স্পেনে প্রতিকী আন্দোলন কোন ফলাফল আনবে বলে মনে হয় না

04-12-spains-hologram-protesters-are-not-a-good-thing

(llbangla.org)

পর্বেক্ষন বলছে এইধরনের বহু বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন প্রথম বিশ্বে বার বার করা হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নাই। বুর্জোয়া রাষ্ট্র এর থুড়াই কেয়ার করে থাকে । প্রকৃত বাম পন্থার আন্দোলন এখন আর প্রথম বিশ্বে তেমন নেই। এর কারন বহুবিধ  হলে ও প্রধানত উপদলীয় কোন্দল, তাত্ত্বিক বিভ্রান্তি, রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশের প্রায়াস, বিপ্লবী কাজের অনুপস্থিতি ও সামগ্রীক ভাবে সমাজিক পরিবর্তনের উদ্যোগহীনতাই প্রধান কারন। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি অনিচ্ছা সত্ত্বেও মানুষ প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্বে মানুষ রুখে দাঁড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্পেনের ঘটনা প্রবাহ একটি উজ্জ্বল উদাহরন।

সামাজিক অস্থিরতা ও সামাজিক প্রতিরোধ হিসাবে ২০০৮ সাল থেকে স্পেনে পুঁজিবাদের বিরুদ্বে সংগ্রাম চলছে। স্পেনের সরকার ইতিমধ্যে ঘোষনা করেছেন সরকারের অনুমতি ছাড়া কোন প্রকার রাজনৈতিক কার্যক্রম অবৈধ বলে গন্য হবে ।  এখন সেখানে আইন তৈরী করা হয়েছে যদি কোন রাজনোতিক কর্মসূচি কেহ রেকর্ড করেন বা কেহ এর ছবি তুলে প্রচার করেন তবে তাঁর জন্য সেই ব্যাক্তিকে ৩০ ডলার থেকে ৩০,০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।  কোন শান্তি পূর্ন কার্যক্রম করলেও তাকে ৬০ ডলার থেকে ৬০০ ডলার পর্যন্ত জড়িমানা গুনতে হবে। স্পেন এখন পুলিশি রাষ্ট্রের মডেলে পরিণত হয়েছে। সরকার তার সকল আইন কানুন  জনগনের নিরাপত্তার জন্যই করছে বলে দাবী করে আসছেন। তাঁরা একে ‘জন নিরাপত্তা আইন নামে অবিহিত করছেন’ বা তাদের ভাষায় এটা হলো ‘লি মোর্দাযা’ । পক্ষান্তরে, বিরোধী রাজনোইতিক দল সমূহ বলছে এই গুলো হলো ‘কালো আইন’।

১০ই এপ্রিল প্রথম বারের মত একটি প্রতিকি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। এখন প্রতিবাদের ভাষা বুর্জোয়া রাষ্ট্রে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা যায় না । সেই রাষ্ট্র সমূহ এমন ভাবে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রন করে যেখানে সত্যিকার ভাবে প্রতিবাদের ভাষা ক্ষমতার অপব্যবহারকে প্রভাবিত করতে পারে না । অনেক ক্ষেত্রে শান্তি পূর্ন সমাবেশ বুর্জোয়াদের হাসির খোঁড়াক হয়ে যায় ।

সত্যিকার ভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি মানুষকে বিভ্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। স্পেনে এই ধরনের অভিজ্ঞতা আগে ও হয়ছে। কিছু কাল আগে ও এই ধরনের কার্যক্রম সেখানে হয়েছে অনেক। শান্তি পূর্ন সমাবশে সরকার পক্ষ সন্ত্রাস করতে পিছপা হয় না । ইউরূপের ইতিহাস বলছে অতীতে জনগণ দাবী আদায়ের জন্য নানা ভাবে সেখানে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। স্পেন ও গ্রীসে দির্ঘ সময় ধরে আন্দোলন সংগ্রামের কাজ হয়েছে। প্রচুর বিক্ষুভ হয়েছে। কিন্তু ফলাফল কি ? সেখানে জনগণ কি পেল ?

বিরুধীরা এখন যেখানে আছেন তা কি বুর্জোয়া অবস্থার নামান্তর নয়? তাঁরা কি তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন না ? স্পেন এখন এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে কোন প্রকারের প্রতিবাদ বা বিরোধিতা করা আইনত নিষিদ্ব। সেখানে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা চালু আছে বলেই কোন প্রকার প্রতিবাদ করতে চাইলেই তা অবদমনের জন্য এঁরা উঠে পড়ে লেগে যায়। প্রথম বিশ্বে প্রতিবাদের ব্যবস্থা খুবই ক্ষীণ, জনগণের দাবী আদায়ের জন্য প্রতিবাদ করার কি সত্যিকার ভাবে কোন প্রকার সুযোগ রাখা হয়েছে ? এটা তো বাস্তবতা হলো যে, সাধারন ভাবে কোন প্রতিবাদ জনালেও তাতে  কারো টনক নড়ে না । সেখানে প্রতিবাদ মানেই হোল কেবল কোন বিষয়ে ধারনা প্রদান করা ।  যে সকল বিষয়ে পরিস্থিতি মারাত্মক সেই সকল বিষয়ে প্রতিবাদ করতে দেয়া হয় না, বা সেই সকল বিষয়ে বিরুধিতাকে সহ্যই করা হয় না । এমন কি সেখানে সেই সকল বিষয়ে প্রতিবাদের অনুমতি চাইলেও কি অনুমাতি দেয়া হয় ? যদি আপনি প্রতিবাদ করতে আগ্রহী না হন, তবে সংক্ষুব্দ হলেও আপনি কি প্রতিবাদ করবেন?  প্রথম বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের মাঝে প্রতিবাদের চেতানাই লোপ পেয়েছে। তাঁরা এখন আর তাদের অধিকার নিয়ে তেমন ভাবেন না ।

প্রথম বিশ্বের মানুষ এখন নানা কারনে ‘বিরক্তকর’  ভাব নিয়ে দিনাতিপাত করেন, তাঁরা মানুষের সমস্যা নিয়ে ভাবতে ও চায় না । তাঁরা সকল কিছুতে এক রকমের নিরাপত্তায়, নিরাপদে আছেন বলে মনে করেন। কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত হবার কোন কারন তাঁরা দেখেন না । তাঁরা কোন প্রকার সামাজিক পরিবর্তনের ও প্রত্যাশা করেন না । পুঁজিবাদ তাদের এই ধরনের মনন ঘটনে ইন্দন যোগিয়েছে। স্ব নিয়ন্ত্রিত বেচা কেনার কারনে মানুষের সাথে মানুষের কথা বলার ও দরকার হয় না । ফলে সাধারন মজুর শ্রেনীর মানুষের সাথে ও কথা বলার সুযোগ বন্দ্ব করে দেয়া হয়েছে। এমন কি ড্রোন বিমান হামলার কারনে বিমান হামলায় কি ধরনের মানুষের উপর আক্রমন হচ্ছে, কারা মরছে তা বিবেচনার ও সুযোগ থাকছেনা । স্পেনের জনগণের অবস্থা এখন এমন যে তাঁরা ঘরের বাইরে গিয়ে যে কোন প্রকার প্রতিবাদ করবে সেই মানসিকতা ও তাদের নেই। ব্যবসা কার্যকে অধিকতর দক্ষভাবে সম্পাদন করার জন্য মানুষের পারস্পরিক মানসিক আদান প্রদানকে স্তব্দ করে দিচ্ছেঃ আবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্বে প্রতিবাদের ভাষা ও হাড়িয়ে ফেলছে মানুষ। তবে , আরো হয়ত বহু কারন এর জন্য দায়ী কিন্তু যা ঘটার তাই তো ঘটছে।

তা কিভাবে আমাদেরকে আঘাত করতে পারে?  এই পরিস্থিতি রাজনীতি ও বিপ্লবের সম্ভাবনাকে বিনাশ করে দিতে পারে ? এর সুন্দর উত্তর খোজেছেন স্টিভেন পিংকার “ ভাষা হলো মানুষের মনের দরজা”।

“ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার প্রকাশ ঘটে লিখা ও কথার মাধ্যমে, তবে কথা বলে যত সহজে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় তা অন্য ভাবে না ও হতে পারে। অন্য একজনকে কি কথা বলা ছাড়া যথার্থভাবে মনের ভাষা বুঝানো যায় ? আমরা মনে করি “সম্মিলিত জ্ঞান” ও “ব্যাক্তিগত জ্ঞানের” মাঝে বেশ অসংগতি বিদ্যমান থাকে। ধরা যাক ব্যাক্তিগত জ্ঞানে  অ জানে ক এবং আ জানে খ। কিন্তু সম্মিলিত জ্ঞানে অ  জানে খ,  আ জানে ক। অ জানে যে আ খ সম্পর্কে জানে, আবার আ জানে যে অ ক সম্পর্কে জানে।  পরস্পরের মধ্যে যে ধারনা আছে তার মধ্যে নানা প্রকার বৈসাদৃশ্য থাকতে পারে। তাদের অবস্থান গত পরিস্থিতি ও ভিন্ন মাত্রায় থাকতে পারে”।

“ আমরা এই ক্ষেত্রে বলতে পারি, সমাবেশ করার স্বাধীনতাকে কেন সংকুচিত করা হয়েছে, গণতন্ত্রের জন্য বা বিপ্লবের জন্য যখনই মানুষ সম্মিলিত হয় তখনই তাদের উপর ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে আক্রমন করা হয়ে থাকে। উচু পর্যায়ের লোকেরা এটা সহ্যই করতে পারেন না । কিন্তু এটা তো সত্যি যে একনায়ক শাসক চক্রের লজ্জা থাকা উচিৎ। কেননা মানুষ এঁদেরকে ঘৃনা করে। তবে সামাজিক ভাবে মানুষের মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ ভালো না থাকার কারনে একে অন্যের মনোভাব বিনিময় করতে পারেন না” ।

“ যখন কোথাও কোন মানুষ একটি মহা সমাবেশের আয়োজন করে তখন তাঁরা একে অন্যকে জানতে ও জানাতে পারেন। তাঁরা বুঝতে পারেন যে সকলেই একনায়ককে ঘৃনা করে থাকেন। তখন সেখানেই একটি সম্মিলিত শক্তির উত্থান ঘটে এবং  একনায়ক সরে না গেলে থাকে লাথি মেরে সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে পারে সেই জন সমাবেশ”।

এই পরিস্থিতিই এখন প্রথম বিশ্বে বিরাজমান। জনগণ যেন ন্যায় বিচারের জন্য একত্রিত হতে না পারে, প্রতিবাদ করতে না পারে বা পরিবর্তনের জন্য বিপ্লবী পদক্ষেপ নিতে না পারে তার জন্য সেখানে জন সমাবেশকে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। সঙ্কুচিত হয়ে গেছে মানুষের মিলন মেলার সুযোগ। তাঁরা সেখানে কোন প্রকার লড়াই সংগ্রামের সুযোগই দিতে চাইছে না । কেহ কিছু করতে চাইলেই তাদের নামের সাথে বিভিন্ন লেভেল এটে দিয়ে কঠোর হস্তে দমন করে ফেলে। ক্ষমতাশীন চক্র তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমূহে অবাধে লুন্ঠন চালানোর জন্য সকল ব্যবস্থাই পাকা করে রেখেছে।  শাসক চক্র এখন প্রথম বিশ্বের মানুষকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য এবং সাম্রজ্যবাদের সহযোগীতা পাওয়ার জন্য তাঁরা তাদের জনগণের জন্য যন্ত্রপাতি, টাকা পয়সা ও অন্যান্য বিলাশী দ্রব্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কেননা এঁরা চায় তাদের নিরব সমর্থক। যদি কোন কারনে তাঁরা সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেন বা লড়াই সংগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে চায় তখনই তাদেরকে সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়া এখন অনেক দেশেই অনুসরন করছে। মধ্য প্রাচ্য ও এশিয়ার উন্নত দেশ সমূহে তা ব্যাপক ভাবে চর্চিত হচ্ছে। বিপ্লবের জন্য যেন কোন প্রকারের বস্তুগত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় তার ব্যবস্থা শাসক চক্র করে রেখেছে।  এই পরিস্থিতির বদল না হলে মানব সভ্যতা এগোতে পারবে না । তাই এর অবসান সকলেরই কাম্য।

সকল ক্ষমতা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কাছে, বিশ্ব গন সংগ্রাম হোক!

Leave a Reply