তা হলে বাস্তবতা কি ?
সামাজিক কারখনা সম্পর্কে সঠিক তত্ত্বটাই বা কি ? যেখানে এটা দৃশ্যমান যে প্রথমবিশ্বে আগের তুলনায় এখন উৎপাদনের ধরন ও প্রকৃতি পাল্টে গেছে অনেক। এটা স্বীকার করতেই হবে যে একসময় প্রথম বিশ্বের উৎপাদন ব্যাবস্থা যেরূপ ছিল বতর্মানে সেই রূপ নেই। কারখানা এখন আর প্রথমবিশ্বের মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রন করেনা। প্রকৃত সত্যি হলো যে, প্রথম বিশ্বে এখন একটি নগ্ন সংখ্যক মানুষ কারখানায় কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করে। এর ছেয়ে আনেক অনেক বেশী লোক কাজ করে ব্যবস্থাপনায়,সেবায়, ও বিতরন প্রক্রিয়ায়। আর এ বিষয়টি কার্ল মার্ক্সের ভাষায় বনর্না করলে দাঁড়ায়, উৎপাদন কার্যে শ্রমিকদের অংশগ্রহনের হার কম। উৎপাদনে জড়িত শ্রমিকরাই প্রকৃত শ্রমিক। তারাই সামাজিক মোট উৎপাদনে সম্পদ যুক্ত করে। আমরা এই অবস্থা কে বলতে পারি প্রথমবিশ্বের শপিংমল অর্থনিতি। প্রথমবিশ্বের বেশির ভাগ অর্থনিতিই এখন ব্যপক ভাবে মল অর্থনিতির উপর নির্ভশিল হয়ে পরেছে। মলে কোন কিছুই উৎপাদন হয় না। এখন লোকজন কাজ করছেন ব্যবস্থাপনায়, পরিবহনে,বিতরনে ও নিরাপত্থায় ইত্যদি পেশায়। পন্য তৈরি হয় বিভিন্ন স্তানে কিন্তু বিক্রি হয় মলে। পন্য আসে বাহির থেকে আর তা বিক্রি হয় শপিং মলে। পন্যে উৎপাদন বাহিরে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে আর রম রমাবিক্রি হয় প্রথম বিশ্বে। এই সকল পন্যের ক্রয়- বিক্রয়ের কোন ন্যায় সঙ্গত আদান প্রধান হয় না। একটি তৃতীয় পক্ষ মাঝ খান থেকে মধ্যসত্ত্ব ভোগীরা মোতা অংকের মুনাফা হাতিয়ে নেয়। এই সকল পন্য সামগ্রি শপিং মল গুলোকে চালু রাখে, আর সেই শপিং মল গুলো প্রথমবিশ্বের রম রমা ভাব বজায় রাখছে এবং সাম্রাজ্যবাদ বহাল তবিয়তে ঠিকে আছে। এখন কার দুনিয়ায় এটা পরিস্কার যে, আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রথমবিশ্বের মানুষ তৃতীয় বিশ্বের মানুষের শ্রম ও ঘামের উপর বেঁচে আছে। প্রথমবিশ্বের অনুৎপাদনশিল শ্রম শক্তি এখন তৃতীয় বিশ্বের উৎপাদনশীল শ্রমিকের উপর ভর করছে। মার্ক্স দেখেছিলেন যে, কেবল মাত্র উৎপাদন শীল শ্রম শক্তিকেই একশ্রেনির মানুষ শোষণ করছে। আজকের প্রথম বিশ্বের যে পরিস্তিতি তা তখন ছিলনা। এর অর্থ হল তখন শপিং মল অর্থনীতি ছিলনা।
প্রথমবিশ্বের শ্রমিক শ্রমিক শ্রেনি এখন দেখছ যে, তাদের আয় বেড়েছে, জিবন যাত্রার মান বেড়েছে, আন্নদ-ফুর্তির সময় বেড়েছে, জিবনে বিচিত্রতা এসেছে, দরকার হলে মোটা অংকের লগ্নি করতে পারছে ইত্যাদি। এসব সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কারনে প্রথমবিশ্বের শ্রমিক শ্রেনি আর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই লিডিং লাইট কমিউনিস্ট অর্গানাইজেশন সঠিক ভাবেই উপসঙ্গহারে পৌছেছে যে, প্রথমবিশ্বের শ্রমিক শ্রেনি এখন আর বিপ্লবের বিষয় বস্তু নয়। মহান মার্ক্স যেমন টি বলেছিলেন, ” শ্রমিক শ্রেনীর শৃংখল ছাড়া আর হারাবার কিছু নেই”। প্রকৃত সত্য হলো, প্রথমবিশ্বের শ্রমিক শ্রেনী আর সেরকম নেই, বিপ্লবী মানসিকতা ও নেই, কোন প্রলেতারিয়েত ও নেই প্রথমবিশ্বে ।
সম মানসিকতার মানুষের সমাহার ঘটেছে এই সমাজে, কারখানা তত্ত্ব ইহা ব্যাখ্যা করতে পারে না। যদি ও এটা প্রথমবিশ্বে ঘটেছে, এবং একই পরিবেশে ঘটেছে বিধায় তাদের মাঝে কোন প্রকার শ্রেনীবিরোধ বা স্বার্থগত বিরোধ দেখা দিচ্ছে না। যদি ও কেহ বিপ্লবী কর্মকান্ড পরিচালনা করতে চায় তবে সাধারন জনগন ও সচেতন ভাবে তাঁর বিরোধীতা মত্ত্ব হয়। এঙ্গগেলস এই প্রক্রিয়াকে সমগ্র দেশ ব্যপী বুর্জোয়া করন বলে অভিহিত করেছিলেন। প্রথমবিশ্বের শ্রমিক শ্রনি এখন বিশ্ব বুর্জোয়া সমাজেরই অংশ । প্রথমবিশ্বে এখন তাদের মাঝে বিরোধের মাত্রা এমনভাবে কমে গেছে যে, তা দেকে একজন লিখক ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা লিখেছে, বিরোধের ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। একই ভাবে একজন সমালোচক রির্চারড ররতি মন্তব্য করেছেন, আমারা স্বাধীনতার যুগে, আধুনিকতা উত্তর যুগে পৌছে গেছি। প্রথমবিশ্বে এখন কেবল মাত্র গনতন্ত্র চর্চা করলেই হবে। বৈচিত্রময় জিবন যাত্রা আজ প্রথবিশ্ব প্রান ভরে উপভোগ করছে আর তা সম্ভব হছে তৃতীয় বিশ্বের নারী পুরুষের রক্তে ও ঘামে।
আগাম বার্তা, ব্যাখ্যা ও কার্যপদ্বতিঃ
পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনায় আমরা দেখতে পাই ইহা নিজেই নিজের নিমার্মাতা ইহা কোন দৈব চক্র নয়। বৈজ্ঞানিক কর্ম কৌশল হলো, একে সমগ্র ব্যবস্থাপনার পরিধি থেকে আড়াল করে দেয়া, আর তা সম্ভব হলেই সমাজিক পরিবতর্নের আশা করা যায়। বিজ্ঞান চলমান প্রক্রিয়াকে এমন ভাবে সাজাবে যাতে মানব কর্মে পজিবাদি ব্যবস্থাপনার কোন রেশ ও না থাকে। বিজ্ঞান পজিবাদকে উপরিঠামর ভিত্তি থেকে তিরহিত করে দিবে। বিজ্ঞান শোষণ প্রক্রিয়াকে ও অন্যান্য নিপিড়ন মূলক কর্মকান্ডকে দূরীভূত করে দিবে। বিজ্ঞান সকল কর্মকান্ডই ঢেলে সজাবে যেন কোথাও নিপিড়নের লেশমাত্র ও না থাকে এমন কি কোন পরিবারে ও নিপিড়নের অবশেষ থাকবেন। বিজ্ঞান তাঁর পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁর বনর্না দিবে। মোট কথা হোল, বিজ্ঞান লোক সংখ্যা ভিত্তিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে। বিজ্ঞান শোষণ ও নিপিড়নের ব্যাখ্যা গাণিতিক ভাবে উপস্থাপন করে থাকে, যেমন অসমতার ও অপবিতরনের মাত্রা ইত্যাদি। বিজ্ঞান ন্যায় বিচার ও সঠিক ভাবে সম্পদের বিতরণের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম পন্থা গ্রহন করবে। আর এ গুলোই হলো বিপ্লবী বিজ্ঞানের প্রান, লিডিং লাইট কমিউনিজম। মার্ক্স যখন মানুষের চাহিদার শ্রেনী করন করেন তখন সমাজিক কারখানা তত্ত্ব কোন উত্তর দিতে পারে না। যদি ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান বিত্তিক হয়ে থাকে তবে কারখানা তত্ত্বটি একটি প্রহেলিকায় পযর্ভুশিত হয়েছে। ইহা বিজ্ঞান ভিত্তক তত্ত্ব নয়। বিজ্ঞান ভিত্ত্বিক শব্দ মালা হলো যেমন, শোষণ, উতপাদন,শ্রম, নিপিড়ন, এমন কি প্রলেতারিয়েত, ইত্যদি এই তত্বে এসে এগুলোর অর্থ ঝাপ্সা হয়ে গেছে। নিপিড়িত সমাজের সামনে মাও যে প্রশ্ন তুলেছিলেন “আমাদের শত্রু কে?” তাঁর জবাব ও এই কারখানা তত্তেও নেই। বা “ কে আমাদের বন্দ্বু?” সেই প্রশ্নের ও উত্তর নেই। কারখানা তত্ত্ব অনুসারে, এবং সেই রুপ আন্যান্য তত্ত্বে ও বন্দ্বু এবং শত্রু
সনাক্ত করা হয় নি। বিপ্লব করতে হলে, সমাজের রেডিক্যাল অংশকে সংঘটিত করাচাই। কারখানা তত্ত্বের মত বিষয় গুলো আমাদের চিন্তাভাবনাকে ইঁদুরের গর্তে ডুকিয়ে দিবার চেস্টা করে। সেই খানে কোন সামাজিক বা শ্রেনী শ্ত্রুর অস্তিত্ব নেই। সেখানে একটি ছায়া ব্যবস্থাপনার কথা বলা হচ্ছে, সকলকে সেবার নামে কাউকেই সেবা দিচ্ছেনা। এই সকল তত্ত্বে কোন বিজয়ী ও নেই এবং বিজত ও নেই। এই সকল তত্ত্ব প্রথমবিশ্বের বই পুস্তকেই সুভাপায়। নিপিড়নের শিকার তৃতীয় বিশ্বের মানশকেই তাদের নিপিড়নের জন্য দোশারূপ করে থাকে। আর সেজন্যই তারা বিপ্লবের কোন প্রাকার পথ রেখা হাজির করে না। বরং তারা যে কোন কিছু কে সুযোগ ও দাবী উত্তাপনের মধ্যে সীমাব্ধ রাখতে চায়। তাই, এই সকল তত্ত্ব কোন তত্ত্বই নয়। সে গুলিতে কোন প্রকার নিদের্শনা ও নেই। এইধরনের তত্ত্ব প্রকৃত বিপ্লবের সহায়ক নয়। মহান লেনিন বলেছেন, তত্ত্ব ছাড়া অনুশীন অন্ধ । কারখানা তত্ত্বটির আসলে কোন সার বত্তা নেই। বরং লিডিং লাইট কমিউনিজম সংগঠন প্রকৃত বিজ্ঞান ও প্রকৃত বিপ্লবের মশাল জ্বালিয়েছে। আসুন আমারা এই মশাল জ্বলিয়ে দেই সব খানে। এ কে এম শিহাব