মাওবাদিদের মধ্যে যারা পল পট এবং খেমারুজদের সমর্থক তাদের প্রতি আমাদের বক্তব্য

MTIwNjA4NjMzOTQzOTgzNjI4

(llbangla.org)

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদি) যারা গনতন্ত্র, প্রগতিশীলতা জন্য, এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরদ্বে নিজ দেশের প্রশাসকদেরকে  পরাজিত করার জন্য  লড়াই করছেন। তারা দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জন সঙ্খ্যা অধ্যুষিত দেশটির মানুষের দারিদ্রতা দূরী করনের জন্য ও সংগ্রাম করছে। তাদের আন্দোলন ও সংগ্রাম আমাদের জন্য সমর্থন দাবি রাখে। কিন্তু সেই সংগঠন আজো মতান্দ্বতার উর্দ্বে উঠতে পারেনি। তাদের মতান্দ্বতার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য দিকটি হলো খেমারুজদের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থন। তারা এখন ও মার্কসবাদ বনাম সংশোধন দুই লাইন অনুসরন করছেন। ভারতীয় কমিউনিস্ট মাওবাদিদের মতে কম্পোচিয়ায় এখনো মাওবাদি ধারা ক্ষমতাসীন আছেন। ২০০২ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদিরা তাদের ক্যাডারদের জন্য যে দলিল প্রকাশ করে তাতে তারা বলেনঃ

“ ১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পর, পুঁজিবাদ ধারার দেং জিয়াও পিং একটি কু এর মাধ্যমে চীনের ক্ষমতায় অয়ারোহন করে একটি সংশোধনবাদের ধারা চীনে চালু করে, আর তাদের পুতুল নেতা হয় তথা কতিত কেন্দ্রীয়বাদি হো কো পেং। মাওয়ের শিক্ষা অনুসারে রাজনীতি পরিচালনা না করে সংশোধনবাদী পন্থার অনুসরন করা হয়। সমাজতান্ত্রিক ভিত্তি প্রলেতারিয়েতের বিপক্ষে চলে যায়। সেই সময় টাতে আলবেনীয়ার পার্টি অব লেবার একটি সুবিধাবাদি চরিত্র ধারন করে মাওসেতুং এর বিরুধে বলতে থাকে যে তিনি নাকি একটি পেটি বুর্জোয়া বিপ্লব সাধন করেছেন। যদি ও কম্পোচিয়াতে খেমারুজ পার্টি এখন ও ক্ষমতায় যেখানে তারা ভেতরের ও বাহিরের শত্রুদের সাথে লড়াই করে ঠিকে আছে এর পরও তারা সোভিয়েত বল্কের ভিয়েতনামীদের সাথে প্রতিযগীতায় উন্নয়নে এগিয়ে আছে”।(১)

ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদি) দের মতে খেমারুজ পার্টি এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ঠিকে আছেঃ

“ ৭০ ‘র দশকের মধ্য ভাগে বহু উপনিবেশিক দেশে গন যুদ্বের ভেতরদিয়ে সমাজতন্ত্র ক্ষমতায় আসে। বহু মার্কিনী পুতুল সরকার ১৯৭৫ সালের দিকে ক্ষমতাচ্যুত হয়। ভিয়েতনাম, কম্পোচিয়া এবং লাউস অন্যতম। আফ্রিকায় মুজাম্বিক, এঙ্গোলা, ইথিউপিয়া, কঙ্গো এবং বেনিনে ও সেই সময়ে বিপ্লব হয়। এই সকল দেশে প্রধানত স্ট্যালিনিস্ট পুতুল সরকার কায়েম হয়। তবে কম্পোচিয়ায় সত্যিকার বিপ্লবী সরকার কয়েম হয়-খেমারুজ-স্বাধীন ভাবে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সৌভিয়েত সাম্রাজ্যের বাইরে থেকে এগিয়ে যাবার সময় তাদের দালাল ভিয়েতনাম দ্বারা আক্রান্ত হয়”।(২)

২০০৬ সালের ২৬ শে ডিসেম্ভর মাওয়ের জন্ম বার্ষিকীর সময় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদি) তাদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেনঃ

“ কম্পোচিয়ার মত বহু কমিউনিস্ট আন্দোলোন নির্মম ভাবে বিনাশ হয়ে গেছেআমরা যদি ১৫০ বছরের ইতিহাস থেকে কয়েকটি  সত্যিকার কমিউনিস্ট আন্দোলনের বাচাই করতে চাই তবে কেবল হাতে গুনা কয়েকটিই পাব”।(৩)

ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদি) এবং তার সহযোগীরা কেবল খেমারুজদের প্রশংসাই করছেন না তারা পল পটের পক্ষে তার আদর্শ প্রচারে ফেরিওয়ালার ভূমিকায় অবতির্ন হয়েছে। তারা পল পট কে একজন মহান নেতা হিসাবে বিশ্ব দরবারে জাহির করবার একটি মিশনে অবতির্ন হয়েছেন। তাদের ভাষ্যঃ

“ গন লড়াই সংগ্রামের জন্য পল পটের আদর্শ অনুসরন করার মাধ্যমে আমাদের মাওবাদি(ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি এবং ইহার সমপর্যায়ের দল গুলো) বিশ্ব জোড়ে একটি শক্তি শালী আন্দোলন হিসাবে প্রকাশিত হতে পারে”।(৪)

সিপিআই (মাওবাদি)গন খেমারুজদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশকরে থাকে কেবল তাই নয়, গঞ্জালো পন্থীরা ও খেমাররুজদের প্রতি মারাত্মক ভাবে আকৃষ্ট। উদাহরন হিসাবে তাদের প্রকাশিত দলিল পত্র ও ব্লগ গুলো দেখা যেতে পারেঃ

“ খেমারুজ বিপ্লবের অভিজ্ঞতা সত্যি একটি অভাবনীয় ব্যাপার। এতে প্রমানিত হয় যে অনেক তরুন ও বিপ্লবে অনভিজ্ঞ ব্যাক্তিরা ও বিপ্লব সাধন করতে পারেন। ছোট ছোট নেতা ও বড় বড় কাজ করতে পারেন। ছিনিয়ে আনতে পারেন বিপ্লবের লাল সূর্য্য”।(৫)

পানামার গঞ্জালো পন্থী কমিউনিস্ট পন্থীরা একটি ভিডিও প্রাকাশ করেছে, ইহার শিরোনাম হলো “কম্পোছিয়াঃ আমাদের পরম ভালোভাসার কমরেড পল পট, যাকে আমরা সকলেই এখন ভালোবাসি”!(৬) ব্রাজিলিয়ান গঞ্জালো পন্থীরা ও পল পটের নামে গুল কির্তনে মত্তঃ

“ আজ আমরা কোম্বোডিয়ার কমিউনিস্ট  মহান নেতা পল পটের  ৮৭তম জন্ম দিন পালন করছি”। (১৯২৫-১৯৯৮(৭)

সিপিআই (মাওবাদি) ও গঞ্জালো পন্থীদের এই ধরনের বহু বক্তব্য আছে যা ব্যাপক ভাবে সাম্রাজ্যবাদিরা প্রাচার ও প্রকাশ করেছে। এরা ওদের বক্তব্যের সূত্র ধরে খেমারুজদেরকে “কমিউনিস্ট” ও “মাওবাদি” হিসাবে পরিচিত করিয়ে দিয়েছে দুনিয়াময়। উদাহরন হিসাবে দেখা যায় প্রতিক্রিয়াশীল গন মাধ্যম লাতিন আমেরিকার কমিউনিস্ট পার্টি গুলোকে “খেমারুজ হিসাবে দেখানোর প্রায়স পেয়েছে”।

এই প্রসংগে আরো অনেক কথা বলাতেই হবেঃ

১. কম্পোচিয়ায় মানুষের বিরুদ্বে সন্ত্রাসের জন্য দায়ী মূলত সাম্রাজ্যবাদ, খেমারুজরা  নয়। ইন্দোচীনের উপর ভিয়েত নাম যুদ্বের সময় এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের কালে অসংখ্য মানব বিনাশী বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। সাম্রাজ্যবাদিরা ভিয়েতনাম ও লাউসে এক ভয়ানক গনহত্যা নেমেছিলো। তারা সেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করে । ১৯৭৫ সালের মধ্যেই ধারনা করা হয় কম্পোচিয়ার ১০% বা ৬০০,০০০ – লোককে হত্যা করা হয়েছিলো।(৮) ১৯৭৫ সালে যখন খেমারুজ ক্ষমতায় আসে তখন সেই দেশটি প্রায় ধবংসের দ্বারপ্রান্তে।গ্রাম এলাকায় নির্বিচার বোমা নিক্ষেপের ফলে শহর গুলো উদ্বাস্তের দ্বারা উপচে পড়ছিলো। খাদ্য উৎপাদন একেবারে বন্দ্ব হয়ে গিয়েছিলো। খেমারুজরা এমন একটি দেশ হাতে পেল যেখানে খাদ্য, বস্ত্র আর মানুষের থাকার জায়গা প্রায় বিনাশ হয়েগেছে। আবার এর উপর সাম্রাজ্যবাদিদের আবার নানা রকমের হুমকী। আমাদের একেবারে ভূলে গেলে চলবে না যে সাম্রাজ্যবাদিরাই প্রধানত কম্পোচিয়ার মানুষের কষ্টের জন্য দায়ী । খেমারুজরা নয়।

২. খেমারুজরা ও সুবিধাবাদি আন্দোলন করছিলেন। তারা নিজেদেরকে “মাওবাদি” বলে দাবী করছিলেন। তাদের “মাওবাদি” বলে দাবী করের পিছনে ও কারন ছিলো চীনের মাও পরবর্তী কালে সংশোধন পন্থীদের নিকট থেকে অধিক মাত্রায় সাহায্য আদায় করা । সত্যি কথা হলো খেমারুজরা তাদের দলিলে মাওবাদি দাবী করেন নাই এমনকি তারা নিজেদের দেশে ও এই কথা বলেন নাই। খেমারুজরা “গ্যাং অব ফোর”, এর পক্ষে নিয়ে কোন কথা বলেন নাই। আসলে ওরা ছিলো প্রতিবিপ্লবী। খেমারুজরা সংশোধনবাদি নেতৃত্ব হো জেন পিং এবং দেং জিয়াও পিং এরসকল উদ্যোগকে সমর্থন জানায়। (৯)

৩. যদি ও খেমারুজরা নিজেদেরকে স্বাধীন বলে রাজনৈতিক সূর তোলে কিন্তু তারা যেখানেই সাহাজ্য পায় সেখানের প্রতিই সমর্থন দিতে থাকে । এই সুযোগবাদিতা খেমারুজদেরকে চীণের প্রতি ঝুকিয়ে ফেলে। এরা সংশোধনবাদি ধারার চীণের পথে দাবিত করে দেয়। চীন তাদের প্রতি সমর্থন দান করে । আমরা দেখলাম তাদের সুযোগবাদি মানসিকতা আবার তাদেরকে পশ্চিমের সাম্রাজ্যবাদিদের প্রতি টেনে নিয়ে যায়। তাদেরকে সাহায্য দেয় মার্কিন সরকার যাদের উদ্দেশ্য ছিলো ভিয়েতনাম ও সোভিয়েত বিরুধী কর্মকান্ড জোরদার করা । তা চলে১৯৭৯। মার্কিনীদের উদ্দেশ্য ছিলো কম্পোচিয়াকে গণতান্ত্রিক পথে আনা এবং জাতিসংঘে তাদের পক্ষে কাজে লাগানো। তা চলে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে খেমারুজরা তাদের সমাজতান্ত্রের পথ বর্জন করে ১৯৭৯ সালে। পল পট তার মৃত্যুর আগে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বলেনঃ

“ আমি যখন মারা যাব, আমার এক মাত্র ইচ্ছা হলো কম্বোডিয়া একটি কম্বোডিয়া হিসাবেই পশ্চিমাদের সাথে থাকবে। এখানে সমাজতন্ত্র থাকবে না, আমি এই বিষয়ে আরো জোর দিয়ে বলছি….কম্বোডিয়া অবশ্যই পশ্চিমাদের সাথে থাকবে, আমি যা বুঝাতে চাই তা হলো, যদি ইহা পশ্চিমাদের সাথে থাকে তবে তাতে কোন দিন কমপক্ষে ফ্যাসিবাদি শক্তির উত্থান হবে না”।(১০)

বাস্তবতা হল খেমারুজরা কোন দিনই সত্যিকার সাম্যবাদি দল ছিলো না । বরং ইহা ছিলো একটি জাতিয়তাবাদি দল। কেবল সাহায্য পাওয়ার জন্য ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এরা সাম্যবাদ শব্দটির ব্যবহার করে গেছে। যখনই চীন তার স্বীয় পথ ছেড়ে দিয়েছে সাথে সাথে এরা ও সাম্যবাদের পথ ত্যাগ করে ফেলেছে। এবং যথারীতি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদি চক্রের সাথে হাত মিলিছে। গালায় গলা মিলিয়ে সাম্যবাদের বদনাম করেছে । এরা আসলেই ছিলো বেইমান।

৪. খেমারুজরা চীনের সংশোধনবাদকে সমাজতান্ত্রিক সমাজবাদ মনে করে সেই পথে হাটতে থাকে। তারা ও চীনের মতো তারা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর অতিরিক্ত মাত্রায় জোর দিতে থাকে, সেই লক্ষ্যেই তারা জবরদস্তি মূলক ভাবে শৃংখলা, ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের কাজে হাত দিতে থাকে । যা একেবারেই প্রত্যাশিত ছিলো না । তারা সংশোধন পন্থার অনুসরণ করতে গিয়ে উৎপাদন শক্তির উপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করেন, শ্রেনী সংগ্রামের গুরুত্ব না দিয়ে প্রযুক্তির উপর মাত্রারিক্ত গুরুত্বারোপ করে বসে। ফলে তারা  কম্পোচিয়ায় একের পর এক বিপর্যয়ের সম্মোখিন হয়। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপই ব্যার্থ হয়ে যায়। সামাজিক প্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নতি মাঠে মারা যায়। তাদের ক্ষমতারোহনই ব্যাথতায় পর্যবাসিত হয়।

যদি ও তারা রাজনৈতিক বক্তব্যে বলতে থাকেন যে তারা চীনের উন্নয়ন মডেল গ্রহন করেছেন কিন্তু তারা তাদের নিজস্ব পন্থায়ই এগতে থাকে। তারা দাবী করতে থাকেন তারা চীনের “গ্রেট লিপ ফরোওয়ার্ড” অনুসরন করার পরিবর্তে তাদের নিজস্ব “ সুপার গ্রেট লপ ফরোয়ার্ড” অনুসরন করছেন। তারা আরো দাবী করতে থাকেন যে, খেমার বিপ্লব একটি অভাবনীয় বিষয় । তারা নিজেদেরকে মাওবাদি বিপ্লবী বলে দাবী করলে ও তারা জাতিয়তাবাদ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন নাই। বিপ্লবের পরিবর্তে উন্নয়নবাদকে অনুসরন করতে থাকে ।

৫. সাম্যবাদি আন্দোলন সর্বদাই অদর্শিক বিষয়ের উপর জোর দেয়। বিপ্লবী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে প্রধান্য দেয়। এই বিষয়টি মাওবাদের জয় আরো বেশী গুরুত্বপূর্ন বিষয়, এর প্রতিটি কাজই উদ্ভূত হয় আদর্শ থেকে। আদর্শিক শিক্ষা হলো শ্রেনী সংগ্রামের মূল বস্তু। তবে সকল আদর্শিক শিক্ষার সমান গুরুত্ব নেই। চীনের  মাওবাদিগন জনসংখ্যার বিষয়টি কে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করেন। সাধারন মানুষ কেবল বলছেন কোনটি সঠিক আর কোন টি বেঠিক। জনগনকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে । সেই দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে সেই প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে । লুই সুখী নিজে সাধারন মানুষের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন । নানা সংবাদ পত্রে নানা বিষয়ে লিখা প্রকাশ করে জনগণকে আলোচনায় অংশ নিতে বলা হয়েছে। নানা বিতর্কে অংশ নিতে উৎসাহিত করা হয়েছে । তবে চীনের অভিজ্ঞতা একেবারে যথার্থ ছিলোনা, ইহার মাধ্যমে সক্রেটিসের প্রশ্নকরার ধারাটি চালুর চেস্টা ছিলো, খোলা খোলী সমালোচনা, বিজ্ঞান ও কনফুসিয়ানিজমের অনুগত্য বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিলো। সেই প্রক্রিয়ার সাথে চীনে কমিউনিস্ট পার্টি ধৈর্য সহকারে জনগণের সাথে ছিলো। তারা আজ্ঞাবাদ এবং কনফুসিয়ানিজমের সমালচনা করেছিলেন। কোনটি বাদ দিয়ে কোনটি গ্রহন করবেন বা অনুসরন করবেন তা নির্ধারন জনগণকে সাহা্য্য করেছিলেন। জনগণকে পরিচালনার জন্য মাওবাদ মূলত এইরূপ পদ্বতীই অনুসরণ করার কথা । তাই তারা সংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় করেছিলেন। সাম্যবাদি নেতাগন অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে সাধারন মানুষের সাথে মিশবেন। কেবল মাত্র সহজ সরল ভাবে জনগণের সাথে মিশতে পারলেই মানুষের মাঝে ও সামাজিক ভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন করা সম্ভব। এই ধরনের ব্যভারিক পদ্বতী অনুসরন করে কৃষির যৌথ খামার গড়ে তুলা সহ নানা সাম্যবাদি কাজ সম্পাদন করা যেতে পারেঃ নয় গনতান্ত্রিকতা, যৌথকরন ও গনমানুষের সাম্যবাদি সংস্থা গড়ে উঠতে পারে। আর এই হলো সত্যিকার অর্থে মাওবাদের আদর্শ তথা “জনগণের সেবা”।

পক্ষান্তরে, খেমারুজগন মাওবাদের পন্থানুসারে ক্রমধারা অবলম্বনের পথ অনুসরন করেন নাই। বরং খেমারুজরা দ্রুত শহর খালি করা পদক্ষেপ নেয় । শহরের মানুষকে “নয়া লোক” হিসাবে অবিহিত করে তাদেরকে ও শ্রেনী শত্রুর স্তরে ঠেলে দেয়। তাদেরকে স্ব স্ব স্থান থেকে উচ্ছেদ করে গ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বন্দ্বুকের নলের সামনে মাঠে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তারা জনগণকে বলতে থাকেন, “ক্ষুধাই হলো দুনিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক রোগ”। (১১) খেমারুজরা তখনো সঙ্খ্যায় খুব বেশী নয়। খেমারুজরা জনগনের নিকট থেকে তাদের নেতৃত্বের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য প্রত্যাশা করে, অথচ তখন দরকার ছিলো সামাজিক পরবর্তন সাধান করা ।  খেমারুজদের কথা বার্তায় প্রকাশ পায় যে ওরা নিজেরা যদি ও দাবী করে যে ওরা কমিউনিস্ট কিন্তু জনগণ তা মনে করে নাই। খেমারুজরাও নিজেরা জানতেন যে তারা কমিউনিস্ট পার্টি নন। তারা আসলেই একটি “এয়াংকার” বা “সংগঠন”  তারা নিজেদেরকে অমর অক্ষয় ও অধিক ক্ষমতার অধিকারী ভাবতেন। তাদের শ্লোগান ছিলোঃ

“ এংক্যারকে সত্যি হিসাবে জ্ঞান করুন”।

“এংক্যারের [অনেক] চোখ আছে ইহা আনারসের মত”।

মাওয়ের সাথে খেমারুজদের কোন প্রকারের মিল ছিলো না । সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কালে তিনি “ব্যাপক বিতর্ক” আহবান করেছিলেন। তিনি প্রতিবাদ প্রতিরোধ আশা করতেন। পক্ষান্তরে, খেমারুজরা এই সকল অবস্থা চাইতেন না , তারা ছিলো এর বিপরীতঃ

“ কাউকে ভূলে গ্রেফতার করতে পারেন; তবে ভূলকরেও কাউকে মুক্তি দিবেন না”।

“ভূল করেও কাউকে হত্যা করতে পারেন তবে ভূল করে ও কোন শত্রুকে ছেড়ে দিবেন না”।

খেমারুজদের সন্ত্রাস মূলক কার্যক্রমের বহু প্রমান আছে, তাদের শ্লোগানেই তার প্রমান মিলবে।

“ যারাই প্রতিবাদ করবে তারাই আমাদের শ্ত্রু; যারা বিপক্ষে যাবে তারাই মৃত”।

“ যদি কেহ বেশী খাই খাই করবে, তাকেই  এংকর এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবে যেখানে খাদ্যেই অভাব নেই”।

“ যদি আপনি বাঁচতে চান তবে খুশি মনে বাঁচুন, নইলে এংকর আপনাকে একটুরা জমিতে নিয়ে যাবে”।

“ কিছু পাওয়ার মধ্যেই লাভ নেই, কিছু না পাওয়াতে ক্ষতি নেই,”( আরো বলা হলঃ “ নিজেকে মেরে ফেলাতে ও ক্ষতি নেই, বেচে থাকার মধ্যেই কোন লাভ নেই”-)(১২)

ভেবে দেখন খেমারুজ ও মাওবাদের সাথে কি রকমের তফাত বিদ্যমান। ১৯৫৬ সালের এপ্রিল মাসে মাও লিখলেন “দশটি প্রধান সম্পর্ক”  সৌভিয়েত ইউনিয়নের স্ট্যালিন আমলের কিছু নির্মম আচরন সম্পর্কে তিনি লিখলেনঃ

“ আমরা ইয়ামেনে যে নীতি গ্রহন করেছি তা বহাল রাখতে চাইঃ ‘কোন মৃত্যুদন্ড নয় এবং স্বল্প গ্রেফতার’। কিছু লোক আছেন যাদেরকে আমরা কোনভাবে মৃত্যুদন্ড দিতে পারিনা, তারা এমন কিছু করেন নাই যাতে এদেরকে মেরে ফেলতে হবে, তাদেরকে মেরেও কোন উপকার হবেনা, তাদের বেঁচে থাকার মধ্যেই কল্যান নিহিত আছে। মানুষকে না মারলে এমন কি ক্ষতি হয়ে যাবে? যারা কাজ করতে সক্ষম তাদেরকে কাজের ভেতর দিয়েই সংশোধন করা যেতে পারে, একটি পরিত্যাক্ত জিনিষকে ও দরকারী বস্তুতে পরিনত করা যেতে পারে।

একজন লোককে মেরে ফেললে আর একজন তৈরী করা সম্ভব নয়। যদি একজনের মাথা কেটে ফেল তবে সেই মাথা আর গজাবে না, ভূলেও যদি তা কর তবে তা আর সংশোধন করা যায় না । তুমি চাইলে ও তা আর পারবে না ।

যদি কোন সরকার তার কাজের নীতি হিসাবে প্রতিবিপ্লবের জন্য মৃত্যু দন্ডের বিধান না রাখে তবে তা আমাদেরকে প্রতিবিপ্লব প্রতিরোধে খুব  আন্তরিক মনে হবে না। অধিকন্তু, ইহা আমাদেরকে ভুল করা থেকে বিরত রাখবে, ইহা আমাদেরকে সঠিক পথে থাকতে সহায়তা করবে। ইহা জনগণকে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে।

যদি আমরা কাউকে মৃত্যুদন্ড না দেই তবে তাকে অবশ্যই খাবার দিতে হবে। এই আমরা সকল প্রতিবিপ্লবীকে তাদের পথ থেকে ফেরাতে পারি। আমরা ও বাধ্য হব ভালো কাজ করতে । যা আমাদেরকে দুনিয়ার সকল দেশে জনপ্রিয় করে তুলবে।

প্রতিবিপ্লব থামাতে হলে আমাদেরকে দির্ঘসময় ধরে কঠিন ভাবে কাজ করে যেতে হবে । কেউ বিরুধিতা না করলে আমরা যে উদাসীন ও অলস হয়ে পড়ব”।(১৩)

মাওসেতুংয়ের এই নির্দেশাবলী আমাদেরকে শিক্ষা দেয় মৃত্যুদন্ড সম্পর্কে চীন বিপ্লবের কেমন দৃষ্টি ভঙ্গী ছিলো “ যারা ঐক্য গড়তে চায় তাদেরকে ঐক্য হতে দাও” “ব্যাপক বিতর্কের সুযোগ” দাও। গন লাইন, জনপ্রিয়তা, ধৈর্য্য সকল ক্ষেত্রে কেবল নিজের লোকের সাথে নয়, শত্রুর সাথে ও মৈত্রী স্থাপন করা দরকার।

জনগণের সেবা করুন যথার্থ অর্থেই, কেবল লোক দেখানোর জন্য নয়

১৯৭০ সালে, মাওয়ের মৃত্যুর কালে বা এর পর ও চীনের গন মাধ্যমে খেমারুজদের সম্পর্কে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিলো। তবে অন্যান্য দেশের আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রেও একেই মনোভাব লক্ষ্য করার মত। উদাহরন হিসাবে পূর্ব ইউরূপের নানা দেশের স্বাধীকার আন্দোলন যে গুলোর গায়ে সমাজতান্ত্রিক লেভেল লাগানো ছিলো তাদের অনেকের বিষয়ে চীনের বক্তব্য স্পস্ট ছিলো না । চীনের মতে, তাদের অনেককেই সঠিক ধারার আন্দোলন সংগ্রাম বলে মনে হয়নি। যখন নিবিড় ভাবে খেমারুজদেরকে নিরীক্ষা করা হয় তখন তাদের গায়ে সাম্যবাদের লাগানো লেভেল বেমানান মনে হয়েছে। তারা সাম্যবাদি আন্দোলনকে জাতীয় মুক্তির আন্দোলন হিসাবে সামনে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করেন। সাম্যবাদি আন্দোলন হিসাবে কাজ করলেও মূলত এরা জাতীয় স্বাধীকার আন্দোলনকে  বাস্তবায়ন করেন। খেমারুজরা নিজেদেরকে সাম্রাজ্যবাদ বিরুধী হিসাবে অভিহিত করলে ও ভেতরে ভেতরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে দহরম মহরম বজায় রেখে আসছিলো। আসলে এরা সংশোধনবাদের ই প্রবক্তা। এরা সাম্যবাদের পক্ষের লোক নয়।

আজকের দিনে ও একটা বিষয় স্পস্ট করা দরকার যে ইতিহাসে জাতীয় স্বাধীকার আন্দোলন ও বিপ্লবী আন্দোলন শব্দ গুলোর মধ্যে কি কি পার্থক্য আছে। কেবল “বিপ্লবী” বা “সাম্যবাদি” দাবী করলেই তা যতেস্ট নয়। আমরা জানি যে ইতিহাসে “লাল পতাকা দিয়ে লালা পতাকা” প্রতিরোধ করার নজির কম নেই। বিপ্লবী চীন বার বার সতর্ক করেছিলেন এই বলে যে, “হুশিয়ার ! কখনো ডাকাতদলের জাহাজে চড়বেন না”। ১৯৭০ সালে বেইজিং রিভিউ খেমারুজদেরকে যে ভাবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন সত্যিকার অর্থে তারা তা ছিলো না। এটা সত্য যে, আজকের মাওবাদি আন্দোলন অনেক বিজ্ঞান ভিত্তিক ভাবে পরিচালিত হচ্ছে তাই তারা  সততার সাথে ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করছেন। সত্যের মোখোমূখী দাড়িয়ে বাস্তবতাকে অনুসরন করা হচ্ছে।

মাওসেতুং সঠিক ও বিজ্ঞান সম্মত লাইন অনুসরনের তাগিদ দিয়েছিলেনঃ

“ আমাদের যে কোন কাজ করার আগে দেখতে হবে তা সঠিক ও রাজনৈতিক ভাবে আমাদের আদর্শ সম্মত কি না। যখন পার্টির কাজের লাইন সঠিক হয় তখন, সকল কিছুই সঠিক পথে পরিচালিত হয়। যদি ইহার অনুসারী না থাকে তবে অনুসারি তৈরী হবে; যদি ইহার অস্ত্র না থাকে তবে তা ও হাতে এসে যাবে; যদি ইহার রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকে তবে তাও অর্জিত হয়ে যাবে। যদি পার্টির লাই সঠিক না থাকে তবে ইহার যা আছে তা ও হারাবে। লাইনটি হলো একটি জালের মত রশি। যদি ইহা খুলে নেয়া হয় তবে সমস্ত জালটিই খোলে যায়”।(১৪)

সঠিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক লাইন বিজয়ের জন্য একান্ত আবশ্যক। ভুল পথ আমাদেরকে পথনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। আজকাল মাওবাদি আন্দোলনে যে দুর্বলা গুলো দেখা যাচ্ছে তা প্রধানত মতান্দ্বতা, অধিবিদ্যক, ও আদর্শিক বিষয়। তা অনেকটা ধর্মীয় ধারায় এসে দাড়িয়েছে। মতান্দ্বতা যেমন একসময় খামারুজদেরকে গ্রাস করেছিলো তেমনি ভারতীয় সিপি আইন (মাওবাদি)দেরকে সেই মতান্দ্বতা ভর করেছে। যা দুঃখ জনক। তারা এখন যে মাওবাদের দাবী করছেন তা মূলত মাওবাদের নামে রুমান্টিকতারই নামান্তর। তাদের সুর চিৎকার শোনে, মাওসেতুংয়ের সেই বিখ্যাত উক্তিই মনে পড়ে, “শূন্য কলসি বেশী নড়ে”।

আমরা চাইলে আরো ভালো কিছু করতে পারি। আমরা যদি বিপ্লবের পরবর্তী তরঙ্গ টি তুলতে চাই তবে আমাদের আগামী ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা সাজানো দরকার। আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পূর্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক ভাবে প্রনয়ন করা দরকার। কোন প্রকার মতান্দ্বতার আশ্রয় নেয়া সমিচীন নয়। যারা এখন ও খেমারুজদেকে অনুসরন করতে চান তারা কোন ভাবেই বিপ্লবী বিজ্ঞানে অনুসারী হতে পারেন না । যারা আজো খেমারুজদেরকে অনুসরণ করছেন তাদের উচিত তাদের লাইন ঠিক করে নেয়া। আমারা মাওবাদি আন্দোলন কারীদেরকে উৎসাহিত করি বিপ্লবী বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তরে আলোকিত সাম্যবাদকে গ্রহন করার জন্য। ভালো ও কল্যাণকর পথই জনগনের কাম্য।

Notes

  1. https://ajadhind.wordpress.com/marxism-leninism-maoism-basic-course/
  2. ibid.
  3. The Worker, #11, July 2007, pp. 39-47. http://www.bannedthought.net/India/CPI-Maoist-Docs/Nepal/CPIM-Paper2007W11.htm
  4. http://naxalrevolution.blogspot.com/2006/10/dalit-voice-naxalism-gets-complicated.html
  5. http://nuevademocraciapanama.blogspot.com/2010/11/kampuchea-democratica.html
  6. http://nuevademocraciapanama.blogspot.com/2015/04/kampuchea-honor-y-gloria-al-querido.html
  7. http://nuevademocraciapanama.blogspot.com/2012/05/blog-grande-dazibao-quando-os.html
  8. www.prisoncensorship.info/archive/etext/faq/polpot2.html
  9. ibid.
  10. http://natethayer.typepad.com/blog/2011/10/second-thoughts-for-pol-pot-fallen-tyrant-defends-his-brutal-regime-but-now-wants-cambodia-tied-to-west-the-washington-pos.html#sthash.ZS5DE2zj.dpuf
  11. Locard, Henri. Pol Pot’s Little Red Book: The Sayings of Angkar. Silkworm Books, Chiang Mai, 2004
  12. ibid.
  13. Mao Zedong, “On Ten Major Relationships,” April 1956
  14. https://www.marxists.org/reference/archive/mao/selected-works/volume-9/mswv9_88.htm

Leave a Reply