(llbangla.org)
মাওসেতুংয়ের বিরুদ্বে তাঁর ই উত্তরসুরী লিন পিয়াং অভ্যুত্থান করতে চেয়েছিলেন কিনা – এই প্রশ্নের জবাব খুব সাধারণ ভাবে দেয়া সম্ভব নয়। আবার বিখ্যাত সেই বিপ্লবীর কর্ম যজ্ঞকে সহজ বিশ্লেষণ করা ও সহজ নয়। তাঁর ভুমিকা সম্পর্কে দুই ধরনের মতবাদ চালু আছে । এই দুই ধরার মাঝে প্রচন্ড বিরোধিতা ও আছে। এক দিকে আছেন মতান্দ্ব মাওবাদি ও ইতিহাসের ভাববাদি ব্যাখ্যা কারীদের দল, আর অন্য দিকে রয়েছেন, বস্তুবাদি, বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোকিত সাম্যবাদী চিন্তাশীল ইতিহাস বিশ্লেষক মানুষে সমাবেশ। তবে, এটা আমাদের সামনে স্পষ্ট করে দেয় যে আমরা ইতিহাসকে কিভাবে দেখি। এটা কেবল মতান্দ্বতার বিষয় নয় বরং তা হল অনেক ক্ষেত্রে মতান্দ্বতা দ্বারা প্রভাবিত ঐতিহাসিক দর্শন।এই দর্শনে বৈজ্ঞানিক পদ্বতিকে অবজ্ঞা করা হয়, সাধারনত বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তার কোন চর্চাই সেখানে স্থান পায় না । যে সকল সংস্থা লিন পিয়াং এর মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁকে খল নায়ক হিসাবে দেখাবার প্রয়াস চালায় তাদের সামনে যখন উপযুক্ত সাক্ষ্য হাজির করে তাঁর বিরুধিতা করা হয় তখন তারা তাঁর প্রতি উত্তরে সত্যিকার কোন দলিলাদি পেশ করতে পারেন না। তারা নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমানাদি ও দিতে না পেরে অবৈজ্ঞানিক সংস্থা হিসাবে নিজেকে পামান করেন। আলোকিত সাম্যবাদ বিজ্ঞানকে উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। ইহা ই মাওবাদের হালনাগাদ দর্শন। ইহা হলো প্রাগ্রসর বিজ্ঞান, “ তৃতীয় বিশ্ববাদি” রাজনৈতিক অর্থনীতি। প্রথম বিশ্ববাদিদের অর্থনীতি এবং মতান্দ্বতা হাতে হাত ধরে তাদের ইতিহাস গড়ে। প্রথম বিশ্ববাদিদের ভুলে ভরা মাওবাদ, মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ মুলত জ্ঞানের জগতের বিশাল ভ্রান্তি। একটি আন্দোলন কিভাবে ইতিহাসকে দেখে, লিন পিয়াং কে কিভাবে মূল্যায়ন করে তা দেখার বিষয়। আমরা তাঁকে একজন বিজ্ঞান মনষ্ক বিপ্লবী নেতা হিসাবে বিবেচনা করে থাকি।
১৯৭০ সালের পর থেকেই চিনের বিপ্লব স্থবির হয়ে পড়তে থাকে। ১৯৭০ সালের পর থেকেই চিনের আভ্যন্তরীণ ও বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে ডান পন্থা ও সংশোধনবাদের দিকে ঝুকতে থাকে। এই পরিস্থিতিটা বুঝতে হলে মাওবাদিদের কার্যক্রমকে এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে বুঝতে হবে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কালেই মাও তাঁর অফিসিয়াল কর্তৃত্ব ও পার্টির নেতৃত্ব হারান। ১৯৫৮-১৯৬১ সালের এই সময় কালে যে মহা উল্লম্পন হয় সেই সময় কালেই মাওসেতুং সমালোচনার মুখে পড়েন। তখন থেকেই মাওবাদিদেরকে ক্রমান্বয়ে পার্টির ও রাট্রীয় চলমান কার্যক্রম থেকে অপসারণ শুরু হয়। এমন কি একটি প্রতিস্টান ও এমন ছিলোনা যেখানে মাওবাদিদের একক কর্তৃত্ব বহাল ছিল। মাওয়ের একান্ত সহযোগী লিনপিয়াং যিনি লং মার্চের সময়ে উজ্জ্বল ভুমিকার জন্য লিভারেশন পিপলস আর্মির প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৫০ সালের পর থেকেই এমন কি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আগে থেকেই তিনি মাওহান মাওয়ের চিন্তাধারার আলোকে সেনাবাহিনীকে গড়ে তুলেন। লিন পিয়াং সেনাবাহিনীকে একটি মাওবাদি ভিত্তি দান করেন। যখন মাওবাদিরা রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কর্তৃত্ব হারাতে থাকে তখন তিনি সেনাবাহিনীকে নিয়ে সংস্কারবাদি শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে থাকেন। যখন দেখা গেল যে, মাওবাদিরা সংস্কার পন্থীদের মোকাবেলায় তেমন কোন উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রাখছেন না তখন সেনা বাহিনী গণমাধ্যমের সহায়তায় তা মোকাবেলা করা প্রয়াস চালান। যখন দেখা গেলো পার্টি সম্মেলন সমূহে উদার পন্থার বয়ান দিচ্ছে, ঐতিহ্যের কথা বলছে, জাতীয় শিল্প সাহিত্যের কথা বলছে- তখনই সেনাবাহিনী মাওবাদি লাইন অনুযায়ি তাদের বক্তব্য তোলে ধরতে থাকে। সেনা বাহিনী তথা কথিত উদারতাবাদ, ঐতিহ্যবাদ, ও জাতিয়তাবাদের বিরুদ্বে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। পার্টি তাঁর স্বীয় আদর্শ ও নীতির প্রশ্ন তোললে সেনাবাহিনী ও তখান তাঁর আদর্শ ও নিতির কথা বলে পরস্পরে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। মাও নিজে পার্টিকে পাশ কাটিয়ে সাধারণ জনগণের কাছে করেছিলেন চিনকে সঠিক ধারায় ধরে রাখতে। মাও তাঁর নিজস্ব জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তাঁর ইমেজ, তাঁর ব্যাক্তিত্ব ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র,
যুব কর্মীদেরকে লাল প্রহরী হতে আহবান জানিয়েছিলেন। মাওয়ের আহবানে কেহ কেহ রাস্তায় ও নেমেছিলেন। সংস্কার পন্থীদেরকে প্রতিরোধের ও চেষ্টা করা হয়েছিলো। জনতার সাথে লিন পিয়াং এর সেনারা ও সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন। সেনা বাহিনী বিশেষ করে সত্যিকার মাওবাদি সৈনিকেরা জনতাকে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব গ্রহনের জন্য সহায়তা করতে চেয়েছিল। সেনা সদস্যরা জনতার দিক থেকে তাঁর অস্ত্র সরিয়ে নিয়েছিলো। তারা বরং মাওবাদি আন্দোলনের বিরুধীদেরকে দমনের প্রয়াস নিয়েছিলেন। এমন কি ১৯৬৭ সালে ইউহানে যখন উপদলীয় কন্দল লেগে যায় তখন ও কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী জেনারেল চেন জাইদোওকে অপসারণ করে নেয়। বেশীর ভাব উপদলীয় কন্দলের লড়াইয়ে ও মাওবাদিরা জয়ী হয়েছিলেন। সংস্কারবাদি চেয়ারম্যান লুই সুখিকে পতন ঘটিয়ে ছিলেন। পুঁজিবাদী পথের পতিক দেং জিয়াও পিং ও পরাজিত হন, কিন্তু মাও তাতে বাঁধা দিয়ে তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কার না করতে বলেন। কিন্তু এর পর থেকেই বিপ্লবী শক্তি নানা ভাবে তারা প্রভাব হারা তে থাকেন। যদি ও বিপ্লবী শক্তিরই বিজয় হচ্ছিল কিন্তু গণ আন্দোলনের নানা স্থরে উপদলীয় কোন্দল দানা বাঁধতে থাকে। ১৯৬৭–১৯৬৮ সালে ক্রমাগত ভাবে স্বাধীন ভাবে মাওয়ের সহায়তায় গন আন্দোলন চলছিল। কিন্তু পরে যখন ছাত্ররা বিদ্যালয়ে ফিরে গেলো বা নিজদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেল, বিপ্লবী শ্রমিকরা কাজে ফিরে গেলো । সেই সময়ে বেশ কিছু গন নেতাকে পরিশোদ্বির নামে জেলে পুরা, দল থেকে বহিস্কার, ও অনেককে হত্যা ও করা হয়েছিলো। অত্যন্ত জন প্রিয় নেতা ওয়াং লি কে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। ক্যাম্পেইন কার্যক্রম যেমন, “ শ্রমিক শ্রেনীকে সকল নেতৃত্বের কেন্দ্রে বসাও”, “শ্রেণী নেতৃত্বেকে পরিশোদ্ব কর, ” এই সামগ্রীক আন্দোলন ও সংগ্রামকে কান্দ্রীয়ভাবে মাওবাদিরাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে “একের ভেতর তিন কমিটি” তত্ত্বের কারনে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে পার্টিতে মাওবাদিদের প্রভাব বৃদ্বি পায়, এবং মাওবাদি ভাবাদর্শের সৈনিকদের প্রভাব বলয় বাড়ে, লিন পিয়াং ও মাওসেতুং এর আদর্শিক চেতনায় বশ্বাসীদের শক্তি ব্যাপক ভাবে লক্ষ্য করা যায় ১৯৬৯ সালের নবম কংগ্রেসে। লিন পিয়াং কে “মাওয়ের সবচেয়ে মেধাবি ছাত্র” হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মাওয়ের ঘনিস্টতম সুরক্ষক হিসাবে ধরা হয় লিন পিয়াং কে। তাঁর আরেক নাম ছিলো “ চিনের মহান জেনারেল”। মাওয়ের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসাবে তিনি পার্টির সংবিধান ও রচনা করেছিলেন। চিনের সাধারণ নাগরিক গন গীত গাইত –“ দির্ঘ জিবী হও চেয়ারম্যান মাও এবং ভালো থেকে সহ সভাপতি লিন পিয়াং”! নবম কংগ্রেস কে বলা হয় চিনের মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পরিসমাপ্তি হিসাবে। ১৯৬৬-১৯৬৯ সালের সাংস্কৃতিক বিপ্লের পর, পার্টির সংশধনের পর, রাজনৈতিক ভাবে মাওবাদিদের বিজয় অর্জনের পর প্রশ্ন উঠেঃ এখন কি করিতে হইবে? লিন পিয়াং এবং তাঁকে ঘিরে যারা বিগত আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন তাদের বক্তব্য ছিলো বাম পন্থার আদর্শকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে । কিন্তু মাওসেতুং তা চাইতেন না। তিনি রক্ষনশীল নীতি পক্ষে ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি ডান পন্থার প্রশ্রয় দেন। ঘটনা ক্রমে এই মতপার্থক্য ও পদ্বতিগত দ্বন্দ্ব তাদের মাধ্যে এক দেয়ালের জন্ম দেয়। এর ফলে লিন পিয়াং এর পতন ঘটে। এই দ্বন্দ্বটিকে ভালো ভাবে বুঝতে হলে, আমাদেরকে মাওবাদের বিকাশ ও সংস্কারপন্থীদের রাজনীতির উন্মেষ ইস্যুটি বুঝতে হবে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবটি ছিলো মুলত চিনের ক্ষমতা কাঠামোর মাঝে বিদ্যমান দুটি পক্ষের মাঝে । প্রতিটিপক্ষই মহা উল্লম্পনের পর নিজেদেরকে সূ সংহত করার প্রয়াস চালায়। এই মহা উল্লম্পনের পর অনেকেই তাঁর জন্য মাওবাদিদেরকে দোষারোপ করতে থাকেন। উল্লম্পন যখন ব্যার্থ হয় তাঁর জন্য মাওবাদি অর্থ ব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়। ইহা এমন ভাবে দেখানো হয় যে, “রাজনীতিকে একটি কমান্ড হিসাবে দেখানোই” যেন এর ব্যার্থতার কারণ। সেখানে বিবেচনার বিষয় ছিলো শ্রেণী সংগ্রাম ও আদর্শিক বিষয়াদি। আদর্শ ও শ্রেণী সংগ্রাম অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকা শক্তি। সংশোধনবাদিরা পুঁজিবাদ উদারতাবাদ এবং সৌভিয়েত – সংশোধনবাদি অর্থনৈতিক মডেল অনুসরন করতে থাকে। চিনের মহা উল্লম্পনের পর মাওবাদিরা ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে । শ্রেণী সংগ্রাম ও আদর্শিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়েন। মাওবাদি ও সংশোধন পন্থার লোকদের মাঝে একটা আপোষ রফা শুরু হয়ে যায়। তারা ই অর্থনীতির কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে নেয়। মাওকে একজন আধ্মাতিক নেতার মত বসিয়ে রাখে। লুই শুখির কাছে চলে যায় সকল আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব তাঁর সাথে রাষ্ট্র ও অর্থনীতি। মাওসেতুং ক্রমাগত ভাবে তাঁর প্রভাব হারাতে থাকেন- গন মাধ্যম, সংস্কৃতি ও প্রচারনার সকল ক্ষেত্র তাঁর হাত ছাড়া হয়ে যায়। যখন মাওবাদি
ও সংশোধনবাদিদের মধ্যে লড়াই শুরু হয় তখনই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সুচনা হয়। যা প্রকারান্তরে ক্ষতার লড়াইয়ে রূপান্তর ঘটে। ইহার প্রভাব থেকে দেশের অর্থনীতি ও বাহিরে ছিলো না। অধিকন্ত, এই পরিস্থির কারনেই গন আন্দোলনের সুচনা ঘটে। শাসক চক্র পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলে। তারা ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক উৎপাদিত পন্যাদি মুক্তবাজারে বিক্রিকরার জন্য কোন কোন প্রদেশে আদেশ জারি করে দেয়। চেন বুদা ও লিন পিয়াং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে বাম পন্থার সংস্থা গুলোকে পুনঃ ঘটনের চেষ্টা করেন। তবে যে সকল এলাকায় লিন পিয়াঙ্গয়ের সেনারা শক্তিশালী ছিলো কেবল সেখানেই তা সফল হয়। যে সকল এলাকায় তা সম্ভব হয়নি এবং তা পার্টি লাইনের বাহিরে থাকায় ফ্লাইং লিফ হিসাবে দেখানো হয়।
দি ফ্লাইং লীপ শব্দটি বিভিন্ন প্রদেশে নন অফিসিয়ালী ব্যবহার করা হচ্ছিল। উদ্দেশ্য ছিলো এর মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারনে ভূমিকা রাখা । আর প্রচেষ্টা নেয়া হয় । মহা উল্লম্পনের পতনের আগেই। ইহা ১৯৬৮-১৯৭১ সালের সময় কালে সেনা বাহিনীর উদ্দোগে পরিচালিত হয় এর প্রধান কাজটাই ছিলো নানা প্রদেশে গড়ে উঠা কার্যক্রমকে এক সম্মিলিত ছাতার নিচে নিয়ে আসা। চেষ্টা ছিল মাওবাদকে সকল পর্যায়ে প্রয়োগ করা বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে । ফ্লাইং লিপের সময় মাওবাদিদের নীতি ছিলো লাল পতাকা কে উর্ধে তোলে ধরা। তখন আরো একটি ভিন্ন ঘটানা ঘটতে থাকে যে, গন কমিউনের গুরুত্ব কমতে থাকে সংশোধন পন্থীরা কৌশলে কমিউনকে ধ্বংস সাধনের জন্য সকল অপ কৌশল তারা প্রয়োগ করে। তাই চাইছিল পুনঃ রায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ফিরে আসুক। তবে যখন ফ্লাইং লিপ জোরদার হয় তখন আবার কমিউন ব্যবস্থার জন প্রীয়তা বাড়তে থাকে। আমরা যদি মহা উল্লম্পনকে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করি তবে ফ্লাইং লিপকে দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসাবে ভাবতে পারি। মহা উল্লম্পন এবং উরাল উল্লম্পনের মাঝে বেশ ফারাক আছে। মাওবাদিরা চাইছিলো গন কমিউনকে সম্প্রসারণ করতে আর উরাল পন্থীরা ছিলেন তার বিপরীত। তারা চাইত স্থানীয় উদ্যোগ কে উৎসাহিত করতে। অধিকন্তু, অর্থনৈতিক কর্ম কান্ডে সামরিক বাহিনী এক বিরাট ভুমিকা পালন করতে থাকে। উতপাদনকে ও গেরিলা যুদ্বের সাথে তুলনা করেন মাওবাদিরা। তারা মনে করেন সাম্যবাদে পৌছার আগে উৎপাদন বৃদ্বি করা গেরিলাদের এক মহান দায়িত্ব ও বটে। ঐতিহ্য গত বিষয়াদিকে মাওবাদের অঙ্গ করে তুলা হয় । রাজনীতিকে কমান্ডে নিয়ে আসা হয়, অর্থাৎ আদর্শের প্রচার, শ্রেণী সংগ্রামকে জোরদার করন এবং ডান পন্থার ও সংশধনবাদের অপসারণ করা। মাওবাদের সাফল্যের জন্য অর্থনীতিকে জোরদার করা, আদর্শিক চেতনাকে শানত করা এবং জনগণের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার কাজ চলতে থাকে। লং মার্চের চেতনাকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস নেয়া হয় এবং যেখানে – আত্মকেন্দ্রিকতা বাদ দেয়া, ত্যাগ স্বীকার করা, জনগণের সেবা করা মহান মূল মন্ত্রে পরিণত হয়। গেরিলা লড়াইকে সামাজিক উন্নয়নে রূপান্তর করতে বলা হয়। তখন মাওসেতুং ও লিন পিয়াং এর গুরুবাদের বিকাশ ঘটে। সামাজে মাওসেতুং এর চিন্তা ধারা ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করে। সকলের মাঝেই সাম্যবাদ কায়েমের এক প্রতিজ্ঞা ফোটে উঠে। ১৯৭১ সালে লিন পিয়াং এর রহস্যজনক মৃত্যুর পর সাংস্কৃতিক বিপ্লব স্থিমিত হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে মাওয়ের নেতৃত্বে উরাল মহা উল্লম্পন এগোতে থাকে। বিশেষ করে ১৯৬৯ সালে নবম কংগ্রেসের পর থেকে তা জোরদার হয়। তবে, মাওয়ের দু টি বিষয়ে ভীতি ছিলো- প্রথমতঃ মহা উল্লম্পনের ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, অব্যবস্থাপনা, এবং মহা উল্লমনের ব্যর্থতা তাঁর ইমেইজকে বিনাশ করে দিতে পারে। মাওয়ের মাঝে মৃত্যু চিন্তা ঝেকে বসে তিনি তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তায় ছিলেন দ্বিতীয়তঃ মাওয়ের এও চিন্তা ছিলো যে যদি লিন পিয়াং এর সামরিক বাহিনী বেশী শক্তি শালী হয়ে উঠে তবে তিনি ক্ষমতার বলয় থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। ইতিমধ্যেই সেনারা রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রাখতে শুরু করেছিলো। মাওয়ের যেখানে লক্ষ্য ছিলো জনগেন ক্ষমতায়ন সেখানে যখন তিনি দেখলেন যে তাঁর পরিবর্তে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বেড়েই চলেছে তখন সত্যি তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। উরাল উল্লম্পনের লক্ষ্যই ছিলো জনগনের অধিক ক্ষমতা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করা। কিন্তু অতিব পরিতাপের বিষয় হলো যে যখন দেখা গেল মাও চেন ওই র মৃত্যুকালিন কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করছেন সেদিন থেকেই বুঝা গেলো যে মাওয়ের মাঝে পরিবর্তন এসেছে। তিনি লিন পিয়াং এর বিরুদ্বে গিয়ে ডান পন্থাকে উৎসাহিত করছেন। এর পর থেকে আমরা
দেখছি যে তিনি সকল ডান পন্থীদেরকে পুনর্বাসন শুরু করেন। যারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় বাদ পরেছিলেন তিনি তাদেরকে বড় বড় পদে বসিয়ে পার্টিকে নতুন ভাবে সাজাতে লাগলেন। তিনি তাঁর ক্ষমতা হারাতে লাগলেন। লিন পিয়াং এর মৃত্যুর পর তিনি সেনাবাহিনীতে ও কর্তৃত্ব হারালেন। এর ই ধারা বাহিকতায় ১৯৭৩ সালে পুঁজিবাদের এজেন্ট দেং জিয়াও পিং ক্ষমতায় আসেন এবং তিনি তাঁর ক্ষমতাকে পাকা পুক্ত করতে থাকেন।
অধিকন্তু দেশের অভ্যন্তরে বাম পন্থার নীতি ও বহির্বিশ্বে মাওবাদি লড়াকু মনোভাব ও নীতি লিন পিয়াং গ্রহন করেছিলেন। জন যুদ্বের দির্ঘায়ু কামনায় – লিন ছিলেন অকুতভয় নিবেদিত প্রান ব্যক্তি। তাঁর এক্টি নিবন্দ্ব তিনি ১৯৬৫ সালে বলেছিলেন বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের পথ ঘটাতে হবে। বিশ্ব গ্রাম দিয়ে বিশ্ব নগরকে পরাজিত করতে হবে । মুক্ত করতে হবে দুনিয়ার নিপিড়িত মানুষকে। লিন পিয়াং বলেছেন, বিশ্ব নগরের আন্দোলন গুলো ও চিনের আদলে পরিচালিত হতে থাকবে। লিন পিয়াং এও মনে করতেন এই বিশ্ব গন সংগ্রাম পরিচলনা করলে চীন আন্তর্জাতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। কুটনৈতিক ভাবে নানা সমস্যায় পড়তে পারে । কিন্ত এর পর বিশ্ব বিপ্লবের এই ধারা থেকে বিরত থাকা চিনের উচিৎ হবে না । তা নবম কংগ্রেস স্বিকার ও করে নেয়। এই বার্তা সকলের কাছে পৌছে দিতে চেয়েছিলেন যেন দুনিয়া জোড়ে সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিরোধ জোরদার করা হয়। বিশ্ব সর্বহারা শক্তি তাঁর স্বরুপে প্রকাশ পায়। আর এই ধারাই মার্ক্সবাদ ও সংশোধন এর পার্থক্য কে স্পষ্ট করে দেয়।
১৯৭০ সালে দৃশ্যত মনে হচ্ছিল যে মাওসেতুং তাঁর আত্ম বিশ্বাস কিছুটা হারিয়ে ফেলেছেন। বিশ্ব সর্ব হারার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে উনার মনে হয়েছিলো যে, লিন পিয়াং এর নিতি ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। তিনি ক্রমে সংশোধনবাদিদের প্রভাব বলয়ে চলে যান। বিকল্প পন্থার খোজ করেন। আর নতুন নীতি হিসাবে চিনের জাতীয়তাবাদি ধারনাকে রাজনীতির আওতা ভুক্ত করেন যা বিশ্ব সর্বহারার রাজনীতির বিপরীত ধারা। মাও লিন পিয়াং এর দলইলাদিকে পুনঃ মূল্যায়নের প্রতি গুরুত্বারূপ করেন। তিনি মনে করেন লিন পিয়াং এর চিন্তা ধারায় বিশ্ব সর্বহারার শক্তিকে অতিমূল্যান করা হয়েছে। তিনি দেখতে পান লিন সৌভিয়েত ও পশ্চিমাদেরকে এক কাতারে এনে শত্রুর লাইনে দাড় করিয়ে দিয়েছেন। মাও সৌভিয়েতকে প্রধান শত্রু বিবেচনা করে পররাষ্ট্র নীতি প্রনয়ন করেন। ফলে চীন ক্রমে সৌভিয়েত ইউনিঊনের চেয়ে পশ্চিমাদেরকে অধিকতর বন্দ্বু হিসাবে বিবেচনা করতে থাকে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মাওসেতুং ও চীন কুটনোইতিক ভাবে পিনুচেটকে সমর্থন করেন। আর সাম্রাজ্যবাদের সাথে সুর মিলিয়ে আংগোলাকে এবং পশ্চিমাদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের স্বাধিনতার বিরুধে পাকিস্তানকে সমর্থন জানায়। দিনে দিনে মাও পশ্চিমা ধাঁচের কূটনীতি প্রয়োগ করতে থাকেন। অথচ ১৯৬০ সালে মাও ক্রুসচেভকে সমলোচনা করেছিলেন পশিমাদের সাথে শান্তি পুর্ণ সহা বস্থানের জন্য । মাওবাদিরা দাবী করেন সৌভিয়েতরা আন্তর্জাতিক সর্বহারার স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়েছিলো জাতিয়তাবাদি ধারার কাছে। তারা সামাজিক সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হয়েছিল। তিক্ত হলে ও সত্য যে, স্বয়ং মাও ই ১৯৭০ সালের পর থেকে একই পথে হাঠেন। তাঁর এই নীতির কারনে সারা দুনিয়ার মাওবাদি আন্দোলন সংগ্রাম নানা ভাবে মারাত্ম ক্ষতির সম্মোখিন হয়।
এটা সকলেই জানেন যে, চীনের কমিঊনিস্ট পার্টি তাঁর নিজের ইতিহাস নতুন ভাবে লিখেছে। লিন পিয়াং এর তিরোধানের পর সকল কিছু উলট পালট হয়ে গেছে। গত কাল যিনি ছিলেন নায় আজ তিনি হয়ে পরেছেন ভিলেন বা খল নায়ক। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে লিন পিয়াং ছিলেন মাওসেতুং এর পরের দ্বিতীয় ব্যাক্তি। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহর ব্যবধানে তিনি হয়ে গেলেন অপাংতেয়। তাঁর বিরুদ্বে অভিযোগ তুলা হলো তিনি নাকি সামরিক অভ্যুত্থান করে চিনের ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন।
অথচ এই সম্পর্কে সত্যকার কোন প্রমান ও নেই। তাঁর বিরুদ্বে অভিযোগ তুলাহোল তিনি সৌভিয়েটের চর। ফ্যাসিবাদি, ও সামন্তবাদি মানুষ। লিনের নামে প্রহসনের বিচার অনুস্টান করা হলো। সেই বিচারে মিথ্যা বানোয়াট দলিল প্রদর্শন করা হলো।তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিচার প্রক্রিয়াটি লিনের বিপক্ষে যায়। তাঁর পক্ষ সমর্থনের ও কোন সুযোগ ছিলো না ।
গোড়ামীবাদি মাওবাদিরা লিনকে দুষি হিসাবেই ভেবে চলেছেন। অথচ তাঁর কোন ভিত্তিই নেই। তারা কিছু গাজা কুরী নিবন্দ্ব প্রবন্দ্ব প্রকাশ করেছে যা সেই প্রহসনের বিচারের সময় ব্যবহার করা হয়েছিল । তারা বুদ্বি বৃত্তিক ভাবে বা অনুসন্দ্বানের পদ্বতী অনুসরন করেন নি। তারা সেনামের গল্পের মত কিছু গৎবাঁধা কল্প কাহিনী জোড়ে দিয়ে লিন কে প্রিবিপ্লবী হিসাবে হাজির করার প্রয়াস পেয়েছে। অনেক দেশের মাওবাদি আন্দোলন কারীদের মাঝে গবেষণার প্রতি ঝোঁক নেই। বিগত সিকি শতাব্দি আগে লিন পিয়াং কি করেছিলেন তা নিয়ে নানা অবাস্তব ভাষ্য তাদের মাঝে খনও বিরাজ মান । তাদের মুখে যে সকল ভাষ্য শোনা যায় তা অনেকাংশেই চিনের বিপদ্গামী রাষ্ট্র যন্ত্রের বক্তব্য। এই সকল বক্তব্য পক্ষ পাতিত্বমূলক পুলিশ রিপোর্ট ছাড়া আর কিছু ই নয়। তাদের এই ধরনের বক্তব্য সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা এই কল্প কাহিনিকে সমাজতান্ত্রের ইতিহাস হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। মাওবাদিরা সর্বদাই মাওয়ের এপাশ ওপাশ করার বিষয়টিকে জায়েজ করার প্রয়াস চালান। তাদের সর্বাত্মক প্রয়াস থাকে কিভাবে লিন পিয়াং কে দোষী সাব্যস্থ করা যায়। গোরামীবাদিরা প্রথমেই একটি সিদ্বান্তে উপনিত হয়ে বসে থাকে । তাদের সামনে অনেক বাস্তব সম্মত গবেষণা প্রসুত তথ্য দিয়ে ও তাদের মতামতকে বদল করা যায় না । গোরামিবাদিদের অবস্থাটা এমন যে তারা “ জুতা পায়ে দেবার সময় তা না লাগলে পা কাটে ফেলার পক্ষ পাতি”। পক্ষান্তরে, বৈজ্ঞানিক পদ্বতি হলো, কোন বিষয়েই আগে থেকে সিদ্বান্ত গ্রহন করা সমিচীন নয়। বৈজ্ঞানিক পদ্বতি হলো সকল প্রকার তথ্যাবলী যথা সম্ভব বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্বান্তে যাওয়া উচিৎ। এক সত্যের সন্দ্বানী বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষ কখনও সত্য কে ভয় পায় না । বরং তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়ে লড়াই করে। সত্য নিজেই কথা বলে। আমরা ও সেই পথের যাত্রী।
আমাদের চার পার্শ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা সত্যকে গুরুত্ব দেয় না , তারা প্রকৃত বিজ্ঞানকে নিয়ে ভাবে না। বহু লোক আছেন যারা শত প্রমান দিলেও নিজের মত পাল্টাবে না । গোঁড়ামি তো গোড়ামীই । আমরা ও তাদের পরওয়া করিনা । মিথ্যা মিথ্যাই আমরা কত বার বলব। অনেক মার্ক্সবাদি আছেন যারা নিজেদেরকে মার্ক্সবাদি বলে পরিচয় দেয়। আবার লাল পতাকার ও ধারক। তারা ই আবার লাল পতাকার পতন চায়। আমরা ই সত্যের পূজারী আলোকিত কাফেলা। আমরা বিপ্লবের পথ যাত্রী। সামগ্রীক পরিবর্তনে বিশ্বাসী। আমরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বস্তুগত ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করি। আমরা লিন পিয়াং এর ইতিহাসকে নির্মোহভাবে বিশ্লেষন করেছি। আমাদের বিবেচনায় লিন পিয়াং ছিলেন এক জন সত্যিকার বিপ্লবী। মুক্তির দিশারী। তিনি সর্বদাই সর্বহারার পক্ষে ছিলেন। কোন প্রকার বিচ্যুতি তাঁকে স্পর্শ করেনি। তিনি আমাদের আলোকিত মানুষ- লিডিং লাইট!