পৃথিবীর জন্য এক ঘন্টা, ভূয়া পরিবেশবাদিদের এক নতুন নাটক

earth-hour-parody-212x300

(llbangla.org)

মার্চ ২৮, ২০১৪, প্রথম বিশ্বের মানুষ সকল প্রকার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও আলো এক ঘন্টার জন্য “অনাবশ্যক” ভাবে বন্দ্ব করে দিয়ে ছিলো। পৃথিবীর জন্য এক ঘণ্টা এই অনুস্টানটির আয়োজন ছিলেন বিশ্ব প্রানী রক্ষক তহবীলের লোকেরা। তাদের এই কাজের ভেতর দিয়ে ওনাদের বিশ্ব সমাজ বিশ্লেষণের চিত্রটি ও ফোটে উঠলো। তাদের এই অদ্ভোত কর্ম দেখে আমরা বুঝতে পারলাম তারা দুনিয়ার ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কি কাজটাই না করছেনঃ এক ঘন্টার জন্য বাতি নিবিয়ে ফেলা বিরাট কর্ম। এই ৬০ মিনিট সময় ধরে ওনারা এক মহান কর্মে অংশ গ্রহন করেছেন। তারা অন্ধকারে থেকেছেন। কোথাও কোথাও গারীর লাইট পর্যন্ত অফ করে দাড়িয়ে থেকেছেন। এবং ঠিক এক ঘন্টা পর আবার লাইট জ্বালানো হলো। আলো চলে আসল। প্রথম বিশ্বে লোকেরা নিজে আক আনন্দ অনুভব করলেন। তারা একে অন্যকে ধন্যবাদ দিলেন। আর হাসা হাসি করলেন । বাহ !

এই এক ঘন্টা পরিবেশ উন্নয়নে খুব কমই ভূমিকা রাখবে; এর তেমন গুরুত্ব ও নেই। আমাদেরকে অবশ্যই পরিবেশ বিষয়ক সমস্যা সমূহ ভালো করে বুঝতে হবে। এই সমস্যা গুলো আসলো কোথা থেকে, এবং সত্যিকার সমাধানই বা আসবে কাদের নিকট থেকে। আসল সমস্যা হলো আমাদের প্রিয় পৃথিবীটা ই মরতে চলেছে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদিরে একে মেরে ফেলছে। দুষ্ট প্রথম বিশ্বই এই হত্যা যজ্ঞের জন্য দায়ী। অন্তর্জাতিক সাম্রাজবাদি ব্যবসা সংস্থা গুলো এবং প্রথম বিশ্বের ভোগবাদ আমাদের পৃথিবীকে হত্যার জন্য দায়ী। এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে, একক ভাবে প্রথম বিশ্ব সকলের চেয়ে বেশী জ্বালানি খরচ করে। যা তাদের হিস্যায় খরচ করার কথা তার চেয়ে অনেক অনেক বেশী তারা খরচ করে প্রতিদিন। দুনিয়ার যত বর্জ্য আছে তার সিংহ ভাগ প্রথম বিশ্ব সৃষ্টি করে থাকে। প্রথম বিশ্ব বেশী ভোগ করে আর বেশী বর্জ্য ত্যাগ করে, যার খেশারত দিতে হয় তৃতীয় বিশ্বকে। এর মূল্য দিতে হয় তৃতীয় বিশ্বকেই। এটা তো হলো সমূদ্রে ভেসে থাকা একটি বরফ খন্ডের মতই। প্রথম বিশ্বে বহু জায়গা আছে যেখানে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি, তারা তো সারাক্ষনই বিদ্যুৎ বিহিন থাকেন। এই দৃশ্য দেখে কোন কোন প্রতিস্টান নানা ভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেনঃ

“ অংশ গ্রহন কারীরা একটি উপভোগ্য চমৎকার আধারী ৬০ মিনিট কাটিয়েছেন, একটি শিল্প ভিত্তিক সভ্যতায় জ্ঞান ও জীবনের নিরাপত্তায় আলো বিহীন কেমন হবে… ভেবে দেখুন এক আলো বিহীন এক ঘন্টার কথা। তা হলে এক মাস নয় কেন… তা হলে চেষ্টা করে দেখুন, গৃহ গরম করা, বিদ্যুৎ, রিফ্রেজারেটর; বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা জেনারেটর; ইত্যাদি ছাড়া একটি মাস অন্ধকারে থেকে কেমন লাগে। শ্রম বাঁচিয়ে, সময় বাঁচিয়ে এবং সামগ্রীক ভাবে জীবন বাঁচিয়ে রাখার উপকরন তৈরী না করে একটি শিল্প ভিত্তিক সমাজ চালানো যায় কি না চেস্টা করে দেখতে পারেন”।

এখনো বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জায়গা বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় আছে। তৃতীয় বিশ্বের বেশীর ভাব এলাকায় এখন ও মানুষ জীবন মরনের লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকেন।

পৃথিবীর জন্য এক ঘণ্টা একটি ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই নয়, ইহা প্রথম বিশ্বের মানুষের মাঝে তাদের সিমাহীন ভোগ ও বর্জ্য তৈরী করার জন্য কোন প্রকার অপরাধ বোধ জন্মাতে পারবে বলে আমাদের মনে হয় না । ইহার প্রভাব পৃথিবীর পরিবেশ উন্নয়নে কোন প্রকার ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয় না । দিনের শেষে আবার যখন আলো এলো প্রথম বিশ্ব আবার পৃথীবীকে আবার জবাই করতে শুরু করলো। তৃতীয় বিশ্বের মানুষের রক্ত ঘাম চুসে নিতে শুরু করলো, তৃতীয় বিশ্বে দেশে দেশে মানুষের জীবনে বিভিষিকা সৃজন করতে আরম্ভ করে দিলো। মুখে মুখে মানবতাবাদ ও দারিদ্র মোচনের বুলি আওড়াতে লাগলো। পৃথিবীর জন্য এক ঘণ্টা পরিবেশ উন্নউন সংক্রান্ত তহবীলে সাহায্য উত্থলনেও কোন সহায়তা করবে বলে মনে হয় না । ইহা কে আমরা কেবল বলতে পারি সংশোধনের একটি “খন্ডিত সুংশোধন” মাত্র। এমন কি এটা সংস্কারে ও কোন ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে না । এটা সমাধানের চেয়ে বরং অপ্রাধবোধকে কমিয়ে দিতে ভূমিকা আলন করতে পারে। পৃথিবীর জন্য এক ঘণ্টা অনুস্টানটি প্রথম বিশ্বের মানুষের মাঝে আমি-কেন্দ্রীক মানসিকথা সৃজনে ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা কোন সমস্যার সমাধানের চেয়ে নিজেদের ভাব মূর্তি সুরক্ষায় বেশী মনোযোগী। প্রথম বিশ্বের কিছু লোক আছে যারা ভাবে আমাদের সব কিছুই “ছেরে দেয়া দরকার” যাতে আমাদের অপরাদের কিছুটা লাগব হয়। বাস্তবতা হলো, অপরাধ বোধ তাদের “ সকল কিছু বাদ দিতে” তাড়িত করছ, এর একটি হলো পৃথিবীর জন্য একটি ঘন্টা। তারা বর্তমান বিশ্বের ব্যবস্থাগত দিক নিয়ে ভাবতেই পারেন না । এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ছাড়া কোন প্রকার মুক্তিই আসবে না । আর এর প্রকৃত মুক্তির পথ রচিত হতে পারে আলোকিত সাম্যবাদের পথে।

প্রথম বিশ্বে মানুষ এখন খুবই ব্যস্ত আছেন ফেইসবুক নিয়ে, ব্যস্ত আছেন কেনা কাটা নিয়ে, ব্যস্ত আছেন শপিং মল নিয়ে, অনেক ব্যস্ত এখন তারা নানা দেশে ভ্রমন করা নিয়ে আর অন্যদের ভূমি লোন্ঠন করা নিয়ে। তারা কন ভাবে আর বিপ্লবী হতে চায় না । বিপ্লব করতে চায় না । মানব সমাজের সদস্য হিসাবে কোন দায়িত্ব নিতে চায় না তারাতারা দুনিয়াকে নিরাপদ করতে কোন কাজ ও করতে উতসাহী নয়। তারা বরং এটাকে বিনাশ করতেই বেশী ব্যস্ত। মার্ক্স পুঁজিবাদীদের নৈরাজ্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। পুঁজিবাদের আওতায় যে উৎপাদন হয় তা মানুষের চাহিদা মেটানোর বা স্থায়ীত্বের জন্য হয় না । পুঁজিবাদ মুনাফা দেখে, মানুষ দেখে না । প্রথম বিশ্ব ধনবান হয়েছে। আর তৃতীয় বিশ্ব এক বিনশী অবস্থার দিকে যাচ্ছে। পুজিবাদী জীবন ব্যবস্থা কন দিনই ঠেকসই হবে না । কেনন না পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়াটি মানুষের চাহিদা পুরন করা বা স্থায়িত্বের জন্য নয়। তৃতীয় বিশ্বের কাছে প্রথম বিশ্ব এখন বিশাল অংকের পরিবেশগত ভাবে ঋনী হয়ে পড়েছে। পক্ষান্তরে, সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় সাম্যবাদ উৎপাদন করে মানুষের কল্যানের জন্য । সত্যিকার চাহিদা মেটানোর জন্য। এই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় স্থায়িত্ব বজায় রাখা একটি প্রধান লক্ষ্য থাকে। মানুষের চাহিদা ও পৃথীবীর চাহিদার মাঝে একটি সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়। কেবল আলোকিত সাম্যবাদই বর্তমান দুনিয়ার সকল পাগলামীর অবসান ঘটাতে পারে। একে এম শিহাব

Leave a Reply