ভূমিকম্প কি জাতি প্রেমী ?

mah(llco.org)

এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি ইকুইডরে আঘাত হেনেছে। ইতিমধ্যে ২৩৮ জনের মৃত্যু ও ১৫০০ জনের জখম হওয়ার সংবাদ নিশ্চিত হওয়া গেছে। ৭.৮ মাত্রার ভূ কম্পন টি সেই দেশের রাস্তা ঘাট, দালান কোটা, ও নানা ভবন ধ্বংস  করে দিয়ে গেছে । সেখানে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। যারা ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে আছেন তাদেরকে ও উদ্বের করা যাচ্ছে না কারন ভূমি ধসের কারনে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে । সেই দেশের রাষ্ট্রপতি রাফেল কুড়াইয়া বলেছেন তাদের একটি নগরী একেবারেই “ধ্বংস” হয়ে গেছে। জাতীয় ভাবে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে । ধারনা করা হচ্ছে হয়ত আমাদের ধারনার থেকেও বেশী মানুষের মৃত্যুর সংবাদ আসতে পারে ।

এই সপ্তাহেই জাপানে ও আরো একটি ভুমিকম্প আঘাত হেনেছে, যা ৭.০ মাত্রায়  কাইউসুতে সংগঠিত হয়েছে। সেই আঘাতের ফলে ১৬ জনের মৃত্যু ও ৮০০ জন জখম হয়েছেন। বহু ভবন মাটির সাথে মিশে গেছে । আরো অনেক বাড়ী ঘর ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। সেই বড় ভূমিকম্পটির পর আরো ছোট ছোট ভুমিকম্প হয়েই চলেছে । যাদের মাত্রা ৫.৩ । তবে এখন বড় ভূমিকম্প থামলে ও হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ।

ভূমিকম্প যদি ও আমাদের প্রত্যাশিত নয়, কিন্তু তাঁর আঘাতের ফলাফল সকল জায়গায় একরকম হয়না । যে দু টি স্থানে আঘাত হেনেছে তা তুলনা করলে দেখা যাবে মানুষ কোন একটি স্থানে অনেক বেশী মাশুল দিয়েছে। আঘাতের ফলে ইকুইডরে জাপানের চাইতে প্রায় ১৫ গুন বেশী মানুষ মারা গেছে। জাপানের জন সংখ্যার ঘনত্ব ইকুইডরের চাইতে অনেক বেশী। জাপানে যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাসকরে ৩৩৬ জন পক্ষান্তরে, ইকুইডরে মানুষ বাসকরে মাত্র ৫৮ জন। ইকুইডরে মৃত্যুর সংখ্যা এখনো বেড়েই চলেছে। সেখানে হ্রদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়েছে। নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, প্রায় একেই মাত্রায় ভূমিকম্প হওয়া সত্বে ও জাপানের তুলনায় ইকুয়েডরে অতিরিক্ত মানুষ মৃত্যুর পিছনে যতেস্ট কারন আছে । তবে,  যে কারনটি আমাদের সামনে প্রথম আসে তা হলো ইকুয়েডর  হলো একটি তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশ । আর অন্য দিকে জাপান হলো প্রথম বিশ্বের একটি সম্পদশালী দেশ।

“প্রকৃতি” কেন কিছু মানুষকে অন্যদের তুলনায় বেশী ঘৃনা করে ? যেমন পুঁজিবাদীরা, গরীবদের তুলনায় ধনীদেরকে বেশী পছন্দ করেন। তা হলে কি “প্রকৃতি” বিশেষ কোন জাতিকে বেশী ভালোবাসে ? যেমন পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী চক্র, অ-সাদা মানুষকে বেশী পছন্দ করে না- প্রায়স এরা তাদেরকে হেনস্তা করে । ভূমিকম্প, দূর্ভিক্ষ, দূর্যোগ, খরা, ভূমি ধ্বস এবং সুনামী ইত্যাদি – প্রথম বিশ্বের তুলনায় গরীব দেশ সমূহে বেশী হতে দেখা যায়। কেন যেন ধনীরা এসব কিছু থেকে রেহাই পেয়ে যায়। কিন্তু শুভ সংবাদ হল “প্রকৃতি”  কোন ভাবেই জাতি প্রেমী বা শ্রেনীবাদি নয়। কিন্তু খারাপ খবর হলো আসল অপরাধী হলো মানুষ। যদি ও এই সকল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় প্রাকৃতিক কারনে কিন্তু মানুষের দুঃখ দুর্দশা তৈরী করা হয় কৃত্তিম ভাবে । মানুষের দুর্দশার জন্য আসল দায়ী হলো অন্যায় বন্ঠন ব্যবস্থা, অবৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তি ও অবকাঠামো নির্মানে অনিহা ।  আর এই সকল অবস্থার প্রধান কারন হলো সাম্রাজ্যবাদের চাপিয়ে দেয়া অপ-উন্নয়ন কৌশল। আমরা আঘাত প্রাপ্ত হই বলেই আমরা দরিদ্র; ধনীদের মত সুরক্ষার ব্যবস্থা আমাদের নেই। আমরা অন্যদের সুবিধার জন্য বেঁচে থাকি।

পুঁজিবাদ মানুষকে পুঁজি করে মুনাফা বানায়। পুঁজিবাদ আমাদেরকে বাঁচানোর জন্য কিছু করতে আগ্রহী নয়। সাম্রাজ্যবাদের কাছে আমাদের জীবন, আমাদের সন্তান কোন গুরুত্বই বহন করেনা। সাম্রাজ্যবাদের নিকট আমাদের জীবনের চেয়ে সম্পদ বৃদ্বি অনেক গুরুত্বপূর্ন। প্রথম বিশ্বের ধনীদের আরো অরো উন্নতি, আরো সূখ-আরাম-আয়েশ, এসব কিছু  আমাদের নিরাপত্তাহীনতা, দারিদ্রতা ও ঝুঁকির উপর নির্ভর করে। এখন এরা এমন এক কৌশল ও চালাকীর আশ্রয় নিয়েছে যাতে গুটি কয়েকজন মানুষ বিপুল সংখ্যার মানুষের শ্রমের উপর বিলাশী জীবনযাপন করতে পারবে। বর্তমান চলমান বিশ্বব্যবস্থা মানুষের চাহিদার তুলনায় সম্পূর্ন অযৌক্তিক একটি বিষয়। পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ কোন প্রকার যুক্তির ধার ধারে না, সম্পদের বন্ঠনে, আয় রোজগারে, ও জীবন যাত্রায় ওরা বিজ্ঞান মানতে চায় না। ওরা গুয়ার, একগুয়ে। প্রচলিত ব্যবস্থা আমাদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। আমরা এই জীবন ব্যবস্থার বিরুধী। আমরা এই ব্যবস্থা চাইনি। এটা ওদের তৈরী ব্যবস্থা আমাদের নয়। এখনই সময় জেগে উঠার। তারা আমাদের সকল কিছু চুরি করে নিচ্ছে। আমরা নির্লিপ্ত থাকতে পারিনা। আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরই হাতে।

আলোকিত সাম্যবাদ হলো আমাদের পথ ও জীবন ব্যবস্থা । আলোকিত সাম্যবাদ সুন্দর, এটা মানুষকে মূল্যদেয়, এবং কেবল প্রকৃতি থেকে মুনাফা অর্জন করে থাকে।  সমাজে মানুষ অন্যের সাহায্য না পেলে  বেঁচে থাকতে পারবে না । এটাই তো হলো বিপ্লবী, বিজ্ঞান ভিত্তিক পন্থা যা দ্বারা মানুষের জীবন ও দুনিয়া চালানোর সরল পথ। আলোকিত সাম্যবাদ হলো আমরা সকলেই সকলের জন্য। সারা দুনিয়ার মানুষ সারা দুনিয়ার সকল মানুষের কল্যানে কাজ করবে। সকলেই যেন এক পরিবারের সদস্য। আমাদের শিশুদের জন্য রয়েছে সুন্দর আগামী। আলোকিত সাম্যবাদ হলো সত্যিকার মানব স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা । এটা এমন এক জীবনের কথা বলে যেখানে “প্রাকৃতিক” সকল দূর্যোগ প্রতিরোধে সকলেই কাজ করবে। আর মানব সৃষ্ট দূর্যোগ হতেই দিবে না। বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিবে। তাই তো বলি আলোকিত সাম্যবাদ আমাদের লক্ষ্য – এটাই আমাদের রাজনীতি। আমাদের পাগলামী ও বলতে পারেন। একে এম শিহাব।

Sources (তথ্য সূত্র)

http://www.cnn.com/2016/04/15/asia/japan-earthquake/

http://www.usatoday.com/story/news/world/2016/04/17/ecuador-earthquake-update/83152522/

 

Leave a Reply