(৭) চলমান এই বিশাল আয়ের প্রবাহ কেবল মাত্র তৃতীয় বিশ্বে সাম্রজ্যবাদী শোষন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বহাল রাখছে । বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই তৃতীয় বিশ্ব থেকে অর্থের ও সীমাহীন মুনাফার প্রবাহ প্রথম বিশ্বে প্রবাহিত করছে এবং প্রথম বিশ্ব ব্যাপক ভাবে লাভবান হচ্ছে । আর এটাই হলো প্রথম বিশ্বের বর্তমান আয় রোজগার বৃদ্ধির একমাত্র পথ ও পন্থা । চলমান এই প্রক্রিয়ায় প্রথম বিশ্ব বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক হতে যাচ্ছে কি না ? আসল কথা হলো অনেক শাসন ব্যবস্থাই বিশেষ করে ইউরূপ প্রায়স নিজেদেরকে সমাজতান্ত্রিক বলে প্রচার করে আবার কখনও নিজেদেও পরিচয় দেয় সামাজিক গণতান্ত্রিক বলে । অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, তাদের একটি দেশ ও তৃতীয় বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী শোষন প্রক্রিয়া বাদ দেয়নি এবং আয় প্রবাহ ও কমায়নি ।
বৈশ্যিক হিসাবে তিন চর্তুথাংশ মানুষ যে পরিমান সম্পদ ভোগকরে কেবলমাত্র প্রথম বিশ্বের শির্ষ ২০% মানুষ তা ভোগ করে থাকে । আর আমেরিকার কর্মরত প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যারা কাজ করে তাদের আয় শির্ষ ১০ শতাংশের মাঝে পড়ে । (৮) শির্ষ ধনী ১০ শতাংশের ব্যাক্তিগত ভোগের জন্য যে খরচ হয়, তা পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের অর্থাৎ ৫৯ % ভোগের সমান । (৯) বর্তমানে প্রথম বিশ্বের মানুষের সম্পদের মালিকানার অংশ সমবন্ঠনের আলোকে চিন্তা করলে তা স্পষ্টতই বিশাল । ধনী ও দরিদ্র দেশ গুলোর সম্পদের ব্যবধান ব্যাপক । এটা খুবই বাস্তব সম্মত বিষয় হলো যে, তৃতীয় বিশ্বের শ্রমিকদের মজুরী নিম্মতম পর্যায়ে না রেখে প্রথম বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীর মজুরী বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় । এমন কি যদি কোন যাদুমন্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর পরিধী দ্বিগুন ও করা হয় তবু প্রথম বিশ্বের মানুষের আয় এবং ভোগ বর্তমান অবস্থায় ই থাকবে । শির্ষ ২০% এর হিসাবে কোন প্রকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা ই নেই । প্রায় ৪০% এর কাছাকাছি আয় ও সম্পদের বৈষম্য এবং প্রায় ৪০% ব্যাক্তিগত ভোগ বহাল থাকবে । অন্য কথায় বলতে হয়, যে শির্ষ ২০% এবং বাকী সমগ্র মানব স¤প্রায়কে সামাজিক উৎপাদনের সকল পণ্য প্রদান করা হয় এবং তা দ্বিগুন করে পিছিয়ে পড়া মানুষ যারা প্রায় ৮০% যদি তাদের মাঝে বন্ঠন করার ব্যবস্থা করা হয় তবে সম্পদেও সুসমতার জন্য কিছুটা অগ্রগতি হতে পারে।
প্রথম বিশ্ববাদী ও সংশোধনবাদীগণ এবং অন্যান্য সাম্রজ্যবাদী লোকেরা বলেন যে, প্রথম বিশ্বের এই সম্পদের ভোগ ব্যবহার করার অধীকারী । এমন কি কোথাও কোথও সাদা চামড়ার অধিকারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রাধান্যের বয়ান ও শোনা যায় । প্রথম বিশ্ববাদ এখন একটা ধমীৃয় বিষয়ের মত দাড়িয়ে গেছে, বিশেষ করে আমেরিকায় । প্রথম বিশ্বের মানুষের সবকিছুই বেশী থাকবে অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের থাকবে অনেক কম এটাই এখন নিয়মে পরিনত হতে চলেছে । তারা আগে কোন কিছু উপস্থাপন করলে ও তা বাস্তবায়িত হবে পরে । পৃথিবীর কোথাও যদি বন্ঠন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা হয় তবে পৃথিবীর অন্যত্র তার মন্দাভাব দেখাদেয় । তাই খুব সহজেই বলা যায় যে, মাকির্ন যুক্ত রাষ্ট্রের ৩০০ মিলিয়ন মানুষের জীবন যাত্রাকে আরো উন্নত করতে হলে অথবা বর্তমান অবস্থাকে ধরে রাখতে হলে তৃতীয় বিশ্বকে শোষন নাকরে তা সম্ভব নয় । ্কই ভাবে বলা যায় যে, বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের মানুষ যার সংখ্যা প্রায় ৫ বিলিয়ন তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে হলে প্রথম বিশ্বের মানুষের ভোগ কমিয়ে না আনলে কোন ভাবেই তা সম্ভব হবে না । এই সত্য জিনিষটা না বুঝতে পাড়া মার্কসবাদ নয় এটা হলো ইউটোপিয়ানিজম । কেহ যদি যাদুর খাটির স্পর্শে তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে প্রথম বিশ্বের মানুষের সম পর্যায়ে তুলে আনতে চায় যারা বর্তমানে শোষক ও ভোগী মানুষের ভূমিকায় রয়েছে ; তা হলে তা প্রত্যাশিত ও নয় এবং পরিবেশগত, প্রতিবেশত ভাবে ও সঠিক হবে না । সত্যিকার সমাজতান্ত্রিক লড়াইটা হলো সকলের জন্য একটি মানসম্পন্ন শোষনহীন সমাজ বির্নিমান করা । সকলেই সম্পদের দ্বারা টুইটুম্বুর হয়ে উটবে এমন স্বাপ্নিক দুনিয়ার প্রচার একজন কমিউনিষ্ট করতে পারেন না । একজন কমিউনিষ্ট এমন কথা ও বলবেন না যে, বর্তমান শোষক ও ভোগবাদী প্রথম বিশ্বের মত সমগ্র পৃথিবীকে তৈরী করে ফেলব । তবে এটা সত্য যে,পৃথিবীতে উৎপাদনের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা ও সম্পদ রয়েছে । এ বিষয়ে সংশোধনবাদীদের অস্বীকার প্রথমবিশ্ববাদ উৎপাদন শক্তিত্বত্তকে জোড়ালো করেছে । প্রথমবিশ্ববাদ হয় এই ধারনাকে বাদদিবে অথবা জনগনের মাঝে সুসম বন্ঠন ব্যবস্থা চালু করবে ; অথবা তারা নিজেদেরকে সমাজতনন্ত্রি হিসাবে দাবী করা ত্যাগ করবে । প্রথম বিশ্ববাদীরা সমগ্র দুনিয়ায় সুসমবনঠনের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার কথা বলে বেড়ায় অথচ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবী । প্রথম বিশ্ববাদ হলো সাম্রাজ্যবাদেরই প্রচারক ।
মহান লেনিন র্জামান ও ফ্রান্সের সেই সকল লোকদের সমালোচনা করেছিলেন যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী জন্মভূমির জন্য যুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিলেন । সংশোধনবাদীগণ নিজেদেও জনগনের মাঝে,তাদেও শ্রমিক শ্রেণীর মাঝে, এমনকি তাদেও প্রলেটারিয়েট শ্রেণীর মাঝে ও জায়গা করে নেয় । লেনিন বিপ্লবী পরাজয়বাদ ও সংশোধনবাদীদের মাঝে পার্থক্যের নীতির অনুকুলে প্রচার করেছেন । লেনিন জার সাম্রাজ্যবাদী সরকারের পরাজয়ের অনুকুলে কাজ করেছেন এই আশায় যে, তারঁ সাম্রাজ্যবাদী মাতৃভূমিতে বিপ্লবের পটভূমি তৈরী করা সহজ হবে । লেনিনের প্রতিকূলে,সেই সময়কার দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিকের সংশোধনবাদীরা ফ্যাসিষ্ট এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ছিলেন । তারা নামে ছিল সমাজতন্ত্রী কিন্তু বাস্তবত তারা ছিল সাম্রাজ্যবাদী । আজ, প্রথম বিশ্ববাদ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক ফ্যাসিবাদেরূপ নিয়েছে । প্রথম বিশ্ববাদীরা মার্কসবাদ এর নাম নিতে পারে, সমাজতান্ত্রিক কথা বার্ত বলতেও পারে, তাবে তারা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষের কোরবানী করে ও নিজেদের স্বার্থ সবার উপওে স্থান দিয়ে থাকে । যেমন লেনিন এর পূর্বে যা ঘটেছিল । লিডিং লাইট কমিউনিজম সারা দুনিয়ার প্রলেটারিয়েট এবং নিপিড়িত মানুষের স্বর্থের প্রতিনিধিত্ব করছে । ঠিক যেমন লেনিন হিনমন্যতা, চিন্তায় অন্ধত্ব ও অকল্পনীয় ভাবনার অবসান ঘটিয়েছিলেন , এছাড়া ও অন্যান্য বিপ্লবী গন যেমনটি করেছিলেন লিডিং লাইট ও সেইরূপ কাজ করছে । এ বিষয়ে অবাক হবার কিছু নেই যে, সকলেই অমাদের সংগ্রাম ও লড়াইকে নিন্দা করছেন বরং সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীরাই অমাদের সমালোচনায় মূখর ।
জনযুদ্ধ দির্ঘজীবি হোক ! এ কমরেড লিন বিয়াও প্রচলিত সমাজ ও সামাজিক বৈচিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষ্য প্রদান করেছেন, তিনি বিশ্ব পল্লীর সাথে বিশ্ব নগর ও শহরের দ্বন্ধের কথা বলেছেন । বিশ্ব বিপ্লব নিহিত রয়েছে বিশ্ব পল্লীর জেগে উঠা ও বিশ্ব শহর নগর কে দখল করার মধ্যে ; যা তাদেরকে অবরুদ্ধ করবে এবং ধ্বংস করে দিবে । এই ভাবেই লিন বিয়ও মাও সেতুং এর মহান জনযুদ্ধের ত্বত্তকে একটি সার্বজনীন রূপদান করেছেন ।
আজ, বিশ্ব নগর ও বিশ্ব পল্লীর পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত । উদাহরণ হিসাবে পল্লী এলাকার মানুষের বড় ধরনের স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করা যায় । দরিদ্র দেশের গরীব মানুষ এক সময় যেমন ছিল এখন আর তারা সেইরূপ নেই । একের পর এক ফাঁদে আটকা পড়ছে, তাদেরকে কষ্টকর জীবনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে । তৃতীয় বিশ্বের মেঘা শহর গুলোতে ও বেকারত্ব বাড়ছে । আরো উল্লেখ্য যে, বিশ্ব পল্লী এলাকা গুলো পুঁজিবাদীদের উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হচ্ছে, তা কেবল মাত্র তাদের পশ্চাৎ পদতার জন্য নয় বরং সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য ও তা ঘটছে । এর সাথে সাথে বিশ্ব নগর থেকে উৎপাদনের পরিমান ও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে । বর্তমানে প্রথম বিশ্বের অথনৈতিক বিষয়টিকে এখন এভাবে ও বলা যায় যে, তারা শোষক হিসাবে সেবা মূলক খাতে ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অধিকতর উৎসহিত হচ্ছে এবং অধিক মাত্রায় বেশী আয় করছে । একটা ধারণা দেয় হয় যে, তৃতীয় বিশ্ব প্রথম বিশ্ব থেকে অনেক পেছনে পড়ে আছে , কারণ তাদের আয়ত্তে প্রযুক্তি নেই, কখনও ছিল না, ইহা প্রথম বিশ্ববাদীদের অপপ্রচার । তৃতীয় বিশ্ব উন্নয়নশীল, ইহা প্রথম বিশ্বে মুনাফা সরবরাহ করে থাকে বলে বিবেচনা করা হয় । যাইহোক, তাদের আয়ত্তে প্রযুক্তি নেই এটা আর বলা যায় না । তাই জনযুদ্ধের ত্বত্ত কে পুঁজি করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লিডিং লাইট কমিউনিষ্ট আন্দোলন মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সাধনের জন্য এগিয়ে যাবে । অনুবাদ : একেএম শিহাব