বুদ্বিবৃত্তিক নক্সায় ষড়যন্ত্র তত্ব

বুদ্বিবৃত্তিক নক্সায় ষড়যন্ত্র তত্ব
(llbangla.org)একটি প্রচলিত ধারনা আছে যে, সমাজ কিভাবে পরিচালিত হবে তা কেবল পরম সত্ত্বা ইশ্বর ই ভালো জানেন। কোন বিপর্যয় হলে তাঁর ইচ্ছেতেই হবে। সমাজের উত্থান পতন সবই বিধির বিধান ইত্যাদী। এই ধরনের ধারনা একেবাই সঠিক নয় । এই তথা কথিত ‘ বুদ্বিবৃত্তিক নক্সা’র মত আরো অনেক বস্তা পচা ধারনা খ্রীস্টিয়ান বুদ্বিজীবিদের মাঝে প্রচলন আছে। খ্রীস্টান লোকেরা প্রায়স একটি বিষয় বলে থাকেন যে, ইশ্বরের ইচ্ছায় দুনিয়ায় সব কিছুই হয়ে থাকে। ১৮০২ সালে ধর্মগুরু উইলিয়াম পেলে যুক্তি দেখান যে, একটি ঘড়ি যেমন তাঁর নির্মাতার তৈরী করা নক্সা অনুসারে চালিত হয় ঠিক তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্র সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছায় ও নিয়মেই পরিচালিত হবে। ধার্মিক খ্রিষ্টানগণ  এরিস্ট্যেটলের মতামতকে সামনে এনে যুক্তি দেখান যে, প্রানী জগত ও প্রকৃতি পরস্পরের সাথে সংগতি বজায় রেখে চলে। এরা একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। তাই তাঁরা বলতে চান সেখানে অবশ্যই ইশ্বরের হাত রয়েছে। এই প্রসঙ্গে ডেভিড হিঊম লিখেছিলেন ১৭০০ সালের মাঝা মাঝি সময়ে, তিনি বুদ্বিবৃত্তিক নক্সার ধারনাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। হিউম যুক্তি দেখান যে, প্রকৃতিক নিয়ামাবলী একান্তই একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। তিনি একে তুষারপাত ও পাথরের গঠন প্রক্রিয়ার সাথে তুলনা করেছেন। এই ধারনাটিকে জীব বিজ্ঞানের জগতে ও প্রমান করেন ১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউইন, তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অন দি অরিজিন অব স্পিসিস’ প্রকাশ করে। ডারউইন দেখান জীব জগতে ও প্রকৃতিক নিয়ম খুবই সরল একটি প্রক্রিয়ার বিষয়। প্রকৃতিক নিয়ম পরিবর্তিত হতে দির্ঘ  একটি সময়ের দরকার হয়। মুলত ‘বুদ্বিবৃত্তিক নক্সা’ সমাজে একটি প্রহেলিকার জন্ম দিয়েছে। প্রানী ও প্রকৃতির রাজ্যে যে নিয়ম নীতি গড়ে উঠেছে – তা প্রকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে হাজার হাজার বছরে তৈরী হয়েছে।

ধার্মিক খ্রীস্টিয়ানরা কেবল মাত্র প্রকৃতির উপরের ধরনটি দেখে। আর ষড়যন্ত্র ত্বত্ত্বের গুরুরা কেবল সমাজের উপরিভাগের কিছু ঘটনাকে দেখে থাকেন। তাঁরা সমাজ ও বিশ্বকে একত্মবাদি ঈশ্বরীয় ধারনার আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন, যার মর্মার্থ হলো- ‘যা হয় সবই হয় একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে হয়।’ – এই ধরেনের ধারনা একেবারেই ভূল ও অবৈজ্ঞানিক।  যখন দেখি, মহান কার্ল মার্ক্স চার্লস ডারউইনের নামে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ দ্যাস ক্যাপিটেল উতসর্গ করেছিলেন – তখন মনে হয়- এটা কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিলোনা । মহান ডারউইন খুবই সাধারণ ভাবে দেখালেন, জীব জগতের যে বিবর্তন ঘটছে তা প্রকৃতির স্বভাবিক নিয়ম অনুসারেই চলছে। সেই ভাবে মার্ক্স ও ব্যাখ্যা করে দেখালেন কিভেবে বস্তুগত ভাবে সমাজের বিবর্তন প্রক্রিয়া চলছে। অর্থাৎ জিব জগতের বিবর্তন আর সমাজ ব্যবস্থার বিবর্তন একই ধারায়  বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদি ব্যাখ্যার বিষয়। ষড়যন্ত্র তত্বের গুরু ও সেই দলের পালের গোদাদের মত দুনিয়াকে না দেখে – আমরা যদি বিপ্লবী বৈজ্ঞানিক মনোভঙ্গী নিয়ে সামাজিক শক্তি, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও সামগ্রীক বিষয়াদি বিশ্লেষণ করি তবে – আমারা দেখতে পাব যে, এরা একটি বিশেষ সুবিধা ভোগী শ্রেনীর পক্ষে কাজ করেছে। যারা হলেন – একটি বিশেষ শ্রেণী, লিঙ্গ, জাতি ইত্যাদির জন্য নিবেদিত প্রান পুরুষ। তাঁদের এই প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খোঁজে পাওয়া যাবে না । অধিকন্ত তাঁদের এই রূপ ত্বত্ত্ব মানুষকে একেবারেই ক্ষমতাহীন করে দেয়। তাঁরা জনগণকে বলতে থাকেন যে – সামাজিক পরিবর্তন কোন নীতিগত বিষয় নয় বরং তা হলো ক্ষমতাগত বিষয়।  এমন কি কেহ যদি তাঁদের বিশ্বাস থেকে সামাজিক পরিবর্তনের উদ্যোগ ও গ্রহন করেন, তবে তাকে গ্রেফতার করা উচিৎ, এবং তাদেরকে বিচারের সোফর্দ করা দরকার। এই ধরনের ত্বত্ত্ব ক্ষমতা সম্পর্কে এক ধরনের রহস্য সৃজন করে থাকে। সাধারণ মানুষকে ক্ষমতাশালীদের ক্রিড়নকে পরিনত করে দেয়। ক্ষমতাগত ত্বত্ত্ব আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, বৈজ্ঞানিক বিপ্লবী ত্বত্ত্ব প্রয়োগ করে সামাজিক শক্তিকে একতা বদ্ব করে সামাজিক বিপ্লব সাধন করা উচিৎ। নতুন ক্ষমতা কাঠামো গড়ে তোলতে, ক্ষমতা দখল করতে, নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে। প্রচলিত সামাজি নক্সার খোল নলছে পাল্টে দেবার জন্য লিডিং লাইট কমিউনিজমে উন্নিত  হতে হবে এবং সর্বোপরি, সকল প্রকার প্রক্রিয়াগত নিপীড়নের অবসান করার জন্য – আমাদের সর্ব শক্তি নিয়োজিত করা দরকার। জয় হোক সকল মেহেনতি জনতার। একে এম শিহাব

Leave a Reply