ক্ষমতাবান চক্র আমাদের শিশুদেরকে নিপিড়ন ও হত্যা করছে…

ChildLabour-34

ক্ষমতাবান চক্র আমাদের শিশুদেরকে নিপিড়ন ও হত্যা করছে…

(llbangla.org)

মাত্র ১৩ বছরের শিশু রাজনকে প্রথমে কুটির সাথে বেঁধে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে দেশের উত্তর পূর্ব কোনের প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট শহরে, এর পর খুলনায় হত্যা করা হয় রাকিবকে। রাকিবের পায়ুপথে পাম্প মেশিসেন সাহায্যে বাতাস প্রবেশ করিয়ে নজির বিহীন নির্মমতা দেখিয়ে তাকে হত্যা করে এক পাষণ্ড। এছাড়াও দেশের নানা স্থান থেকে শিশু হত্যার ও নিপিড়নের খবর আসছে প্রতিদিন। এই সকল নির্মমতা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অনুসন্দ্বানী প্রতবেদন অনুসারে এই বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ৯১ জন শিশুকে মারা হয়েছে। ২০১৪ সালে ৩৫০ জন, ২০১৪ সালে ২১৮ জন, ২০১২ সালে ২০৯ জন শিশু নানা ভাবে নির্মমতার শিকার হয়ে মৃত্যু বরন করেছে। এই নির্মমতা কমার কোন লক্ষণ নেই তা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ৯৬৮ জন শিশু খুন হয়েছে। অধিকন্তু, নারী-শিশুরা যৌন নিপিড়ন, খুন, মানব পাচার ও ধর্ষনের শিকার হচ্ছে। এখন আমাদের নিজেদেরকেই প্রশ্ন করতে হচ্ছেঃ এই নির্মমতার পিছনে আসল কারন কি ?

মহান কার্ল মার্কস বহু আগেই বলে গেছেন, আধুনিক পুঁজিবাদ আমাদের সামাজিক বন্দ্বন ও ঐতিহ্যকে বিনাশ করে দিচ্ছে, “শ্রমজীবী মানুষের পরিবার গুলোতে ভাঙ্গনের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের শিশুরা সাধারন পন্য দ্রব্যের মত খেল বস্তুতে পরিণত হয়েছে। মুনাফা অর্জনের মাধ্যম হিসাবে গন্য হচ্ছে”। সামাজিক ঐতিহ্য ভেঙ্গে পড়েছে মানুষ এখন আর আগের কোন মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিচ্ছে না । মানুষ, পরিবার ও সমাজ মুনাফা অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। পুঁজিবাদের আওতায় সকল কিছুর লক্ষ্যই হয় মুনাফা অর্জন করা – বা বানিজ্য করা। পুঁজিবাদ তাঁর মুনাফা অর্জনের অভিযানে আমাদের সকল কিছুকেই এমন কি মানবতাকে ও কোরবানী দিয়ে দিচ্ছে। আমরা এখন আর একে অন্যকে সম্মান করতে চাই না । একে অন্যের প্রতি কোন প্রকারের দায়িত্ববোধ করিনা । একে অন্যের জন্য ত্যাগ করা, ভালো কাজের প্রতি অনুগত্য প্রদর্শন করা বা বিপদে আপদে ঝুকি নিয়ে অন্যের পাশে থাকার কথা আমরা ভূলে যাচ্ছি। পুঁজিবাদ মানুষের সমাজকে অনুভূতিহীন করে দেয়। আইন হীনতা, অন্যায়, অবিচার, ফ্যাসাদ সৃষ্টি পুঁজিবাদের একটি বড় কর্ম ও ধর্ম। আমাদের সমাজের দিকে প্রথম বিশ্বের মোড়লদের নজর পড়েছে। তারা চাইছে যদি তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশ গুলো ও সেখানকার শ্রমজীবী মানুষকে দূর্বল করে রাখতে। আমাদের মাঝে নানা ভাবে বিভক্তি সৃষ্টি করে রাখতে পারলে তাঁরা আমাদেরকে সহজেই শোষণ করতে পারবে। সাম্রাজ্যবাদী দেশ গুলো আমাদেরকে বিভক্ত করতে চায় আর তাদের শোষণ অব্যাহত রাখতে চায়।

আমরা যদি আমাদের দাসত্বের শৃখল ভাঙ্গতে চাই, সকল প্রকার পাগলামী থেকে মুক্তি চাই, তা হলে আমাদেরকে অবশ্যই শ্রেনী চেতনা ও মানবিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে জীবন কেবল পাওয়ার জন্য নয়। কেবল আরো চাই, আরো চাই করার জন্য নয়। আমাদের মধ্যে যারা শ্রমজীবী, সাধারন মানুষ, দরিদ্র কৃষক,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিন মজুর, প্রগতীশীল বুদ্বিজীবী, যুবক ও প্রবীন সকলকেই একটি বিষয়ে ভাবতে হবে যে বিশ্বপুজিবাদের দ্বারা কারা সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। এটা ও ভাবতে হবে আমরা বিভক্ত হলে আমাদের শত্রু শ্রেনী উপকৃত হচ্ছে। তাই আমাদেরকে একতা গড়ে তুলতেই হবে। আমাদের মাঝে মত পার্থক্য থাকলেও বৃহত্তর স্বার্থে শত্রুর বিরুদ্বে রুখে দাঁড়াতে হবেঃ প্রথম বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী চক্র, তাদের স্থানীয় চেলা চামুন্ডা, বড় পুঁজির মালিক, সামন্তপ্রভূ, দুর্নীতিবাজ চক্র, ও স্বৈরাচার আমাদের প্রধান শত্রু। আমাদেরকে বাস্তবতা বুঝতে হবে। আমরাই সকল সম্পদের উৎস । আমরাই সকল ক্ষমতার উৎস। আমরাই কেবল আলোকিত সাম্যবাদের পথ ধরে ঐক্যব্দ হয়ে দাঁড়াতে পারলে দুনিয়ার সকল অমানিশার যবনিকা ঘটাতে পারি। পুঁজিবাদ আমাদের অতি মূল্যবান সামাজিক বন্দ্বনকে বিনাশ করে ফেলেছে তা আমাদেরকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে। সামাজিক পুনর্গঠনে আলোকিত সাম্যবাদকে ব্যবহার করতে হবে। আসুন আমরা প্রচলিত ব্যবস্থাকে ‘না’ বলি। যা আমাদের পরিবার ও শিশুদেরকে চরম এক বর্বরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমারা অবশ্যই সাম্যের সুন্দর পৃথীবীকে স্বাগত জানাই।

Leave a Reply