চিনের সংস্কৃতিক বিপ্লব প্রসংগে কিছু কথা ….

(llbangla.org) সাম্যবাদ হলো আমাদের মহান বিপ্লবের  চুড়ান্ত গন্তব্য। মাওসেতুং এর একটি কথা আছে তুমি সকল শৃংখল এক সাথে ভাংতে পারবে না। ভাংগ একটি একটি করে। তুমি যদি একটি  আথবা শত শৃখল দ্বারা বাঁধা থাক কোন দেয়ালের সাথে তবে তা ত একই কথা, তবে ভেবনা । আমরা শত শৃংখল ভেংগে তোমায় আমারা মুক্ত করবই । সকল নিপিড়ন শেষ হবে। সকল শোষণ শেষ হবে। ধনি গরীব থাকবে না। বর্ন বৈষম্য থাকবে না। জাতিগত ও লিংগত বৈষম্য থাকবে না। তরুনদের অপব্যবহার দূর হবে। সাম্যবাদ হলো সামগ্রিক মুক্তি। এক দল আর এক দলের উপর প্রভুত্ব করবে না। মহান মার্ক্স ও লেনিন বলেছেন, রাস্ট্র হল এমন একটি নিপিড়ক যন্ত্র যার মাধ্যমে এক দল আর এক দলের উপর নিপিড়ন চালায়। যেহেতু সাম্যবাদে এক দল আর এক দলের উপর নিপিড়নের প্রশ্ন নেই, সেহেতু রাস্ট্রের ও দরকার নেই। সাম্যবাদ মানেই হল  সমতা। একটি সমাজ গড়ে উঠে মানুষের প্রয়োজনে। সাম্যবাদের আওতায় মানুষের লোভ, লালসা, আত্মকেন্দ্রিকতার কোন সুযোগই থাকবে না। সাম্যবাদের আওতায় মানুষ নিজেকে একা বিবেচনা করবে না বরং নিজেকে সমাজের সমষ্টির একজন হিসাবে ভাববে। সকল ভালো, সকলের জন্য। সাম্যবাদের আওতায় ব্যাক্তিগত সম্পত্তি থাকবে না। সাম্যবাদ হল বিকল্প সমাজ ব্যবস্থা। এর নীতি হল, মানুষের সেবা কর। পুরো সমাজটাই আর্বতিত হবে এই মন্ত্রের মাধ্যমে। মানুষ এক হবে, নেক হবে , কেবল মাত্র সাম্যবাদের আওতায়। মানুষ আমি, আমি আর করবে না। বলবে আমরা। সাম্যবাদের মাধ্যমেই ঠেকসই উন্নয়ন সম্ভব। মানুষ ধরিত্রির সর্বনাশ করবে না। কেন না এটাই আমাদের সকলের একমাত্র  আবাস ভুমি। আগামি প্রজন্মের প্রতি আছে আমাদের অঙ্গীকার। সাম্যবাদের আওতায় বিপরিত মুখী দ্বন্দ্ব বিরাজ করবে না। সাম্যবাদের অর্থই হল শান্তি আর শান্তি । সাম্যবাদের আওতায় বিপ্লব নিজেই নিজেকে সংহত করে থাকে। সামগ্রিকভাবে সাম্যবাদের উপস্থিতি কোথাও নেই, কোন কোন আদিবাসিদের মাঝ কিছু চর্চা দেখা গেলেও তা সঠিক অর্থে সাম্যবাদ নয়। মাকর্স এঙ্গেলস একে আদিম সাম্যবাদ বলেছেন।

এপর্যন্ত বিপ্লবের তিনটি ঢেউ বয়ে গেছে। তা মানব সভ্যতা অনেক এগিয়েছে। মানুষকে সমাজতন্ত্রের পথ ধরে সাম্যবাদের দিকে এগিয়েছে। প্যারিস কমিউনকে বলা হয় প্রথাম ঢেউ। কিন্ত তা বেশি সময় ঠেকেনি। এটা ছিল একান্তই শহর কেন্দ্রিক বিপ্লব। তাই অল্পতেই প্রতি বিপ্লব তাকে পরাজিত করে ফেলে। এর পরের বিপ্লবটি ছিল ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিকদের মহান বিপ্লব। ইহা লেনিনের নেতৃত্বে সংঘঠিত হয়। তবে, ১৯৫০ সালে প্রতিবিপ্লবীরা আবার পুঁজিবাদের পথে ফেরে যায়। আমারা সৌভিয়েত বিপ্লব থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমরা বহু কিছু শিখছি মহান লেনিন ও স্তালিনের কাছ থেকে। আমরা এসব তুলে ধরব। তা হবে মুক্ত মন নিয়ে, কোন প্রকার অন্ধ অনুসরনে নয়। তৃতীয় বিপ্লবটি ঘটে ছিল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের পর। আর তা ছিল সাম্রজবাদের বিরুদ্বে লড়াইয়ের অংশ হিসাবে। মহান মাওসেতুং এর নেতৃতে চিনের এইবিপ্লব ছিল খুবই গুরুত্ব পুর্ন। পৃথিবীর প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মানুষ চেষ্টা করেছিলো নতুন দুনিয়া গড়তে। আমাদের সকল চেষ্টা ছিলো সমাজতন্ত্রের ভেতর দিয়ে সাম্যবাদের পানে এগিয়ে যাওয়ার। এবং চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রধান কাজটি ছিল মানব সমাজকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবার। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তারিখ ও সময় কাল নিয়ে কেউ কেউ বিতর্ক করেন কিন্তু আমাদের বক্তব্য হোল তা শুরু হয়েছিল ১৯৬৬ সাল থেকে এবং শেষ হয়ে ছিল১৯৭০ সালে । ইহার পরিসমাপ্তি টানা হয়েছিল ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭০ সালের মধেই। চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবটি ছিল মাওবাদি বিপ্লবে বিপ্লবি বিজ্ঞানের গুরুত্ত্ব পুর্ন অবধান। মহান লিন বিয়াও বলেছেন, সাংস্কৃতিক বিপ্ল্ধান।বিপ্লবি তত্ত্বে ছিল মাও এর বিরাট অবদান।
“কমরড মাওসেতুং কেবলমাত্র মার্ক্সবাদকেই আলোকিত করেনি বরং প্রলেতারিয়েত শ্রেনিকে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষ্মতায়ন করেছেন। তিনি মার্ক্সবাদকে সৃজন শীলতার দিকে নিয়ে গেছেন। মার্ক্সবাদকে প্রয়োগ করে আমাদের চলমান সকল সমস্যার সমাধান করেছেন। প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব কায়েম, পুঁজিবাদের ফেরত আসার বিরুদ্বে লড়াই জারি রাখা ছিল তাঁর বড় অবধান”। এখানে কিছু গুরুত্বপর্ন বিষয় তুলে ধরা হল বিষয় টি ভালো ভাবে অনুধাবন করার জন্য।

১. সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পুরোসময়টাই ছিলো সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে সাম্যবাদের পানে বা সত্যিকার স্বাধিনতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। মাওবাদিগন বুঝতে পেরেছিলেন যে আমারা যদি সাম্যবাদের দিকে অগ্রসর না হই তবে বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবে। মহান মাওসেতুং বলেছিলেন, “ একটি বদ্ব জলাশয়ে কোন বিপ্লবী বিকাশ সম্ভব নয়”। সামাজতন্ত্রের সারমর্ম বুঝা যাবে সাম্যবাদে উন্নিত হওয়ার মাধ্যমে। মাওবাদের মতে, “প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্বের মাধ্যমে নিরন্তর বিপ্লব”।

২. মাওবাদিগন বুঝতে পেরেছিলেন প্রতিবিপ্লবী শক্তি পার্টির ভেতর ও বাইরে নতুন এক শ্রনির বুর্যোয়া জন্ম হচ্ছে। রাস্টের বিভিন্ন বিভাগে সেই প্রতিবিপ্লবীরা জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করছে। ক্ষমতায় ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে তারা অসমতার সৃষ্টি করছে। উরা প্রতিক্রিয়াশীল ধারনার সৃষ্টি করছে। আমলাতন্ত্রকে দুরিভুত করে সাধারন মানুষের কল্যানে যে প্রশাসন গড়ে তুলার কথা তা না হয়ে সেই বিশেষ শ্রেনির স্বার্থে তা গড়ে উঠছে। তারা তাদের স্বার্থে সমাজকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। তারা তাদের স্বার্থে যা যা করছে সবই করছে  সাম্যবাদের নামে। শ্রেনির বিলুপ্তির ও পরিসমাপ্তির পরিবর্তে নতুন শ্রেনির বিকাশ ঘটাতে শুরু করে। তারা প্রানান্তকর চেষ্টা চালায় পুঁজিবাদকে ফিরিয়ে আনার জন্য।

৩. একটি দল নতুন বুর্যোয়াদের সমর্থক তারা মনে করেন উৎপাদন শক্তির বিকাশের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। এই ধারাটি নতুন বুর্যোয়াদের সহযোগী। এই ধারাটি  সমাজ বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় উৎপাদন শক্তি ও প্রযুক্তির বিকাশের উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। এই ধারাটি সাম্যবাদকে পুঁজিবাদের প্রযুক্তিগত বিকাশের উচ্ছত স্থরে দেখতে চায়। সমাজতন্ত্র হলো সাম্যবাদের প্রাথমিক স্তর। ইহা সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের অন্তর্বতী কালিন সময় কাল। এই কালে সমাজতন্ত্র কেবল মাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়নই ঘটাবে না বরং সমাজকে সাম্যবাদে উপনিত হতে সহায়ক হবে। এই তত্ব ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে অস্বীকার করে, সামাজিক বিপ্লবকে অস্বীকার করে, ইহা সামাজিক পরিবর্তন এবং সামাজিক উপরি কাঠামোকে অস্বীকার করে। ইহা মানুষের ক্ষমতা কে অস্বীকার করে। উৎপাদন শক্তি তত্ব প্রথম বিশ্ববাদের সাথে সম্পর্কযক্ত। ইহা সমাজতন্ত্রকে ভিন্ন মাত্রায় এমন কি বিকৃত মাত্রাই উপস্থাপন করে। এই তত্বের সমর্থকগন বুঝতেই পারেন না যে, প্রথম বিশ্বের সম্পদ ভান্ডার গড়ে উঠেছে তৃতীয় বিশ্বের শোষণ প্রক্রিয়ার উপর। যদিও সংশোধনবাদিরা সমাজতন্ত্রকে গ্রহন করেন প্রথম বিশ্ববাদের সাথে প্রতিযোগীতা করার জন্য, তাদের সম জিবন মানে উন্নিত হবার জন্য। কিন্তু যখন সমাজতন্ত্র ভোগবাদি সমাজের মত বিলাসিতার জিবন দিতে পারেনা তখন তাঁরাই আবার সমাজতন্ত্রকে দোশারূপ করেন। তখনই সংশোধনবাদিরা বলতে থাকেন যে, সমাজতন্ত্র কাজ করছে না, সাম্যবাদ ও অসম্ভব। আর তখনই সংশোধনবাদিরা উপসংহার টেনে বলছেন পুঁজিবাদ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে মানব জীবনের মান উন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে। লিডিং লাইট কমিউনিস্ট এই ধরনের সংশোধনবাদিতাকে প্রত্যাখান করে অত্যন্ত দৃড়ভাবে। লিডিং লাইট বলে আমাদের উদ্দ্বেশ্য কেবল মাত্র ধনিক সামাজের সাথে প্রতিযোগীতা করা নয়, বরং টেকসই ও উন্নত একটি ভিন্ন প্রকৃতির সমাজ বিনির্মান করা। যেখনে থাকবেনা কোন শোষণ ও অন্যায় এবং অসমতা। আমরা এই সমাজটাকে সম্পুর্ন নতুন ভাবে গড়বো।

৪. সংশোধনবাদিদের বিপরিতে সেই সময়কার মাওবাদিরা সাধারন জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। মাওবাদিরা জনগণের সৃজনশীলতা দিয়ে পুঁজিও প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান করতে চেয়ে ছিলেন। তখন ও আমজনতা বিপ্লবী বিজ্ঞান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল চলমান সংকট নিরসনের জন্য। সেই সময়ে মহান মাও রাজনৈতিক বিকাশের প্রতি বিশেষ জোর দিচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যথাযথ নেতৃত্বের মাধ্যমেই আমারা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। এর অর্থ হল, জনগণকে পরিচালনা করার মাধ্যমে সামাজিক দ্বন্দ্বকে অতিক্রম করা সম্ভব। ইহার মানেই হল শ্রেনি সংগ্রাম। ইহার অর্থ হল সামাজিক পরিক্ষা-নিরিক্ষা। ইহাই হল গণ- পথ। ইহার মানেই হল সমাজের নিচুতলা থেকে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো। ইহাকে আমারা সাধারন মানুষের গণ তন্ত্র বলতে পারি। প্রকৃত সাম্যবাদের পরিবেশ তৈরির জন্য সাংস্কৃতিক বিপ্লব গণ সংগ্রাম ও গণ আন্দোলনকে বচে নিয়ে ছিল। সাম্যবাদের হাজার রাস্তা খোলে দিয়েছিল।

৫. মাওবাদিদের মতে বিপ্লব হল দুটি লাইনের উপর দিয়ে চলা একটি রেলগাড়ির মত।  শ্রেনি সংগ্রাম ও উৎপাদন শক্তির বিকাশ যেমন- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। তবে, শ্রেনী সংগ্রাম হল মুখ্য বিষয়। আরো মুখ্য বিষয় হল সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তন, ক্ষমতায়নের পুনর্গঠন । মহান মাও বলতেন, ‘শ্রেনী সংগ্রামকে  কখন ও ভুলে যেও না।’ মাওবাদিরা বিপ্লবী ছাত্র, শ্রমিক, এমন কি সৈনিকদের মাধ্যমে তাদের শ্রেনি সংগ্রাম কে ক্রমাগত ভাবে চালু রেখেছিল। কেননা এটাই যে নব্য বুর্জোয়া সামাজে অনুপ্রবেশের পথ। সমাজের গভীরে শ্রমিকদের বক্তব্য পৌঁছানোর জন্য তারা আকর্শনীয় প্রবন্দ্ব প্রচার, পোস্টার লাগানোর কাজ করেছিলো। মাওবাদিদের শিক্ষা প্রতিস্টান, ও কল কারখানায় ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। মাওবাদিরা সাধারনের মাঝে আহবান জানায় যে, “জন গণতন্ত্র কায়েম কর।” এবং সকলকে বিতর্কে অংশ গ্রহনের আহবান জানানো হয়।  মহান মাও শ্লোগান তুলেন,  “প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্বে রুখে দাঁড়াও।” মাও বলেন, “পার্টি হেড কোয়ার্টারে বোমা মারুন”।

৬. ১৯৬৬-১৯৬৮ সালে শ্রেনী সংগ্রামের অংশ হিসাবে খুবই নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় একটি বুঝা পড়া চলছিল । জন গণ আমলাতন্ত্র এবং প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে বিতারনের প্রক্রিয়া শুরু করে। তারা ক্ষমতা দখল ও নিম্ন পর্যায় থেকে সামাজিক স্বাধিনতার বিষয় টি নিশ্চত করে। বিপ্লবী ছাত্র, শ্রমজীবী, এবং সৈনিকেরা জেগে উঠে।  মহিলারা পিতৃতান্ত্রিক ব্যাবস্থার বিরুদ্বে রুখে দাঁড়ায়। তরুণরা প্রথমবারের মত রাজনৈতিক শক্তি অর্জন করে।  সাধারন জনগণই দেশ গড়ার মুল নেতৃত্বে আসিন হন। লিন বাওয়ের গণ মুক্তি বাহিনী দেশে উন্নয়নের পথে এক নব ধারার শুভ সূচনা করে। সমাজে নতুন শক্তির আগমন ঘঠে।

৭. “মাওবাদিদের চিন্তা চেতনা” কে মাও আনেক উন্নত ও বিস্তৃত করেন । সাধারন মানুষ মাওসেতুং এর বানী আনুসরন করে নব্য পুঁজিবাদীদেরকে ও আমলাদেরকে বিতারন করে । তা অল্প সময়ের জন্য হলে ও সাধারন জনগণ মাওয়ের লাল বই দ্বারা সস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন, তারা আমলাতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পেরে ছিলেন। এই মহান সংগ্রামে মাওসেতুং এর কতৃর্ত্ব ও ব্যাক্তিগত অবস্থা বিপ্লবী বিজ্ঞান ও মাওবাদের সাথে মিশে গিয়ে ছিল। আর এটা সম্ভবত চিনের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বকতার কারনে এড়িয়ে যাওয়া ও সম্ভব ছিলনা। তবে আমাদেরকে বাস্তবতার নিরিকে বিষয়টি বুঝে নিতে হবে।

৮. মাওবাদিদের প্রধান কাজ ছিল সৌভিয়েত উন্নয়ন ভাবনা ও প্রতিবিপ্লবের ধারনাকে ভেঙ্গে দেয়া। সৌভিয়েত উন্নয়ন ভাবনা ছিল প্রধানত শিল্প বিপ্লব সাধন করা। বিপ্লবিরা দুনিয়াকে তখন দেখেছিল যান্ত্রিক ভাবে। অনেকেই মেনে করতেন শিল্প বিপ্লব ঘটাতে পারলেই সামাজে শান্তি আর শান্তি নেমে আসবে। অনেকেই এও ভেবে বসেছিলেন যে, কেন্দিয় ভাবে পরিকল্পনার মাধ্যমেই সকল উন্নয়ন সাধিত হবে, যার লক্ষ্য হবে সম্পদের উন্নয়ন ও বৃদ্বি।  কিন্তু যখন এই আশা পুরন হলোনা, তখন তারা এই ব্যাবস্থা সম্পকেই প্রশ্ন তুললেন, তারা তার পেছনে কুটচক্র ও দালালির প্রশ্ন তুললেন । অন্যভাবে বললে, যখন সমস্যা তৈরি হলো, তারা তখন সমস্যাটি সটিকভাবে বিশ্লেষণে ব্যর্থ হলেন। বারং তারা উদুর পিণ্ডি বুদুর গারে চাপিয়ে বলতে থাকলেন যে, সচেতন ভাবে এই ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেয়া হচ্ছে। তাই তারা সমাধানের জন্য তিক্ত পথে এগোলেন। লিডিং লাইট এধরণের পদক্ষেপকে নিতিগত বিভান্তি বলেই মনে করে। মাওবাদিদের উদ্বোগ ছিলো এই ধরনের দৃষ্টি ভংগীর পরিবর্তন সাধন করা। তারা এই দৃষ্টি ভংগীকে পুরোমাত্রায় বদলাতে পারেন নাই। তারা দেখতে পেলেন সমাজতন্ত্র নিজেই সমস্যা সৃস্টি করছে। সমাজতন্ত্র নিজেই বুর্জোয়া তৈরি করছে। মাওবাদিরা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দেখতে পেলেন যে, সমস্যা মুলত কাঠামোগত।

৯. মাওবাদিরা সমাজতন্ত্রের কাঠামোর ভেতরে লড়াইয়ের জন্য দুটি বিষয় নির্বাচন করলেন। তার একটি হলো  নিরন্ত্রভাবে অসম মজুরি আর অন্যটি হোল ক্ষমতার বৈষম্যের বিরোদ্বে সংগ্রাম করা। যদি ক্রমাগত ভাবে বৈষম্য না কমে, তবে তা বেড়ে যাবে, এবং পরিণতিতে নব্য বুর্জোয়ার সৃস্টি হবে। এবং তাঁরাই প্রতিক্রিয়াশীল হিসাবে প্রতিবিপ্লব ঘটাবে। তাই, সাংস্কৃতিক ভাবে মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্বে, সুসমতার জন্য উপরি কাঠামোতে নিরন্ত্ররভাবে লড়াই চালাতে হবে। সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কৃতি স্থান করে নিতে পারে, যদি প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কৃতিকে অপসারন করা না হয়। ইহা ক্রমে সম্প্রসারিত ও সংক্রমিত হবে এবং বিপ্লবকে অন্ধকারে নিয়ে যাবে। ইহা সম্মিলিত সমাজের একটি ভড় ধরনের ক্যান্সার। বিপ্লব সর্বদা ইহার চিকিৎসা চালিয়ে যাবে।

১০. সংস্কৃতিকে সমাজের রোড ম্যাপ বলা হয়। হাজার বছর ধরে মানুষ ভেবে এসেছে যে, কেহ কেহ হবে ভালো, আর কেহ কেহ হবে খারাপ। ধনীরা গরিবদের চাইতে ভালো, পরুষগণ নারীদের চাইতে উত্তম। সাদারা কালোদের চাইতে উত্তম। প্রবীণরা তরুন্দের চেয়ে ভালো। এই ধারনা গুলোর পরিবর্তন করা রাতারাতি মোটেই সম্ভব নয়। গতানুগতিক ভাবে বলা হয় সকল মানুষই দুর্নীতি পরায়ণ। আমাদেরকে প্রথমেই সংস্কৃতিক নিরপেক্ষতা চালু করতে হবে। আমদের পক্ষে যখনই সম্ভব তখনই পুরাতনের জায়গায় নতুনকে প্রতিস্থাপন করব, আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরাতন পদ্বতি ও নতুন সমাজ বিনির্মানে কাজে লাগাব। অধিকন্ত আমরা নতুন ব্যবস্থাকে ও গড়ে তুলব। যা হল বিপ্লবী সংস্কৃতি । যেখানে প্রলেতারিয়েতগণ অর্থনীতিকে ও সামাজিক রিতিনিতিকে নিয়ন্ত্রন করবেন। ইহাই হল নতুন ভাবে লিখা ‘জনতাকে সেবা করুন’। ইহাই হল সামাজিক পুনর্গঠন। যা বিপ্লবকে স্থায়িত্ব দিবে এবং রাস্ট্র নামক উৎপীড়ক যন্তরটির মৃত্যু ঘটাবে।

১১. এই সামগ্রিক বিকল্প প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে সমতার নীতির বিকাশ ঘটেছে। একটি সাম্যবাদি নৈতিকতার উন্মেষ ঘটেছে যার সার্মম হলো “ জনগণকে সেবা করুন”। বস্তুগত প্রাপ্তি কমিয়ে আনা হবে এবং এক সময় তার আর প্রয়োজনই থাকবেনা। অবস্তুগত বিষয় যেমন – সুনাম সুখ্যতির বিষয় গুলো অগ্রাধিকার পাবে। “আত্মশুদ্বির জন্য নিজের বিরুদ্বে নিজের লড়াই” এই শ্লোগানটি জনপ্রীয় হয়ে উঠবে। মানব জিবন নিবেদিত হবে সমাজের প্রতি, আত্মকেন্দ্রিকতার প্রত নয়। জিবন নিবেদিত হবে গণতান্ত্রিক মুল্যবোধের প্রতি। পদ মর্যাদা, পদবীর ভিত্তিতে সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি থাকবে না। উদাহর হিসাবে আমরা মহান লিন বাওয়ের সেনাবাহিনীর পদ ও পদবী বিহিন সফল সৈনিকদের কথা বলতে পারি। মাওবাদিরা সাম্য ও সমতার  সমাজ তৈরির জন্য কর্মরত আছেন।

১২. আমাদের সমগ্র সমাজটাই হবে একটি মহা বিদ্যালয় যা বিপ্লবী বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেবার জন্য সবিশেষ ভুমিকা রাখবে। সামাজিক প্রক্রিটিই এমন হবে যেখানে মানুষ নিজেই দক্ষ ও পরিপক্ষ হয়ে উঠবেন যাতে তারা পদপদবি চাড়াই সমাজ পরিচালনায় সক্ষম হবেন। সমাজটি একটি বৃহৎ সামাজিক পরীক্ষাগার হিসাবে পরিগণিত হবে। মাওবাদিরা সমাজ থেকে শারিরীক ও মানুসিক শ্রম বিভাজন বিদুরিত করবেন। গ্রাম ও শহরের পার্থক্য দুর করা হবে। তত্ব ও কর্মের কোন পার্থক্য থাকবেনা। যারা পরিচালনা গত কাজ করবেন তাদেরকেও জমিতে এবং কারখানায় কাজ করতে হবে। এতে তারা বাস্তব সম্মত জ্ঞান অবিজ্ঞতা অর্জন করবেন।

১৩. সাংস্কৃতিক বিপ্লব আমাদের সামনে অনেক দুর্বলতা তুলে ধরেছে। যেমন ধারনা করা হত উচু পর্যায়ের লোকেরা বোধ হয় সকল সময়ই অগ্রগামী বাহিনী। কিন্তু প্রমানিত হলো তারা ও নানা দুষে দুষ্ট হয়ে থাকেন।অগ্রনী বাহিনী বিপ্লবের সময় সমাজ পরিবর্তনে ও কাঠামোগত পরিবর্তনে ভুমিকা রাখতে পারেন। তারা একটি আদর্শগত গ্রুপকে একটি গণ সংঠনে রূপান্তর করতে ও একটি সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে পারেন। অন্য ভাবে বললে, তারা একটি দ্রুপদি দল ও আগ্রবাহিনির পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেন। অগ্রবাহিনিই হলো সত্যিকার কমিউনিস্ট পার্টি। তবে এই কমিউনিস্ট পার্টি যে সব সময় সঠিক পথেই থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই, মাওবাদিরা বিপ্লবী নেতৃত্ব সম্পর্কে একটি ডাইন্যামিক ধারনার অবতারনা করতে চায়। এই ধারনাটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সৌভিয়েত ধারনা থেকে ভিন্নতর।

উক্ত ১৩ টি বিষয়ই শেষ নয়। এই গুলো হলো কিছু মৌলিক দিক। আপনার মত আন্যন্য কমরেডদেরকে ও এই বিষয় গুলো জানতে দিন। তবে, আমরা পুরাতন বিষয় গুলো আবার ফিরিয়ে আনতে চাই না। আমাদেরকে ও বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠতে হবে। আমাদেরকে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। মাওবাদিদের বিপ্লব ছিলো অতি গৌরবের একটি বিষয়। ইহা সমগ্র দুনিয়াকে নাড়া দিয়েছে।তবে, এর আগেও বিপ্লবের একটি  ডেউ উঠেছিল। তা এখন বিলিয়মান। অতীতকে সার সংক্ষেপ করুন। সেখান থেকে নতুন ভাবে লিডিং লাইট গড়ে তুলুন। আমরা অতীতের চেয়ে আরো আনেক অনেক ভালো করব। লিডিং লাইটের বিপ্লব অতীতের চাইতে উন্নত হবে। আগামী দিন গুলো আমাদের । ভবিষ্যৎ আমাদেরই । একে এম শিহাব।

*

Leave a Reply