ভূমিকম্প প্রাকৃতিক, কিন্তু বিপর্যয় সৃষ্টি করে মানুষ !

eq

(llbangla.org)

এশিয়ার নানা দেশে নেপালকে কেন্দ্রকরে এক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারী ভাবে বলা হয়েছে এপর্যন্ত প্রায় ৫ হাজারের ও বেশী মানুষ মারা গেছে। ভূমিকম্প প্রবন হিমালয় কন্যা নেপালে বিগত ৮০ বছরের মধ্যে এমন আর কোন বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

কাঠমন্ডুতে নারী ,শিশু, প্রবীন ও অসুস্থ্য মানুষকে এখন ও খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। তারা তাদের সর্ব সম্পদ হারিয়েছেন। ভয়ংকর ভূমিকম্প তাদের বাড়ি, ঘর, গবাদি পশু ও আন্যান্য দ্রব্যাদি কেড়ে নিয়ে গেছে। তাঁরা এখন কি নিয়ে ঘরে ফিরবেন। এখন এটাই ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষের প্রধান ভাবনা ।

হিমালয় পর্বতে যারা বেড়াতে গিয়েছিলেন তাদেরকে উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার পাঠিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখন ও কিছু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। আর মৃত উদ্ধার করা হয়েছে ১৮ জন পর্বতারোহীকে।

এবং

নানা গনমাধ্যম বলছে, কাঠমন্ডু তাৎক্ষনিক ভাবে প্রায় দুই হাজার মানুষের জন্য ত্রান সামগ্রী প্রেরন করেছে। আরো মানুষের জন্য খাদ্য সামগ্রী সহ নানা উপকরন পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যারা বেঁচে আছেন এখন তাঁরা নানা সমস্যায় আক্রান্ত। ফলে কাঠমন্ডু সহ নানা স্থানে ত্রান বিতরন কারীদের সাথে ধীর গতিতে ত্রান বিতরনে কারনে স্থানীয় জনগণের সাথে ত্রান কর্মীদের সংঘাত বেঁধে যাচ্ছে।

কাঠমন্ডুর বাহিরের শহর বক্তপূরের একজন স্কুল শিক্ষক শ্যালিনা ব্যাজচ্যারিয়া জানালেন, সেখানকার রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারনে ত্রান সামগ্রী পৌঁছাতে পারছেনা। ফলে খাদ্য ও পানিয়ের তিব্র সঙ্কটে পড়েছেন সেখানে্র অধিবাসীরা।

তিনি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নেপালের সরকার কোথায়?’ ‘ তাঁরা কি কোথাও ঘুমাতে গেছেন? তাঁরা দেশের জনগণের জন্য তেমন কিছুই করছেন না’।

এই ভূমিকম্পটি কেবল নেপালে আঘাত করেনি, এটা এর প্রতিবেশী দেশ ভারত, বাংলাদেশ এবং মায়নমারে ও আঘাত হেনেছে। প্রশ্ন জাগে তৃতীয় বিশ্বে গরীব দেশ সমূহের উপর ভূমিকম্প কেন বার বার আঘাত হানে ? কেন ইহা এই সকল দেশ সমূহের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে, ঘর ছাড়া করে ও দূর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেয়? ভূমিকম্প বা বন্যা তো ইউরূপ বা উত্তর আমেরিকায় আঘাত হানে না ? এটা কি কোন নিয়তির খেলা যে অসম ভাবে গরীব দেশ সমূহের উপর বার বার আঘাত করবে ? তা কেন ধনী ও ক্ষমতা শালী দেশ সমূহের উপর নয় ? এটা কি কপালের ফের, নাকি ঘটনা চক্র।

প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাদের বুঝায় যে, দূর্যোগ প্রকৃতির স্বাভাবিক খেলা, এটা আমাদের পৃথিবীরই একটি অংশ। তাঁরা আমাদের সামনে বয়ান দেন যে এটাকে আটকানোর কোনই উপায় নেই, এর জন্য কেহ দায়ী ও নয়। কিন্তু গনহারে মানুষের মৃত্যু, দারিদ্রতা, ভিটা থেকে উচ্ছেদ হওয়া ও সীমাহীন কষ্ট নিশ্চয়ই প্রকৃতিক বিষয় নয়। ভূমিকম্প হয়ত প্রকৃতির খেলা কিন্তু মানবিক বিপর্যয় নয়। তৃতীয় বিশ্বে যে অবকাঠামো গড়ে তুলা হয়েছে তা প্রকারান্তরে ধনশালী ও ক্ষমতা ধর দেশ সমূহের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ধনীক দেশ সমূহ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবেই তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সেই সকল নকশা ও ডিজাইন তৈরী করেছে। যা গরীব দেশের মানুষ, তৃতীয় বিশ্বের জনগণ ভালোভাবে বুঝতেই সক্ষম নন। ধনীক দেশ সমূহ ও তাদের দালালদের মুনাফা বা স্বার্থই যেখানে মূখ্য বিষয় সেখানে তাঁরা তাদের স্বার্থে

ই মানুষকে পশ্চাৎপদ রাখতে চায়। তাঁরা দুনিয়ার গরীব মানুষের উপর দূর্ভোগ চাপিয়ে দিতে চায়। মানবিক বিপর্যয়ের বড় কারন হলো পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদের ত্রুটিপূর্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। প্রাকৃতিক দূর্যোগে এত মানুষ মারা যাবে তা মেনে নেয়া যায় না । উন্নত পরিকল্পনা, উন্নত প্রযুক্তি, এবং মান সম্পন্ন ও পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্ব করা হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। হাজার হাজার মানুষ অকালে মরে যাবে না। এখন সাম্রাজ্যবাদ মানুষ মারছে। কেবল মাত্র ভূমিকম্পের দোষ নেই।

ধনিক দেশ সমূহের অপকর্মের ও তাদের স্থানীয় দালালদেরকে বিতারন করুন। বেশীর ভাগ মানুষের কষ্টের মাত্রা বাড়ছে। এখন দুনিয়ায় সর্ব কালের বৃহৎ বস্তি অঞ্চল গড়ে উঠছে। দারিদ্রতা আমাদের পরিবারকে মেরে ফেলছে। দারিদ্রতা মানেই হলো মৃত্যু ও জীবনের মাঝ খানে দাঁড়িয়ে থাকা। আমাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই, অগ্রগতি নেই এবং কোন আশা ও নেই। এর প্রধান কারনই হলো প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এটাই আমাদের দূর্ভোগের কারন। পুঁজিবাদ আমাদেরকে দুনিয়ায় অতিরিক্ত মনে করে। তাঁরা বলে আমরা নাকি “বাড়তি” জনতা। পুঁজিবাদ কোন সুন্দর জীবনের সন্দ্বান দিতে পারে না । মৃত্যুর ও সুব্যবস্থা করতে অপারগ। এখন পৃথিবীর প্রধান দ্বন্দ্ব হলো বিশ্ব বুর্জয়া বনাম বিশ্ব সর্বহারা শ্রেনী। সাম্রাজ্যবাদ শক্তি বাড়াচ্ছে, বিশ্ব পুঁজিবাদ সামনে এগোচ্ছে, ওরা মানবজাতিকে পতনের বেলা ভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদেরকে পরিবর্তনের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে। আমাদের স্বাধিনতা আছে “না”! বলার। আমাদেরকে আলাদা পথ ধরতে হবে। তাদের ভবিষ্যৎ তাদের হাতে । তাদের রাস্তাই হলো কষ্ট, দূর্ভোগ ও মৃত্যু। আমাদের পথ ন্যায়ের পথ। আলোকিত সাম্যবাদের পথ। আমাদের পথ হলো স্বাধীনতার, প্রগতির, নিরাপত্তার, আনন্দের ও সুন্দর জীবনে পথ। আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরকেই নির্মান করতে হবে।

Leave a Reply