(llbangla.org)
ক্ষুধা, দারিদ্র, ও অনাহারে বিশ্বের বেশীর ভাগ মানুষ আক্রান্ত। এবার ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের কৃষকেরা নানা সমস্যায় নিপতিত হয়েছেন। কেবল ভারতের অন্দ্র প্রদেশের প্রায় ৭০ মিলিয়ন কৃষক তাদের জীবন যাত্রা নির্বাহ করে কৃষির উপর নির্ভর করে। খারাপ আবহাওয়ার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন কৃষক এখন হুমকীর মুখোমুখি। একেই ভাবে নেপালের ৩.৪ মিলিয়ন কৃষক সহ বাংলাদেশের কোটি কোটি কৃষক জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে খাদ্যের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভর করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন, আবহাওয়ার গতি প্রকৃতির পরিবর্তন উল্লেখ যোগ্য ভাবে পরিবর্তনের কারনে ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালে ফসল উৎপাদন মারাত্মক ভাবে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অক্সফামের প্রতিবেদন অনুসারে নেপালে, “ জনগন বলছেন তাদের উৎপাদিত ফসলের পরিমান বিগত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে… বিগত বছরে অনেকেই এক মাস চলার মত যতেস্ট (খাদ্য) উৎপাদন করতে পারতেন”। অক্সফামের প্রতিবেদন অনুসারে, “ অনেক বিশেষজ্ঞই আগাম হুশিয়ারী দিয়েছিলেন যে, মানুষ ঝুকিতে, বৈশম্যে ও বিপদের সম্মোখিন”।
উক্ত সমস্যার কারনে ভারতের অন্দ্র প্রদেশের কৃষকদের মাঝে আত্ম হত্যার প্রবনতা বেড়ে যাচ্ছে। অথচ এর আসল কারন হলো খারাপ আবহাওয়ার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন কৃষকদের অবস্থা দিনে দিনে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের পারিবারিক আয়ের পরিমান দৈনিক দুই ডলারের নিচে নেমে গেছে। কৃষকগণ বেচে থাকার তাগিদে প্রচুর পরিমানে ধারদেনা করছেন। আবার সেই ঋনের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাপক চাপের মূখে পড়ছেন কৃষক সমাজ। সেই সকল এলাকায় ঋন গ্রহনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও নেই। সেখানে ৩০% সূদ আদায় করা হয়ে থাকে। সামগ্রীক পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য মোটেই অনুকূল নয়। তাই অনেকেই আত্ম হত্যার পথ বেছে নেয়।
কয়েকটি তথ্য সূত্র বলছে যে, এই বছরে কেবল জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আত্ম হত্যার সংখ্যা ১৫০ জন। যার মূল কারন হলো ফসলের ক্ষতি ও কৃষকের মাথাপিছু ঋনের বুঝা। ভারতে ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৭,৫০০ জন কৃষক আত্ম হত্যা করেছেন। ১৬০,০০০ জনের বেশি মানুষ ১৯৯৭ সালে কেবল চরম দারিদ্রতার কারনে আত্ম হত্যা করেছেন। তারা নিজেরা প্রায়স মারা যায় কিটনাশক খেয়ে। তারা মারা যাবার পর তাদের ঋনের বুঝা চাপে তাদের উত্তরাধিকারের উপর। ফলে কৃষকের পরিবারের উপর দিনে দিনে বাড়তে থাকে নানা প্রকার বেদনার চাপ ।
ভারত ও নেপালের চলমান পরিস্থিতি বলে দেয় জলবায়ুর পরিবর্তন কিভাবে সমস্যার জন্ম দেয়। প্রথম বিশ্বের মানুষ সম্পদ বেশী থাকার কারনে এই ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতে সক্ষম। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের মানুষ ব্যাপক ভাবে এই সমস্যার ঝুকিতে রয়েছে। প্রথম বিশ্বের মানুষেরা জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যার তেমন কোন গুরুত্বই দেয় না । কোন প্রকার দারিদ্রতার ও ভয় নেই । প্রথম বিশ্বের মানুষ খুবই ধনি ফলে তাদের মধ্যে একটা বেপরোয়া ভাব আছে। তাই তৃতীয় বিশ্বের মানুষকেই তাঁর সমাধান করতে হবে । কেননা এই বিষয়টি তাদের জন্ম মৃত্যুর সাথে জড়িত ।
এই সকল সমস্যার সমাধানের জন্য দুনিয়া জোড়ে প্রতিবাদের জোয়ার তৈরী করতে হবে আর আলোকিত মানুষকে সেই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তৃতীয় বিশ্বে যে সকল দালাল চক্র রাষ্ট্র ও সমাজ চালায়, যারা সর্বদা তাদের নিজেদের ও তাদের প্রভূদের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে কাজ করে, সাধারন মানুষের কথা একটু ও ভেবে না তাদেরকে বিতারন করতে হবে। এখনো অনেক তৃতীয় বিশ্বের দেশে আধা সামান্তবাদ ও কমিশন ভূগী পুঁজিবাদ কায়েম রয়েছে, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ এদের মধ্যে অন্যতম। তাদের শাসক শ্রেনী চলমান সমস্যার সমাধান করতে পারবে না । কেবল মাত্র ব্যাপক ভিত্তিক গন আন্দোলন ও আলকিত মানুষের উদ্যোগ এশিয়ার মানুষের দারিদ্রতা সহ নানা সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে। এনে দিতে পারে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। যদিও উত্তরাধিকার সূত্রে এখানে একটি পশ্চাৎ পদ অর্থ ব্যবস্থা চালু আছে, এর পরও বলতে পারি যে, একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে চলমান সমস্যার একটি সমাধান এনেদিতে পারবে। জনতার শক্তির উন্মেষ ঘটিয়ে, ধনবাদি ব্যবস্থার পরিবর্তে জনবাদি অর্থ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করে, প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা সহ নানা প্রকার জটিলতার অবসান ঘটাতে পারবে। আলোকিত মানুষের সমাহার ও সাম্যবাদি চেতনা দক্ষিন এশিয়াকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা সহ সকল সমস্যার অবসানের পথে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে । -শিহাব