(llcobangla.org)
রীডস (ওয়ারেন বাত্তি, ১৯৮১) ছবিটি মূলত জন রীডের (ওয়ারেন বাত্তি) আত্মজীবনী মূলক সিনেমা। রীড ছিলন একজন সাংবাদিক ও সাম্যবাদি। তিনি মেক্সিকো বিপ্লবের সময়ে ও সেখানে কাজ করেছলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিস্টাতাদের একজন ছিলেন। তিনি ১৯১৭ সালে রাশিয়ান বিপ্লবের প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি মহান অক্টোবর বিপ্লবের সময়ে নিজ চোখে যা যা দেখেছিলেন তা বিস্থতার সাথে লিখে গেছেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’ ১৯১৯। তাঁর বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। তবে স্ট্যালিনের আমলে বইটির কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছিলো । চলচ্চিত্র অনুসারে তিনি একবার সাদা সৈনিকদের দ্বারা বন্দ্বী হয়েছিলেন। লেনিনের সয়াহতায় তিনি মুক্তি ও লাভ করেন। তাঁর সাথে আরো ৫০ জন অধ্যাপকে ও লেনিন মুক্ত করেছলেন। রীড একজন সৌভাগ্যবান আমেরিকান হিসাবে ক্রেমলিনে মৃত্যুর পর সমাহিত হয়েছেন। রাশিয়ায় তাঁর সহযোগী নারী সাংবাদিক লুইস ব্রেনেত এর সাথে তাঁর ভালোবাসার সম্পর্ক ও ছিলো।
১৯৮১ সালে জন রীড ১২তম একাডেমী পুরস্কার পান। এটা সেই সময়ে বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যমান পুরস্কার ছিলো। ওয়ারেন বাত্তি শ্রেস্ট চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবে ওস্কার পুরস্কার ও লাভ করেন। রীড একজন শক্তিমান চলচ্ছিত্রকার হিসাবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তাঁর নির্মিত সাহসের আগুন-(হিঊজ হাডসন,১৯৮১) ও জন প্রীয়তা পায়। ২০০৮ সালে মার্কিন চলচ্ছিত্র নির্মাতা প্রতিস্টান গুলো তাঁর ছবিটিকে শীর্ষ সেরা দশে স্থান দেয়। এটা একটা বিশ্ম্যেয়র বিষয় যে, যখন রাশিয়ায় ব্রেজনেভ ও অ্যামেরিকায় রিগান প্রেসিডেন্ট তখন হলিউডে বলশেভিকদের প্রতি আমেরিকার দর্শক শ্রুতাদেরকে আকৃষ্ট করে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টার ছবি নির্মিত হওয়া। সামগ্রিক বিচারে মার্কিনিদের সমর্থন ও তাঁদের মাঝে সফলতা পাওয়ার কথা নয়।
ছবিটির শেষান্তে, সৌভিয়েত ইউনিয়নের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে সন্দ্বেহ প্রকাশ করে – সেখানে সাম্যবাদের সাথে আধ্যাত্মিকতার বৈপরিত্যের বিষয় গুলো তুলে ধরেছেন। রীড তাঁর স্বীয় চিন্তাভাবনার জগতে আভ্যন্তরীণ দ্বান্দ্বিকতা গুলো তাঁর বিপরীতে বিপ্লবী ঈমা গোল্ডম্যানের (মাউরীন স্টিপ্লিয়ন) এবং বলশেভিক আমলা গ্রেগরী জিনভিয়েভ ( জেরী কসিনস্কি) কথোপকথনের ভেতর দিয়ে।
জন রীড বনাম ঈমা গোল্ডম্যান – একটি কথোপকথন ছিলো এই রূপ-
গোল্ডম্যান- ” জেক, আমাদেরকে একটি কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের সকল স্বপ্ন হাড়িয়ে যাবে। বলশেভিজমের মানে যদি হয় – কৃষকের জমি অধিগ্রহন করা, কারখানা সমুহ শ্রমিকের জন্য নিয়ে নয়া। রাশিয়া যদি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যায় – তবে বলশেভিজমই তো বিলিন হয়ে যাবে।”
রীড- ” হ্যাঁ, আমি জানি ! আমি বিরুধীদের সাথে যুক্তি দেখাতে পারি। আমি জেনারেলদের বিরুদ্বে লড়াই করতে পারি। কিন্তু আমি আমলাদের সাথে তা পারি না ।”
গোল্ডম্যান – ” জিনভিয়েভ তুমিকি মনে কর আমলাদের চাইতে খারাপ আর কিছু নেই। সৌভিয়েত ইউনিউনে স্থানীয় কোন স্বায়েত্ব শাসন নেই। সকল ক্ষমতা কান্দ্রীয় সরকারের নিকট ন্যাস্ত। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা মাত্র গুটি কয়েক জন ব্যাক্তির হাতে – যারা বিপ্লবকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা রাশিয়ার সকল স্বপ্ন স্বাধ ও আকাংখাকে বিনাশ করে দিতে চাইছে। তাঁরা আমার মত সকলকেই জেলে পুড়ত চাইছে। আমি বিপ্লব সম্পর্কে যে টুকু বুঝেছি তাতে আমি মনে করি, একটি মহাদেশ একজন ব্যক্তির ইচ্ছার উপর চলতে পারেনা। আর তাই আমি এই প্রক্রিয়ার কোন অংশীদার হতে চাই না । সকল সংবাদ পত্র ক্রমে বন্দ্ব করে দেয়া হচ্ছে বা তাঁর কর্তৃত্ব পার্টি হাতে নিয়ে নয়া হচ্ছে। আর কেউ এর বিরুদ্বে একটি কথা বললেই তাকে প্রতিবিপ্লবী বলে পার্টি থেকে বেড় করে দেয়া হচ্ছে এবং বিনা বিচারে গুলি কর হত্যা করা হচ্ছে। বলুন তো ! এর শেষ কোথায় ? এই ধরনের অসহনীয় অবস্থাকে কি বিপ্লবের সুরক্ষা বা প্রতিবিপ্লবীদেরকে প্রতিরোধ বলে ? রাশিয়ার স্বপ্ন মরে যেতে পারে – কিন্তু আমরা মরব না। কিছু সময় লাগতে পারে – তবে আমরা গোড়ে দাঁড়াবই।”
রীড – ” আপনার কথা শোনে মনে হচ্ছে আপনি কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগচ্ছেন, বিষয়টিকে সহজ ভাবে নিন না। ‘আপনি’ এখনো তত্ব কপচ্ছাচ্ছেন। আপনি কি মনে করেন – এই অবস্থায় আর কি ই বা করা যেত ? সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতেই বিপ্লব সংগটিত হয়েছে, আমরাই তো সব টিক করেছি, আমরাই কি সকলে মিলে এক কাপ কপি পান করার জন্য এক মত হইনি ?”
গোল্ডম্যান – ” কিছুই হোল না ! গত বছর চল্লিশ লাখ মানুষ মারা গেছে। তাঁরা কোন যুদ্বে মারা যান নাই। তাঁরা মারা গেছে ক্ষুধায় ও তাইপাস বেমারে। নির্দয় পুলিশ মানুষের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে বিনাশ করেছে – মানুষের জন্য কিছুই তো করা হচ্ছে না ।” রীড – ” তাঁরা মরেছে ফ্র্যান্স,ব্রিটেন এবং আমেরিকার অবোরুধের কারনে। তাঁদের কারনেই খাদ্য, ঔষধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীর সরবরাহ বন্দ্ব হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রতিবিপ্লবীরা কল-কারখানায়, রেল রোডে এবং টেলিফোন লাইনে অন্তর্ঘাত মূলক তৎপরতা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এখন ও জনগণের মাঝে দারিদ্রতা, অশিক্ষা,কুসংস্কার বিরাজমান আছে। ফলে আমরা যে ভাবে চাইছি-তাদেরকে সেই ভাবে চালাতে পারছি না। আপনি কি মনে করেন না যে আমরা সঠিকভাবেই এগোছি ? সামাজিক পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া কি খুব সজেই এগোবে বলে আপনি মনে করেন ? এটা আমাদের এক ধরনের যুদ্ব। যেমন- এই যুদ্ব শৃংখলার জন্য, সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য । আমরা কি তা থেকে বিরত থাকবো।
গোল্ডম্যান- ” যে চল্লিশ লাখ মানুষ মারা গেছেন – তাঁরা কিন্তু কোন যুদ্বের কারনে মারা যায় নাই। তাঁরা মারা গেছেন একান্তই অকার্যকর একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য।”
রীড – ” এটাতো কেবল সূচনা মাত্র। যা ঘটেছে তা আমরা ভাবতেই পারিনা। আমরা তা চাই নাই কিন্তু তা ঘটে গেছে। এখন যদি এই পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরুতে চাই তবে – আমাদের কি করা উচিৎ ?”
“বিপ্লব কোন ডিনার পার্টি নয়” – মহান মাওসেতুং এর সেই বিখ্যাত বানী রীড তাঁর উত্তরে গোল্ডম্যানকে বললেন। কল্পলোকে সমাজতন্ত্র কায়েম করা সম্ভব নয়। বিপ্লবের জন্য আদর্শ ভিত্তিক একটি মিশন দরকার, মিশন নিয়ে এগোনো দরকার, জনগণের দৃষ্টি খোলে দেয়া প্রয়োজন, যদি আদর্শের সাথে বাস্তবতার মিল না থাকে তবে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রতি বিপ্লবে রূপ নিতে পারে। গোল্ডম্যানের ভেতর দিয়ে রীড মূলত রাশিয়া ও চীনের প্রকৃত সমাজতান্ত্রিকরনের প্রক্রিয়ারই সমালোচনা করছেন। তাঁর উক্তি গুলো পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী চিন্তাবিদদের থেকে তেমন কোন পার্থক্য নেই। সে কেবল আদর্শিক বাম দৃস্টিকোন থেকে সকল কিছু বিশ্লেষণ করেছেন। ইতিয়াস থেকে কোন শিক্ষাই গ্রহন করেন নাই।
একরক্তাক্ত পরিস্থিতির ভেতর দিয়েই বিপ্লবের উৎপত্তি হয়। বলশেভিজমকে প্রত্যাখ্যান করলে প্রকারান্তরে বিপ্লবকেই প্রত্যাখান করা হয়। ফলে, বিপ্লবীরা উদারতার বয়ান দিতে শুরু করে। তাই পাশ্চাত্যে – এখন আর কোন বিপ্লব সম্ভব নয়। তাঁদের মতে, ইতিবাচক পরিবর্তন, উদারনৈতিকতা,সংস্কারবাদ এবং ক্রম বিকাশবাদই বিপ্লব আনতে পারে। বাম পন্থীরা এখন আর বিপ্লবী সংগঠনে বিশ্বাসী নয় – বলে সাম্যবাদে তাঁদের পক্ষে উপনত হওয়া ও অসম্ভব ব্যাপার। তাঁরা প্রকৃত সাম্যবাদে বিশ্বাস করেন না, তাঁদের সামাজিক বাস্তবতা ও সাম্যবাদ প্রতিস্টার জন্য সহায়ক নয়। সেই বিপ্লবীরা সত্যকার অর্থে সাম্যবাদেই বিশ্বাস রাখেন না । সাম্যবাদী বলে যারা পরিচিত তাঁরা আর সাম্যবাদেই বিশ্বাস করেন না । এছাড়া রীম- মাওবাদীরা এখন মাওবাদে ও বিশ্বাস রাখেন না। প্রথম বিশ্বে বিপ্লবী ধারনার মৃত্যু হয়েছে – ফলে পরগাছামতবাদের বিকাশ ঘটছে। তবে, উদারতাবাদের প্রভাবের কারনে তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমূহে ও বিপ্লবী আন্দোলন অনেক কঠিন সময় পার করছে। সর্বহারার রাস্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়া বিপ্লব এগোতে পারে না। পাশ্চাত্যের অপপ্রচার তাকে বাঁধা গ্রস্থ করে পদে পদে। ইসলামী ভাবধারার উত্থান, তথাকথিত বামপন্থীদের বিভ্রেন্তিকর চিন্তাভাবনা এবং পুঁজিবাদের বিশ্বায়িত স্বরূপ বিপ্লবের অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে।
গোল্ডম্যানের চিন্তাধারার সাথে কোন মিল নেই। প্রকৃত বিপ্লবী বাস্তবতার মূখোমূখি দাড়ায় এবং অনিবার্য সহিংসতাকে মেনে নেয়। কেননা একজন বিপ্লবী তো এই কাজ এড়াতে পারে না – তাঁরা সংগ্রামের ভেতর দিয়েই তো কিছু অর্জন করতে চায়। তাঁরা তো ঝগড়ায় লিপ্তই হয়েছে। তাঁরা তো এই জন্যই তাতে জড়িত হয়েছে। তারো ইতিহাসের এক বিশেষ দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছেন। তিনি (গোল্ডম্যান) সামগ্রিক সমালোচনাটি করেছেন একরুখা ভাবে । তিনি কেবল বলশেভিকদেরকেই সমালোচনা করেছেন। তিনি বলশেভিকদের লড়াইয়ের সাহসিকতার ও প্রতিবিপ্লবীদেরকে দোষী সাব্যস্থ করের কোন প্রসঙ্গ আনলেন না । প্রকৃত সত্য তো এটাই যে গোল্ডম্যানের সাথে বলশেভিক বিরোধী নেতা নেস্টর ম্যাকনোর কোন দেখাই হয় নাই। তিনি কেবল তাকে দূরেথেকে ভালোবেসেছেন । এমন কি তাঁর সাথে তাঁর কোন সাক্ষাৎ ও ঘটে নাই। এতে কোন সন্দ্বেহ নাই যে, যদি তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং মিশতেন তবে তাঁর কির্তি দেখে অবশ্যই তার নিন্দাবাদ করতেন।
জন রীড বনাম গ্রেগরী জিনোভিয়েভ – রীড এ, কমিউন্টার্ন ইস্যূতে রীডস ও জিনোভিয়েভের বিরোধ। জিনোভিয়েভকে এক জন চমৎকার আমলা হিসাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। রীডকে একজন বিপ্লবী আদর্শবাদী হিসাবে এবং গোল্ডম্যানকে একজন আদর্শিক বহিরাগত হিসাবে দেখানো হয়েছে।
কঊমিনটার্নে, জিনুভিয়েভ আমেরিকার শিল্প শ্রমিক সংস্থা ও অ্যামেরিকান ফেডারেশন অব লেবার এর প্রতিনিধিদেরকে সমপৃক্ত করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল তাঁরা সাম্যবাদী বিপ্লবী আন্দোলনে আগ্রহী ও সহায়ক হবেন। যদি জে, সাকির শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিক হয় তবে রীডের জন্য আমেরিকার শিল্প শ্রমিকদের সংস্থার প্রতি আগ্রহী হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেই সংস্থাটি বরাবর আমেরিকার জাত্বাভিমান গুষ্ঠির অংশ ছিল। সম্ভবত সেই সময়ে কেবল সাম্যবাদী দর্শনের প্রতি আস্থাশীল ছিলো শ্রমিক ফেডারেশন। জিনুভিয়েভ সেই সময়ে ‘জাতীয় ও উপনিবেশিক মানসিকতা থেকেই সংস্থার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কমিঊনটার্ন – আমেরিকার শ্রমিক সংস্থা বা ফেডারেশনের মূল্যায়নে সঠিক ছিলো না কি বেঠিক ছিলো তা বিবেচ্য নয় বরং আমরা দেখতে পাই যে, জিনুভিয়েভ পাশ্চাত্য থেকে তাঁর মূখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, সাম্রাজ্যবাদ ও জাতিগত নির্যাতনের বিরুদ্বে রুখে দাড়ানো ছিলো তখন কার শ্রমিক শ্রেনীর জন্য সঠিক কাজ । কিন্তু তা তাঁরা করেনি। ফলে লেনিন ও জিনুভিয়েভ উভয়ই বলেছিলেন, “বিপ্লবের ঢেঊ আসবে পূর্ব দিক থেকে।” অবশ্য স্বল্প সময়ের মধ্যেই রীড গোল্ড ম্যানের মতই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। রীড আধ্যাত্মিকতার আলোকে এক বিভক্ত রেখা টেনেছিলে, পরে তা থেকে সজল নয়নে বিরত হন। তখন রাদেক ও জিনুভিয়েভ রীডকে সাদরে পুনঃ গ্রহন করেন।
জিনুভিয়েভ রীডকে বললেন-ধন্যবাদ কমরেড রীড।
রাদেক রীডকে বললেন- “রীড ফিরে এসো। আপনি বাকুতে অনুস্টিত কউমিন্টার্নের একজন প্রতিনিধি হিসাবে কংগ্রেসে অংশ গ্রহন করে মধ্যপ্রচ্যের বিপ্লবে সহায়কের ও প্রেরনা হিসাবে কাজ করতে এগিয়ে আসুন।”
জিনুভিয়েভ রীডকে বললেন – “একটি বিপদ সংকুল অভিযানের জন্য তৈরী হোন”
রাদেক রীডকে বললেন- “আমাদের একমাত্র রাস্তাটি ভৌগলিক ভাবে বিভক্ত।”
বাকুতে আমাদের যাওয়ার পথ ভিন্ন, সেই ভিন্নতার সীমা রেখা টেনেছেন রীড নিজে, আর তা হলো আধ্যাত্মিকতার ইস্যু, যা বিপ্লবের প্রতি আকর্ষন কমিয়ে দেয়। তা লড়াই সংগ্রামের প্রতি সাধারণ বিপ্লবী মানসিকতার কর্মীদেরকে কর্মে নিরুৎসাহিত করে দেয়। রীড ছবিতে দেখা যায়- রীড যখন বাকুতে কংগ্রেসে আসেন তখন ইস্লামিস্ট গ্রুপ তাঁর সামনে আংকল সামের কুষপুত্তলিকা দাহ করছে। রীড কংগ্রেসে ইস্লামিস্টদের উদ্যেশে ইংরাজিতে একটি ভাষণ দেন। রীডের প্রদত্ব ভাষণ কয়েকটি ভাষায় অনুদিত হয়। তার এই ভাষণ প্রচারের পর জনগণ জিহাদ ! জিহাদ ! জিহাদ ! শ্লোগান তোলে। রীড তখন একজন মুসলিমকে জিজ্ঞাসা করেন যে, জিহাদ কিসের জন্য ? উত্তরে বলা হয় – জনতা আপনার আহবানে সাড়া দিচ্ছেন, তাঁরা পাশ্চাত্যের বিরুদ্বে জিহাদ করতে চায়। রীড তখন শারিরীক ভাবে অসুস্থ্যবোধ করছিলেন। তিনি রেলগাড়িতে করে মস্কো ফিরে আসেন। রীড জিনুভিয়েভ কে তাঁর বক্তব্যটি নতুন ভাবে লিখতে বলেন ।
রীড – “জিনুভিয়েভ, আপনিকি আমার ভাশণটি আনুবাদ করেছিলেন ?”
জিনুভিয়েভ – “আমি তা দেখেছি”
রীড – “আমি তো ধর্ম যুদ্বের কথা বলিনি, আমি বলছি শ্রেণী সংগ্রামের কথা।”
জিনুভিয়েভ – “আমি স্বাধিনতা সম্পর্কে কয়েকটি শব্দ মাত্র যুক্ত করেছিলাম”
রীড – “আমি তো সেই তথাকথিত স্বাধীনতার কথা বলছিনা।”
জিনুভিয়েভ – “আপনিকি জনগণের মনের কথাটা ই বলেন নাই?”
রীড – “আমি তো সেই মহান সত্যি কথা গুলোই বলতে চাই।”
জিনুভিয়েভ – “এই সত্য কথার সংজ্ঞা কে ঠিক করবে ? তুমি না কি পার্টি ? আপনি যা বলছেন তাঁর জন্য কি নিজেকে কোরবান করবেন ?”
রীড – “কিসের জন্য আমি আমার জীবন বাজি রেখেছি তা কি আপনি জানেন না?”
জিনুভিয়েভ – “আপনার জীবন ? আপনি যে জন্য জীবন বাজি রেখেছেন তাঁর বাস্তবায়ন হয়ত পুরুপুরি দেখে যেতে পারবেন না। আপনি একজন শিল্পী, একজন বিপ্লবী এবং আমেরিকার পার্টির এক জন মূখপাত্র।”
রীড – “জিনুভিয়েভ, একজন মানুষ কোন একক স্বত্বা নন, সে সামগ্রীক মানুষের অংশ, একটি দেশ একক কোন বিষয় নয় তাঁর একটি আন্তর্জাতিকতা আছে, একজন মানুষ তাঁর স্ত্রী-সন্তান ও বিপ্লবকে একই ভাবে ভালোবাসবে । এছাড়া, আপনি কি ভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার কথা ভাবতে পারেন ?”
জিনুভিয়েভ- “আপনি কি বিপ্লবের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিবার জন্য প্রস্তুত ?”
রীড- “একজন যখন কিছুকে ভালোবাসে তখন কি আপনি তাকে তা থেকে পৃথক করতে পারেন ? আর পরিশুদ্বিতার মাঝে বিশেষত্বই বা কি ? নিজেকে যখন পরিশুদ্ব ভাবেন তখন আপনার মাঝে কি কি গুন থাকে ? তা কি বরাবরই দুরত্ব বজায় রেখে চলে ?”
জিনুভিয়েভ- “চমরেড রীড ।”
রীড- “যখন পরিশুদ্বতা আপনার থেকে দুরে সরে যায়, তখন আপনি ই বিপ্লবের হত্যাকারী হয়ে ঊঠবেন। বিপ্লব একটি পবিত্র বিষয়।”
রীড ও জিনুভিয়েভের কথোপকথন এমন ছিলো যে, তা যেন জিনুভিয়েভের পক্ষে রেলগাড়ীকে একটি কামানের গুলা ছুড়ছিলো। সেই কামানের গুলা, সকল কিছুকে তছনছ করে দিচ্ছিলো, রীডকে বার বার থামিয়ে দিচ্ছিলো। রীড নিজেকে সাদা ও লালের লড়াইয়ের মাঝে নিম্মজ্জিত দেখতে পান। প্রতিবিপ্লবীরা আজ ও প্রগতির পথে বাঁধা হয়ে আছে। বিপ্লব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এক বিশাল অন্তরায় হিসাবে কাজ করছে। রীডের সমালোচনা আপাত দৃস্টিতে সত্য হলে ও তা তা তিনি পাতি – বুর্জোয়া মানসিকতা থেকেই করছেন। গোল্ডম্যানের কথা এবং মাওয়ের কথায় “ ইহা হলো বিদ্রোহীদের অধিকার”। রীডের বক্তব্য হলো – “বিপ্লব বহু দূর”। তা হলে – রীড, গোলদম্যান ও মাওসেতুং এর মধ্যে পার্থক্য কি ? রীডের সাথে অন্যদের পার্থক্য হলো – সে তাঁর ভালো মন্দের বুজাটা জিনুভিয়েভের গাড়ীতে তুলে দিয়েছে। রীড হলেন একজন বিপ্লবী কিন্তু তিনি নেতিবাচক সমালোচক। তিনি নিজেকে গোলদম্যনের মত বিপ্লবের বাইরের লোক মনে করেন না । তিনি আবার ট্রটস্কির চিন্তাধারাকে ধারন করেন। সংক্ষিপ্ত ভাবে বললে, বলতে হয় রীড তাঁর বিপ্লবের সময় কালকে, তাঁর জীবনভর লালিত স্বপ্নকে, তাঁর বন্দ্বু ও সঙ্গী- সাথীদেরকে ভালোবাসেন। ব্রায়ান্ট লুইস তাঁর মৃত্যু কালিন বিছানা থেকে-
রীড – ” আমার সাথে নিউয়্যার্ক আসবে ?”
ব্রায়ান্ট- ” নিউয়ার্ক ?”
রীড – ” আমার একটি গাড়ি অপেক্ষা করছে।”
ব্রায়ান্ট – ” আমি কিছুই মনে করবো না ।”
রীড – ” যাই হোক।”
ব্রায়ান্ট – ” যাই হোক।”
রীড – ” যাই হোক।”
ব্রায়ন্ট – ” ভাঈরে আমি কিচ্ছু জানিনা ।”
রীড – ” কমরেড।”
ব্রায়ন্ট – ” কমরেড।”
তার বিপ্লবের সাথে সম্পর্ক কখন ও চাংগা আবার কখনো মন্দাভাবে, তা কখন ও খুব পরিস্কার ছিলো না । ব্রায়ান্টের সাথে তাঁর দীর্ঘ বন্দ্বুত্বের ভেতর দিয়ে তা ফুটে উঠেছে। জিনুভিয়েভ তাঁর সাথে কথোপকথনের সময় তাঁর আক্রমনাত্মক উক্তির সয়েছেন। তাকে কমরেড বলেই ডেকেছেন।
গোল্ডম্যান ও ট্রটস্কির মতে বিপ্লব ঘটবে পসছিম থেকে পুর্বদিকে, কিন্তু মহান লেনিন, জিনুভিয়েভ,স্ট্যালিন, মাওসেতুং , লিন বিয়াও এবং লিডিং লাইট মনে করে বিপ্লবের কেন্দ্র হবে পুর্ব দিকে। তা ক্রমে পশ্চিমে যাবে।তবে পরবর্তীতে জিনুভিয়েভের সাথে স্ট্যালিনের মত পার্থক্য হলে তিনি ট্রটস্কির ধারায় গমন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা ও পালন করেন। তাঁর আধ্যাত্মিক সংকট তাঁর মৃত্যুকে ও প্রভাবিত করে। রীড তাঁর বিচানার পার্শ্বে বিশ্ব শিল্প শ্রমিক সংস্থার প্রতিনিধিকে বসিয়ে রেখেই মারা গেলেন। সেই প্রতিনিধি হলেন তৃতীয় বিশ্ব ও প্রথম বিশ্বের “সকল” শ্রমিক আন্দোলনের ও বিপ্লবের সূচনার প্রতীক। রীড কি বুঝতে পেরে ছিলেন যে প্রথম বিশ্বের শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা মুলত প্রতিক্রিয়াশীল গৌস্টির লোক – তাঁরা ও তৃতীয় বিশ্বের শোষণকারী । আজ কি রীড আমাদের কমরেড ? তিনি কি আজ আমাদের লিডিং লাইট কমিউনিজম গ্রহন করতে পারতেন ? রীড আমাদেরকে যথার্থ উত্তর দিয়ে যাননি। রীড নামক চলচ্ছিত্রটি আমাদের আন্দোলনের বিরুদ্বে অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। একে এম শিহাব।