মহান প্রলেতারিয়েত সাংস্কৃতিক বিপ্লব সূচনায় নতুন শক্তি ও আদর্শের উত্থান ঘটিয়ে ছিল । পর্ব-২

e15-614-210x300

(llbangla.org)

মহা উল্লম্ফন ও মাওবাদিদের আকাঙ্ক্ষা

চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে বুঝতে হলে, মহা উল্লম্ফনকে ও বুঝতে হবে। মহা উল্লম্ফনের সূচনায় বাতসবতার আলোকে ক্ষমতা ও আদর্শের বিষয় গুলো প্রধান্য পেয়েছিলো। চিনের সমাজে সমাজতন্ত্রকে একটি বিশেষ উচ্চতায় উপনিত করার জন্য দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসাবে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। মাওবাদের ক্ষেত্রে যদি ২.০ হিসাবে সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে ধরা হয় তবে ১.০ হলো মহা উল্লম্ফন। এই মহা উল্লম্ফন ঠিকে ছিলো ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত। সেই সময়টা ছিল সত্যি দ্বন্দ্ব আর সংঘাতের সময়। মহা উল্লম্ফনের কালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেই চলছিল নানা মূখী প্রবনতা, কমিউনিস্ট এবং পুঁজিবাদীদের মধ্যে, মাওবাদি ও সংশোধনবাদিদের মধ্যে। তা ১৯৫৭ সালে চীনের পল্লী এলাকায় গড়ে উঠে এবং সুসংহত হতে থাকে। মাওসেতুং সেই প্রক্রিয়ার সাথে নিজে যুক্ত হনযদিও তা বিরোধী দলের মাধ্যমে গড়ে উঠে। যারা চেয়েছিলো চীনকে কেবল একটি অর্থনৈতিক সমাজে পরিণত করতে। মাওবাদিরা তখন এগিয়ে এলেন সৌভিয়েত সমাজতান্ত্রিক নানা রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য। ফলে মাওবাদিদের প্রথমিক যে উন্নয়ন মডেল ছিল তা মারাত্মক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। মুল কথা মাওবাদিরা সেই সময়ে তাদের উল্লেখ যোগ্য ও সময় উপযোগী ভুমিকা রাখতে পারেন নাই। তারা তাদের উত্তরাধীকার সৌভিয়েত ইউনিয়নের কমরেডদের মতই সমস্যা পড়েন। তা হলে অতীতের ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিপ্লবকে বৈজ্ঞানিক পন্থায় এগিয়ে নেবার পথ কি হতে পারে। যদি আখাংখাকে বাস্তবতার নিরিখে পুনরবিন্যাস করতে হয়, যদি সমস্যায় নিপতিত হতে হয়, তবে অবশ্যই সেই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যদি পেছনে যেতে হয়, যদি মার্ক্সবাদলেনিনবাদ এবং মাওবাদে ফিরতে হয় তবে তাই করতে হবে। আগামী দিনের জন্য আলোকিত সাম্যবাদতা অতীতের বিষয় নয়।

দুই পায়ে হাটুন, জনতার শক্তি গড়ে তুলুন, সময় মত আঘাত করুন

মহা উল্লম্ফনের অর্থনৈতিক নীতি মালা ছিলো দুই পায়ে ভর দিয়ে সোজা হয়ে হাটুনএর অর্থ হলো ষ্ট্যালিন যেমন তার পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে ছোট শিল্পের বদলে বৃহৎ শিল্পকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, চীন সেই পথে যাবে না বরং চীনে বৃহৎ ও ছোট উভয় ধরনের শিল্প গড়ে তোলতে হবে। বৃহৎ শিল্পের তুলনায় ছোট ছোট শিল্প গড়ে তুলা অধিকতর উপকারী। ইহা গন শক্তির উত্থান ঘটাতে সহায়ক হবে, অধিক জনসংখ্যার দেশে কার্যকরী হবে এবং ক্ষুদ্র পুঁজি দিয়েই তা গড়ে তুলা যেতে পারে । ভৌগলিক ভাবে ও তা অনেক ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। ধারনা করা যেতে পারে যে, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিস্টান ভৌগলক ভাবে বিকেন্দ্রীকরনের জন্য এবং সফলতা ও ব্যার্থতার পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পরিচালনা করা সুবিধাজনক হবে। () () এই মডেলের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ বিপ্লবী প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে। উদাহরন হিসাবে চীনের কথা ই উল্লেখ করা যায় যে, ঐতিহাসিক ভাবে সকল ক্ষমতা শহর ও নগড়েই অবস্থান করে নানা কৌশলে সেখান কার মানুষেরা পল্লীর উৎপাদিত পন্য সাম্রাজ্যবাদিদের দেশে রপ্তানি করে বিলাশ বহুল জীবন যাপন করে। যদিও পল্লীতেই সম্পদের মূল উৎস কিন্তু শহর ও গ্রামের মাঝে ক্ষমতার দিক দিয়ে একটি বড় রকমের অসাম্য বিরাজ করছে। নগর সেখানে প্রধান্য বিস্তার করে আছে। মাওবাদি রাজনীতির একটি বড় দিক হলো যে, এর নতুন ধারার অর্থনীতিতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বচ্ছতা, প্রাচীন ধরনের সামান্ত কাঠামো ও উপনিবেশিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে বিপ্লবের যথাযথ বিকাশ সাধন করা।

সৌভিয়েতনীতির বিপরিতে চিনে মাওবাদির কার্যক্রম গৃহীত হয়।

সৌভিয়েতরা তাদের উন্নউনের জন্য যে নীতির অনুসরন করেন – চিনের জন গন সরকার সেই পথে এগোয় নাই। সৌভিয়েতদের বৃহৎ শিল্পের উদ্যোগ জনগণের জীবন যাত্রাকে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করে । তাদের জীবন মান কমিয়ে দেয়। আগামীতে আরো বেশী সুখি হবার আশায় তারা নিজেদের ভোগ বিলাশকে কমিয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের ভোগ কমিয়ে সঞ্চয় বাড়ানো । সেই সঞ্চয় বিনিয়ূগ করে সমৃদ্দি আনয়ন করা । পক্ষান্তরে, মাওবাদিরা হাতে হাত ধরে “দুই পায়ে হাটার” নীতি গ্রহন

করে। তারা ভোগের ব্যাপারে ভারসাম্য পূর্ন নীতি গ্রহন করে। তারা ধীর গতিতে ক্রমধারা অবলম্বন করেতারা কৃষক শ্রমিকের সমন্বয় বজায় রেখে যৌথ করন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে জোরদার করে। সৌভিয়েত শিল্প কারখানা তাদের প্রয়োজনেই বৃহৎ আকারে গড়ে তুলেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের পরবর্তীতে এর বিকল্প ও ছিলোনা । তুলনা মূলক ভাবে মাওবাদিরা সেই পরিস্থিতিকে অপেক্ষা কৃত ভালো ভাবেই গ্রহন করেছে। চিনের কমিউনিস্ট পার্টি ক্রমধারা অবলম্বন করে কৃষক শ্রমিকের সুসম্পর্ক বজায় রেখেই সামাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মানের পথে দৃঢ় ভাবে এগিয়ে গেছে। চীনারা তাদের জনগণের অংশ গ্রহণকে সুন্দর ভাবে উন্নুয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করেছে। কিন্তু সৌভিয়েতরা জনগণের উপর অনেক কিছু চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে পার্টির উপর চীনের জগনের যে বিশ্বাস ও আস্থা ছিলো তা সৌভিয়েত জনগণের ছিলোনা।

চীনের উন্নয়ন কার্যক্রমে দরিদ্র কৃষকদের ব্যাপক হারে অংশ গ্রহন ছিলো। ঐতিহাসিক ভাবে চীনে অর্থনীতি দুর্বল ছিলো। ক্ষমতা কাঠামোর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মাওসেতুং বলেছিলেন, “ চিনের জনগণের পিঠের উপর দুটি পাহাড় চেপে আছে”। এর একটা হলো সামন্তবাদ আর অন্য টি হলো সাম্রাজ্যবাদ চীনের উন্নয়নে একটি মারাত্মক বিশৃংখলা চলছিলো পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদ নানা কৌশল অবলম্বন করে তাদের সামন্ত কায়দার শোষণ চালু রেখেছিলো। মাও বলেছিলেন, এটা “ আধা-সামন্তবাদ”এই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার জন্য একটি বাস্তব সম্মত কর্ম কৌশল প্রনয়ন করা হয় । মহা উল্লম্ফনের মাধ্যমে মাওয়ের নীতি “ মন্দকে ভালোতে পরিণত করুন” সত্যিকার অর্থে চীনের পল্লী অঞ্চল খুব একটা খারাপ অবস্থায় ছিলো না । চীনের এই বিশাল সমূদ্র কেবল খাবার ই খেত না তারা সৃজন শীল ভাবে দেশের উন্নয়নে ও ভুমিকা পালন করছিলেন। চীনের বিশাল গ্রামীন জনপদ মুক্তির প্রত্যাশায় কাজ করছিলোঃ

“ আমরা যদি চোখ খোলে জনগনের দিকে থাকিয়ে দেখি তবে দেখব যে, তারা ‘দরিদ্র এবং কর্মহীন’তাদের সংখ্যা প্রায় ৬০০ মিলিয়ন। এটা খারাপ হলে ও তাঁকে আমরা ভালোতে পরিণত করতে পারি। দারিদ্রতা কিন্তু মানুষের মাঝে আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিতে পারে। পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করতে পারে, বিপ্লবের দিকে নিয়ে যেতে পারে। একটি সাদা কাগজে যেমন যেকোন কিছু লিখা যায় এতে একটি ছবি ও আঁকা যায়” (৩)

এবং

াধারণ জনগনের মধ্যে সীমাহীন সৃজনশীলতা বিদ্যমান। তারা তাদেরকে সংগঠিত করে পারেন, যেকোন উন্নয়ন কর্মে নিজেদেরকে নিয়ূজিত করে পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারেন। তারা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করে দেশের অর্থনীতির চাকায় গতি আনতে পারেন। তাঁরাই তাদের ভাগ্যকে পাল্টে দিতে সক্ষম” ()

মাওবাদিরা যে বিষয়টি কে অধিক গুরুত্ব দেন তা হলো জনগনই সত্যিকার শক্তির উৎস। তাই মাওবাদিরা চাইছেন জনগণের মধ্যে যে শক্তি আছে তার উত্থান ঘটিয়ে চিনের উন্নয়ন ও পুঁজির বিকাশ সাধন করতে। জনতার জাগরণকে কাজে লাগিয়ে চীনের মহা উল্লম্ফন কে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। সমাজের সকল স্তরে শৃংখলা প্রতিস্টা, সামাজিক সঞ্চালন, প্রচার প্রপাগান্ডাকে জোরদার করে এবং ডান পন্থার দমন করতে। সামগ্রীক ভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যবস্থাকে বিকাশ ঘটাতে। জনগণের আন্দোলন সংগ্রামকে কাজে লাগানোর কাজে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এলো সাম্যবাদিরা, তারা চেষ্টা করলেন সামান্তবাদি, কমিশন ভোগীদের ক্ষমতার বিনাশ। নতুন ধারার গণতন্ত্র, সমাজতান্ত্র ও চুড়ান্তভাবে সাম্যবাদে উপনিত হওয়া ।

মাওবাদীদের ইশতেহারে ঘোষনা করা হয়েছিলো সাধারণ জনগণের সামর্থকে কাজে লাগানোর জন্য। বলা হয়েছিলো, “সাধারণ জনগণই ইতিহাস গড়বেন” এর মানেই হলো “ আওয়াম জনগণই সত্যিকার উন্নয়নের নায়ক” । সম্ভবত এটাই ছিলো মাওবাদীদের ও মাওয়ের একটি বিখ্যাত পদক্ষেপ। ১৯৪৫ সালে মাও লিখেছিলেন, “ বোকা বুড়ো পাহাড় অপসারণ করছে”।

আমাদেরকে অবশ্যই জনগনের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে হবে যাতে তারা স্বেচ্ছায় সকলে ঐক্যব্দ হয়ে বিজয় না আসা পর্যন্ত লড়াই করেন। তবে যারা অপরাধী ও প্রতিক্রিয়াশীল তাদেরকে বিতারন করতে হবে । চীনের একটি প্রচলিত গল্প আছে যে, “ একজন বোকা বুড়ো পাহাড় অপসারণ করেছেন’। এই গল্প টি হলো একজন প্রবীন মানুষের যিনি অনেক দিন আগে চীনের উত্তরে বসবাস করতেন। উত্তরের পাহাড়ি এলাকায় তিনি বোকা হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। তাহার ঘর টি ছিলো উত্তর দক্ষিনে স্থাপিত। তাহার ঘরের সামনে ছিলো দুটি পাহাড়। এই গুলোর নাম ছিলো তিহাং ও অয়াঙ্গ । পাহাড় গুলো তার পথের বাঁধা ছিলো । তিনি তার সন্তানদেরকে বললেন সাবল আন আমরা এদেরকে এখান থেকে অপসারণ করব। তারা পাহাড় কুড়তে শুরু ও করলেন। এই সময় আরো একজন প্রবীন জ্ঞানী মানুষ ইহা দেখে বললেন, ‘ কি ব্যাপার তোমরা এটা করতে পারবে ! এটা তো বিশাল পাহাড় , এত বড় পাহাড় খনন করে অপসারণ কোন ভাবে ই সম্ভব নয়’ তখন বোকা বুড়ো জবাব দিলেন, “ আমি যদি এই কাজ করতে করতে মরে যাই তবে আমার সন্তানেরা এই কাজ চালিয়ে যাবে। তারা মারা গেলে তাদের সন্তানেরা এই কাজ চালিয়ে যাবে। উরা মারা গেলে উদের সন্তানেরা এই কাজ চালিয়ে যাবে..এই ভাবে চলবে । যত দিন এই রাস্তা পরিস্কার না হবে তত দিন চলবে”। জ্ঞানী প্রবীন ব্যাক্তির উপদেশ না শুনে তারা যখন তাদের পাহাড় কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ইশ্বর এক রাতে ফিরিশতা পাঠিয়ে এই পাহাড়কে তোলে নিয়ে বুড়োর ঘরের পেছনে স্থাপন করে দিলেন । আজ চীণের জনগণের পিঠের উপর দুটি পাহাড় চেপে আছে । এর একটি হলো সাম্রাজ্যবাদ অন্যটি হলো সামন্তবাদ । চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এই দুই পাহাড় কে অপসারণ করার জন্য দির্ঘ কাল ধরে চেষ্টা করছেআমরা এই কাজ কে অব্যাহত রাখব এবং দিনে দিনে তা বৃদ্বি করব। আমরা আমাদের চেস্টায় ইশ্বরের মনকে স্পর্শ করার চেষ্টা করব। আর আমাদের ইশ্বের হলেন সাধারণ জনগণ। তারা যদি ঐক্যবদ্ব হন একসাথে কাজ করেন – তবে এই পাহাড় দুটি অবশ্যই একদিন অপসারিত হবেই”। (৫)

মহা উল্লম্ফনের সময়ে এই চেতনাটি পল্লী মানুষের গানে স্থান করে নিয়েছিলো;

“ আমরা ছোট ছোট আমাদের মূখ গুলো শুকনো শুকনো,

তবে আমাদের প্রতিজ্ঞা আমারা বিপ্লবের পথে এগিয়ে যাবোই;

পরিশ্রমী ও নিরবিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ চালিয়ে যাব,

নেতৃত্ব নাও যা পার তাই কর।

সুন্দর আগামী আমাদের সামনে

আমাদেরকে তা সুখী করবে –আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে”। (৬)

সাধারণ জনগণ ই সব করতে পারেনঃ

“ দুনিয়ায় যা কিছু আছে এর মধ্যে মানুষই হলো সবার চেয়ে দামী । কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চিনের মানুষ বহু অসাধ্য সাধন করে ছাড়বে”। (৭)

মাওবাদিদের একটি অন্যতম নীতি হলো তারা গতিকে গুরুত্ব দেয়। মাওসেতুং বলেছিলেন, একটি বদ্ব জলাশয়য়ের চেয়ে খারাপ আর কিছু নেই। তাই মাওবাদিরা নিরন্তন বিপ্লবের জন্য সদা তৎপর । মহা উল্লম্ফন হলো দ্বিতীয় বিপ্লবের নাম। ইহার বিপ্লবের ভেতর আরো একটি বিপ্লব। একটি বিপ্লব মানেই হলো একটি চল মান প্রক্রিয়া । ইহা হয়ত সামনে এগিয়ে যাবে নইলে নিজেই মূখ থুব্রে পড়বে। চীনারা বিপ্লব কে বলে যুদ্বের মাঠ । ইহা ঢেইয়ের মত এগিয়ে যায়।

মাও বলেছিলেন, “ বিপ্লব আর যুদ্ব প্রায় একই জিনিস। বিজয়ের পর পরই আমাদেরকে নতুন কাজে মন দিতে হবেবিপ্লব একটি স্তরের পর আরো একটি স্তর এসে হাজির হয়তা যদি উপযুক্ত সময়ে হয় তবে তার সুযোগ নিতেই হবে। কোন শীতিলতা নয়। তাই মাওবাদিরা বলেন, “ লোহা যখনই উত্তপ্ত হয় তখনই আঘাত করা উচিৎ() তাই প্রতিজ্ঞা নিয়ে পল্লীর মানুষকে সঙ্ঘটিত করা উচিৎ। ১৯৫৭ সালের কথা এখনই নইলে কখন ই নয়।

মাওবাদিদের ভাষা সৌভিয়েতদের থেকে আলাদা । একটি বিখ্যাত কবিতা যার ৭২ টি লাইন রয়েছে। “ জনতার কমিউন সত্যি দৃশ্যমান” মহান উল্লম্ফনের চেতনা ধারন করুন।

“ মহান নেতা মাও ডাক দিয়েছেন

কমিউন সকলের জন্যই কল্ল্যান কর

ইহা রাস্ট্র সমাজ সকলের জন্য

সুন্দর সমাজের জন্য আমরা এগিয়ে যাবই

শক্তিশালী করুন একতার বন্দ্বন

অন্যকে প্রধান্য দিন – ঘুমিয়ে থাকবেন না

আমরা যদি একবার চেতায় সমৃদ্ব হতে পারি

আমরা সকল কিছুই জয় করতে পারব

কমিউনকে সমর্থন করুন! আমি ঘোষনা করছি

শ্রম বিভাজন কোন দুষের বিষয় নয়

প্রবীনদের জন্য, তরুণদের জন্য, আমার জন্য তোমার জন্য

উপযুক্ত কাজ সকলের জন্য

তাই জনগণই কমিউনকে পরিচালনা করবেন

একটি সুন্দর জীবন আসছে ;

প্রবীন সাদা চুলয়ালা বাদশার তৈরী হবে আমাদের তরুণদের মধ্যেই

আমাদের শিশুরা গড়ে উঠবে সুন্দর ভিত্তি থেকে”। (৯)

মহা উল্লম্ফনের পর যদি ও এটা খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে লিখা হয়েছে, তা মাও ১৯৬৩ সালে কমরেড জো মওরু কে উত্তের” দিতে গিয়ে তার মতামত টা ছিল এইরূপঃ

বহু কাজ করা প্রতিক্ষায় আছে,

তা খুবই জরুরী

দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে

সময়ের ও চাপ আছে ।

দশ হাজার বছর অনেক লম্বা সময়,

দিনকে কাজে লাগান, ঘন্টাকে কাজে লাগান

চারটি সমুদ্র উত্থলে উঠছে, সাঝ পানি তোলে দিচ্ছে,

পাচটি মহাদেশ দোলছে, প্রচন্ড বেগে বাতাস বইছে।

সকলকে সাথে নিয়ে !

আমরা এগিয়ে যাব, আমরা অপ্রতিরোদ্ব” ! (১০)

বিপ্লব কখনও একটি সাধারণ শর্তে ও নিশ্চয়তা নিয়ে সংঘটিত হয় না । বিপ্লব কখনও খুব মসৃন পথে নির্ধারিত মাত্রায় নির্ধারিত পরিস্থিতে বা উৎপাদন ব্যবস্থায় অবির্ভুত হয় না। আর সেই কারনেই ১৯১৭ সালের বিপ্লব সম্পর্কে গ্রামসী বলেছিলেন এটা ছিলো কার্ল মার্ক্সের পুঁজি গ্রন্তের বিপরীত। মার্ক্সের প্রত্যাশা অনুসারে তা সংঘটিত হয়নি। তুমি যা পাবে সেই মত কাজ করে যাও। বিপ্লব সর্বদাই একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতে জন্ম গ্রহন করে থাকে। বিপ্লবের জন্য সুনির্ধারিত কোন সময় বা পরিস্থিতি নেই।

সম্ভাবনাকে সামনে রেখে বিপ্লবের প্রস্তুতী নিতে হবে। মাওয়ের সময়ে যারা বলেছিলেন চীন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত নয় তিনি তাদেরকে মিথ্যা প্রমান করেছিলেন। একটি বিপ্লবী বিজ্ঞান, বিপ্লবী আদর্শ, বিপ্লবী পদক্ষেপ ও পদক্ষেপ সমূহ চলমান দুনিয়ার বিশৃংখল পরিস্থিতিতে বিপ্লবী পরিবেশ তৈরী করে দিতে পারে। জনতার শক্তি সকল শূন্যতা পরন করে দিতে পারে। পল্লীর কোন “একটি দরিদ্র গ্রামে ও বিপ্লবী আদর্শের” স্পুরন ঘটে যেতে পারে। সেখান থেকে ও বিপ্লবী পরিস্থির সূচনা হয়ে যেতে পারে। আলোকিত সাম্যবাদ, মাওবাদের প্রথমিক দিক যেমন ছিলো সেই রকম একটি অগ্রসর আদর্শ। মাওবাদিরা অনন্তকাল ধরে পরিস্থির জন্য বসে থাকতে পারেনা । প্রকৃতিক কোন আশির্বাদ ও সেখানে কোন ভূমিকা পালন করতে পারেনা । বাস্তবতা হলো মার্ক্সবাদ কাজ করে দুনিয়ার প্রকৃত অবস্থা নিয়ে – তা কোন স্বর্গীয় বিষয় নিয়ে কাজ করেনা ।

মহা উল্লম্ফনে গণ কমিউন, একটি সংকিপ্ত পর্যালোচোনা

মহা উল্লম্ফনকে সত্যিকার ভাবে মহান মাও ও মাওবাদি তাত্বিক চেন বোধা ভালোভাবে উপলব্দি করতে পেরেছিলেন, এটাকে মাওবাদের একটি সামাজিক বিশেষ অগ্রগতি হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। যা ছিলো সামাজিক ভাবে সাম্যবাদে উপনিত হবার এক উচ্চতর স্তর। এটাই হলো সাম্যবাদে উপনিত হবার পদক্ষেপ(১১) মাওবাদিদের নিতি হিসাবে মহা উল্লম্ফন হলো গনহারে যৌথ করনের বা সম্মিলনের একটি কর্মসূচি। তারা চাইলেন সমাজের সকল স্তরের মানুষ একটি কমিউনে মিলিত হোক। জগনের কমিউন একটি বৃহৎ খামারে পরিণত হোক। ১৯৫৭ সালে যখন হেনানে প্রথম একটি খামার গড়ে তুলা হল মাও এটা একটি প্রসংশিত উদ্যোগমাওসেতুং এটাকে ঘোষনা করলেন এই ভাষায়ঃ জনতার কমিউন সত্যি একটি মহান কাজ!” (১২) মাওবাদি চেন বোধা লিখলেন,বর্তমান অবস্থায় আমাদের প্রধান কাজ হলো সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা….[তবে] প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো জনগণের কমিউন গড়ে তুলা এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান করাপার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষনা করলেন, “ আমরা অবশ্যই জনগণের সাথে মিশে কমিউন গড়ে তুলবইহা ই সাম্যবাদে পৌছানোর পথ(১৩) (১৪) মাওবাদিরা এও পরিকল্পনা করলেন যে, তারা সৌভিয়েত ইউনিউনের মত আমলাতান্ত্রিক পথে এগোবেন না। তারা উপর থেকে নিচের দিকেএক কেন্দ্রীক পন্থা অনুসরন করবেন না। তারা বরং কমিউনকে সমাজের একটি মৌলিক উপাদান হিসাবে গন্য করে কাজ করবেন। মাওবাদিরা চাইলেন গ্রামের মানুষ থেকে সকল কিছু শুরু হোক রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নিচের দিকে উন্নয়ন বার্তা আসুক। তারা যৌথ করন প্রক্রিয়াকে সচল রেখে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রভাবিত করতে চাইলেন। তারা তাদের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রমকে সাম্প্রসারিত করতে চাইলেনযা সৌভিয়েতদের বা স্ট্যালিন পন্থার বিপরীত ধারা ।

মৌকিল ভাবে এই মহান উল্লম্ফনের সূচনাটি ছিলো চার ধরনেরঃ

“() কমিউন গুলো ছিলো প্রধানত গ্রামীন এলাকায়, প্রতিটি কমিউনে গড়ে ৫০০০ হাজার পরিবারকে সম্পৃক্ত করা হয়। (উদাহরন হলোলাথা কমিউন যা ছিলো কিংফেন, হোনান প্রদেশে। এতে ,৭৪৬ টি পরিবার ও লোক সংখ্যা ছিলো ২২,৫৬৮ জন। জমির পরিমান ছিলো ১১.২৫০ একর এবং ৫৩ টি গ্রামের সমাহার৫৬১ ওয়ার্কসপ ২২ টি গরুর খামার প্রবীনদের জন্য অল্ড হোম ২২ টি কিডারগার্টেন স্কুল ।

() শহর কমিউন গড়ে তুলা হয় জেলা শহর ুলোকে কেন্দ্র করে ( উদাহরন হলোহোনানের টেংকোং কমিউন যেখানে ১০,৬১৮ টি পরিবার যার লোক সংখ্যা ৩৭,৪৩২ জন যারা ৬০ গলিতে বসবাস করেন। ৫৪ টি ছোট কারখানা ও ওয়ার্কসপ, তিন টি প্রথমিক বিদ্যালয় ও প্রবীনদের সেবা কেন্দ্র।)

() শহরের কমিউন গড়ে উঠারখানা, কৃষি খামা, বৃহৎ শিল্প কারখানার সমন্বয়ে । ( উদাহরনঃ হোনানের চ্যাং যো তে কাপড়ের কারখানা গড়ে উঠে। তার সাথে যুক্ত হয় ১০,৫৫৯ কৃষক যারা উপশহরের মানুষের খাদ্যের যোগানদাতা। ৩০,০০০ মানুষের কাজের ব্যবস্থা হয় সেখানে। প্রথমক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয়, ও প্রবীণদের জন্য সেবা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয় সেখানে।

() বড় আকারের কমিউন বা যৌথ খামারকে কমিউন আন্দোলনের চুড়ান্ত লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে বাস্তবত এর সংখ্যা ছিল খুবই কম। ( উদাহরন হিসাবে হেনানের জোসি কাউন্টির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেখানে ২৮৩ গ্রাম, ২০ হাউজিং কমপ্লেক্স এ ৬৪,৬৪০ পরিবারে ৩,১৪,৪৪৪ জন মানুষ বসবাস করত। তাদের মধ্যে শিল্প সৈনিক বা দক্ষ শ্রমিক ছিলেন ৬৫,১৮১ জন পুরুষ ও ৫২,৬২২ জন নারী । তাদের জন্য ১৩৫০০০ একর আবাদী জমি নির্ধারিত ছিলো। এই কমিউনে ২৪০০ ওয়ার্ক সপ ৩৭৪ টি কিন্ডারগার্টেন ও ৭৫টি নার্সারি ছিলো। এছাড়া ও বেশ কিছু ক্লাব ও সিনেমা হল ছিলো।)” (১৫)

তবে এই পরিস্থিতি বেশী দিন স্থায়ী হয় নাই। কমিউন গুলোতে মহা উল্লম্ফনের সময়ে ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধন করা হয়েছিলো। মহা উল্লম্ফনের পতনের পর কমিউন গুলো ও বিলুপ্ত হতে শুরু করে। কিছু কিছু নতুন আঙ্গীকে আবার গড়ে ও ঊঠে।

মাওবাদিরা কমিউনের মাধ্যমে নানা সামাজিক পরিক্ষা নিরিক্ষা ও পরিচালনা করেছিলেন। চীনের সাধারণ জনগন, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, নারী ও যুব সমাজ এর আগে এই ধরনের রাজনীতি প্রত্যক্ষ করন নাই। এর অংশ হিসাবে মাওবাদিরা শৃংখলা ও অদর্শবাদি প্রচারনা জোরদার করে। তারা চলমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে নতুন সমাজের কথা বলেন তারা জনগণের সেবা করুন এই মূলমন্ত্র সাথে নিয়ে কাজ করেন। নেতারা জনগণের সাথে ব্যাপক ভাবে মিশতে থাকেন। যা আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি। উচ্চ স্তরের নেতারা নিচের স্তরের নেতাদের সাথে এবং তারা তৃনমূলের সাথে যোগাযোগ বৃদ্বি করে দেয় । তারা উন্নয়ন বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে না ইস্যুতে বিতর্কের সূচনা করেন

মানুষের প্রতিদিনের কাজে কর্মে যৌথ ব্যবস্থার প্রবর্তন ও সামরিকি করনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যৌথ রান্না ঘরের প্রবর্তন করা হয়। সমাজ ভিত্তিক রান্না ঘরে সকলের জন্য মান সম্পন্ন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। মহিলারা রান্না বান্নার কাজ থেকে মক্তি পায়। সকলেই সামরিক কাযর্ক্রমে অংশ গ্রহনের সুযোগ পায়নারী ও যুব সমাজ বিপ্লবী কাজে অধিক সময় প্রদানের মওকা পায়। (১৬)(১৭) প্রতিদিন সকাল বেলা সামরিক কায়দায় লাইনে দাঁড়িয়ে মার্চ করে ক্ষেতে কাজ করতে যায় সকলে। সামরিক চেতনায় ও কায়দায় সমাজতন্ত্র বিনির্মানে সকলে মিলে কাজ শুরু করে দেয়। মাও বলে ছিলেন, “ সাম্যবাদের সত্যিকার চেতনার সৃজন ঘটে জনগণকে সামরিক চেতনায় উজ্জিবিত করতে পারলে”(১৮)(১৯)১৯৫৮ সালের ১ লা জুলাই চ্যান বোধা লাল পতাকা নামক পত্রিকায় এই সম্পর্কে পার্টির তত্ব বিষয়ক একটি প্রবন্দ্ব প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয় আমাদের কৃষক ও শ্রমিকদেরকে কমিউনের মাধ্যমে সামরিকি করন করতে হবে। মাও সাঙ্ঘাই, হেবি, ও হেনানে ব্যাটালিয়ন ও প্লাটুন গড়ে তুলেন। এই ব্যবস্থা গড়ে উঠার পর সমাজের নিরাপত্তা যেমন বৃদ্বি পায় তেমনি আবার লিঙ্গ ভিত্তিক সামাজিক বৈষম্য বিদুরিত হয়। সমাজে একটি বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। সেখানে সৈনিক ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যবধান ক্রমে কমতে থাকে। (২০)(২১)

১৯৫৮ সালে আরো একটি বিশেষ ধরনের সামাজিক পরিক্ষার সূচনা করেন মাওবাদিরা । তারা টাকা ছাড়া কেবল পন্যের প্রচলন করেন। তারা বিনা মূল্যে দ্রব্য আদান প্রদান শুরুকরেন। তবে তা ছিলো খুবই সীমিত এলাকার জন্য। কয়েকটি কমিউন অর্থ ছাড়াই কাজ করতে থাকে। আর বাকী গুলো অর্থ সহ ই চলতে থাকে। ১৯৫৮ সালের ২৩শে আগাস্ট, মাও অর্থবিহীন কার্যক্রম বাতিল করে দেন।

আমরা আমাদের অতিরিক্ত খাদ্য দিয়েই সরবরাহ করতে পারিআমরা এখন কেবল সমাজতন্ত্র নির্মান করছি, আর সাম্যবাদের সেবা করছি। সাম্যবাদ আসলেই সকলে বিনামূল্যে খাদ্য পাবেনআমরা যদি প্রমান করতে পারি যে খাদ্য বিনামূল্যেই পাওয়া সম্ভব তাবে তা হবে আমাদের জন্য বড় একটি অগ্রগতি। আমার বিশ্বাস আগামী দশ বছরের মধ্যেই তা করতে সক্ষম হব। আগামীতে আমাদের প্রচুর খাদ্য হবে। আমাদের নৈতিক মান হবে অনেক উন্নত। আমারা খাদ্য দিয়েই সাম্যবাদে যাত্রা করতে পারব। এর পর হবে বস্ত্র ও গৃহের ব্যবস্থা । যৌথ খাবারের ক্যান্টিন, বিনামূল্যে খাদ্য এ সবই সাম্যবাদ (২২)

আমাদেরকে অবশ্যই শহর ও গ্রামের ব্যবধান দূর করতে হবে। এবং আমাদের মাঝে যে সকল ক্ষতিকর আচরন আছে তা ঐতিয্য হলে ও বিদূরীত করতে হবে ।

ারী পুরুষ, কৃষক শ্রমিক, গ্রাম শহর, কায়িক ও মানসিক শ্রমের মাঝে যে ব্যবধান চলমান আছে তা দূর করতে হবে পুরাতন সমাজ ব্যবস্থায় যে মজুরী ব্যবস্থা আছে তা বাদ দেয়া হবে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এর জায়গা নাই। সামগ্রীক ভাবে অসাম্য দূর করে সমাজের সকল স্তরে সাম্যবাদ কায়েম করা হবে(২৩)

আমাদের নীতি হিসাবে দুই পায়ে হাটাআমাদের শহর ও গ্রামের ব্যবধান কমিয়ে আনবে। সাম্যবাদিদের লক্ষ্যই হলো সকল প্রকার ব্যবধান কমিয়ে আনা এবং শিল্পায়ন করা । পল্লীর জনগণের জন্য কমিউন স্থাপন করা অধিক খাদ্য উৎপাদন করা । গ্রামের মানুষ খাদ্য উৎপাদন করে শহরে পাঠাবেন আর শহরের মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ সকল সেবামূলক বিষয়াদি গ্রামে প্রেরন করবেন। কৃষকের দক্ষতা বৃদ্বির জন্য নতুন ধরনের মহা বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে(২৪) মাওবাদিরা কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রমের ব্যবধান দূর করার জন্য নেতা ও কর্মীদের ব্যবধান কমানো হবে। লালবিশেষজ্ঞদের মধ্যে যে ব্যবধান আছে তা ও দূর করা হবে। প্রতিটি মানুষের ব্যাক্তিগর দক্ষতা বৃদ্বি করা হবে। একজন কর্মজীবী মানুষ নেতা, বিজ্ঞানী, সৈনিক, লিখক, শিল্পী ইত্যাদি হবার মত পরিবেশ বিরাজ করবে আমাদের নতুন সমাজে। নেতা, ক্যাডার, বুদ্বিজীবী এবং শিল্পী সাধারণ জনগণের মাঝে থেকেই উঠে আসবেন। এই ধারনাটা খুবই একটা সরল বিষয়ঃ পরিস্থিতিগত কারনে ও কেউ তাদের হাত নোংরা করতে পারে দুর্নীতিবাজে পরিণত করতে পারে, কিন্তু অবস্থার উন্নতি হলে শ্রমজীবী মানুষের জীবন বেচে নিলেই যে কোন মানুষ ও ভালো হতে পারেন। (২৫)(২৬)(২৭)(২৮)

একমূখী বনাম বহুমূখী মানুষ

মাজতন্ত্রে বৈশিস্ট হলো ইহা যুক্তিকে প্রধান্য দেয়, তাই প্রথম দিকের বিপ্লবীদের মাঝে জনপ্রিয়তা অধিক ছিলোসৌভিয়েত সমাজতন্ত্রের ধারনা খুবই জন প্রীয় ছিলোইহার প্রভাব এমন ছিলো যে এর নিজকে সম্পৃক্ত করতে পারলে নিজে কে অনেকেই ধন্য মনে করতেনএই ধরনের ধারনা টি মূলত উৎপাদন শক্তির সাথে সমান্তরাল ছিলোতবে এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে প্রতিবিপ্লব হিসাবে চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় চিহ্ন করা হতএই ধরনের চিন্তা ধারা চীনে অনেকটা উত্তারধীকার হিসাবে পেয়েছিলোচিনের একজন শহীদ ছিলেন যার মাঝে এই ধরনের চিন্তার বিকাশ হয়তার সম্পর্কে বলা হয় যে, “ তিনি এমন ব্যাক্তি যে তার কথার কোন নড় চড় নেই”। (২৯) তবে মাওবাদিরা এই চিন্তার জগতে আঘাত হানেনতারা সময় উপযোগী চিন্তা লালন করতে থাকেনমূল মার্ক্সীয় চন্তাধারার জগতে নানা দেশের বুদ্বীজীবীরা যে উতকর্ষ সাধন করেছেন তা চীনের মাওবাদিরা গ্রহন করেনশ্রমজীবি মানুষের মুক্তির জন্য মার্ক্সের চিন্তাঅভিজ্ঞতাই হলো মাওবাদীদের পথপাথেয়

প্রকৃতিকমাজে ও শ্রম বিভাজন ছিল, মানুষ তাদের পেশা নির্বাচনে যা খুশি তাই করতে পারত না, সেখানেও প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নিজের প্রয়োজন তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করত। তবে এক সময় যখন বহির শক্তির আগমন ঘটতে থাকলো তখনই তাদের মাথায় গোলামীর জিঞ্জির নেমে আসল। শ্রম বিভাজনের এমন বিধি ধীরের ধীরে অরোপিত হতে থাকল যা তাদের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয় । তারা বাধ্য হয়েই শিকারি, মাছ শিকারী, গৃহ নির্মাতা, কুপ খনন ইত্যাদি কাজে বেচে থাকার তাগিদেই জড়িত হয় তাদের সামনে বিকল্প কিছু ছিলো নাসমাজতান্ত্রিক সমাজে বিশেষ কোন কাজের জন্য কারো উপর কোন প্রকার জবর দস্তি করার বিধান থাকবে না । মানুষ কাজ করার ব্যাপারে স্বাধীনতা ভোগ করবেন। একজন মানুষ চাইলে আজ এক টি কাজ কাল আবার আরো একটি ভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেনসকালে শিকার করে দুপুরে মাছ ধরতে পারবেন বিকালে চাইলে তিনি গরু ছাগল ছড়াতে পারবেনরাতের খাবারের পর পাশা বা তাস বা অন্য কোন খেলা ধুলা করতে পারবেন অর্থাবিশেষ কোন কাজের জন কেহবন্দি থাকবেন নাসামাজিক উন্নয়নের এমন একটি স্তরে মানুষ পুর্ন স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবেন”।(৩০)

১৯৬৩ সালে মহা উল্লম্ফনের পর চিনাদের মানবিক অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখিত একটি কবিতা ছিলো এই রূপঃ

আমর শ্রমিকরাগান গাইতে পারি

আমরা নাচতেজানি

আমরা যা জানি না তা শিখতে চাই

আমরা নাচ শিখব, গান শিখব এবং গাইব,

আমরা পার্টির সহায়তায় নিজেদেরকে তৈরী করব”(৩১)

আমরা আমাদের আদর্শকে ক্রমান্নয়ে গড়ে তোলব, আমরা সাধারনত জগড়া বাধাতে চাই না। সামাজিক সংকির্নতার কারনে সমাজতন্ত্র প্রতিস্টার সূচনায় বেশ কিছু দ্বন্দ্ব হলেও অর্থনীতিবাদ ও উন্নয়ন শক্তিবাদ স্তর আমরা পেড়িয়ে এসেছি। জনতার শক্তির মাঝে সাম্যবাদ, আত্ম সিদ্বান্ত গ্রহনের ক্ষমতা, নেতৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণ, সকলের বস্তুগত ও মানসিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করার জন্য মাওবাদিরা “সমাজ একটি মেশিন” এই ধারনার অবসান ঘটাতে চায়। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অংশ হিসাবে মাওবাদি গনমাধ্যম তাদের পত্র পত্রিকাঅন্যান্য মাধ্যমে একটা প্রচার করতে চায় যে “ জি হুজুর মার্কা অনুগত্যের তত্ত্ব” – এখন অচল। (৩২) প্রযোক্তিগত একপেশে দৃষ্টিভঙ্গীর অবসান ও হার্ভার্ট মার্কুস যে সমাজের সমালোচনা করেছিলেন, যা পাশ্চাত্যে ও সৌভিয়েতে বিরাজ মান ছিলো এর সকল কিছু কেই বিদূরীত করতে চায় মাওবাদি বিপ্লবীরা। মাওবাদি মডেলে যে, ত্রুটি বিচ্যুতি ও দুর্বলতা রয়েছে তা দূরীকরনের জন্য সাম্যবাদকে আবার কেন্দ্রে বসানো দরকার। মাওবাদিরা আন্ত্ররজাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনকে বুঝতে আগ্রহী, বিজ্ঞান ভিত্তিক পন্থায় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় তারা। আরো উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে কাজ করতে চায় । মহা উল্লম্ফন প্রত্যাসিত মাত্রায় ফলাফল দেয়নি। তবে চমৎকার পরিকল্পনা ছিল।

  1. Wheelwright, E. L. and McFarlane, Bruce. The Chinese Road to Socialism: Economics of Cultural Revolution. Monthly Review Press. USA:1971
  2. Hinton, William. Turning Point in China. Monthly Review Press. USA: 1972
  3. The Red Sun Lights the Road Forward For Tachai. Foreign Language Press. Beijing, China: 1969 p. 66
  4. ibid. p. 88
  5. Mao Tse-tung. “The Foolish Old Man Who Removed the Mountains” Selected Works of Mao Tse-tunghttps://www.marxists.org/reference/archive/mao/selected-works/volume-3/mswv3_26.htm
  6. Wu Wen-tao. “A Visit into the Old Soviet Areas” Chinese Literature Vol 2. Foreign Language Press. China: February, 1959  p. 108
  7. The Red Sun Lights the Road Forward For Tachai. Foreign Language Press. Beijing, China: 1969 p. 81
  8. Meisner, Maurice, Mao’s China and After. The Free Press, Third Edition. USA: 1999 pp. 214-217
  9. Wu Wen-tao. “A Visit into the Old Soviet Areas” Chinese Literature Vol 2. Foreign Language Press. China: February, 1959 p. 109
  10. Mao Tse-tung. “Reply to Comrade Kuo Mo-Jo” Selected Works of Mao Tse-tung.http://www.marxists.org/reference/archive/mao/selected-works/poems/poems34.htm
  11. Meisner, Maurice, Mao’s China and After. The Free Press, Third Edition. USA: 1999 p. 214
  12. Dikotter, Frank. Mao’s Great Famine. Walker Publishing Company, New York, USA: 2010 p. 47
  13. Joseph, William A. The Critique of Ultra-Leftism in China 1958 – 1981. Stanford University Press, Stanford, California: 1984 pp.  84-85
  14. “Resolution Of The Central Committee Of The Chinese Communist Party On The Establishment Of People’s Communes In The Rural Areas (August 29, 1958)” People’s Communes In China Foreign Language Press Beijing, China: 1958 p. 1
  15. Domes, Jurgen. Socialism in the Chinese Countryside. McGill-Queen’s University Press. Canada:  1980 p. 29-30
  16. “Greet The Upsurge In Forming People’s Communes Editorial Hongqi no. 7, September 1, 1958)” People’s Communes In China. Foreign Language Press Peking: 1958 pp. 9-11
  17. “Tentative Regulations (Draft) Of The Weihsing (Sputnik) People’s Commune (August 7, 19580 People’s Communes In China. Foreign Language Press Peking: 1958 p. 62
  18.  Domes, Jurgen. Socialism in the Chinese Countryside. McGill-Queen’s University Press. Canada:  1980 p.  26
  19. Dikotter, Frank. Mao’s Great Famine. Walker Publishing Company, New York, USA: 2010 pp. 48-51
  20. Domes, Jurgen. Socialism in the Chinese Countryside. McGill-Queen’s University Press. Canada:  1980 p.  26
  21. Dikotter, Frank. Mao’s Great Famine. Walker Publishing Company, New York, USA: 2010 pp. 48-51
  22. ibid. pp. 48-49
  23. “Greet The Upsurge In Forming People’s Communes Editorial Hongqi no. 7, September 1, 1958)” People’s Communes In China. Foreign Language Press Peking: 1958 pp. 12-13
  24. “New-Style University” Beijing Review no. 11. March 12, 1965 p. 30
  25. Kao Cheng-sheng “New-Type Urban-Rural Relations In China” Beijing Review no. 13. March 29, 1963  pp. 19-23
  26. Hsu Ching-hsien “Training Worker-Writers” Beijing Review no. 18. May 4, 1965  pp. 20-22
  27. “What Agricultural Scientists Envisage” Beijing Review no. 18. May 4, 1965 pp. 22-35
  28. “Hold High The Red Flag Of People’s Communes And March On” Renmin Ribao Editorial, September 3, 1958
  29. http://chineseposters.net/themes/leifeng.php
  30. Marx, Karl. The German Ideology http://english.illinoisstate.edu/strickland/495/etexts/german2b.html
  31. “We Workers Can Sing, We Workers Can Dance…” Beijing Review no. 18. May 3, 1963 p. 26
  32. Myrdal, Jan and Kessle, Gun China: The Revolution Continued. Pelican Books: 1973 p. 11

Leave a Reply