(llbangla.org)
“বন্যা ও ভুমি ধ্বসে নেপাল ও উত্তর ভারতে প্রায় ২০০ জন মানুষ মারা গেছেন এবং এখন ও অনেক লোক নিখোঁজ আছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন”।
নেপাল এখন মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত, ভুমি ধ্বস ও বন্যার কারনে এ পর্যন্ত ১০৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত বলে জানানো হয়েছে, কোন কোন গ্রাম একেবারেই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী একে জাতীয় দুর্যোগ বলে অভিহিত করেছেন।
আরো ১৩৬ জনের মত নাগরিক নিখোঁজ বলে জানানো হয়েছে, দেশটির কর্তৃপক্ষ কলেরা সহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন।
এবং
“ইতিমধ্যেই প্রায় ১০টি জেলা বন্যা আক্রান্ত হয়ে গেছে, উদ্বারকারীরা ৫৪ টি মৃতদেহ সেখান থেকে উদ্বার করেছেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তা কেশ বাহাদুর শাহী জানিয়েছেন এই মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে”।
গত বৃহস্পতিবার থেকে এই অঞ্চলে বৃস্টি হচ্ছে। রাজধানী কাঠমন্ডুর পশিমে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
দেশটির মহা সড়ক এবং সড়ক বন্যার পানিতে বা ভূমিধসের কারনে চলাচলে বাঁধা প্রাপ্ত হছে, ফলে উদ্বার কাজ এবং গ্রামাঞ্চলে ত্রান পৌছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বৈদ্যুতিক লাইন ও যোগাযোগের টাওয়ার সমূহ বন্যার জলের তলে ডুবে গেছে, হাজার হাজার মানুষ সেখানে পানি বন্দ্বী বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে – তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমূহ কেন প্রায়স নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে, প্রথম বিশ্ব কেন নয়? কেনই বা ল্যাতিন অ্যামেরিকায় শত শত ভুমি ধ্বস হয়, উত্তর অ্যামেরিকায় তা কেন হয় না ? ভুমিকম্পের শিকার হয়ে শত শত লোক মারা যায় অথচ পশ্চিম ইউরূপে তা হয় না কেন ? সকল খরা আর দুর্ভিক্ষ কেবল আফ্রিকায় কেন ? কেন এশিয়ায় ? অ্যামেরিকায় কেন হয় না? আর কেন হয় নেপালে ?
একটি ‘জগন্য কারণ’ রয়েছে তার আবার অনেক নাম। পুঁজিবাদ, ভুসাম্রাজ্যবাদ, প্রথম বিশ্ব, বুর্জোয়া বিশ্ব ও তাঁদের দুষর ধনিক শ্রেণী। বিগত কয়েক শতাব্দি যাবত সাম্রাজ্যবাদ প্রলেতারিয়ান বিশ্বের উপর শোষণের জাল বিস্তার করে রেখেছে। তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতিকে মানুষের জন্য নয় কেবল মুনাফা তৈরীর ক্ষেত্র হিসাবে সাজানো হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি, এবং সাংস্কৃতিক প্রতিস্টান সমূহকে সাম্রাজ্যবাদ পঙ্গু করে রেখেছে।
তৃতীয় বিশ্বে যে অবকাঠামো রয়েছে তা রপ্তানির জন্য বেশী উপযোগী করে তৈরী করা হয়াছে, এর সম্পদ, কাঁচামাল সব কিছুই প্রথম বিশ্বের সেবার জন্য। তা তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য ব্যবহার করা বা তাঁদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না। পুঁজিবাদ গরীব মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেয় না। তাঁদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার দিক টি তেমন গুরুত্ব দেয় না । পুঁজিবাদ গরিব মানুষের জীবন মান উন্নয়নের চেয়ে তাদেরকে অধিক মুনাফা ও ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। একই ভাবে পুজিবাদিরা প্রকৃতিকে ও কেবল মুনাফা এবং ব্যবহার দ্রব্য হিসাবে দেখে থাকে। প্রকৃতির অপব্যবহার ও প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনার কারনে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তাঁর মারাত্মক শিকার হয় সাধারণ গরীব মানুষ। পুজিবাদিরা তাঁদের জীবনকে এক পয়সার মূল্য দেয় না। তদের জীবন, চিন্তা, চেতনাকে উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আদতে প্রাকৃতিক নয়। তা কে খুব সহজেই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোকাবেলা করা সম্ভব। কেবল প্রতিক্রিয়াশীল মানুশেরাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে একটি দুর্ঘটনা, দুর্যোগ ও বিপদ হিসাবে দেখে থাকে। দায়িত্ব এড়ানোর জন্যই মূলত এরূপ কথা বার্তা তারা বলে থাকেন। এটা তো তাদেরই ব্যার্থতা যাদের এ বিষয়ে দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্ব হলো – পুঁজিবাদের, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের, প্রথম বিশ্বের, বিশ্ব বুর্জোয়া ও তাঁদের সহযোগীদের। প্রতিক্রিয়াশীলরা মানুষকে শেখায় মানুষের দুঃখ, কষ্ট, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি অনিবার্য্য বিষয়– যা অলংগনীয়। যারা ক্ষমতায় আছেন তারা মানুষকে বুঝাতে ও বিশ্বাস করাতে চায় সমাজ বা এই দুনিয়ার কিছুই জনগণ পরিবর্তন করতে পারবেন না।
বাস্তবতা হলো বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ হলো প্রধান সমস্যা। যতদিন পুঁজিবাদ থাকবে তত দিন মানুষের দুঃখ ও কষ্ট থাকবে। যতদিন পুঁজিবাদ থাকবে তত দিন মানুষ যুদ্বের ঝুকিতে থাকবে। দারিদ্রতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের পিছু ছাড়বে না। পক্ষান্তরে, লিডিং লাইট আমাদেরকে শেখায় মানুষের দুখে কষ্টে থাকার কোন কারনই নেই। আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এমন এক অবস্থায় পৌছে গেছে যে, যদি সমাজকে নতুন ভাবে সাজানো যায় তবে মানুষ ও পৃথিবীর কোন সমস্যা হবার কথা নয়। সেখানে প্রতিটি মানুষ সুখে, শান্তিতে, নিরাপদে, আনন্দে, নায়ক–নায়িকার মত মার্যাদা পূর্ন জীবন যাপন করতে পারবেন।
সমস্যা কিন্তু প্রতিদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় কোন প্রকার নিয়ন্ত্রন নেই। আমাদের প্রিয় পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ এখন পুঁজিবাদী ভোগবাদের দর্শন ও যন্ত্রের সামনে হুমকির মূখে পরেছে। প্রকৃতিকে দুমড়ে মুচড়ে মুনাফার জন্য পুঁজিবাদ পাগলের মত আচরন করছে। ফলে, আজ আমাদের আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন রূপ ধারন করেছে। বিশ্ব জলবায়ু আজ দিনে দিনে বিপদজনক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। পানির স্তর বৃদ্বি পাচ্ছে, আজ সারা দুনিয়াই বিপদ জনক হয়ে উঠছে। পৃথিবীর বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের অপরিকল্পিত আহরন আমাদের জীবন ও অন্যান্য প্রানীদের অস্থিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। এত কিছুর পর ও পুঁজিবাদ আজো গরীবদের অবজ্ঞা করছে – অপব্যবহার করছে প্রতিদিন। দুর্ভিক্ষ মহামারী আজ সকল দেশের জন্যই হুমকি হয়ে আছে। অনেক জায়গায় প্রয়োজনীয় পানীয় জল ও মানুষ পাচ্ছেন না। চলছে গনহত্যা। দারিদ্র দূরীকরন অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে দেখা দিয়েছে। আজকে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবাস্থা এবং পরিবেশের মধ্যে একটা তিব্র দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যা পুঁজিবাদী বিশ্ব ও প্রলেতারিয়েত বিশ্বের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বকে তিব্রতর করছে। মানবতা আজ একটি নাঙ্গা তলোয়ারের নিচে। মানুষকেই আজ বাছাই করতে হবে। তাঁদের সামনে দোয়ার খোলা রয়েছে। তারা কোন পথে এগোবেন। সাম্যবাদ না কি পুঁজিবাদের পথে? লিডিং লাইট দুনিয়াকে বাঁচাবে। #শিহাব