(llbangla.org)
মার্কিন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা (সি আই এ ) এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটির সংক্ষিপ্ত আকারই হলো ৫০০ পৃস্টা। আর এর মূল প্রতিবেদনটি ৬০০০ পৃস্টার চেয়ে ও বেশী। এই প্রতিবেদনটির বিষয় বস্তু হলো সন্দেহ বাজন মানুষের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে তারা কি কি ধরনের নির্মমতা দেখায়। কালো তালিকা ভূক্ত আসামীদেরকে কি ধরনের নির্যাতন চালায় তার একটি ধারনা পাওয়া যায় এই প্রতিবেদনে। পানিতে চুবানোর পদ্বতী এর মধ্যে অন্যতম। সেই সময় ভুক্তভোগীরা মনে করতে থাকে এই বুঝি মরে গেলাম। প্রতিবেদনে বেশ কিছু নতুন তথ্যও বেড়িয়ে এসেছে। যা আগে আমাদের অনেকেরই জানা ছিলো না । প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ২০% বন্দী এখনও কারাগার আছে যারা অন্যায় ও “বে আইনীভাবে আটক” হয়েছেন। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা মোটেই দুষি নন, যারা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। অধিকন্তু, সি আই এ জোড় করে অনেককেই বন্দী করে এবং তাদেরকে নির্মম ভাবে নিপীড়ন করে থাকে। “ উলটো দিকে হাটুর নিচ দিয়ে হাত দিয়ে কান ধরে মাথা নিচু করে দিনের পর দিন মনুষকে রেখে দেয়”। “মজারভোজ” নামে একটি অত্যন্ত অমানবিক কাজ করে সি আই এ । ইহা তৈরী করা হয় জ্বাল মরিচ, বাদাম, পাস্তা দিয়ে- যা অসামীদের পায়ু পথে প্রবেশ করিয়ে দেয়। এরা আসামীদের শিশু ও পরিবারের অন্যান্য নারীদেরকে যৌন নিপিড়নের ঘটনা ঘটায় স্বীকারুক্তি আদায়ের জন্য । বরফ গোসল তো একটি সাধারন ব্যাপার। এটার আয়োজন করা হয় এই ভাবে যে, ৬৬ ঘন্টা পর্যন্ত একজন আসামীকে বরফের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। খালিদ শেখ মুহাম্মদকে গ্রেফতারের পর পর ই বরফে বসিয়ে হাজার হাজার প্রশ্ন করা হয়েছিলো। সি আই এ তাকে কোন প্রকার বিচার ও অভিযোগ ছাড়াই নিজেদের আওয়ত্বে রাখে। বন্দ্বীকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তারা নির্মম নির্যাতন চালায়। বুশের আমল থেকে এখন পর্যন্ত এমন অনেক ঘটনা আছে যা তারা বিচার বিভাগকে জানায় না। তারা অজ্ঞাত স্থানে কারাগার খুলে মানুষ আটক করে রিতিমত এক ভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিপিড়ন করে দমন কার্য চালায় – যা আমেরিকায় এখন ওপেন সিক্রেট বিষয়।
সত্যিকার ভাবে দেখলে এটা পরিস্কার যে মার্কিনিরা এই বিষয়ে জানে না, তা মোটেই ঠিক নয়। তারা সকলে জানেন যে আমেরিকা এখন সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে বহু মানুষকে বন্দী করছে। তাদের সাথে অমানবিক আচরন ও করছে – তা সকলেরই জানা । সি আই এ রাস্তা থেকে মানুষ তুলে নিয়ে তাদেরকে গোপন আস্তানায় নিয়ে যাচ্ছে । গনমাধ্যমে খবর হলেও তার কোন প্রকার কিনারা কেঊ করতে পারেন না । অনেক সময়েই ভুল মানুষ, নিরপরাধ লোক, এমন কি একেবারেই সাধারন লোকেরা এর শিকার হচ্ছেন। এই ধরনের “ঘুম ও খুনের” ঘটনার সংবাদ গনমাধ্যমে প্রকাশ হলেও জনগণের মাঝে খুব কমই প্রতিক্রিয়া হয়। সম্ভবত সবচেয়ে বেশী আলোচিত হয়েছিলো আবু গরীব কারাগারের বন্দীদের সাথে মার্কিন মেরিন সেনাদের অমানবিক আচরনের বিষয়টি। তারা ইরাকী বন্দীদের সাথে নির্মম আচরনের দৃশ্য ছবি তুলে প্রকাশ করে দিয়েছিলো। আমেরিকার ভেতরে ও এখন নানা ভাবে মানুষের উপর নিপিড়ন চালানো হয়ে থাকে। রাস্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে বেশ বাড়াবাড়ি করা হয়। ২০০৯ সালের জরিপে দেখা গেল এত সব কিছুর পর ও আমেরিকার মানুষ সেই ব্যবস্থার পক্ষেই তাদের রায় প্রদান করেছেন। মার্কিন দেশের বেশীর ভাগ মানুষ অর্থাৎ ৭১% মানুষ বলেছেন, নির্যাতন করা ক্ষেত্র বিশেষে দরকার আছে। ৪৯% আমেরিকান বলেছেন, “কোন কোন সময়”, “প্রায়ই” এবং ২২% বলেছেন “একেবারেই উপায় না থাকলে নির্যাতন করা ন্যায় সঙ্গত” । মাত্র ২৫% আমেরিকান বলেছেন যে, নির্যাতন করা “কোন ভাবেই” ন্যায় সঙ্গত নয়। এই জরিপে আমেরিকানদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে। তবে, কিছু কুসংস্কার প্রভাবিত মানুষ বলেছেন নিপিড়ন ন্যায় সঙ্গত। এই সমস্ত কারনে এটা বলা যায় যে বেশীর ভাগ আমেরিকান এখনও নির্যাতনে বিশ্বাসী। (২)
এটা একেবারেই একটি স্বাভাবিক বিষয় যে, মার্কিনীরা নির্যাতনের বিরুদ্বে যাবে না। যেতে পারে না। তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই মনে করেন যে, আমেরিকার পরিচালিত নির্যাতনে সমর্থন দেয়ার মাঝে তাদের স্বার্থ নিহিত আছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশের জনগণের মনোভাব এমনটিই হবে – এটাই স্বাভাবিক । যখনই তাদের সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্বে কিছু করা হয়, তখন তারা মানবাধিকারের প্রতি কোন প্রকার শ্রদ্বা দেখায় না। সাম্রাজ্যবাদী জনগৌস্টির মানুষেরা সর্বদাই একই সূরে কথা বলে থাকে। আমরা আমেরিকার লোকেদের কাছ থেকে প্রায়স একটি কথা শোনতে পাই যে, তারা নাকি দুনিয়া জোড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সূরক্ষা করছেন। তাই তারা কোথাও বাঁধা প্রাপ্ত হলে সেই বাঁধা অতিক্রম করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেন। সেই ব্যবস্থার অংশ হিসাবেই তারা ড্রোন হামলা, নির্দয় সেনা বাহিনী ও গোয়েন্দা বহর তৈরী করেছেন।
প্রথমবিশ্ব হলো সত্যিকার অর্থেই একটি ভন্ডামীর জায়গা। ইহার বিনাশ দরকার। আমরা তাদের কে ‘না’ বলছি। আমরা তাদের মত করে দুনিয়াকে দেখতে চাই না । আমরা এমন একটি বিশ্বের কথা ভাবি যেখানে, প্রতিটি মানুষ সম-মর্যাদা, ও সত্যিকার সমতা পাবে। তারা তাদের সাম্রাজ্যবাদকে ঠিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ব চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা তাদের সাথে নেই। আমরা আমাদের কথা ভাবব। আমরা আমাদের পথ দেখব। আমরা আমাদের পথে চলব।# শিহাব