(llbangla.org)
সম্প্রতি ফ্রান্সে আই এস আক্রমণ করেছে এবং সেখানে ১৩০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমরা আবারো জিজ্ঞাসা করতে চাইঃ আসলেই কি আই এস সাম্রাজ্যবাদ বিরুধী ?
আই এস সম্পর্কে যদি ও সাধারন ধারনা হলো যে এরা তৃতীয় বিশ্বে সন্ত্রাসে লিপ্ত কিন্তু এদের মধ্যে ও দেখা যায় কিছু লোক সত্যিকার ভাবেই সাম্রাজ্যবাদ বিরুধী এবং তাদের মধ্যে কিছু লোক আছেন যারা জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ও স্বপ্ন দেখেন। তবে এরা কোন না কোন ভাবে আবার ইসলামী দেশ সমূহে সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে ছায়া যুদ্ব ও পরিচালনা করছে। তবে এবার ফ্রান্সে আক্রমনের ভেতর দিয়ে দুনিয়ার মানুষকে কিছুটা হলে ও বিভ্রান্তির মাঝে ফেলে দিয়েছে। কেননা প্রথম বিশ্ব ও সাম্রাজ্যবাদের দেশে আঘাত করা আই এস এর জন্য এক ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে। এই ঘটনা কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়ালেও বাস্তবতা অনেক জটিল বলেই মনে হচ্ছে।
আই এস সম্পর্কে যথাযথ ধারনা অর্জন করতে চাইলে সিরিয়া ও ইরাকে তাদের ভূমিকার দিকে নজর দেয়া দরকার। আইএস কিন্তু সিরিয়া ও ইরাকের মুক্তির জন্য লড়াই করছে না। তারা সচেতন ভাবেই নিজেদের জন্য একটি ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক পরিচিতি চাইছে। তারা তৃতীয় বিশ্বের দুটি বিরাট দেশ ভেঙ্গে এমন ধরনের একটি ভৌগলিক অবস্থার সৃস্টি করতে চাইছে যা খুব সহজেই সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। যা কোন দিনই সাম্রাজ্যবাদের জন্য আর হুমকী হবে না । আইএস মাঝে মাঝে পশ্চিমাদের বিরুধে বক্তব্যদেয় কেবল নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য। যদি তাদেরকে গভীর ভাবে নিরিক্ষা করা হয় তবে দেখবেন তারা অত্যন্ত চমৎকার ভাবে সুন্নি, পশ্চিমা ও ইজরাইলের বিরুধে কোন কথা বলেন না – এরা ওদের সাথে সকল প্রকার বিরুধ এড়িয়ে চলেন। তাদের ভাষায় “ গুরুতর শ্ত্রু হলো” শিয়া সম্প্রদায়। আইএস সুকৌশলে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের উপর গণহত্যা চাপিয়ে দিতে চায়। তারা ইরান ও তার পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহের মাঝে যুদ্ব লাগিয়ে দেবার তালে আছেন। তাদের সকলের দুষমন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বের তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে ঐক্যবদ্ব করার কোন পরিকল্পনা নেই। বরং সমাজে বিভক্তি সৃস্টি করতে চাইছে যা প্রকারান্তরে সাম্রাজ্যবাদকে লাভবান করবে।
সিরায়া ও ইরাকে সাম্রাজ্যবাদের চলমান কর্মকৌশল ও তাদের কর্মকান্ড খুব সরল নয়। তাদের চলমান কৌশল হলো কেবল সাম্রাজ্যবাদ বিরুধী শক্তির বিকাশ নয় বা ক্ষমতা দখল করা নয় বা কেবল সিরিয়া ইরাকের শক্তি ক্ষয় করা নয় বরং সাম্রগ্রীক ভাবে অত্র অঞ্চলের ক্ষমতা কাঠামোর অবস্থান দূর্বল করে দেয়া। সাম্রাজ্যবাদ মধ্যপ্রচ্যের চলমান ছায়া যুদ্বের ভেতর দিয়ে সুকৌশলে আইএসকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
ফ্রান্সের বিরুদ্বে “মারাত্মক আঘাত” একটি জটিল কৌশলেরই অংশ । যদি ও সেই আঘাত সাম্রজ্যবাদের উপরই তার পিছনে ও তাদের এক ধরনের মতলব বিদ্যমান। লোকদেরকে বিভ্রান্ত করা ও নিজেদের বিরুধীকে দেখে নেবার ইচ্ছা থেকেই এই আক্রমণ। আই এস সাম্রাজ্যবাদের অংশ হিসাবে “পুঁজিবাদের আপদ” হিসাবে কাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্যে গোলযোগ সৃজনের মাধ্যমে সেখান কার তৈল ও সোনা শোষণ করে নেবার সহযোগী হিসাবে ভূমিকা পালন করছে। সাম্রাজ্যবাদের কৌশল হলো যে লোকটিকে দিয়ে অন্যের গৃহে আগুন লাগায় – সেই লোকটিকেই তারা আবার সেই আগুনে নিক্ষেপ করে।
অধিকন্তু, বিবেচ্য হলো ফ্রান্সের জনগণের উপর আঘাতের পরিনাম ফল কি কি হতে পারে ? সাম্রাজ্যবাদী দেশের লোকেরা কি মধ্য প্রাচ্যের মানুষকে ভয় পাবেন ? না । এই ধরনের আক্রমণ আসলে প্রথম বিশ্বের সরকার সমূহকেই আরো শক্তিশালী করবে। এই ধরনের আক্রমন সাম্রাজ্যবাদি দেশ সমূহের সামরিক যন্ত্রপাতি বিক্রির বাজারকে আরো শক্তিশালী করবে । এই ধরনের আক্রমণ সাম্রাজ্যবাদি দেশ সমূহের জনগণ ও তাদের সরকার সমূহকে ঐক্যব্দ করবে আরো শক্তিশালী করে দেবে। এই ধরনের আক্রমণ তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কোন উপকারেই আসবে না । আই এস নিজেও ধ্বংস ডেকে আনবে। তারা যখন জিহাদে বিজয়ী হয় তখন তারা প্রচার করেন যে ইশ্বর তাদের সাথে আছেন, এখন তাদের হার শুরু হলে জনগণকে দলে ভিড়ানো কঠিন হবে। তাদের স্বাভাবিক কর্ম কান্ড নানা স্থানে বাধা গ্রস্থ হবে । তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও সম্ভব হবে না । এই ধরনের আক্রমণ লোক হত্যা কৌশলগত ভাবে ও সঠিক নয় । তা সাধারন মানুষের নিকট নিন্দনীয় হিসাবেই পরিগনিত হয়ে থাকে। আলোকিত মানব মহান কার্ল মার্ক্স ও মাওসেতুং এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপরিকল্পিত হত্যার জন্য আক্রমনের নিন্দা করে গেছেন। সেই জন্য আলোকিত মানুষের দল আহবান জানায় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে বিশ্ব ব্যাপী গন সংগ্রামের ভিত্তি তৈরী করুন। নির্দয় মানুষ হত্যা নয় ! মানুষের বন্দ্বু হোন। সাম্রাজ্যবাদ বিরুধী সংগ্রামের আন্দোলন জোরদার করুন। হত্যার পথ মুক্তি আনে না ।