এটাই ছিল প্রথম মহান বিপ্লবী ঢেউ, যা সৌভিয়েত রাশিয়ায় আন্দোলন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েমের মাধ্যমে সাম্যবাদে পৌঁছার চেষ্টা করা হয়েছিল । মহান নেতা লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকগন অন্যান্য সামাজিক শক্তির সহায়তায় দুর্নিীতি পরায়ন জার স্বৈরাচারী সরকারকে দেশের নেতৃত্ব থেকে বিতাড়িত করেছিল । এর পর তারা বিতাড়ন করে সামাজিক গনতন্ত্রী এবং সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী মেনশেভিকদেরকে। সৌভিয়েত সমাজতন্ত্রের জন্ম হয়েছিল ১৯১৭ সালের লাল অক্টোবরে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের মাঝামাঝিতে যে পুজিঁবাদী অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল সেই সময়ই এই মহান বিপ্লব ঘটে । প্রতিক্রিয়াশীল জার সরকারের ও মেনশেভিকদের পতনের পর পরই রশিয়ার পূর্বাঞ্ছলে জার্মান সেনাবাহিনী আক্রমন করে বসে, যার বিরুদ্ধে রাশিয়ার কমিউনিষ্ট জনগণকে এক মরনপণ লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল । সেই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিই পুনরায় সংঘবদ্ব হয়ে ( ১৯১৭-১৯২৩) সমাজতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে এক গৃহ যুদ্ধের সূচনা করে। প্রক্রিয়াশীলদের সহায়তায় সাম্রাজ্যবাদী সাদা সৈনিক রা দেশের একটি অংশ দখল ও করে নেয় । মহান লাল ফৌজ সাধারণ জনগণের সহায়তায় প্রতিক্রিয়াশীলদের হঠিয়ে দিয়ে দেশ পুনরুদ্ধার করে। যাইহোক, অবশেষে বাম শত্র“রা ধবংস হয়ে যায় । প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ, প্রতিক্রিয়াশীলদের অপকর্ম ও সর্বোপরি গৃহ যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার জনগনকে প্রচুর দখল সইতে হয় । এছাড়া ও প্রতিক্রিয়াশীল গ্র“প ও দল গুলো পরিকল্পিত ও সচেতনভাবে দেশের সম্পদ লুন্ঠন, রাহাজানি ও ধবংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। দেশের চলমান উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বিপ্লবকে বাধাগ্রস্ত করতে গিয়ে সচেতনভাবেই দেশ ধবংসের কাজে উঠে পড়ে লেগেছিল । বলশেভিকগন উত্তরাধিকার সূত্রেই একটি বিধবস্ত রাষ্ট্র পেয়েছিল । তারা শত্র“দের দ্বারা চারপাশে থকেই ঘেরাছিল । দেশটিকে পূনরায় গড়ে তুলার জন্য লেনিন নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালা তৈরী করেছিলেন। যা ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় চালুছিল। এটা ছিল সাময়িক সময়ের জন্য কমিউনিজম থেকে পিছু হঠা । এই নীতিমালায় সাময়িক সময়ের জন্য সীমীত বাজার, ছোট পরিসরে উৎপাদন যন্ত্রের ব্যক্তি মালিকানা এবং এর পাশাপাশি বৃহৎ কারখানা গুলোর সামাজিকি করণ প্রক্রিয়া ছলছিল । তবে, তা সমস্যার ও সৃষ্টি করেছিল । নতুন ধরণের পুজিঁপতি চক্র গড়ে উঠেছিল । তারা একদিকে আর্ন্তজাতিক বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছিল যখন অন্যদিকে রাশিয়ার শহর গুলোতে চলছিল খাবারের জন্য হাহাকার। অধিকন্ত শহর গুলোতে খাদ্যের যথাযথ খাদ্য সরবরাহ করা যাচ্ছিল না, ফলে শিল্পায়নের গতি ও স্লথ হয়ে পড়ে । সত্যিকার অর্থে সৌভিয়েত গুলো আশা করছিল যে, সারা দুনিয়ায় তাদের মতই বিপ্লবের জোয়াড় বয়ে যাবে। কিন্তু তা হলো না। তখন কেউ কেউ এই পরামর্শ দিলেন যে, পুজিঁবাদকে পরাজিত ও বস্তাবন্ধি করা হোক। স্ট্যালিন স্বভাবিক ভাবেই লেনিনের পথানুসারে পুজিঁবাদকে পরাজিত করার পরিবর্তে একটি মাত্র দেশে সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য উদ্যোগী হলেন। আর অংশ হিসাবেই সমাজতন্ত্র বিনিমার্ণের জন্য শক্তি প্রয়োগ শুরু হলো, কৃষি জমিকে যৌথ খামাওে পরিণত করা হলো। খুব জোড় দিয়েই স্ট্যালিন ঘোষণা করলেন যে, যদি আমরা আমাদের,সৌভিয়েতের সবকিছূ আধুনিকি করণ না করি, তবে সাম্রাজ্যবাদ আমাদেরকে ধবংস করে ফেলবে। খাদ্যের সংকট ও আধুনিকি করনের সকল সমস্যা এক সাথেই সমাধান করা হবে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পণা যা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল দ্রুত শিল্পায়নের জন্য । যার ফলে অনেক জায়গায় সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়। গ্রামীন সমাজে, পুজিঁপতি ও ধনী কৃষক শ্রেণী রয়ে গিয়েছিল যারা বিপ্লবের বিরোধীতা করত। এরা ছিল বিপ্লবের শত্র“। সমাজতন্ত্রের দুষমন। এরা তাদের গরু ছাগল ও ভেড়া গুলোকে জবাই করে ও মেরে ফেলে জমিনের ফসল পুরিয়ে ফেলে তবু যৌথ খামারে তারা তা অর্পন করতে রাজি ছিল না। তারা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে অর্ন্তঘাৎমূলক তৎপরতা চালায় । তারা দল বল নিয়ে সাম্যবাদীদের বিরোদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে। এর ফলে নানা সংকট দেখা দেয় ও মনুষের মৃত্যু বাড়তে থাকে। তবে, এত কিছুর পর ও যৌথ খামার প্রতিষ্টত হয় এবং শিল্পায়ন দ্রুত এগাতে থাকে। তবু বলতে হয় এটা ছিল সময়ের নির্মম পরিহাস। এর জন্য মানুষকে অনেক চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল । পবর্তীতে, মাওসেতুং কৃষকদের প্রতি এই নির্মম কর্মকান্ডের জন্য স্ট্যালিনের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন । তবে এটাও ভাবার বিষয় যে, স্ট্যালিন এছাড়া আর কি ই বা করতে পারতেন? দেশীয় শত্র“ ও সাম্রাজ্যবাদী ফ্যাস্টিরা উৎ পেতেছিল রাশিয়কে দখল করার জন্য । স্ট্যালিনের দ্রুত শিল্পায়ন করন রাশিয়াকে বাচাঁনো ছাড়া কোন উপায়ই ছিল না । লাল ফৌজের প্রয়োজন ছিল টেংক, আরো সৈনিক আরো অস্ত্রশস্ত্র । আর টেংক বানাতে হলে অবশ্যই শিল্পায়ন দরকার। দৃঢ় ও কঠোর উদ্যোগ বিনা শিল্পায়ণ যে সম্ভব নয়, তা তো সবাই স্বীকার করবেন। নাজী বাহিনীর আক্রমনের সময় স্ট্যালিনের উদ্যোগ যে, সঠিক ছিল তা ইতিহাসে প্রমাণিত হয়েছে । সেই ভয়ংকর যুদ্ধে রাশিয়ার ২৭ মিলিয়ন জনগণ প্রাণ দিয়েছিলেন। নজিদের পরিকল্পনা ছিল রাশিয়ার সকল মানুষকে নিধন করে একটি ফ্যাসিস্ট সাম্রাজ্য প্রতিষ্টা করা এবং সৌভিয়েতবাসীকে চির দিনের জন্য দাসে পরিণত করা । স্ট্যালিনের শাসন কালে দৃঢ়তা ও ত্যাগ স্বীকার সৌভিয়েত জণগনকে বাচিঁয়ে দেয় এবং বিশ্বকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে হেফাজত করে। কোন কোন সময় এমন হয় যে তখন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্ট্যালিন সেই সয়ম বাস্তব কারণেই কঠিন সিদ্ধান্তটি গ্রহন করেছিলেন। মুলতঃ সেই সময়ে ঠিকে থাকার জন্য তিনি সঠিক কাজটিই করেছিলেন ।
সৌভিয়েত ইউনিয়ন সেই সময়ে বিজয়ী হিসাবে আর্ভিভুত হয়েছিল । লাল ফৌজ পূর্ব ইউরোপের বহু দেশকে ফ্যাসিবাদেও হাত থেকে মুক্ত করেছিল। তখন সেই পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলোতে গণপ্রজাতন্ত্র কায়েম হয়েছিল। র্জামানী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। পূর্বজামানী সৌভিয়েত ইউনিয়নের সুবিধাভোগী রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছিল। স্ট্যালিন নিজেই একদেশ তত্তে¡র বিপরীতে যুদ্ধের পরপরই সৌভিয়েত ব্যবস্থার স¤প্রসারণ ঘটান। যাইহোক, যদিও সৌভিয়েত রাষ্ট্রটি পুনরায় যুদ্ধে অনেক সমস্যায় পড়েছিল এর পর ও ইহা একটি আধূনিক পরাশক্তি হিসাবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করেনিয়েছিল । দেশটি প্রথমে লেনিন এর পর স্ট্যালিন এর নেতৃত্বে এগিয়ে চলল। একটি পশ্চাৎপদ সামন্তবাদী দেশ থেকে আধুনিক দেশে, ছোট শিল্প থেকে বৃহৎ শিল্পের দেশে এবং উন্নত অর্থনৈতিক ও পরমানু শক্তির অধিকারী হিসাবে পরিনত হলো। সমাজতন্ত্র সকলের জন্যই প্রয়োজনীয় বিদ্যা অর্জনের ব্যবস্থা করে দেয়, মানুষকে র্দীঘ জীবন দান করে, নারীদের রাজনৈতিক অধিকার, শ্রমিক ও দরিদ্রদেরকে রাজনৈতিক শক্তিপ্রদান এবং যারা জাতিয় ভাবে বঞ্চিত ও নিপিড়িত হত তাদেরকে মুক্ত করে উন্নয়নে মুলশ্রোত ধারায় সম্পৃক্ত করে। দেশের ক্রান্তিকালে সকল প্রকার সামাজিক ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব সাধন কারা হয়েছিল অত্যন্ত দৃঢ় ও শক্ত হাতে। এই কর্মকান্ড গুলো সম্পাদন করা হয়েছিল দুটি ভয়ংকর যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যেই। যা পশ্চিমা বিশ্ব করেছে প্রায় ২০০ শত বছরে। তারা তাদের উন্নতির জন্য ২০০ বছর সময়ে সাথে আদিবাসী ও অন্যান্য দেশের সম্পদের লুন্ঠন এবং আফ্রিকানদেরকে কৃতদাসে পরিণত করতে হয়েছিল। অন্যদিকে, সৌভিয়েত ইউনিয়নকে উন্নয়নের জন্য সময় লেগেছিল মাত্র কয়েক দশক, সাম্যজ্যবাদী দেশ গুলোর মত তারা কোন জাতিকে শোষন করেনি, কোন আদিবাসিকে লুন্ঠন করেনি তারা কাউকে দাসে ও পরিণত করেনি । তদুপরি, সৌভিয়েত ইউনিয়ন ফ্যাসিস্ট শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা চারদিক থেকে অর্থনৈতিক সহ নানা ভাবে অবরোদ্ধ ছিল। সামগ্রীকভাবেই সমাজতন্ত্র প্রমান করেছে যে, ইহা পুঁজিবাদের তুলনায় কোন সমাজকে আধুনিকি করণে অধিকতর বেশী কার্যকরী একটি ব্যবস্থা। এমনকি সামগ্রীক কর্মকান্ড বিশ্লেষন করলে বুঝা যায় যে, সৌভিয়েত সমাজতন্ত্র কোন অংশে পিছিয়ে ছিল না। তবে সামাজিক পরিবর্তনে যুদ্ধের খেশারত দিতে গিয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল। যুদ্ধকালিন সময়ে বিপ্লবেকে পিছনের দিকে টেনে ধরেছিল। এই প্রক্রিয়াটা ১৯৫৩ সালে স্ট্যালিনের মৃত্যুঅবদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালিন সময় পযর্ন্ত চলছিল। অনেকে বলেন যে, ১৯৫৩ সালে স্ট্যালিনের মৃত্যু ও ১৯৫৬ সালে কুসচেভের মুত্যুই ছিল সৌভিয়েত সমাজতন্ত্রের প্রতি চরম আঘাত। সেই সময়টিতেই সৗভিয়েত বিপ্লব স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং যা প্রাগ্রসরতার পথে এক বিশাল সংকটের মুখোমুখী হয়। ইহাই মূলতঃ সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় পুজিঁবাদের জন্ম দেয়।
উৎপাদন শক্তি তত্তে¡র দ্বারা সৌভিয়েত সমাজতন্ত্র মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল। ইহা একান্তভাবেই প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থায় আস্থাশীল হয়ে পড়ে। ইহা সমাজকে ও মানুষকে কেবল মাত্র যন্ত্রহিসাবে দেখতে শুরু করে আর এর কারণ ও ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাটি ও ছিল উপড় থেকে চাঁপিয়ে দেয়। এই যান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা মানুষের সৃজনশীলতা, স্থানিয় সম্ভাবনা ও উৎপাদনের স্বাভাবিক গতি কমিয়ে দেয়। এর সাথে সাথে রাষ্ট্রেও কর্নধাররা প্রতি বিপ্লবে সমস্যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝতেই পারেন নি। তারা সেই সমস্যাকে পুলিশি কায়দায় দেখার ও সমাধানে চেষ্টা করেছেন। যখন সমাজে সমস্যাগুলো চলছিল তখন, তার সমাজিক কারণ খোঁজে দেখেননি। তারা চলমান সমস্যা গুলোকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অর্ন্তবতী কালিন অনুসঙ্গ হিসাবে না দেখে দেখেছেণ বাহিরের ষড়যন্ত্র হিসাবে। তাই তারা সেই প্রতি বিপ্লবী সমস্যাকে প্রধানত উন্নত পুলিশি ব্যবস্থায় সমাধান খোজেঁছেন। তাা সমস্যা গুলোকে দেখেছেন সাবেক শ্রেণী শত্র“, তাদের এজেন্ট ও তাদেও দাললদের সৃষ্ট সমস্যা হিসাবে। কেবলমাত্র যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সমাজ এগোতে পারেনা তা তারা বুঝতে চরমভাবে ব্যার্থ হয়েছিল। তারা এটা ও বুঝতে পারেনি যে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে বেশ কম হবেই, যেহেতু এটা একটি সাময়িক ও অর্ন্তবর্তীকালিন ব্যবস্থা। সমাজে কম ও বেশী প্রাপ্তির বিষয়টিকে কেন্দ্রকরে নতুন বুর্জোয় শ্রেণীর সৃষ্টি হতেই পারে, যারা সমাজতন্ত্র থেকে সরে আসার চেষ্টা করবে। সেই নতুন বা উদিয়মান বুর্জোয়ারা প্রচেষ্টা চালাবে সৌভিয়েতের সমস্যা গুলো তাদের মত করেই সমাধান করতে। এই ধরনের প্রচেষ্টাকে এড়ানোর জন্য এবং সমস্যার সমাধানের জন্যই চীনে মহান মাওসেতুং সাংকৃতিক বিপ্লব সাধনের উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সৌভিয়েত ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদীরে মতই আচরণ শুরুকরে। আর স্ট্যালিন শাসনের সমাপ্তির পর সকল আশাই তিরুহিত হয়ে যায়। সৌভিয়েত ইউনিয়ন তখন কেবলই একটি পুজিঁবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশ পরিণত হয়। তবে, সৌভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত সারা দুনিয়াকে বিপ্লবী প্রেরণা দিয়ে গেছে। এটা ছিল লাল বিপ্লবের প্রতিক ও সারা দুনিয়ার নিপিড়িত মানুষের আশার প্রদ্বিপ। মুক্তির মশাল।
সৌভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লব কত কাল স্থায়ী হয়েছিল?
অক্টোবর, ১৯১৭ সাল থেকে শুরু হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৫৩ সালে স্ট্যালিনের মৃত্যু, অথবা ১৯৫৬ সালে ক্রুসচেভ এর শাসন কালের অবসান। প্রকৃত বিশ্লেষনে লেনিনের সময়কাল ও স্ট্যালিনের সময়কালটাকেই আমরা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী সময় বলতে পারি। একেএম শিহাব
সৌভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কি কি অর্জিত হয়েছিল..
১. সর্বপ্রথম সর্বহারার রাষ্ট্র ঃ লেনিন বলে ছিলেন রাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও র্কতৃত্ব গ্রহন না করলে সকল চেষ্টাই প্রহেলিকায় পরিনত হয়। দুনিয়ার ইতিহাসে আমাদের শ্রেণী সর্ব প্রথম রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব গ্রহন করে ছিল। রাষ্ট্রকে শোষক শ্রেনীর বিপরীতে শিষিত শ্রেণীর অনুকোলে ব্যবহারের সুযোগ তৈরী করেদেয় । প্রতি বিপ্লবীদেরকে দমন ও বিপ্লবকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে কাজে লাগানো হয়ে ছিল । রাষ্ট্রের সবচেয়ে উঁচু স্তর থেকে সমগ্র সমাজে নির্দেশনা প্রদানের সুযোগ এসেছিল ।
২. প্রথম সফল পরিকল্পিত অর্থনীতির উদাহরণ ঃ সৌভিয়েত ইউনিয়ণ ছিল সর্বহারা শ্রেণীর প্রথম উদ্যোগ যেখানে অর্থনীতিকে সংগঠিত করা হয়েছিল সত্যিকার ভাবে জনগণকে সেবা করার জন্য। এটা ছিল এমন একটি মহান ও প্রথম উদ্যোগ যেখানে নিপিড়িত মানুষ বাজারের করুণার পাত্র হবেনা । সর্বহারা শ্রেণী ও শোষিত শ্রেণী উৎপাদন শক্তির নৈরাজ্য বা পুজিঁবাদের গ্রাস থেকে মুক্তি পেয়েছিল । সকল প্রকার উৎপাদন ব্যবস্থা রাষ্ট্র ও সর্বহারাশ্রেণীর পার্টির নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছিল ।
৩. বিশাল অগ্রগতি ঃ সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে, সৌভিয়েত ইউনিয়ণ অতি অল্প সময়ের মধ্যেই একটি পশ্চাৎপদ দেশ থেকে একটি আধুনিক উন্নত দেশে পরিণত হয়, এবং পরাশক্তির অধিকারী সাম্রাজ্যবাদী দেশকে চ্যালেঞ্জ করারর সামর্থ অর্জন করে। জার শাসন আমলে কেবল মাত্র কয়েকটি শহরকে আধুনিকি করণ করা হয়েছিল ; অথচ আমাদেও শ্রেণীর নেতৃত্বে অল্প সময়ের মধ্যেই সমগ্র দেশকে আধিুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল । এবং পারমানবিক শক্তির অধিকারী হয়েছিল। সৌভিয়েত ইউনিয়ণ পৃথিবীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম মহা শক্তিতে পরিণত হয়েছিল ।
৪. ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও সময় প্রায় ২৭ মিলিয়ন মৃত্যু ও অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটেছে । যা সেই সময় কার সমগ্র দুনিয়ার হতাহতের চেয়ে ও বেশী ছিল । সেই দেশ প্রেমের যে মহান যুদ্ধ ছিল তা ছিল সত্যিকারের গণ যুদ্ধ। হিটলারের বিরুদ্ধে সম্মোখ সমরে সৌভিয়েত জনগণ আদর্শিক চেতনা থেকেই লড়াই করেছে। যদি সৌভিয়েত জনগণ সেই দিন এরূপ যুদ্ধ না করতে পারত তবে হিটলার বাহিনী র্মাচ করে প্যাসিফিক সাগর পর্যন্ত দখল কওে নিত। সেই দিন যদি হিটলার বিজয়ী হত তবে আমেরিকয়ায় আদিবাসিদের যেভাবে নিধন করেছে, সেভাবেই পূর্ব ইউরূপ ও এশিয়ায় হত্যা যজ্ঞ চালানো হত। সত্যিকার অর্থেই হিটলার বিপুল হত্যা যজ্ঞের মাধ্যমে আমেরিকার মতই একটি রাজত্ব কায়েম করতে চেয়ে ছিল । সৌভিয়েত ইউনিয়ন, লাল ফৌজ, লেনিনের নেতৃত্বে আমাদের পার্টি সে দিন হিটলার বাহিনীর হত্যাকান্ড ও তাদের গাড়ীবহর থামিয়ে দিয়েছিল।
৫. সর্বহারার নতুন সংস্কৃতি ঃ সকল প্রকার পুরাতন সংস্কৃতি যেমন গৌষ্ঠিবাদ, জতিপুজাঁ, লিঙ্গবাদ ইত্যাদীর অপসারণ করা হয় । ইতিহাসে প্রথম বারের মত নিপিড়িত মানুষের সংস্কৃতি, শিল্প ও মিডিয়ার বিকাশ ঘটে। সর্বহারা শ্রেণীর একটি নতুন মূল্যবোধ,শান্তি, ও আত্মমর্যাদার নিশ্চয়তা বিধান করতে সকল প্রকার অসমতার সংস্কৃতির অবসান করা হয়। আমাদের সংংস্কৃতি, শিল্প, ও সংগীত সমগ্র দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল।
৬. বিপ্লবী বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও স¤প্রসারণ হয়েছিল ঃ বলশেভিকদের বিপ্লব আমাদেরকে বিপ্লবী বিজ্ঞান বুঝতে সহায়ক হয়েছিল। বলশেভিক বিপ্লবের পাশাপাশি মহান লেনিন সর্বহারার রাষ্ট্র তত্ত¡, সমাজের দ্বৈত শক্তি তত্ত¡, অগ্রগামী পার্টি তত্ত¡ ্ওবং প্রতিটি জাতি স্বত্বার আত্মমর্যাদার ধারণার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। মার্ক্সীয় মতবাদে মহান লেনিনের যে অবদান তাই হলো আজকের লিডিংলাইট কমিউনিজম। ইহা ছিল এমন একটি দেশ যা সমগ্র দুনিয়ার ছয় ভাগের এক ভাগ, যেখান থেকে সমগ্র দুনিয়ায় বিপ্লবী কিজ্ঞানে চর্চা করের সুযোগ তৈরী হয়েছিল। বলশেভিক অভিজ্ঞতার সারর্মমই মুলতঃ মার্কসবাদের মার্কসবাদ লেনিনবাদের উন্মেষ ঘটায়। রশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব সমগ্র দুনিয়ায় বিপ্লবী বিজ্ঞানের সমপ্রসারণে ভূমিকা রেখে ছিল। ইহা মার্কবাদ ও লেনিনবাদকে সারা দুনিয়া ছড়িয়ে দিয়েছিল।
৭. একটি উন্নত জীবন যাপনের নিশ্চিয়তা দিয়েছিল। জার সম্রাটের আমলে সৌভিয়েত জনগণ এক ভয়ংকর পরিবেশে বসবাস করেছে। ছিল ভয়ংকর অনাহার, ভয়ংকর দরিদ্র, ও অসহনীয় শোষন জনগনের নিত্য সঙ্গী। সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময়ে মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পায় । যদিও সেখানে বশ কিছূ সমস্যা ছিল তবু খাদ্য সংকঠ দূরকরা হয়েছিল। প্রতিটি মানুষের খাদ্য, কাপড়, ঘরবাড়ী ও স্বাস্থ্যব্যাবস্থার ব্যপক উন্নতি সাধিত য়েছিল। পতিটি মানু তার বিদ্যা অর্জনের গ্যারান্টি পেয়েছিল। সৌভিয়েত ইউনিয়ন একটি দরিদ্রদেশ থেকে একটি আধুনিক ও পরাশক্তির দেশে পরিণত হয়েছিল। মানুষের আয়ুষ্কাল প্রায় দ্বিগুন হয়েছিল। মিমু মৃত্যুার অনেক কমে গিয়েছিল। সৌভিয়েত জনগন সমাজতন্ত্রের প্রতি কৃত্জ্ঞতা জানাচ্ছিল, এবং তাদেরকে উন্নত জীবন যাত্রা উপহার দেয়ার জন্য তারা তাদের নেতা বিশেষ করে মহান লেনিন, স্ট্যালিনের পতি সমর্থ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিল। এমনকি আজ ও রাশিয়ার সাধারণ জনগন নেতৃত্বের মাপ কাঠিতে লেনিন স্ট্যাালিনকে সবার উপরে স্থান দেয়। শ্র্দ্ধা করে, ভাল বাসে।
এটা সত্যযে সৌভিয়েত সম্পূণ অর্থে নির্ভেজাল ছিলনা, রাশিয়ায় আমাদের বিপ্লব রাশিয়ায় প্রতি বিপ্লবীদেও দ্বারা মার খেয়েছে। একটি নতুন বুর্জোয়া শ্রেণীর উন্মেষ ঘটেছে। তারা চুড়ান্ত আঘাত এনে তাদের নেতৃত্ব কে সংহত করেছে, যদি ও এই প্রক্রিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই উরা শুরু কিেছল । আমারা দৃঢ় ভাবেই বলছি আমাদেও সবকিছূ হড়েিয় যায়নি, আমরা হতাশ নয়, সচেতন ভাবেি বলছি যে, কেভল মাত্র বিপ্লবের প্রথম উয়েভ বা ঢেউটি মিলিয়েঘেছে তবে আমরা দ্বতীয় উয়েভ বা এঢউ তুলার জন্য প্রস্তুতী নিচ্ছি। মহান মাওয়ের নেতৃত্বে আরো অনেক প্রাগ্রসর বিপ্লব চীন দেশে সংঘঠিত হয়েছে। চীনদেশের বিপ্লবটি আমাদেরকে আরো অগ্রসর হতে গভীরভাবে প্রেরণা দেয়। আমরা অতীত থেকে শিখব, উন্নত করব যুদ্ধেও কৌশল যেন পরর্বতীতে আমরা আরো ভালো ভাবে কাজ করতে পারি। এমনকি আগের অনেক ভূল ও সৌভিয়েত অজ্ঞিতা আজ ও আমাদেরকে ডাক দিয়ে যায় এবং নিরন্থর শেখায় । প্রেরনাদেয় এগিয়ে যাবার।
সৌভিয়েত সমাজতন্ত্রের কি কি গলদ ছিল ?
সৌভিয়েত সমাজতন্ত্রে বেশ কিছু জটিল সমস্যা ছিল ঃ সৌভিয়েত সমাজতন্ত্র মাত্রতিরিক্ত ভাবে উৎপাদন শক্তি তত্তে¡র দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ইহা সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য প্রযুক্তির উপর অধিকমাত্রায় নির্ভশীল ছিল। এছাড়া তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের মত সমাজউন্নয়নকে ও একটি যন্ত্রের মতই বিবেচনা করেছে । যখন সমস্যার সৃষ্টি হল, তখন তারা একে অভ্যন্তরিন সংকট হিসাবে বিবেচনা না করে বিদেশী দালালদের সৃষ্ট সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করেছে। তারা সকল সমস্যাকে দেখেছে প্রয়োগের ধরনের মাঝে নয় বরং প্রতিবিপ্লবীদের অপতৎপরতা হিসাবে দেখেছে ফলে তারা তার সমাধান খোজেঁছে পুলিশি ব্যবস্থার মাঝে । তারা প্রয়োগিক কাঠামো ও নেতৃত্বের সংকট হিসাবে বিশ্লেষেন করার কোন চেষ্টাই করেনি। ফলে সৌভিয়েত ব্যবস্থা একটি চরম গণ বিরোধী ব্যবস্থা হিসাবে দেখা দেয়। এটা ছিল খুবই একপেশে চাপিয়ে দেয়া ও নির্দেশমূলক ব্যবস্থা,বিশেষ করে কৃষকদের প্রতি । ফলে বন্দী নাগরিকের সংখ্যা ও পুলিশের আকার বাড়তে লাগল । যা সমাজতন্ত্রের সামগ্রীক শাসন কালটাকেই কলংকিত করে দেয়, অথচ এটা ছিল একটি কর্মবাদী সময় কাল । কর্তা ব্যক্তিরা ভাল ভাবে বুঝতেই পারলেন না এই ধরনের শাসন ব্যবস্থা ও যে এক প্রকার নিযার্তনের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে । সৌভিয়েত সমাজতন্ত্রীরা একেবারেই যে বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক ভাবে অবজ্ঞা করেছে তা হলো, মানুষ, পরিবেশ এবং তার প্রতিবেশ। মাওবাদী সমালোচকগণ সেই সময়ে বহু বিষয়ে সমালোচনা করেছেন এবং পরর্বতীতে তারা তা নিজেদের বিপ্লবী র্কমকান্ডে অনুসরনের চেষ্টা করেছিল। তাবে, মাওবাদীরা ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গিীর আলোকে বেশীদূর অগ্রসর হতে পারেননি, তাদের সমালোচনা এগিয়ে নিতে পারেননি। সৌভিয়েত সমাজতন্ত্রীদের কৃত ভূল চর্চার পুনরাবৃত্তি করার কাজই বন্ধ হয়ে গেল। সৌভিয়েত অভিজ্ঞতার প্রাগ্রসর নির্যাসই হলো লিডিং লাইট। তাদের আরো একটি বড় মাত্রার ভূল ছিল তারা কখনই প্রথম বিশ্ববাদকে ভাঙ্গার প্রচেষ্টা করেনি। ইহাই সমাজতন্ত্রকে নানা ভাবে আক্রমন করেছে এবং পশ্চিমা অর্থনীতি সাম্রাজ্যবাদী রূপে সৌভিয়েতকে পতনের বেলা ভূমিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। লিডিং লাইট কমিউনিজম অতীতের সকল ভূল গুলো সংশোধন করেছে এবং দূর্বলতা গুলো ঝেড়ে ফেলেছে। একেএম শিহাব