(llbangla.org)
পানি মানব জীবনের একটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস। পৃথিবীর উপরি ভাগের প্রায় ৭১% ভূমি দখল করে আছে পানি। মানুষের ওজনের প্রায় ৬৫% হলো পানি। সকল প্রানি জগত, বৃক্ষ লতা, ফসলাদি ও মানব জাতির প্রান দিয়েছে পানি। বাংলাদেশের ৯৭% মানুষ পানি পেলেও মাত্র ৪০% মানুষ স্যানিটেশনের সুবিধা পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, আমাদের শ্রমজীবি দরিদ্র জনগনের ৬০% মানুষ ও নিরাপদ পানি পায় না।
পানির সুপ্রাপ্তির অভাবে আমরা, আমাদের ভাই, বোন, আমাদের ছেলে মেয়েরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। পান যোগ্য পানির পরিমান খুব বেশী নয়। ভুগর্বস্থ পানি ব্যবহার কারিদের মধ্যে অনেকেই আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আমাদের পানিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে আর্সেনিকের পরিমান অনেক বেশী। তাদের ভাশ্য-“ইতিহাসের সব চেয়ে বেশী মানুষ আজ বিষ দ্বারা আক্রান্ত…. ১৯৮৪ সালের ভারতের ভুপাল,১৯৮৬ সালের ইউক্রেনের চের্নবিল দুর্ঘটনার পর এত মানুষ আর কখনও আক্রান্ত হয়নি”। সেই সময়ে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো। বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় প্রায় প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন আর্সেনিক বিষ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আর এর অর্থই হলো দেশের প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ পানির দুষন জাতীয় বিষাক্ততার কারনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র চাইলে এই মানুষ গুলোকে সম্পদ সরবরাহ করে বাঁচাতে পারত। কিন্তু তাদের সেদিকে তেমন কোন নজরই নেই। এটা একধরনের নিরব গন হত্যার মত – ক্ষমতাশীল চক্র চাইলে এই মানুষ গুলোকে বাঁচাতে পারত। আমরা দেশের নানা স্থানে প্রতিদিন আমাদের শিশু, নারী ও প্রবীণদের মরতে দেখছি। এই নিরব গনহত্যার কারন সামন্তবাদি-পুঁজিবাদী –সাম্রাজ্যবাদিদের চাপিয়ে দেয়া উন্নয়ন বিরোধী নীতিমালা। এটা রাষ্ট্রের ও সাম্রাজ্যবাদের অদক্ষ পরিকল্পনার ফল । এই গন বিষাক্রান্ততা জনগণকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমেই এড়ানো যেত। যদি সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হয় মানুষ ও পরিবেশ তবে অবশ্যই সকল বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
দুর্নীতি ও উন্নয়ন বিরোধী ব্যবস্থা বাংলাদেশের পানি সহ সকল কিছুকেই বাঁধা গ্রস্থ করছে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারনেই এই দেশের ঋতু চক্র পর্যন্ত বদলে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যখন বৃষ্টি হওয়া কথা তখন চলছে প্রচন্ড খরা। উন্নয়ন বিরোধী নিতির কারনেই আজ পর্যন্ত আমারা বৃষ্টির মৌসুমে পানিনে সংরক্ষন করে শোকনা মৌসুমে তা ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে পানিনি। এই সমস্যা আমাদেরকে নানা ভাবে বিপদে ফেলছে। আর এই কারনেই আমরা আমাদের পানি সম্পদ ব্রম্মপুত্র, মেঘনা ও যমুনার উপর নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতে পারছিনা। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে এর উজ্জ্বল উদাহরন রয়েছে। এই ক্ষেত্রে ও আমরা দেখতে পাব যে, পুঁজিবাদ কিভাবে জনগণের সেবার চেয়ে মুনাফার জন্য কাজ করছে। রাষ্ট্র চাইলে সারা বছরের জন্য পানি সংরক্ষন করে মানুষকে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করতে পারে। আমাদের গরিব মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, ক্ষুদ্র ভূমি মালিক, গৃহহীন ও সাধারণ মানুষ যেন জন্মই হয়েছে ধনিক শ্রেনীর সেবার জন্য। ধনিরা এটা তুরাই কেয়ার করে যে, আমাদের ছেলে মেয়েরা বিষ পান করল না কি পানি পান করল।
বাংলাদেশের আরো একটি বড় পানি জনিত সমস্যা হলো লবনাক্ততা। লবনাক্ত পানির পরিমান বাড়ছে। এই পানি কৃষি ও মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়। এই লবনাক্ততার জন্য ভারতীয় ফারাক্কা বাঁধ একটি প্রধান কারন। যা উরা নির্মান করেছে গঙ্গা নদীতে। ভারতীয় ভু খন্ডে কৃষি কাজ করার জন্য। এই নদীর পানি সরিয়ে নেয়ার কারনে পানির গতি কমে গেছে –আর বাড়ছে লবনাক্ততা। অধিকন্তু চিংড়ি চাষের কারনে মিঠা পানিতে লবনের পরিমান বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের মাটি ও ভূ গর্ভস্থ পানির উপর। এই সকল কারনেই আমাদের পানীয় জলের পরিমান কমে যাচ্ছে। এই সবের প্রতিটি স্থরেই সূ পরিকল্পনা করে সকল বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
পুরাতন ব্যবস্থা, সাম্রাজ্যবাদ, পুজিবাদ,সামন্তবাদ এরা সকলই ভেতর থেকে পচে গেছে। প্রচলিত রাজনৈতিক দল গুলোর কাছে সত্যিকার কোন সমাধান নেই। পুরাতন ক্ষমতা কাঠামো আমাদের জীবনে কোন ভূমিকাই রাখতে পারবে না। আমাদের সন্তানেরা প্রতিদিন বিষাক্রান্ত হয়ে চলেছে।
তারা প্রতিদিন দুষিত পানি পান করছেন। তাদের জীবন থেকে – আমাদের জীবন থেকে সময়কে চুরি করে নিচ্ছে শোষক চক্র। যখন তারা আমাদের পানি চুরি করে – তখন তারা আমাদের জীবন চুরি করে। আমাদেরকে তা রুখতে হবে। আমাদের জীবন, আমাদের সন্তানদের জীবন চুরি করার তাদের কোন অধিকার নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরই। ঐক্য গড়ে তোলে আমরা আমাদের জীবন ফিরিয়ে আনতে পারি। আমাদের সংগঠন আছে, বিজয়ী হওয়ার মত আছে নেতৃত্ব। এটা ই আমাদের আগামীর পথ। লিডিং লাইট অনুসরন করুন! লিডিং লাইট হোন ! আমাদের সূর্য উঠছে! আমাদের দিন আসছে!# শিহাব