বকে নয় । প্রথম বিশ্বে প্রায় সকল মানুষেই প্রচুর্যময় জবিন যাপন করে, অথচ অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ কেবল মাত্র বেঁেচ থাকার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। প্রথম বিশ্ব এখনও তৃতীয বিশ্বের পরিবেশ দুষন, গাছ পালা নিধন, এবং বহু অনাকাঙ্খীত বর্জ্য যা প্রথম বিশ্বের ঠিকে থাকার জন্য সৃষ্ট, যা তৃতীয় বিশ্বের জন্য তৈরী হয়নি । অধিকন্ত বলতে হয়, প্রচলিত ব্যবস্থা ও এর সংকট রাতারাতি তৈরী হয়নি । বর্তমানে গাছ পালা নিধনের ফলে যে সংকট তৈরী হয়েছে তা বিশ্বে বিগত ১০০ শত বছরে ক্রমে ক্রমে তা তৈরী হয়েছে । সাম্রাজ্যবাদী দেশ গুলো পৃথিবীর স্থানে স্থানে অরণ্য নিধনের যজ্ঞ চালিয়েছে । এটার মূল কারণ হলো সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের সহযোগীগণ প্রথম বিশ্বের মানুষের জীবন যাত্রার নান্দনিকতা বজায় রাখার জন্য পৃথিবী নামক গ্রহের আকাশকে ও দুষিত করেছে । তারা বিগত ১০০ শত বছর যাবত চালিয়ে আসা তাদের ভূল নীতির সকল দায় দায়িত্ব তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কাঁেধ চাপিয়ে দিতে চায় ।
তৃতীয় বিশ্বকে মুক্ত করার জন্য কেবল প্রথম বিশ্বের বিনাশ প্রয়োজন তা নয় বরং বিশ্ব মানবতাকে এবং আগামী প্রজন্মকে নিরাপদ করার জন্যই এটা দরকার । মোট কথা হলো, প্রথম বিশ্বের মানুষের জীবন যাত্রার মান বজায় রাখার জন্য প্রচলিত ব্যবস্থা পরিবেশ গত ভাবে ঠেকসই নয় । পুঁজিবাদ প্রথম বিশ্বেও মানুষকে সেবা দান করে থাকে, এটা সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষকে সেবা প্রদান করে না তাদের কোন স্বার্থ ও দেখে না । পুঁজিবাদ কোন যৌক্তিক মতবাদ নয় ; যদি ও বিগত ১০০ মত বছর যাবত পৃথিবীর মানুষ তার যন্ত্রনা ভোগ করছে । মানবতার চাহিদা নয়, ন্যায় বিচার নয়, নয় কোন যৌক্তিকতা, মুনাফা শিকার করাই হলো এর চালিকা শক্তি । এর বিপরীতে হলো সমাজতন্ত্র, তার সকল আয়োজন সকল উদ্যোগ হলো মানবতার সেবা করা । সমাজতন্ত্র বর্তমান মানব সমাজ ও আগামী প্রজন্মের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সবকিছু করে থাকে । সমাজতন্ত্র বর্তমানের জন্য আগামীকে কোরবানী করে না । সমাজতন্ত্র ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে না, যাতে এক শ্রেণীর মানুষ আরেক শ্রণীর মানুষের জীবনের বিনিময়ে বেচেঁ থাকতে হয় । প্রথম বিশ্ব পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী তাই তাদেরকেই এর ঋন পরিশোধ করতে হবে । তৃতীয় বিশ্বের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে একটি গনযুদ্ধের ভেতর দিয়ে তা আদায় করে ছাড়বে । অনুবাদ : একেএম শিহাব