বিখ্যাত ফিল্ম পরিচালক নীল ব্লোমক্যাম্প কর্তৃক পরিচালিত স্বর্গোদ্যান বা এলিসিয়াম – ২০১৩ সালের গ্রীষ্মে হলিঊড থেকে মুক্তি পায় । যদিও এই ছবিটি মুক্তির আগে ব্যাপক ভাবে এই বলে প্রচারনা চালয়ানো হয়েছিলো যে ইহা একটি ধারুন কল্প বিজ্ঞান ভিত্তিক ছবি – কিন্তু দর্শকদের মাঝে তেমন কোন সাড়াই ফেলতে পারে নাই । তবে, এই ছবিটি সমালোচক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মাঝে আলোচনার ঝড় তুলেছে। বিশেষ করে ডানপন্থী সমালোচকের দল হৈ হৈ করে উঠেছেন। তাঁরা বলছেন যে, এটা সাম্যবাদী ছবি এবং রাজনৈতিক প্রচারনার জন্যই তা নির্মিত হয়েছে। তাঁদের কথা হলো- এই ছবির পরিচালক, অভিনেতা ও অভিনেত্রীগন প্রগতিশীল গুষ্টির মানুষ। মিট ড্যামন, এই ছবিতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন । ম্যাক্স ডি কস্টা, এই ছবির রাজনৈতিক বক্তব্য হাজির করছেন । তিনি বলেছেন- “সিনেমার জগত বাস্তব জীবনের বাহিরের কোন বিষয় নয়” । ড্যামনের ভাষ্য হলো – “আপনি যদি পৃথিবীর জনসংখ্যার নিচু স্তরের ১ শত কোটি মানুষ ও উপরের স্তরের ১ কোটি মানুষের জীবন যাত্রার তুলনা করেন তবে দেখবেন তাঁদের এক দলের অবস্থান আকাশে আর অন্য দলের অবস্থান তৃতীয় বিশ্বের কোন নোংরা শহুরে বস্তিতে। আর নিচু তলার মানুষের এই অবস্থার জন্য ও উপররের তলার মানুষেরাই দায়ী।” এর জন্য তাঁরা দায় এড়াতে পারেন না।
ড্যামন আরেক জায়গায় বলেছেন-
“ যদি আপনি দেখেন আমরা পশ্চিমারা কেমন আছি, এবং আমরা যদি আর্থিক অবস্থার নিরিখে বিচার করি তবে দেখতে পাব যে, আমাদের মাঝেও তৃতীয় বিশ্বের মানুষের মাঝে বিশাল এক ব্যবধান বিরাজ করছে।”
দুনিয়ায় মানুষের বিভক্তি –
এই সিনেমাটি এমন একটি ভবিষ্যতের কথা বলছে – যেখানে মানুষের মাঝে ধনী ও গরীব বলে কোন প্রকার বিভক্তি থাকবে না । প্রথম বিশ্বের মানুষ ও তৃতীয় বিশ্বের মানুষ এমন মহানুভব হবে যে তাঁরা সকলে মিলে একাকার হয়ে যাবে। তাঁদের মাঝে থাকবে না কোন ক্ষুধা ও হাহাকার। পরিবর্তনশীল এই দুনিয়ায় পরস্পর বিরোধী দুটি শ্রেনীর মানুষ সকল প্রকার ভেদা ভেদ ভুলে এক সুন্দর দুনিয়ার জন্ম দিবে।
আগামীতে তৃতীয় বিশ্ব সারা দুনিয়ার জন্য একটি বিপদজনক এলাকা, শোষণ ও বঞ্চনার ক্ষেত্র, প্রাকৃতিক বিপর্য্য এবং পরিত্যক্ত ভুমি হিসাবে পরিগনিত হবে। ভবিষ্যৎ পৃথিবী নিজেদের পরিবর্তে বাহিরের জগতের অভিজাত শ্রেনীকে সেবা প্রদান করবে। যারা বসবাস করবেন মহাকাশ স্টেশনের স্বর্গোদ্যানে। আগামী পৃথীবী একটি অকার্য কর রাস্ট্রের ন্যায় রূপ ধারন করবে। বেশীর ভাগ প্রতিস্টান ই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। যদি কোণ রাষ্ট্র প্রথিবীতে টিকে ও থাকে তবে তাঁর বিচারিক ব্যবস্থাটি হবে এমন – যার হাজতী মানুষ হলে ও পুলিশ এবং কর্ম কর্তাগন হবেন রোবট। নামে রাষ্ট্র হলে ও তা হবে নিপিড়িত মানুষের এক আবাস ভূমি। বিশাল বিশাল কোম্পানী গুলো হবে এই প্রত্থীবীর সকল সম্পদের মালিক। পৃথিবীর বাহিরের অভীজাত শ্রেণী পৃথিবীর মানুষকে নিয়ন্ত্রন করবে – তাঁরা সেই নিয়ন্ত্রনের জন্য ব্যবহার করবেন হৃদয়হীন রোবট আর মানুষকে ব্যবহার করবে শ্রমিক হিসাবে। পৃথীবীতে থেকে যাওয়া মানুষ গুলোকে তাঁরা অজ্ঞই রেখে দেবে তাঁদের কাজে ব্যবহারের জন্যে। শ্রেণী ভুক্ত অর্থব্যবস্থার কারনে দুনিয়ার বেশীর ভাগ মানুষ অনউৎপাদনশীল ও কর্মহীন হয়ে পড়বে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ বিলিন হয়ে যাবে। কৃত্রিমতা গ্রাস করবে আমাদের সকল কিছু।
বহু ফিল্মে ল্যাটিন আমেরিকার ভবিষ্যৎ কি হবে তা স্থান পেয়েছে। সেখান কার অধিবাসিদের জীবন যাত্রা যে কঠিন হবে তা বলা হয়েছে। ল্যটিন আমেরিকার মানুষেরা আরো ল্যটিনাইযড হয়ে হয়ে উঠবেন, সেখানে সাদাদের প্রাধান্য কমে আসবে। আগামী দিনে ল্যাটিন আমেরিকার মানুষ তৃতীয় বিশ্বের মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকতে চাইবে। আজকের ফিল্ম গুলোতে ল্যাটিন ও তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে হীনভাবে প্রদর্শন করা হয়। আরো দেখানো হয় ইংলিশরা স্প্যানিসদের স্থান দখল করে নিচ্ছে। দেখানো হয় স্থানীয় ভাষা গুলো কিভাবে স্পেনিশ ও ইংলিশে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ও দেখানো হচ্ছে- প্রায় একই রকমের নাম গুলো ল্যাটিনু হয়ে যাচ্ছে। “ ম্যাক্স ডি কোষ্টা” ভাষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে এবং অর্থনৈতিক ভাবে তৃতীয় বিশ্বকে শোষণের মাধ্যমে কি ভাবে আজকের দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।
পক্ষান্তরে, এলাইসিয়াম একটি কৃত্রিম দুনিয়ার চিত্র এঁকেছে। পৃথিবীর সমস্যা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য মহাশূন্যে ভাসমান একটি কক্ষ কোঠরীর মত আবাস স্থল নির্মান করেছে বুর্জোয়া শ্রেনীর লোকেরা । এসাইলামবাসীরা সেখানে বসেই শোষণের মাধ্যমে পৃথিবীর উৎপাদন ও শ্রমশক্তির সকল মুনাফা শোষে নিচ্ছে। এই ছবিটি কেবল মাত্র আগামী দুনিয়ার চিত্রটি কেমন হবে তা দেখিয়েছে – তাতে দেখা গেছে এলাইসিয়াম বাসিদের প্রায় সকলেই হলেন সাদা রঙয়ের মানুষ। এটা হলো মহাকাশে গেট ম্যাক ম্যানশন এর একটি সমাজ মাত্র। তাঁরা অনেক টা অলিখিত ভাবে তৃতীয় বিশ্ব থেকে, দরিদ্রতা থেকে পালাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রবাসী হওয়া লোকদের মত। এলাইসিয়ামের লোকেরা ও জীবনের এবং শরীরের ঝুকি নিয়ে পৃথীবী থেকে এলাইসিয়ামে আশ্রয় নিতে যাচ্ছে। কালো বাজারী লোকেদের সংস্থা তাদেরকে রকেট অভিযানের মাধ্যমে সাহায্য করেছে যেন – এলাইসিয়ামের নিরাপত্তা রক্ষীরা তাদেরকে কোন প্রকার বাঁধা দিতে না পারে। স্বয়ংক্রিয় মিসাইল ও রোবট সৈনিকদের বেষ্টনী ভেদ করে তাঁরা যেন সহজেই এলাইসিয়ামের প্রবেশ দ্বার অতিক্রম করতে পারে। সাদা দুনিয়ার মানুষেরা সুনির্দস্ট ভাবে বিষয় গুলোকে চিত্রায়িত করেছেন। এটাকে তাঁরা কোন প্রদেশ বা সুশীল সমাজ হিসাবে প্রদর্শন করেনি । সাদা দুনিয়ার তৈরী স্বর্গোদ্যানটি বড়ই বিরক্তি কর ভাবে নির্মান করেছে। তাঁরা তাতে স্পা, লেইক, সুইমিং এসবের কিছুই রাখেনাই, এমনকি নাইট ক্লাবের ও ব্যবস্থা রাখেনি এলাইসিয়ামে।
সমস্যা সমূহ –
এই ছবিটির সুচনা হয়েছে এমন এক অবস্থা দেখিয়ে – যেখানে একটা বড়সর গরিলা কোন গৃহের একটি কক্ষে ধ্বংস যজ্ঞ চালালে যেমন অবস্থা হয় তেমন একটি পরিবেশ দেখিয়ে। ফলে ছবিটির ধ্বংস যজ্ঞের আবহ আমাদের কে ভাবতে বাধ্য করে প্রথম বিশ্বের বিলাশ বহুল জীবন ও তৃতিয় বিশ্বের দরিদ্রতম পরিস্থিতির কথা। একই ভাবে আমরা ভাবিত হই – কঠোর ভাবে শিল্পায়িত একটি পৃথিবীর নিয়ন্ত্রন এলাইসিয়ামের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় কিভাবে পরিচালনা করবে । আর আমাদেরকে খাটিয়ে মারবে ও শোষণ করবে। ছবির নায়ককে দেখা যায় একটি কারখানায় শিল্প দূর্ঘটানায় কবলিত হয়। সে বুঝতে পারে যে রঞ্জন রশ্মির প্রভাবে তাঁর জীবন সংকটাপন্ন , তিনি আর বেশীদিন এই পরিবেশে বাচতে পারবেন না। সে আরো বুঝতে পারে যে, পৃথীবী থেকে কোন ভাবে যদি প্রবেশ করতে পারে তবে বেঁচে যাবে। কেননা সেখানে উন্নত স্বাস্থ্য চিকিৎসা ও ঔষধ পত্র তাকে বাচাতে সক্ষম। কিন্তু সেই স্বর্গোদ্যান বা এলাইসিয়ামে প্রবেশ অননুমোদিত ব্যক্তিদের জন্য প্রবেসাধিকার খুবই ব্যয় বহুল এবং বিপদজনক। এয়ালাইসিয়ামে প্রবেশের অর্থ সংগ্রহের জন্য নায়ক মাফিয়া চক্রের চাকুরীতে যোগদেয়। মাফিয়াদের সাথে তাঁর চুক্তি হয় যে, সে যে কোম্পানীতে কাজ করত সেই কোম্পানীর মালিকের ব্রেইন মেমরী ও গোপন তথ্যাদি চুরি করে তাদেরকে দিয়ে দিবে।
সেই পরিকল্পনা মোতাবেক মালিককে রাস্তায় তাঁর গাড়িতে গুলি করে, তাঁর রোবট ও নিরাপত্তা কর্মীদেরকে হত্যা করে এবং পুলিশ আসার আগেই ব্যবসায়ীর ব্রেইন থেকে মেমরী নায়কের মাথায় ডাউনলোড করে নিয়ে পালায়ন করে। এই পরিকল্পনাকে আরো সফলকাম করার জন্য নায়ক মাফিয়াদের কথায় একটি যান্ত্রিক সৈনিকের পোশাক পরতে রাজি হয়। যা তাকে এক জন অতিমানবে রূপান্তরিত করে দিবে। মাফিয়াদের আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, কারখানা মালিকের ব্রেইন মেমরী হস্তগত করতে পারলে তাঁর ব্যাংক একাউন্টের নাম্বার ও তথ্য পেয়ে যাবে এবং তা তাঁরা কাজে লাগিয়ে সব কিছু লুঠে নিবে। তবে ব্যবসায়ীর তথ্যাবলী ডাউনলোড করার পর মাফিয়া চক্র বুঝতে পারেন যে, তাকে নিয়ন্ত্রন করার সকল চাবি এলাইচিয়ামের হাতে চলে গেছে। মাফিয়ারা আরো জানতে পারে যে, এলাইসিয়ামের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সকল কিছুই হ্যাকড বা চুরি করে নিয়েছে। সেই প্রতি রক্ষামন্ত্রী কূ করার মাধ্যমে এলাইসিয়ামের সকল রোবট ও পুলিশদের নিয়ন্ত্রন সহ বর্তমান প্রেসিডেন্টের স্থলাবিষিক্ত হতে ষড়যন্ত্র করছেন। তাই তিনি বর্তমান কম্পিউটার কোড পরিবর্তন করে নতুন কোড নিজের নামে ব্যবহার করতে চাইছেন। যখন মাফিয়া চক্র নায়কের ব্রেইন থেকে সেই সকল তথ্যাবলী নিজেরা জানতে পারলো তখন তাঁরা প্রস্তাব করলো – প্রতি রক্ষা মন্ত্রীর পরিবর্তে নিজেরাই সেই কোড ব্যবহার করে এলাইসিয়ামের জনগণ, রোবট ও পুলিশ সহ সকল ক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এমন কি তাঁরা তাঁদের পরিকল্পনাকে সফল করতে তাঁরা তাকে “বিপ্লব” হিসাবে দেখাতে চাইছে। কিন্তু নায়ক এসবের প্রতি আগ্রহী নয় , তাঁর সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। তাকে এলাইসিয়ামের অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা প্রথিবীতে পাঠিয়ে ছিলো আর্থিক কারনে তথা মুনাফা লাভের জন্য। সেই ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত সচেতন ভাবেই দক্ষিন আফ্রিকার স্বাধিকার আন্দোলনকে ধ্বংস সাধন করে তাঁদের ব্যবসায়ীক স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখতেই বিশেষ মডিউলটি তৈরী করেছিলো। স্যার্থ ক্যাপ্লে এই ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সে তাঁর নিজের ভুমিকা তুলে ধরতে গিয়ে বলে যে,
“ আপনারা এখন যেমন দেখছেন, আমি তাকে একজন বিশেষ বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করেছি। এই ছবিটিকে আমরা পরিবর্তনশীল সময়ের প্রতিচ্ছবি হিসাবে হাজির করছি। তাই সে হোল এমন একজন সৈনিক যে আফগানিস্থান ও ইরাকে শত্রুর পিছু নিয়েছে। সে হলো প্রকৃত পক্ষে এমন একজন ভবিষ্যৎ শক্তিমান ব্যাক্তি যে আমাদের শত্রুদের লাইনের পেছনেই উতপেতে রয়েছে। তাকে নেয়া হয়েছে পুরাতন দক্ষিন আফ্রিকার জংলে যুদ্বরত দুধর্ষ বাহিনী ব্যাটালিয়ান ৩-২ থেকে । যার প্রধান ভুমিকা ছিল আফ্রিকায় সাম্যবাদ প্রতিরোধের জন্য।”
নায়ক যখন সব কিছু বুঝতে পারলেন তখন সে ব্যবসায়ীদেরকে পরাস্ত নাকরে তাঁদের সাথে সমঝুতা করতে চাইলেন। তাই সে সেই ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তি বাতিল করলেন যারা তাকে নিযুক্ত করেছলো, সে ভাবলো তাঁদের এলাইসিয়ামের মুল মালিকদের নিকট তাঁর নিজ মাথা থেকে সকল তথ্যাবলী সমর্পন করবেন – যা বনিময়ে সে নিজে এবং আরো একজনকে আরোগ্য করে তুলতে পারবে – যে হলো ক্যান্সার আক্রান্ত তাঁর ছোটবেলার মেয়ে বন্দ্বুর কন্যা। কিন্তু এলাইসিয়ামে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী তথ্য প্রাপ্তির বিনিময়ে কেবল দু জন ব্যক্তিকে সুস্থ্য করে তুলার পরিবর্তে তাঁরা নায়ককে কোন এক অজ্ঞাত কারনে হত্যা করে মনস্ত করে । বরং ব্যবসায়ীরা তাঁদের চুক্তির বাস্তবায়নে কঠোর হয়ে ঊঠেন, তাঁরা নায়কের উপর ভিত্তিকরে এলাইসিয়ামে যাওয়ার সিদ্বান্ত বাতিল করে দেয়। এর পর পর ই তাঁদের যানবাহনটি এলাইসিয়ামের উপর বিধস্থ হয়ে পড়ে, ফলে তাঁরা সকলেই সেখানকার নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে। নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করতে চেষ্টা চালায়। নায়ক তাঁর বিশেষ ধরনের পোশাকটি পড়ে বিশেষ উপায়ে সেখান থেকে পালানোর প্রচেস্টা চালায়। সেই সময় তাৎক্ষণিক ভাবে ব্যবসায়ীরা সিধান্ত নেয় যে তাঁরাই এলাইসিয়াম শাসন করবেন। তাই ব্যবসায়ীরা সেখানকার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দ্রুত হত্যা করে। নায়ক খুব সহজেই তাঁর বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদেরকে পরাজিত করে। সেই ক্ষেত্রে তাকে উদ্বার করতে এগিয়ে আসা স্থানীয় মাফিয়ারা ও তাকে সাহায্য করে। এর পর নায়ক বুঝতে পারে যে তাঁর মাথায় যে তথ্যাবলী ছিলো তা হারিয়ে গেছে। সে আরো বুঝতে পারে তা ফিরিয়ে আনলে তাঁর নিজেরই মৃত্যু হবে। মাফিয়া চক্র নায়ককে সেই তথ্য ভান্ডার ফিরিয়ে আনতে চাপ দেয়। কিন্তু নায়ক সিদ্বান্ত নেয় – সে পৃথীবীতে এলাইসিয়ামের নাগরিকের মত সাধারণ মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে । তাঁর জন্য দরকার হলে সে মরবে । নায়ক চায় দুনিয়ার সকল শিশু প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আসুক। আজ যে ভাবে স্নেহ ভালোবাসার অভাবে শিশুদের জীবন ধ্বংস হয়ে যায় তা যেন আর না হয়। শিশুরা যেন প্রকৃত ভালোবাসা পায়। নায়ক তাঁর নিজের কন্যা শিশু হউক বা অন্যান্য শিশুদের নিরাপত্তার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে চায় । ছবিতে সামগ্রীক কাহিনীটির পরিসমাপ্তি দেকায়নি।
এই ছবিটির আরো একটি সমস্যা হলো – তাতে একজন ব্যাক্তি বিশেষকে বিপ্লবী হিসাবে হাজির করা হয়েছে। যদি ও দেখা গেছে কিছু স্থানীয় মাফিয়া নায়ককে সহায়তা করেছেন কিন্তু ছবিতে নায়ককে বিশেষ ভাবে তাঁর পোষাকী ক্ষ্মতার জন্য মুখ্য চরিত্র হিসাবে প্রদর্শন করা হয়েছে। যে দৃশ্যে তিনি বিশেষ ক্ষমতায় মনবতাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। প্রকৃত বিপ্লব সংগঠিত হয় আওয়াম জনতার সম্মিলিত উদ্যোগে। তা কোন বিশেষ ক্ষমতায় বা কতিপয় মাফিয়া বন্দ্বুদের দ্বারা সম্ভব নয় । নায়কের বিশেষ ক্ষমতা থাকায় তাকে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা ভাবে দেখা গেছে। চিনের বিপ্লবীরা সকল সময়ে বলে থেকেন যে, “ সাধারণ জনগণই প্রকৃত নায়ক।” এই দিক থেকে দেখলে আমরা দেখতে পাই একজন বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী নায়ক ব্যাক্তিগত ভাবে দুনিয়াকে নিরাপদ করেছেন। যদি ও ছবিটির একটি প্রগতিশীল দিক আছে, কিন্তু তা হলিউডের গতানুগতিক ব্যাক্তি কেন্দ্রিক সুপার হিরুইজমকেই তুলে ধরেছে।
এই ছবিতে ‘বিপ্লব’ শব্দটি সমস্যার জন্ম দিয়েছে। বরং নতুন দুনিয়ার পত্তন করা ‘শব্দটি’ উপযক্ত হত। কেননা নায়কের বিজয়ের পর সাধারণ জনতাকে এলাইসিয়ামে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হয়। যেখানে সাধারণ মানুষ রোবটের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। ইহা ও বিপ্লবের একটি লক্ষ্য বটে। তবে তা হলো উৎপাদন শক্তির বিকাশ তত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর বিপ্লবী তত্ব হলো – শোষনহীন, নিপীড়নহীন ও ভয়হীন একটি সমাজ গড়ে তুলা । যার সাধারণ ভিত্তি হলো – উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে অভাব বিমোচন করা। উক্ত ছবিটিতে বিপ্লব, সামাজিক সম্পর্ক এবং সংস্কৃতির প্রতি কোন নজরই দেয়া হয়নি। এই ফিল্মটিতে বিপ্লব শব্দটি প্রকৃত অর্থে তথা লিডিং লাইট কমিউনিজম হিসাবে ব্যবহার করা হয়নি বরং তা প্রচলিত সংশোধনবাদের দৃস্টিকোন থেকে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক সমস্যা থাকে সত্বে ও এই ছবিটির গুরুত্ব অপরিসীম। পরিশেষে একথা বলা যায় যে, ইহা মুলত দুনিয়ার দরিদ্র ও ধনিক শ্রেনীর মাঝে যে ব্যবধান তা-ই চিত্রায়ন করেছে। – একে এম শিহাব।