লিডিং লাইট ঃ মাওসেতুংকে দুষারূপ (২০০৬) একটি পর্যালোচনা ।

(llcobangla.org)

হিস্ট্রি চ্যানেল একটি ফালতু ও সস্থা জনপ্রিয় প্রামান্য চিত্র নির্মান করেছে। তাঁরা তাঁদের উদ্দেশ্যটাই দর্শককে বুঝতে পারেনাই। বরং বুর্জোয়া ধ্যনধারনায় সুকৌশলে দর্শকদেরকে এক বিভ্রান্তিকর অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। ছবিটিতে মাও কে একজন হৃদয়হীন, স্বৈরাচারী, ক্ষমতা লিপ্সু, অন্ধ অনুসারীদের এশিয়ান নায়ক হিসাবে প্রদর্শন করেছে। কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক পদ্বতী অনুসরন না করে তাঁরা মহা মানব তত্বকে দর্শকদের সামনে হাজির করেছে। ছবিটির বর্ননা থেকে জানা যায় যে, ইতিহাস নাকি সামাজিক ক্ষমতা কাঠামোর ফলাফল নয় ; বরং তা হলো পৃথীবিতে মহা মানবদের কির্তি কলাপ। সুচনা বক্তব্যেই বলা হয়েছে যে, এটা এমন একজন নেতার কাহিনী যিনি তাঁর নিজের মানুষদেরকে নির্দয়ভেবে খুন করেছেন। তিনি হলেন সেই নেতা যিনি ইশ্বর বিহিন একটি দেশে নিজেকে ইশ্বর বানিয়েছেন। ছবিটির শীল্পমান এত নিচু যে, তা বুর্জোয়াদের সাধারণ মানকে ও স্পর্শ করতে পারেনি। মহান মাওয়ের অবস্থানকে হীন করার সমান প্রয়াস চালিয়েছিল – দু টি ছবি মর্নিং সান (২০০৩) ও মাও এর রক্তাক্ত বিপ্লব (২০০৭) ।

ভাষ্যকার তাঁর ভাষ্যে যোগ করেন, হেনরি কিসিঞ্জার, যোদ্বাপরাধী; জেমস লিলি, যিনি ১৯৮৯-১৯৯১ সাল পর্যন্ত চিনে নিযক্ত মার্কিন রাষ্ট্র দূত; রোজ তিরিল, মাওসেতুং -একটি জীবন বইয়ের লিখক, আঞ্চিমিন, রেড আজালা বইয়ের লিখক ; জি-লি জিয়াং, লিখক  লাল স্কার্ফ ওয়ালা কন্যা; জেন অয়াং, বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক, গ্লবি এবং  মেইল। আর ও উল্লেখিত আছে মাওয়ের ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার লি জেসুইস এর ভাষ্য- তাতে বলা হয়েছে , মাওসেতুং মারাত্মক যৌনরোগে ভোগছিলেন কিন্তু নারিরা তাঁর দ্বারা সেই রোগে সংক্রমিত হতে চাইতেন, তাতে তাঁরা গর্ববোধ করতেন এবং এর মাধ্যমে মাওয়ের সাথে যে তাঁদের ঘনিস্ট সম্পর্ক আছে তা তাঁরা প্রমান করতে চাইতেন। যারা ভাষ্যকার ছিলে তাঁরা এও উল্লেখ করেন যে, এটা সত্য যে, আমেরিকা ও চীনের মধ্যকার বৈঠক আক্রমণ কারী ও আক্রান্তদেরকে একাকার করে দেয়, যা ছিলো একটি অন্ধকার যুগের বর্ননা, এটা ছিলো মাও পরবর্তী ও সংশোধন বাদী রাষ্ট্রের অবরোধের ফলাফল।

ছবিটির প্রথম ১৫ মিনিট সাংস্কৃতিক বিপ্লব পর্ব পর্যন্ত  মাওয়ের জিবনী দেখনো হয়েছে। মাওয়ের মৃত্যুর কাল পর্যন্ত (১৯৬৫-১৯৭৬) সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্মৃতি চারন করা হয়েছে । চিত্রায়নের সময় কাল মুটামুটি সঠিক হলে ও  কোন কোন ক্ষেত্রে দর্শকদেরকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। নিম্ন লিখিত বিষয় গুলো অত্র ছবিতে তুলে ধরার প্রচেস্টা ছিলো- বিপ্লবের মহা উত্থান, লুই শুখীর নিকট মাওয়ের ক্ষমতা হারানো, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনায় -সাংস্কৃতিক যুদ্বের সূচনা, আন্দোলনের অগ্নি ঝড়া দিন গুলো, লিন বিয়াওয়ের উত্থান ও পতন, নিক্সনের সাথে মাওসেতুঙ্গের বৈঠক, দেং জিয়াও পিং এর ফিরে আসা, মাওয়ের মহাপ্রয়ান ও তাঁর  চার খলিফাকে  গ্রেফতার  ইত্যাদী। ছবিটিতে বিভ্রান্তিকর একটি বিশেষ দিক ছিল তা হোল- পুরাতন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সাম্যবাদের প্রশ্নে মাওয়ের দন্দ্ব। প্রকৃত সত্য ছিলো আরো অনেক জটিল ও গভীর ক্ষমতার লড়াই সংক্রান্ত বিষয়। ছবিটির পদ্বতীগত প্রশ্নে দেখানো হলো সাংস্কৃতিক বিপ্লবটা ছিল মুলত জেং কুইনের মনস্তাত্বিক বিষয় হিসাবে । তাঁর সম্পর্কে বলা হলো তিনি নাকি খুব দাম্ভিক, ঠান্ডা মাথার খুনী, প্রতিশোধ পরায়ন, নিরানন্দ, ভয়ংকর এবং দয়া মায়া অ মমতাহীন ব্যক্তি ছিলেন। তাকে মাওয়ের ডান হাত বলা হলো-‘ মাও যখন খায় আমি তখন খাই’ । তাকে লাল রানী বলে আখ্যায়িত করে বলা হয় তিনি শিশু সহ সকলের ব্রেইন অয়াশ করে নাকি মাওয়ের জায়গা দখল করে একছত্র ক্ষমতা দখল করতে চাইছিলেন। ভাষ্য কার প্রানান্তকর চেষ্টা করেছেন যে, সেই বিপ্লবী সময়টাকে একটি রহস্যময় ও খুন খারাবীর সময় হিসাবে অবহিত করার জন্য। উদাহরন হিসাবে জেং কইং কে তাঁর আপন লোকদের দ্বারা গ্রেফতার হতে এবং বিচার করতে দেখানো হয়েছে। তিনি নিজেই বলেছেন সাংহাইয়ের দিন গোলতে যারা তাঁর নিকট বর্তী ছিলো তাঁরা তাঁর চরম শ্ত্রুতে পরিনত হোল। তাঁর সব কিছুকেই যদি আমরা সত্য হিসাবে ধরে ও নেই তবু ও জেং কুইংয়ের ভূমিকা  সাংস্কক্রিতিক বিপ্লবএ কেমন ছিলো তা বুঝার জন্য তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। তাঁর ভূমিকাকে বুঝতে হলে তাঁর রাজনীতিটাকে বোঝতে হবে। ফিল্মটিতে জেং কইং এর চরিত্রটাকে বিকৃত ভাবে এবং উপন্যাসের একজন রুমান্টিক নায়িকা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

সেই ভাবে লিন বিয়াওকে ও তারা উপস্থাপন করেছে। তাঁদের ভাষ্য হলো – তিনি মেধাবী সৈনিক, উচ্ছাবিলাসী, অসুখী মানুষ ছিলেন তিনি মনে করতেন যে, তিনি তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা ও ক্ষমতা পাচ্ছেন না । লিন বিয়াও এর স্ত্রী ও নাকি মাদাম মাওয়ের মতই উচ্চাবিলাসী মহিলা ছিলেন। তিনি ও নাকি গুরুত্ব পূর্ন ব্যাক্তিদেরকে খুন করার পরিকল্পনা করছিলেন ; আর তিনি লিন বিয়াওয়ের রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জন্য পতন হয়েছে প্রচার করে যাচ্ছিলেন। এই ডকুম্যান্টারীতে কিছু সুড়সুড়ীর বিষয় ও স্থা পেয়েছে – বলা হয়েছে, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে কিছু কর্মকর্তা সহ ও লিন বিয়াও নাকি মাওকে তাঁর গৃহে বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।  মাও এবং লিন বিয়াওয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বিষয়টিকে একটি মনস্তাত্বিক বিষয় হিসাবে দাড়করানো হয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো তাঁদের মতপার্থক্য কোন ব্যক্তিগত ইস্যু ছিলনা তা ছিলো একান্তই মতাদর্শিক বিষয়।

সুদীর্ঘ কাল শ্রেণী সংগ্রাম চালানোর পর, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়। ১৯৬৯ সালে চিনের নবম কংগ্রেসের পর এবং ১৯৬৮ সালের গন আন্দোলনের পর চীন বৈপ্লবীক বক্তব্যের পরিবর্তে সাধারণ কথা বার্তার ভেতর দিয়ে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। গন আন্দোলন থেমে যাওয়ার পর সেই সকল ক্যাডাররা পুনঃ ক্ষমতায় ফিরে আসে। ১৯৬৮ সালের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে যাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিলো তাঁরা পুনঃ আগমন ঘটলে ও লিন বিয়াও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রাথমিক উপাদান সমূহকে সংরক্ষন করার চেষ্টা চালান। তিনি গ্রামীন স্থরে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের হাওয়া অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চিনে যে বৈপ্লবিক উত্থান হয়, তা তিনি সামরিক রাজনীতির কৌশল ব্যবহার করে তাঁর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখেন। সেই সময়ে হয়ত মাওসেতুং ও চাইছিলেন না যে, চীন আরো বিপ্লবের দিকে এগিয়ে গিয়ে কোন প্রকার বাধার মূখে পরুক বরং তিনি ও তখন চাইতে চীন স্বভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক। স্বাধীনতার জন্য গন আন্দোলন শেষে – যখন পরিশুদ্বির আন্দোলন শুরু হয় তখন ১৬ই মে প্রতিরোধের মোকাবেলা করে লিন বিয়াও মাওয়ের পার্শ্বে দাড়িয়ে মাওয়ায়ের ক্ষমতা কাঠামোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রনান্তকর চেষ্টা করেন। তবে পরবর্তীতে লিন বিয়াওয়ের পতনের জন্য ১৯৬৭ সালের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিরোধী চক্রকে দায়ী করা হয়। কেননা তাঁর পতন তাঁদের বিজয় ধারাকেই গতিশীলতা দান করে । চৌ এন লাই ও তাঁর ডান পন্থী সহযোগীরা চীনের চলমান পরিস্থিতিকে পাল্টে দিয়ে ১৯৭০ – ১৯৮০ এর দশকে মার্কিনিদের ধারায় চালয়াতে থাকে। হেনরি কিসিঞ্জার মন্তব্য করে – ‘মাও তাঁর অন্দ্ব মতবাদের নামে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ খুন করেছেন।’ সেই সময়ে শোধন বাদীরা এর কোন স্পস্ট প্রতিবাদ পযর্ন্ত করল না ।

এই ডকুম্যান্টারীটিতে ফালতু ভাবে, কুরুচি পূর্ন ভাবে ডাহা মিথ্যা আষাড়ে গল্প ফেদে মাওয়ের বিরুদ্বে কু করা কাহিনী প্রচার করেছে। আর সেই বিষয় গুলো ছিলো লিন বিয়াওয়ের বিরুদ্বে বিশোধগারেরই অংশ । আবার তা উনার ইন্তিকালের পর। লিন বিয়াও আসলেই কোন প্রকার কু এর চেষ্টা করেছিলেন কি না তা আজ অবধী কেহই নিশ্চিত নন। অথচ একই কান্ড এই ছবির ভাষ্য কার দিব্যি নিশ্চিত ভাবে লিন বিয়াওয়ের পদচ্যুতির কারণ কু বলে  চালিয়ে দিলেন। সাধারণ নৈতিকতা হোল কোন দেশের নেতৃত্ব সম্পর্কে কিছু লিখতে হলে পুরুপুরি নিশ্চিত না হয়ে লিখা উচিৎ নয়। অথচ হিস্ট্রি চ্যনেলের মত একটি চ্যানেল নানা ভাবে স্ব বিরোধী ও মিথ্যা তথ্য প্রচারে দিব্য প্রচার করে যাচ্ছে।

সেই সংশোধন বাদীদের দালাল ও পাশ্চাত্যের অনুচর ভাশ্যকারটি সাম্যবাদ বিরোধী বর্ননা দিতে গিয়ে চৌ এন লাই ও দেং জ্যাও পিং কে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পরব্ররতী সময়ের ত্রাতা হিসাবে বর্ননা করেছে। ১৯৭২ সালে নিক্সনের চীন ভ্রমন ছিলো চীণের নতুন দিকে যাত্রার সূচনা মাত্র। ছবিটিতে সঠিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে যে মাওসেতুং চৌ এন লাই এবং দেং এর পক্ষ নিয়ে ছিলেন। সেই  সময় ১৯৭০ সালে চার খলিফার সাথে এই দুই ব্যক্তির রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিলো। ফিল্মটিতে বলা হয়েছে যখন চার খলিফা ক্ষমতা হারান তখন তাঁরা সত্যিকার অর্থে জনপ্রিয় ছিলেন না । এতে প্রমানিত হয় যে তাঁদের পতনের মধ্যদিয়ে সেই সময়ে চিনে বিরাজনীতি করন ও অনৈতিকতার প্রধান্য বিরাজিত ছিলো। ছবিতে মাওকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সুচনায় নানা ঘটনা প্রবাহে সুক্ষভাবে ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে সন্তরপনে কয়েক মিনিট দূরে রাখা হয়েছে। এর পরই তাকে সূকৌশলে একজন মহামানব হিসাবে দেখানোর প্রবণতা লক্ষ্যকরা যায়। মহামানব তত্বকে দর্শকের সামনে হাজির করা হয়। যা ছিল একাবারেই একটি ফালতু, মেকি, আনকুড়া ও গাজাকুড়ি গল্পের সমাহার। এটা কে রুমান্টিক গল্প করামত করেই দেখা যেতে পারে। এটা হিস্ট্রি চ্যানেলের জন্য একেবারে একটা ফালতু কাজ বলা যায়। যা চিনের মহান বিপ্লব ও ব্যক্তিদের সাথে কোন মিল নেই। একে এম শিহাব

Leave a Reply