মার্কিনীদের নামে এখন ১০০০ ডলার ও জমা নেই ?

53542f0adbfa3f61c000e120._w.540_s.fit_মার্কিনীদের নামে এখন ১০০০ ডলার ও জমা নেই ?

(llbangla.org)

সম্প্রতি একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছেঃ

“ ফর্বেসের একটি জরিপ প্রতিবেদনের প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৫৬% আমেরিকানদের সঞ্চয় হিসাবে তাদের ব্যাংক হিসাবে গড়ে ১০০০ ডলার ও জমা নেই। প্রায় ২৪.৮% বা মোট জন সংখ্যার চার ভাগের এক ভাগের নামে মাত্র ১০০ ডলারের মত অর্থ জমা পাওয়া গেছে। ৩৮% মানুষ বলেছেন তাদের ক্রেডিট কার্ডের নির্ধারিত সীমার পরিমান মত টাকা তারা খরচ করে ফেলেছেন, ১১% বলেছেন তাদের সকল টাকা খরচের পর তারা এখন সত্যিকার ভাবে ঘাটতিতে পড়ে গেছেন। ইহা মার্কিনিদের প্রচলিত খরচ পাতির একটি চিত্র তুলে ধরেছেঃ তাদের ডেবিড ক্রেডিটের চিত্র প্রকাশ করেছে, যা তাদের আর্থিক দৈন্যতার চিত্রই প্রকাশিত হলো”। (১)

প্রথম বিশ্ববাদিরা অধিবিদ্যক ধারনার দ্বারা আবিস্ট হয়ে বলেছে প্রথম বিশ্বের শ্রমজিবী মানুষেরা ও শোষিত হচ্ছেন এবং এরা ও বিপ্লবী হয়ে উঠতে পারেন।  এই নিয়ে, তারা যে একটি বিরাট ভূলের মধ্যে আছে তা তারা বুঝতে ও পারছেন না । তারা ধারনা ও করতে পারছেন না যে তাদের এই প্রচলিত ধারনা একেবারেই ভিত্তিহীন ও অসার। যদি এই তথ্যাবলীকে বৈজ্ঞানিক ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, তবে তা সম্পূর্ন মিথ্যা হিসাবে প্রমানিত হবে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় যে প্রথম বিশ্ববাদিরা সকল সময়েই নিজেদের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আমাদের সাক্ষ্য প্রমানকে খন্ডনের প্রায়স চালিয়েছেন। তারা তাদের আলোচনা কালে উদারতাবাদ, ও সামাজিক গনতান্ত্রিক আদর্শকে ভিত্তি হিসাবে দাড় করিয়েছেন। সম্প্রতি, প্রথম বিশ্ববাদি চক্র একটি তথ্যাবলী প্রকাশ করে বলেছেন যে, আমেরিকার জনগণের মধ্যে প্রায় আর্ধেক মানুষের নামে ব্যাংকে ১০০০ ডলার ও নেই। এই সকল তথ্যাবলী তৈরী ও প্রকাশ করা মতলব হলো প্রথম বিশ্ববাদিদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমান করা । তারা বলতে চান যে, প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারনে এই পরিস্থিতির সৃজন হয়েছে। এরা প্রলেতারিয়েত এরা বিপ্লবী শ্রেনী। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ন ভিন্ন। কিন্তু আসল কথা হল এই সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি প্রথম বিশ্বের সঠিক চিত্র তুলে ধরেনি। বরং তাদের চিন্তা ধারারই প্রতিফলন দেখানো হয়েছে।

প্রথমত,  ১০০০ ডলার কোন ছোট সংখ্যা নয় যা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই অর্থের পরিমানটি ১০০০ ডলার হলো বিশ্ব জন সংখ্যার মধ্যম আয় অর্জন কারীদের প্রায় সম পরিমান। অন্য ভাবে বললে বলতে হয়, দুনিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ ১০০০ ডলারের ও কম আয় করে দিনাতিপাত করে থাকেন। উদাহরন হিসাবে উল্লেখ করতে হয় ভারতের কথা সেখানে যত লোক বছরে মাত্র ২৯২ ডলার আয় করে জীবন ধারন করেন তত লোক সারা আমেরিকায় ও নেই। সমগ্র আমেরিকার লোক সংখ্যার চেয়ে ও বেশী। এমন কি আমেরিকার একজন দরিদ্র কর্মী ও যা আয় করে তা দুনিয়ার ১৫% ধনীর সমপর্যায় ভূক্ত আয়ের সমান হয়ে থাকে।

কেবল আমেরিকার মানুষ বিলাশ বহুল জীবন যাপনের জন্য যে পরিমান খরচ করতে পারেন তা সারা দুনিয়ার সকল মানুষের ও সেই সক্ষমতা নেই। এখন ও শত শত মিলিয়ন মানুষ না খেয়ে থাকে। দুনিয়া ৮০০ মিলিয়ন মানুষের জন্য আজো সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। পৃথিবীর বহু দেশ আছে যেখানে মানুষ যদি শুনে তাদের নামে ব্যাংকে ১০০০ ডলার, বা ৫০০ ডলার বা এমন কি ১০০ ডলার জমা আছে তবে মহা খুশি হবেন। এখন তাদের নামে কিছুই নেই। অনেকেই এখন ও মার্ক্সের বর্নিত প্রলেতারিয়েতের মতই জীবন যাপন করছেন। তারা আক্ষরিক অর্থেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মার্কীনীদের জীবন মান দেখলে তারা হিংসায় জ্বলে উঠবেন। কম্পিউটার, ফোন, ওভেন, ফ্রিজ, টিভি, গাড়ি এপার্টম্যান্ট ও আমেরিকানদের বাড়ী ঘর দেখলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবেন। মার্কিনীদের কাজের যে জায়গা ও পরিবেশ দেখলে উরা জান্নাত মনে করে ভূল করবেন। আমেরিকানদের এই সকল সুযোগ সুবিধা দেখলে মনে হবে ঐ মানুষ গুলোর জন্য কোন ব্যবস্থাই নেই। বকে যাওয়া আমেরিকান ধনীর দুলালদের জন্য কোন উপরই উপযুক্ত নয়। তাদের নিকট এখন আর কিছুই ভালো লাগে না । (২)(৩)(৪)

দ্বিতীয়ত, প্রথম বিশ্ববাদিরা মার্কিন মুলুকে ঋন সুবিধার মর্ম বুঝতে পারে নাই। ঋন যে সকল অবস্থায় দারিদ্রতার পরিচায়ক নয় তা অনুধাবন করার যোগ্যাতা ও তাদের নেই । প্রথম বিশ্বে ঋন হলো সাধারন লোকদের জন্য পুঁজিতে প্রবেশাধিকারের একটি সুযোগ। ঋন তাদের চলমান আয়ের চেয়ে বেশী সুবিধা দেয়। উদাহরন হিসাবে উল্লেখ্য যে, মার্কিনীদের জন্য গৃহ ঋন, গাড়ী ঋন, এবং অন্যান্য সকল দ্রব্যের জন্য ঋনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে তাদের নাগরীকগন একটি উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন। উদাহরন হলো আমেরিকায় এখন ৬৩.৪% লোক এখন নিজের বাড়ীতে বসবাস করে। (৫) যদি আমেরিকানদের জন্য এই ঋন সুবিধার ব্যবস্থা না থাকত তবে তাদের মধ্যে এত লোক আধুনিক ধরনের বাড়ীর মালিক হতে পারতেন না । আমেরিকানদের মধ্যে প্রায় সকলেই ঋনী কিন্তু তার জন্য এদের কোন সমস্যাহয় না । সত্যিকার অর্থে আমেরিকার মানুষকে পুঁজিতে প্রবেশাধিকার দেয়ার জন্যই এই ধরনের ঋনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর জন্য তারা যে ক্রেডিট কার্ড ও ঋনের ব্যবহার করে থাকে তা তৃতীয় বিশ্বের অনেক মানুষ সারা জিবনে ও আয় করতে পারেন না । ঋন মার্কিনীদের জিবনের সাথে মিশে গেছে ফলে এরা এর মাধ্যমে উন্নত জীবন যাপন করতে পারছে। যদি বলা হয় একজন আমেরিকানের ব্যাংক হিসাবে ১০০ ডলার ও নেই এর মানে কিন্তু এই নয় যে তিনি দরিদ্র বা তার ঋন গ্রহনের ব্যবস্থা নেই বা তিনি উন্নত জীবন যাপন করতে পারছেন না । এর মানে এও নয় যে তার বাড়ি নেই, বা গাড়ি নেই, বা বিলাশ বহুল জীবন যাপনে তার কোন প্রকার সমস্যা হচ্ছে। তার জন্য সকল প্রকার সুবিধাই করে রাখা হয়েছে।

তৃতীয়ত, উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মার্কিনীরা কি রকমের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রথম বিশ্ববাদিরা উপসংহারে গিয়ে বলেছেন, আমেরিকার লোকেরা শোষিত হচ্ছে, তাদের উপর ঋনের এত যাতনা চলছে, কেননা – তাদের কস্ট প্রকাশের ভাষা ছিলো – “ মার্কিনীদের জন্য সামনের ছুটিতে অনেক খরচ পাতির বিষয় আছে তা তারা কেমন করে সামলাবেন”। একটি অদ্ভূত বিষয় হলো প্রথম বিশ্ববাদিরা ভাবে মার্কিনীরা অনেক গরীব হয়ে পড়েছে, অথচ তাদের বিলাসিতার জন্য অনেক খরচ করা দরকার। সত্যি কথা হলো মার্কিনীরা যে বিলাশিতা করে তা দুনিয়ার বহু মানুষ ভাবতে ও পারেন না । এই ধরনের চিন্তা ভাবনা একেবারেই ভাবতে অভ্যস্থ নিন। তাদের ধারনায় ও নেই তৃতীয় বিশ্বের মানুষ বিশেষ করে প্রলেতারিয়েতরা কি রকেম মানবেতর জীবন যাপন করে। (৬)

আমারিকায় কি এমন লোক আছেন যারা আর্থিক দৈন্যতায় দিনাতিপাত করছেন ? হ্যা, কিছু আছেন। আমেরিকায় কি সত্যিকার দারিদ্রতা আছে ? অবশ্যই কিছু তো আছেই। তবে প্রথম বিশ্ববাদিরা অল্প কিছু মানুষের অবস্থাকে সকল আমেরিকানদের উপর চাপিয়ে দেন। প্রথম বিশ্ববাদিদের নজরে কিছু মানুষ আছেন যারা কস্টে থাকেন, কিন্তু তারা তা তাদেরকেই সকল আমেরিকানদের প্রতিনিধি বানিয়ে দেন। বাস্তবতা হলো আমেরিকায় যে দারিদ্রতা আছে তা খুবই বিচ্ছিন্ন, অস্থায়ী ও অভিবাসী যারা কোন ভাবেই বিপ্লবী শক্তি হয়ে উঠতে পারবেন না । প্রথম বিশ্বের সকল জায়গায় একেই অবস্থা বিরাজিত করছে। আর সেই কারনেই আমরা বলি প্রথম বিশ্বে সাম্যবাদি বিপ্লবের কোন সম্ভাবনা নেই। এখানে সামগ্রীক ভাবে বিপ্লবের বস্তুগত পরিস্থিতি অনুপস্থিত। এখানে প্রলেতারিয়েত নেই, বিপ্লবের সামাজিক ভিত্তি নেই। সাম্যবাদি বিপ্লবের জন্য প্রলেতারিয়েতের উপস্থিতি আবশ্যক। তৃতিয় বিশ্বে প্রলেতারিয়েতের উপস্থিতি রয়েছে। প্রথম বিশ্বে বিপ্লব করতে হলে আগে তৃতীয় বিশ্ব বিপ্লব সাধন করতে হবে। আর বিপ্লবের পথ হল সারা দুনিয়ায় গন লড়াইয়ের জোয়ার তৈরী করা । সেখানে নেতৃত্ব দেবে লিডিং লাইট।

তথ্য সূত্রঃ

১.http://www.esquire.com/news-politics/news/a41147/half-of-americans-less-than-1000/?can_id=&source=email-todays-headlines-jobs-with-justice-11316&email_referrer=todays-headlines-jobs-with-justice-11316&email_subject=todays-headlines-jobs-with-justice-11316&link_id=7

২.http://llco.org/walk-this-road-with-us/

৩.http://llco.org/the-average-joe-amerikkkan/

৪.http://llco.org/united-states-rich-india-poor-so-called-international-communism-movement-deaf-and-dumb/

৫.http://www.census.gov/housing/hvs/files/currenthvspress.pdf

৬.http://www.esquire.com/news-politics/news/a41147/half-of-americans-less-than-1000/?can_id=&source=email-todays-headlines-jobs-with-justice-11316&email_referrer=todays-headlines-jobs-with-justice-11316&email_subject=todays-headlines-jobs-with-justice-11316&link_id=7

Leave a Reply