সমতা ও বিশ্ব ঐক্য

(llcobangla.org)

 “যেখানে সাম্রাজ্যবাদিদের বদৌলতে ধনিদেশের কতিপয় কর্মজীবীরা সহজ ও সুখী জীবনযাপন করেছে, তারা এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বিপ্লবকে প্রশ্রয় দিবে না। বরং এর উল্টোটাই করবে। তারা তাদের পেশাগত আভিজাত্যকে বলিদান করে কোন দলে বা সংগ্রামে অংশগ্রহন করবে না। এছাড়া তাদের দ্বারা প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ম কায়েম করা, বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে তা মোটেই সম্ভব নয়।” – ভ. ই. লেনিন।

“ আমরা যদি সমগ্র বিশ্বটাকে সামনে রাখি, তবে উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপকে বলতে হবে বিশ্বের শহর। আর এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকাকে বলতে হবে দুনিয়ার গাঁও গেরাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর থেকেই উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের মত পুঁজিবাদী দেশ গুলোতে প্রলেতারিয়েতের আন্দোলন সংগাম পিছিয়ে পড়ে। তবে সেই সময় থেকেই এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন অ্যামেরিকায় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সুবাতাস বইছিল । এক অর্থে পরিবর্তনের হাওয়ায় দোলায়িত পৃথীবিতে তা ছিলো গ্রাম দিয়ে শহর গেড়াও করার মত আন্দোলন। চুড়ান্ত বিশ্লেষণে বলতে হয় যে, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকান জনগন যারা দুনিয়ার জনসংখ্যার সিংহ ভাগ তাঁরাই প্রলেতারিয়েতের সংগ্রামকে এগিয়ে নিচ্ছিল।” -লিন বিয়াও। 

মহান মাওসেতুংয়ের সমগ্র রচনার মধ্যে বিখ্যাত ৮ টি শব্দ হলো “আমাদের শত্রু কে? ” আর “আমাদের বন্দ্বুই বা কে ?” মার্ক্সবাদ হল একটি বিপ্লবী বিজ্ঞান। মার্ক্সবাদী বিজ্ঞানের প্রধান কাজই হোল সাম্যবাদে পদার্পন করা। সাম্যবাদ আর কিছুই নয়, তা হলো নিপিড়নের পরিসমাপ্তি ও মানুষের সামগ্রিক মুক্তি। মাওসেতুং এর মতে এই ক্ষত্রে কে আমাদের শত্রু আর কে আমাদের বন্দ্বু তা খুবই গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন। যদি কোন সংগঠন এই প্রশ্নের যথাযত উত্তর দিতে না পারে, তবে তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ হয়ে যাবে। যদি শ্রেনি বিশ্লেষণে ভুল করেন তবে, বিপ্লব করলে ও তাদের সাম্যবাদ কখনও সফল হবে না । সামাজিক বিপ্লব লক্ষ্যহীন হতে পারেনা। যদি বস্তুগত বিশ্লেষণ ছাড়া কোন বিপ্লব করা হয়, তবে তা হবে একান্তই কল্পনা বিলাশ। কেবল মাত্র বাস্তব ভিত্তির উপর ভর করে, সঠিক ভাবে শ্রেনি বিশ্লেষণ করে, বিপ্লব করলে, তবেই সামাজিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে প্রলেতারিয়েত শ্রেনিকে ক্ষমতায় আরোহন করানো যেতে পারে, সম্ভব হতে পারে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিনির্মানের এবং তা থেকে সাম্যবাদে পদার্পন করার। তাই আমাদেরকে এটা বুঝতে হবে কারা সাম্রাজ্যবাদিদের পক্ষ নিবে আর কারা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পক্ষ নিবেন।  এটা জানা ও খুব জরুরি যে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কারা উপকৃত হবেন আরা কারা হবেন না ?

প্রকৃত বিচারে ও বিশ্লেষণে প্রতিটি মানুষ সমাজতন্ত্রের আওতায় উপকৃত হবে। চুড়ান্তভাবে সাম্যবাদের অধিনে প্রত্যেকের জিবন হবে পরিপুর্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত , এমনকি প্রতিক্রিয়াশীলরা ও উপকৃত হবেন।  পুঁজিবাদের কারনে আজ আমাদের পরিবেশ যেভাবে ধবংস সাধন করা হচ্ছে তা বন্দ্ব করা হবে। যা আমাদের পুরো মানব জাতিকে রক্ষার জন্য একান্ত প্রয়োজন। অদুর ভবিশ্যতেই শ্রেনী প্রায় বিলুপ্তি বা সম্পুর্ন বিলুপ্তি ঘটবে। তখন সকলেই সাম্যবাদ দ্বারা উপকৃত হবেন। এমনকি সাম্যবাদের মাধ্যমে চিরস্থায়িভাবে মানুষ উপকৃত হবে, কেউ আর ক্ষতিই গ্রস্থ হবেন না। সমাজতন্ত্রের  আওতায় সম্পদ ও ক্ষমতার পুনবন্ঠন করা হবে। বাস্তবতা হলো পৃথীবিতে এই দুই জিনিষ নির্দিস্ট ও সিমীত। তা কোন ভাবেই সীমাহিন নয়। এটা স্বভাবিক বিষয় হওয়া উচিৎ যে তা বশি মানুষের জন্য বেশি, আর কম মানুষের জন্য কম থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর বিপরীত। আর তাই দুনিয়া জোড়ে গরিব মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী। সেই জন্যই দুনিয়ায় চলছে শ্রেনী দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম। তার জন্যই বর্তমানে যে ভাবে সমাজে শ্রেনি বৈষম্য বিদ্যমান আমরা তার পুনবিন্যশ করতে চাই। আমরা প্রলেতারিয়েত বলেই কেবল বুর্জোয়াদের প্রতি এই আহবান করছিনা, বরং এটা হল বৈজ্ঞানিক সমাজ বিশ্লেষনের অনু সিদ্বান্ত। আমরা বর্তমান সমাজকে পালটাবই । তা খুব বেশি দুরে নয়, অদুর ভবিষ্যতেই।

প্রথম বিশ্ব এবং তৃতীয় বিশ্বের মাঝে যে বিশাল ফারাক তা আজ কম বেশি সবাই জানেন। সাম্রাজ্যবাদ- পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আজ কতিপয় মানুষের নিকট ক্ষমতা ও সম্পদ পুঞ্জিভুত করেছে । ক্ষমতা ও সম্পদ যেন কেবল মাত্র কতিপয় দেশের কিছু মানুষের কাছেই পুঞ্জিভুত হয় তার সকল প্রকার ব্যবস্থাই তারা করে রেখেছে। ফলে স্বল্প সংখ্যক দেশ উপকৃত হবে আর বেশির ভাগ দেশ তার মূল্য পরিশোধ করবে। আমরা যদি সাদা চোখে ও পৃথিবির দিকে থাকাই, তবে দেখতে পাব কারা সম্পদশালি আরা আর কারা সম্পদহীন। মোট কথা হল আয় রোজগারের বিষয় টি সম্পদের মালিকানার  সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমানে দুনিয়াময় সম্পদের বন্ঠনের পার্থক্য আমাদের সামনে স্পষ্ট । এটা এখন আর গোপন নয় যে, সম্পদ ও ক্ষমতা পরস্পরের সাথে সম্পৃক্ত । সম্পদ যেখানে পুঞ্জিভুত, ক্ষমতা ও সেখানে পুঞ্জিভুত। সামাজিকভাবে সম্পদশালীরাই ক্ষমতাশালী, সম্পদহীনরাই ক্ষমতহীন । বিশ্বব্যপি থাকালে আমরা দেখতে পাব যে, প্রথম বিশ্বের শ্রমিকেরা আয় বন্ঠনে যেমন এগিয়ে আছে, তেমনি তারা তাদের সেই বিশ্বব্যবস্থাটি ঠিকিয়ে রাখার জন্য ও তৎপর রয়েছে।

একটু চিন্তাভাবনা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে, যদি সকলের রোজগারের পরিমান সমান হয়, তবে পৃথিবীর চিত্রটা কেমন দাঁড়াবে। তবে সমাজতন্ত্রের আওতায় ও আয় রোজগার সমান হবে না। তবে সমাজতন্ত্রের সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিটি বিষয় হবে অনেক স্বচ্ছ ও সুনিয়নিয়ন্ত্রিত ; ইহা কেবল মাত্র আয় রোজগারের উপর নির্ভশীল  নয়। এটা আমাদের কাছে আজ পরিষ্কার যে, সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা কারা উপকৃত হচ্ছে আরা কারা হচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন মধ্যম শ্রেনীর শ্রমিক  মোটামোটি  বছরে রোজগার করে প্রায় ১৯,৪০০ ডলার। তাদের আয় বলতে কেবল মাত্র মজুরী ও বেতন নয় বরং তার সাথে যুক্ত হয় অবসর কালিন ভাতা, কল্যান তহবিল, প্রতিবন্দ্বী ভাতা, শিশু ভাতা, ও নিয়মিত যাতায়াত ভাতা সহ নানা সুযোগ সুবিধা সমূহ । একজন প্রকৃত মার্কিন নাগরিক যাদের বয়স ২৫ বছর, তারা স্বভাবিক ভাবেই বছরে ৩২,০০০ ডলার আয় করে থাকে। এবং সাধারন ভাবেই তারা প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে ৭.২৫ ডলার আয় করে থাকে। বেশির ভাগ নিবন্দ্বিত কর্মিরা প্রতি ঘন্টায় ১০ ডলার আয় করে। যারা সার্বক্ষনিক ভাবে কোন অফিসে কাজ করে তারা কম পক্ষে বছরে ১৫০০০ ডলার রোজগার সহ আরো নানা প্রকার সুবিধা অর্জন করেন। পক্ষান্তরে, বিশ্ব শ্রমিকদের আয় এর অনেক কম। যেমন, মধ্যম শ্রেনীর একজন শ্রমিক বছরে আয় করেন মাত্র ৮৫০ ডলার । তৃতীয় বিশ্বের বেশির ভাগ শ্রমিক দিনে ৩ ডলার ও আয় করতে পারেন না। তৃতীয় বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ কোন রকমে ঠিকে আছেন। তা হলে বিশ্বব্যবস্থা ও  অর্থনীতিতে  কিভাবে সমতা আসবে ? দুনিয়ার সকল মানুষের আয় সমান করলে বিষয় টি কেমন দাঁড়ায় ? যেখানে প্রতিটি মানুষ সামাজিক উৎপাদনের সম ভাগিদার হবে?  যদি ৬.৭ বিলিয়ন মানুষের মাঝে সমভাবে বন্ঠন করা হয় তবে মাথা পিছু আয় হবে ৮,০০০ ডলার । এই বন্ঠন ব্যবস্থায় মার্কিন মুল্লুকের একজন শ্রমিক ও পাবেন বছরে মাত্র ৮,০০০ ডলার। যদি এই সমতার নীতি বাস্তবায়ন করা হয় তবে আমেরিকার একজন সাধারন শ্রমিক ও তার বর্তমান আয়ের অধের্ক হারাবেন। তার সাথে আরো হারাবেন চলমান ব্যবস্থায় প্রাপ্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা  সমূহ । যেমন, সামাজিক নিরাপত্তা মূলক নানা সুবিধা সমূহ।

বর্তমানে শোষক দেশ গুলোর মাঝে প্রথম বিশ্বের দেশ সমুহ তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোকে শোষণের মধ্যমে নিজেদের আখের গোছিয়ে নিচ্ছেন। প্রকৃত সত্য হলো তৃতীয় বিশেরে মানুষকে সুসম পর্যায়ে নিতে হলে তাদেরকে একটু অতিরিক্ত সুবিধা দিতে হবে । অন্যভাবে বললে বলতে হয় যে, মার্কিন মুল্লুকের লোকদেরকে কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্ত সুবিধাদি কিছুটা সিমীত করে দিতে হবে। আর তা সরবরাহ করতে হবে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ কে ।

কিছু কল্পনাবাদি মানুষ আছেন যারা এর বিরোধিতা করেন । তারা বলেন যে, প্রথম বিশ্বের মানুষের প্রাপ্তিতে কোন হের ফের হবে না । অকল্পনিয় উৎপাদনের মাধ্যমে সবাইকে সমান ভাবেই বন্টন করা সম্ভব হবে । মুলতঃ এটা সম্ভব নয়। কারণ, প্রথমত, চলমান ব্যবস্থায় মাত্র ২০% মানুষ যে পরিমান সম্পদ ভোগ করেন তা যখন আরো ৮০% মানুষের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে তাদের ভাগে কম পরবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। দ্বিতিয়ত, প্রথম বিশ্বের মানুষের ভোগ ও জিবনযাত্রা মোটেই পরিবেশ বান্দ্বব নয়, বরং তা আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবশকে প্রতিনিয়ত ধবংস করছে । প্রথম বিশ্ববাদ আমাদের পৃথিবি ও ভবিষ্যতকে বিনাশ করছে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে যে, প্রথম বিশ্বের মানুষেরা বিশ্ব সামাজিক উৎপাদনের  ভাগ হিসাবে তারা অনেক অনেক বেশী নিয়ে নিচ্ছেন। তাই, সমাজতন্ত্রের আওতায় তারা সমবন্ঠন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের কোন প্রকার আগ্রহ ও নেই।সমাজতন্ত্রের প্রধান লক্ষ্যই হলো সুসম বন্ঠন ব্যবস্থা বা প্রায় সমতা নিশ্চিত করা।  তবে, সমাজতন্ত্রের কাজ কেবল মাত্র মানুষের আয় সমতা বিধান করা নয়। বরং প্রকৃত সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য হল ব্যক্তিগত সম্পদের মালিকানা কমিয়ে এনে তা সামাজিক মালিকানায় রূপান্তরিত করা । সমাজতন্ত্রের আরো একটি বড় কাজ হল  সকল সম্পদের সমাহার ঘটানো ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা । সমাজতন্ত্রের মুল উদ্দেশ্য হল সমাজের আমুল পরিবর্তন ঘটিয়ে সাম্যবাদের প্রতিস্থাপন করা এবং সামাজিক নিপিড়নের অবসান ঘটানো। তবে, এটা সত্য যে মানুষ সাধারন জ্ঞানেই বুঝতে পারেন যে সুসম বন্ঠন করলে কিছু মানুষকে তাদের সম্পদের কিছু অংশ হারাতেই হবে। অসম বন্ঠন ব্যবস্থায় ও কেহ হারায়, আর কেহ বিজয়ী হয়ে লাভবান হয়।  প্রথম বিশ্বের মানুষকে অবশ্যই বিশ্ব সমবন্ঠন ব্যবস্থায় তাদের কিছু আয় ও সম্পদ হারাতে হবে। প্রকৃত সমাজতন্ত্রের আওতায় শুধু মাত্র ব্যাক্তিগত সম্পদের মালিকানার বিনাশ ঘটবেনা বরং বুর্জোয়াদের অন্যান্য অধিকারকে ও হরন করা হবে। সহজ করে বললে, বলতে হয় প্রথম বিশ্ব তাদের সম্পদ হারাবে, প্রচলিত জিবনমানের অনেকটাই নিম্নগামী হবে।

সমাজতন্ত্রের মুল বক্তব্যই হলো সামাজিক সমতা নিশ্চিত করা। শ্রেনি ভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠে অসমতা ও অসাম্যের উপর ভিত্তি করে। ক্ষমতার অসমতা ও সম্পদের অসমতা হোল শ্রেনি ভিত্তিক সমাজের উপাদান। আমরা যখন অসমতার সমালোচনা করি তখন আমরা সাম্রাজ্যবাদের ও বিরোধিতা করি।  বিশ্বব্যবস্থার যেখনে কতিপয় দেশ অন্যান্য দেশের সম্পদ লুন্ঠন করে নিজেদেরকে ক্ষমতা ও সম্পদের মালিক বানিয়েছে , নিজেদের ক্ষমতা অন্যদের উপর খটানোর চেষ্টা করছে, সেখানে সমাজতন্ত্রের কাজ হোল বিশ্বের দেশ গুলোর সুষমতা নিশ্চিত করা। মহান লেনিন যেমনটি বলেছিলেন, প্রতিটি জাতির তার আত্ম নিয়ন্ত্রনের অধিকার অন্তবর্তিকালিন সময়ের জন্য হলে ও নিশ্চিত করা চাই, এবং অন্যন্য জাতির সাথে সমতা বিধানে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। সৌভিয়েত ইউনিয়নের  পতনের পর ইহা নিজেই সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র ধারন করে, তখন লেনিনের লাল পতাকা মাওবাদীরা উর্ধেতুলে ধরতে এগিয়ে আসেন। মাওবাদীরা ও সাম্রাজ্যবাদ, সংশোধনবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, জাত্যাভীমানবাদ , সকল প্রকার অসমতা ও নিয়ন্ত্রনবাদের কঠোর সমালোচক ও বিরোধিতা কারি। মহান মাওসেতুং দুনিয়া থেকে পুরাতন ভাবনা ও সামাজিক রীতিনীতি ধবংস করে তার স্থলে নতুন আইন কানুন প্রতস্থাপন করতে এক মহা পরিকল্পনা করেছিলেন।  এই উদ্যোগ ও মহাপরিকল্পনা কেই চেন বোধা ও লিন বিয়াও মাওবাদ বলে অভিহিত করেন। এই মাওবাদই হলো মার্ক্সবাদের  আর এক নতুন স্তর। চেন বোধার মতে, উপনিবেশিক ও নয়া উপনিবেশিক সকল দেশের জন্য মাওবাদ হলো একটি  সার্বজনিন মতবাদ। লিন বিয়াও বলতেন, সাম্রাজ্যবাদের অবসান ও তার বিলুপ্তি সাধনই হোল মাওবাদ। লিন বিয়াও এর মতে, মাওবাদ হলো দরিদ্রদেশের প্রাগ্রসর জনগনের জনযুদ্ব। যা পরিচালিত হবে দরিদ্র দেশ থেকে ধনিক দেশের প্রতি। মাও আমাদের চিন্তাভাবনাকে আনেক দূর এগিয়ে দিয়েছেন, আর তার পথ ধরেই উত্থান হয়ছে লিডিং লাইট কমিউনিজমের । লিডিং লাইট প্রথমেই যে কাজটা করতে চায় তা হলো, প্রথম বিশ্ববাদের বিনাশ। ইহা বিশ্ব জনযুদ্ব ও সামাজতন্ত্রের চলমান দোষ ত্রুটি গুলোর অপসারন করতে  চায়। বিশ্বময় একটি সমাজতান্ত্রিক বন্ঠন ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চলমান সম্পদ ও ক্ষমতার অসমতা দুরিভুত করে প্রচলিত ব্যবস্থার অপনোদন করতে বদ্বপরিকর। দুর্বল পরিকল্পনা,ও ত্রুটি বিচ্যুতির কারনে সমাজতন্ত্রের প্রক্রিয়াটি যথাযথ ভাবে কাজ না ও করতে পারে। অসমতা ও সাম্রাজ্যবাদের আওতায় সমাজতন্ত্র মানুষের জন্য অধিকতর ভয়াবহ হতে পারে। এই অবস্থায় যদি অসমতা মেনে নেয়া হয় তবে প্রথম বিশ্বকেই তা সমর্থন যোগাবে। সমাজতন্ত্রের মুল বক্তব্যই হোল সমতা। প্রকৃত কমিউনিস্টরা প্রথম বিশ্ববাদের অবসান চায়।

সমাজতন্ত্রের দুনিয়ায় প্রথম বিশ্ববাদের অস্থিত্ব থাকতে পারেনা। এমন কি এখন ও যারা প্রথম বিশ্বের তলানীতে আছে তাদেরকেও পরিবর্তনের ধারায় আসতে হবে। সমাজতন্ত্রের ফলাফল কি হবে তা প্রথম বিশ্ববাদিরা জানেন, তাই তারা তৃতীয় বিশ্বের মেহেনতি মানুষের সাথে একাত্ম হতে রাজি নয়, বরং তাদের দেশীয় বুর্জোয়াদের সংগে থাকতেই পছন্দ করে। প্রথম বিশ্বের শ্রমিকরা সামাজতন্ত্রের পরিবর্তে সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন করছে। তারা দুনিয়ার সংখ্যাগরিস্ট শ্রমিকদের সাথে একাতাবদ্ব হতে রাজি নয় । প্রথম বিশ্বের শ্রমিকদেরকে সাম্রাজ্যবাদের অংশ বলার এটা ও হোল একটি কারণ। প্রথম বিশ্বের শ্রমিকদের মাঝে তারা বিপ্লবের জন্য কোন সামাজিক ভিত্তি ও গড়ে তুলছেনা -কেননা যেহেতু তারা নিজেরাই প্রলেতারিয়েত নয়। তারা যেমন শোষিত শ্রেনী নয় ; তাই তারা বিপ্লবী শ্রেনী ও নয়। প্রথম বিশ্বের একজন শ্রমিক সাধারনত যে পরিমান পুঁজি সহ সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে, তৃতীয় বিশ্বের একজন পুজিপতি ও সেই রূপ সুযোগ সুবিধা পায় না। মার্ক্স বিপ্লবকে দারিদ্রতার  সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। উদাহরন- “ প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর শৃংখল ছাড়া হারাবার আর কিছু নেই”। এটা হোল সেই শ্রেনী যারা শোষিত, নিপিড়িত, ও মানবেতর জীবনযাপন করেন। এটা হোল সেই শ্রেনী যারা কেবল মাত্র নিজেদের কায়িক শ্রম বিক্রি করে বেঁচে থাকেন। প্রলেতারিয়েত শ্রেনী বেঁচে থাকে পুঁজিবাদের দয়ায়। মার্ক্সের বর্ননা অনুসারে প্রথম বিশ্বে প্রলেতারিয়েত পাওয়া বেশ দুষ্কর। তবে সেই বর্ননা অনুসারে তৃতীয় বিশ্বের সব শ্রমিকদেরকেই গন্য করা যায়। মহান মার্ক্সের বর্ননা সার্বজনিন, ইহা বিতর্কের উর্ধেব। দু একটা যে বিদ্রোহ হয় ; তা হয় মুলত পরিচালনা গত ত্রুটির কারনে। প্রথম বিশ্বে আজ যে সামাজিক শান্তি বিরাজ করছে তার মুল কারণ ও  হোল  তাদের উন্নত জিবনমান। বিগত শতাব্দিতে আমরা তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে নানা প্রকার বিদ্রোহ বিপ্লব দেখেছি, কিন্তু প্রথম বিশ্বে একটি ও এরূপ ঘটনা আমরা  দেখতে পাবনা  – তা কিন্তু কোন রহশ্য নয়, ইহা প্রথম বিশ্বের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মাঝেই নিহিত। এভাবেই আমরা মহান মাওসেতুং এর প্রথম প্রশ্নের উত্তর খোঁজে পাব।

সংশোধনবাদ খুবই শক্তিশালী একটি বিষয়। কোন সেনাবাহিনী সৌভিয়েত উইনিয়ন বা চীনকে পরাজিত করতে পারেনি। এখন সেই দু দেশেই পুঁজিবাদ পুনঃ স্থাপিত হয়ছে। সেখানে সমাজতন্ত্রকে বিদায় করে -পুঁজিবাদ আবার জায়গা করে নিয়েছে। চিনি মিশ্রিত বিষ খুবই বিপদজনক , মাও এ ব্যাপার হুশিয়ার করেছিলেন। সংশোধনবাদ বিষয়ে হুশিয়ারী উচ্চারন করেছিলেন মহান মার্ক্স, লেনিন এবং আর ও অনেকে। তাঁরা সংশোধনবাদ ও জাত্যাভীমানবাদ  বিষয় গুলোর সমালোচনা করে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকে সর্তক করেছিলেন। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকে সংশোধনবাদের পক্ষের লোকেরা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্বের পক্ষে ভোট দিয়েছিলো -কেন না তাঁরা তখন নিজ নিজ দেশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য কাজ করছিলেন। ফ্রান্সের সোস্যাল  ডেমোক্রেটরা ফ্রান্স সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে ভোট দিয়েছিলো। জার্মান সোস্যাল ডেমোক্রেটরা জার্মান সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে ভোট দিয়েছিলো। পক্ষান্তরে, লেনিন বিশ্বপ্রলেতারিয়েতের পক্ষ নিয়েছিলেন। মহান লেনিন তাঁর নিজ দেশের পরাজয়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন যেন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রথম বিশ্বের তথাকতিত সমাজতন্ত্রীরা সেই সময়েই সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক ফ্যাসিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন আর লেনিন সেই সংশোধনবাদের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। সংশোধনবাদের সমর্থকরা সেদিন সমাজতন্ত্রের নামেই সাম্রাজ্যবাদের পক্ষ নিয়েছিল। আজকের প্রথম বিশ্ববাদিরা ও তাই করছে। প্রথম বিশ্ববাদিরা তাদের সম্পদ আরো আরো বাড়াতে চায়। যদি ও তাঁরা বর্তমান দুনিয়ার তৃতীয় বিশ্বের মানুষের তুলনায় তাদের ন্যায় সংগত ভাগের চেয়ে অনেক বেশী সম্পদ তাঁরাই ভোগ করছে। পক্ষান্তরে, লিডিং লাইট কমিউনিস্টরা দুনিয়ার সংখ্যাগরিস্ট মানুষ যারা প্রকৃত পক্ষে শোষিত ও নিপিড়ত তাদের পক্ষে কাজ করছে। লিডিং লাইট কমিউনিজম বিশ্বকে তাঁর সঠিক আংগীকেই বিশ্লেষনের চেষ্টা করছে। যা বাস্তব তাই তুলে ধরছে। বিশ্বপ্রলেতারিয়েতের লড়াই সংগ্রামে সামনের কাতারে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। লিডিং লাইট সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আলোর মশাল ধরে আছে। একে এম শিহাব।

Leave a Reply