(llcobangla.org)
আফ্রিকা, বিশেষ করে পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় আফ্রিকা চরম সংকটে নিপতিত। সম্প্রতি ইউ্নিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ১৫৫ মিলিয়ন, পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় আফ্রিকার প্রায় ৪০% মানুষ নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত। আফ্রিকার এই এলাকাটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশী সমস্যা জর্জরিত একটি এলাকা। সমগ্র বিশ্বের মধ্যে এখন ও ১৮ % মানুষ নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত। অধিকন্ত, পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় আফ্রিকার প্রায় ২৯১ মিলিয়ন মানুষ আজ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আসেনি। এই অঞ্চলে এখন ও ৫ বছরের কম বয়সী শিশু সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় মারা যায়। উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে প্রতি ১০০০ জন শিশুর মধ্যে ১৬৯ জন শিশু মৃত্যু বরন করে। প্রথম বিশ্ব তথা ধনী দেশ গুলোতে পানীয় জলের, স্যানিটেশনর বা খাদ্যের কোন অভাব নেই। মার্কিন মুল্লুকে বেঁচে থাকার জন্য চরম দরিদ্র মানুষের মাঝে ও এই ধরেন অভাব কদাচিৎ দেখা যায় না । তবে, তৃতীয় বিশ্ব তথা দরিদ্র দেশ গুলোতে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদা পুরনের তাগিদে কোটি কোটি মানুষকে প্রতি নিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে।
সাম্প্রতিক কালের জাতিসঙ্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে যুদ্ব ও সহিংসতার জন্য প্রতি বছর যত লোক মারা যায় তাঁর চেয়ে কয়েক গুন বেশী মানুষ মারা যায় দুষিত পানি পান করার জন্য। এক হিসাবে বলা হয়েছে যে, প্রতিদিন ২ বিলিয়ন টন পানি দুষিত হয় কেবল মাত্র রাসায়নিক সারের ব্যবহার, নর্দমার আবর্জনা, এবং শিল্প বর্জ নিক্ষেপের কারনে। এই কারনে নানা প্রকার রোগ জীবানু মানব দেহে ছড়িয়ে পড়ছে, পরিবেশ, প্রতিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। পানি বাহিত রোগের কারনে বিশ্বের মানুষের মোট মৃত্যুর ৩.৭ % মৃত্যু সংঘটিত হচ্ছে। পৃথিবীর হাসপাতাল গুলোতে যত বিছানা আছে তাঁর অর্ধের চেয়ে ও বেশী দখল করে থাকে পানি বাহিত রোগীর দ্বারা। প্রসঙ্গত উল্লেক্ষযোগ্য যে, এরা সকলেই হলেন তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। প্রকৃত সত্য হল, তৃতীয় বিশ্বের যে উৎপাদন জনিত কারনে এবং যার নেতিবাচক প্রভাবে পানি ও পরিবেশ নষ্ট হয়, তাঁর উপকার ভোগী হলো প্রথম বিশ্বের মানুষ। প্রথম বিশ্বের মানুষের ভোগী ও বিলাশ বহুল জীবন যাপন অভ্যাহত রাখতে – আজ তৃতীয় বিশ্বের মানুষ নানা প্রকার দুর্দশার শিকার হতে হচ্ছে।
দুষিত পানির ধারা এখন সমূদ্রে ও মৃত্যুপুরী তৈরী করছে । সমূদ্রের মৃত্যুপুরী হলো যেখানে অক্সিজেন নেই, সেখানে কোন প্রকার জিবন্ত সামুদ্রিক পানী বাঁচতে পারেনা। এই পরিস্তিতি চলতে থাকলে প্রথম বিশ্বের মানুষের জীবন মান ই নয় বরং তৃতীয় বিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের জিবনে নেমে আসবে এক অসহনীয় অবস্তার। প্রথম বিশ্বের ভোগবাদী জীবন আমাদের প্রীয় পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির সম্মুখীন। যদি সমুদ্র মরে যায় – তবে দুনিয়ার সকল পানীই মারা পড়বে।
নয়টি খরা দ্বারা আফ্রিকার দেশ গুলো আক্রান্ত হয়েছে। তাঁরা আপ্রান চেষ্টা করছে তাঁদের খাদ্যের সংকট ও পানীয় জলের অভাব মোচনের জন্য । বারকিনা ফেসু, ক্যাপে ভারডি, গাম্বিয়া, গানা, বিসু, মালি, মৌরিতানিয়া, নাইজার এবং সেনেগাল কেবল পানির অভাবে তাঁদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারছেন না । খাদ্য সরবরাহের পরিস্থিতি নাইজার ও চাদে খুবই নাজুক অবস্তায় আছে। সেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকি পুর্ন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। জাতিসঙ্গের কর্মকর্তা অছিম স্টেইনার বলেন, “ যদি বিশ্বকে যথাযথ ভাবে এগিয়ে নিতে হয় তবে, কেবল ৬ বিলিয়ন মানুষকে নিয়ে ভাবলে চলবে না বরং ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের বিশ্বের লোক সংখ্যা দাঁড়াবে ৯ বিলিয়নে। তাদেরকে নিয়ে ও ভাবতে হবে। আমাদের উচিৎ মেধা ও বুদ্বিমত্তাকে সম্মিলিত ভাবে কাজে লাগিয়ে বর্জ ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে পানি ব্যবস্থপনা সহ সকল সম্পদের সুষ্টো ব্যবহার নিশ্চিত করা”।
স্টেইনার সঠীকভাবেই সমস্যার সমাধানের পথ নির্দেশ করেছেন। কেননা- বেচে থাকার প্রধান উপকরন বিশ্ব অর্থনীতিকে যথাযথ ভাবে ব্যবস্থাপনা না করতে পারলে আমাদের সকলেরই অস্থিত্ব বিপন্ন হবে। কিন্তু আসল সমস্যা হলো পুঁজিবাদ চলমান সমস্যা মোকাবেলায় মোটেই দক্ষ নয়। পুঁজিবাদ সর্বদা ই মানুষের চাহিদার চেয়ে তাঁর মুনাফার প্রতি বেশী আগ্রহী। এই ক্ষেত্রে মহান কার্ল মার্ক্স যে সমস্যাটি তুলেধরেছিলেন তা হলো – পুজিবাদের আওতায় উৎপাদন ব্যবস্থার নৈরাজ্যবাদ। পুজিবাদ উৎপাদন করে বাজার ধরার জন্য, ইহা সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন করে না। পুঁজিবাদের কর্মসূচির অংশ হিসাবে- সামগ্রীক ভাবে বিশ্ব বৈষম্য, পদ্বতিগত সহিংসতা, বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করে। পুজিবাদ পুনঃ পুনঃ দরিদ্র দেশ সমূহের দুর্দষা বৃদ্বি করে চলে। পুঁজিবাদ মানুষের দুঃখ বিমোচন করতে কাজ করে না। ইহা দুঃখ সৃজনে ভূমিকা রাখে। পক্ষান্তরে, সমাজতন্ত্র মুনাফার উপরে মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়। সমাজতন্ত্রের আওতায় দুনিয়ার সকল সম্পদের যুক্তিসংগত ও সুষম বন্ঠনের ব্যবস্থা করবে। প্রথমবিশ্ব বিশ্ব সমাজতন্ত্রের আওতায় বিলিন হয়ে যাবে। সমাজতন্ত্রের আওতায় বহু মানুষের দ্বারা কতিপয় মানুষের উপকার করার ব্যবস্থা থাকবে না । মানুষের সত্যিকার সমতা সমাজে বিরাজমান থাকবে।#শিহাব