(llbangla.org)
সাম্প্রতিক কালে কতিপয় ব্যাক্তির বক্তব্যের জবাবেঃ
“ কতিপয় বিবর্তনবাদি জীব বিজ্ঞানী, যেমন রিচার্ড লিউ অন্তিন এবং স্টিফেন জে গোল্ড, তাঁরা উভয়ই তাদের কার্য ক্রমে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে ব্যবহার করার প্রয়াস পেয়েছেন। তাঁরা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে জ্ঞান অনুসন্দ্বানের একটি হাতিয়ার হিসাবে গ্রহন করেছিলেন। লিউ অন্তিন তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন এই ভাবেঃ
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সত্যিকার ভাবে কোন কার্যকরী পদ্বতী নয়, তা কোন কালে ছিল ও না, তা বাস্তবে কোন সমস্যার সমাধান ও দিতে পারে না। ইহা বরং চিন্তার ক্ষেত্রে উদারতা ও গোড়ামীপনা থেকে মানুষকে বেড় করে আনতে সাহায্য করতে পারে। ইহা আমাদেরকে বলে, ‘ ইতিহাস আমাদেরকে প্রশিক্ষিত করতে পারে। মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতিতে দ্বৈততা বিদ্যমান। পরিস্থিতি পরিবেশগত কারনে পরিবর্তিত হতে পারে, তা দরকার হলে একটিকে বিনাশ করে হলে ও অন্যটির বিকাশ ঘটিয়ে থাকে। ইহা মনে করিয়ে দেয় সময় ও স্থান সম্পর্কে সচেতন হবার জন্য। গুনগত পরিবর্তন ঘটলে অজান্তেই পরিস্থিতিতির পরিবর্তন হয়ে যাবে’। সর্বপরি ইহা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, ‘ পরিবর্তনশীল বাস্তব পৃথিবীতে আমরা সতর্ক হই বা না হই নানা পরিস্থিতিতিতে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবেই’।
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে অনুসন্দ্বানের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে গিয়ে মিঃ গোল্ড ও একেই রকমের মতামত দিয়েছেন । তিনি লিখেছেন, ‘ দ্বান্দ্বিক চিন্তার পদ্বতীটি পশ্চিমা তাত্ত্বিকদের গুরুত্ব সহকারে গ্রহন করা উচিৎ, তবে দ্বিতীয় বিশ্বের লোকেরা যেভাবে ইহাকে একটি বিশেষ আকৃতি দিয়ে তাদের রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়েছেন আমাদের ঠিক সেই ভাবে গ্রহন করার দরকার নেই’। অধিকন্তু, যখন ইহাকে পরিবর্তনের দর্শন হিসাবে হাজির করা হয়, তখন তা আর গোড়ামীপনার বিষয় থাকে না, এতে তিনটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান থাকে যা সামগ্রীকভাবে একটি ব্যবস্থার ভেতর ও বাহিরের পরিবর্তন সাধন করে দিতে পারে। একেই রকম ভাবে ইহা ‘ ভেতর ও বাহিরের’ পরিবর্তনের নিয়ম হিসাবে তাঁর সাথে সম্পর্কিত উপাদানের ও পরিবর্তিন করে দেয়ঃ ‘ গুনগত পরিবর্তন পরিমাণগত পরিবর্তন করে’ রাষ্ট্রের অঙ্গপতঙ্গে ও একেই প্রভাব দেখা যায়; এবং ‘না সূচকতার না সূচক’ ইহা দ্বারা যা বুঝানো হয় তা হলো ঐতিহাসিক ভাবে কোন রাষ্ট্র একবার পরিবর্তন হলে তা আর আগের মত হবে না বা পুরাতন জায়গায় আর ফেরত যেতে পারবে না”।
এই বক্তব্যে অনেক বিষয়েরই অবতারনা করা হয়েছে। প্রথমতঃ বলতে হয় কিছু বিজ্ঞানী আছেন যারা তাদের কাজের পদ্বতী হিসাবে ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে ব্যবহার করেন, আবার এমন বেশ কিছু বিজ্ঞানী আছেন যারা ধর্ম ভিত্তিক বিজ্ঞান গবেষণা করে থাকেন। তাদের অনেকেই ইসলাম ও ক্যাথলিক ধর্মের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানের গবেষণা চালিয়ে থাকেন। এটা তো সত্যি যে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও চিন্তা চেতনাগত ব্যাপক মতবেদ আছে। বাস্তবতা হলো তাদের মধ্যে মতবেদ কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ এমন কোন বিষয় নয় যে যা সকলের মাঝে ঐক্য স্থাপন করে দিবে। বিজ্ঞানের নানা শাখা প্রশাখা বিদ্যমান আছে। যেমন- জীব বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিজ্ঞান, পানি বিজ্ঞান, স্নায়বিক বিজ্ঞান ইত্যাদি। এই বিজ্ঞান গুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেহ চাইলে তা অপ্রাসঙ্গীক হলেও ইসলাম ও খৃস্টান ধর্মের আলোকে ব্যাখ্যা করতেই পারেন। আপনি যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান পড়তে যান তবে সেখানে দরকার হয় গনিত শাস্ত্রের । সেখানে যুক্তির জন্য হেগেল, বা মার্কস পাঠের দরকার হয় না । বিজ্ঞানীরা সেই সকল বিষয়কে অবশ্যিক মনে করেন না । আপনি কোন যুক্তির অবতারনা করলে ও বিজ্ঞানী সমাজ তা পাত্তা দিবে না । মাও সেই পরিস্থিতির সমালোচনা করেছেন, “ অনেক বিষয়ে এক আংগুল উত্তোলন” বা একেই পরিস্থিতিতে দুই আঙ্গুল উত্তোলন তিনি সমর্থন করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ উক্ত বক্তব্যে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সংজ্ঞায় যা কিছু বলা হয়েছে তা কোন বিশেষ বক্তব্য নয়। আমরা ও তাদের সাথে ভিন্নমত পোষন করিনা কতিপয় ক্ষেত্রে । যেমন- গোড়ামীবাদ ও চিন্তার ক্ষেত্রে সংকির্নতাবাদ, পৃথিবির সকল কিছু সরল রেখায় যেমন চলে না তা কিন্তু আবার মানুষের সাধ্যের বাহিরে ও নয়, তবে বিষয় গুলো কিছুটা জটিল বটে। প্রতিটি বিষয় একটি অন্যটির সাথে সম্পর্কিত, তবে আবার তা ব্যাখ্যা ও করা সম্ভব। যখন বলবেন সামগ্রীক ভাবে সকল কিছুই ইতিবাচক । তখনই কিছু লোক আপনার সাথে ভিন্নমত পোষন করতে পারেন। এমন কি কিছু বিজ্ঞানী ও আপনার কথায় বিরক্তি প্রকাশ করবেন বা চুপ থাকবেন। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের আলোকে যখন কোন প্রকার প্রকল্প হাজির করা হয় তখন আমরা অনেক ক্ষেত্রে জ্ঞান চর্চায় ও অসাধুতা দেখতে পাই। এই পরিস্থিতিতে আমার মনে পড়ে শেক্স পিয়ারের হেলমেট নাটকের চরিত্র পলনিয়াসের কথা। যিনি ছিলেন রাজার রাজ উপদেষ্টা, তিনি নিজে একজন ভূয়া বুদ্বিজীবী ছিলেন। “ নিজের ভাবনাই সত্যি” প্রকৃত বিচারে কোন কিছুই অর্থহীন নয়, হেমলেট নাটকে এই বিষয়টি বিশেষ ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।যা নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। হেমলেট পলনিয়াসকে হত্যা করেছিলো কিন্তু মনের অজান্তেই হেমলেটের মাঝে ও একেই সমস্যার সৃজন হয়। নিজের ভাবনা ও সত্যের মাপকাঠি নিয়ে। হেমলেট নাটকে শেকসপীয়ারের এই ধরনের কর্ম নানা সমস্যার সৃষ্টির হয়েছিলো।
তৃতীয়তঃ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের স্বল্প জ্ঞানের প্রকাশ পেয়েছে। আপনারা “দ্বন্দ্ববাদ” সম্পর্কে ভাসাভাসা কথা বলেছেন। সক্রেটিস ও প্লাটো তাদের কাজের প্রাথমিক স্তরে যা বলেছিলেন তারই অনুরূপ। এই ভাবে কারো পক্ষেই দ্বন্দ্ববাদ সম্পুর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। আর এইভাবে কথা বলা আপত্তি জনক ও বটে। তবে যদি মেধাবীদের জন্য জ্ঞান অর্জনের জন্য তা সতর্কতা মূলক হয় তবে তা প্রসংশনীয় হতে পারে। তবে তা আবার যদি কোন শক্ত মাওবাদি মানুষের আলোচনার বিষয়ে যুক্ত হয় তবে এই বক্তব্যকে অধিবিদ্যক বিষয় হিসাবে বিবেচনা করতে পারে। মাওবাদি পরিভাষায় “ বহির ঐক্য”, “নেতির নেতি” “গুনগত অবস্থা পরিমাণগত অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে যায়”-ইত্যাদি। বৈজ্ঞানিক অবিষ্কারের ক্ষেত্রে হেগেলিয়ান ও মাওবাদি চিন্তাধারার জগতে দ্বন্দ্ববাদ অবশ্যই এক টি প্রসঙ্গীক বিষয়। চক্রেটেসীয় পন্থায় এর গুরুত্ব কোন ভাবেই খাট করে দেখা যায় না ।
দ্বন্দ্ববাদ প্রকৃত বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা বা আগাম বার্তা প্রদান কারী কোন বিষয় নয়। অধিবিদ্যার উপর ভর করে প্রচলিত দুনিয়ায় যা চলছে তা ও এর আলোচ্য বিষয় নয়।
“ মার্কসবাদের আগে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে একটি বিশেষ পরিভাষা হিসাবেই পরিচিত ছিলো, কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিকাশের ফলে মার্ক্সবাদ অধিবিদ্যার আবরন থেকে বেড়িয়ে এসেছে। ভেবে দেখুন বিজ্ঞানের কত শাখা প্রশাখা রয়েছেঃ পদার্থ বিদ্যা, জীব বিজ্ঞান, পানি বিজ্ঞান, লিঙ্গ ভিত্তিক বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, গনিত, ভূ বিজ্ঞান ও স্নায়োবিক বিজ্ঞান ইত্যাদি। বিপ্লবী বিজ্ঞান হিসাবে আলোকিত সাম্যবাদ ও একটি প্রাগ্রসর বিজ্ঞান হিসাবে অভিহিত। সকল বিজ্ঞান কি কেবল তিন চারটি নিয়মে বাঁধা ? অবশ্যই না । আমি এখানে গনিতের কথা বলেছি। কেহ যদি ইহাকে একটি অতিরিক্ত ও বিশেষ বিজ্ঞান হিসাবে চিন্তা করেন তবে সমস্যা। কের্ট গুডেল এটা প্রমান করেছেন যে, কোন সুনির্দিস্ট নিয়ম একটি গুরুত্ব বহন করে এমন সত্যের প্রকাশ ঘটাতে পারে। ( এক গুচ্ছ নীতি মালা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে একটি দরকারী বিষয়ের অবতারনা করতে পারে)। দ্বান্দ্বদিকতা ভবিষ্যৎবানী করার বা কোন কিছু ব্যাখ্যা করার হাতিয়ার নয়। ইহা অধিবিদ্যক কোন সূর গুলের বিষয় নয় বরং ইহা একটি বৈজ্ঞানিক পন্থা বা পদ্বতী মাত্র। তবে সাদা মাটা ভাবে ইহা ছাড়া ও নিরেট বিজ্ঞান কাজ করতে পারে। ইহা হলো সাধারন বিজ্ঞানের চাইতে ও বেশী কিছু। এর একটি বড় উদাহরন হিসাবে আমরা চীনের বিপ্লবের কথা বলতে পারে। সেখানে বিতর্ক দেখা দেয় সমাজতন্ত্রের আওতায় দ্বন্দ্ব না কি ঐক্য। সেই সময়ে তাত্ত্বিকদের মধ্যে একটি প্রশ্ন ঘোড়ে ফিরে আসছিলো যে চীন কোন পথ ধরবে। সমাজতন্ত্র বিনির্মানের জন্য শ্রেনী সংগ্রাম চালু রাখা হবে না কি সামাজিক ঐক্য বহাল রেখে উৎপাদন শক্তিকে আরো গতীশীল করা হবে। তাত্বিক ও জ্ঞানীগন বলছিলেন, ‘ এক কে বিভক্ত করে দুই’ না কি দুইকে ঐক্য করে এককে পরিণত করা হবে’। তাঁরা অনেকাংশে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক করে সেই সময়ের অসল বিষয় সমূহ কে আড়াল করার প্রয়াস পেয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে ও অধিবিদ্যক ধারনায় আবিষ্ট হয়ে সাধারন জনগণকে ক্ষমতাহীন করার চেষ্টা করেছেন।
আসুন আমরা দেখি সেই সম্পর্কে মাওসেতুং কি বলন, তাঁর বক্তব্য ছিলো প্রথম প্রাথমিক বিষয়াদি কি ভাবে পরিবর্তন করবেন এর পর দ্বিতীয় বিষয় বা স্তরের পরিবর্তন করবেন কিভাবে- কোনটি আগে আর কোনটি পরে তা আসল কথা নয় । আবার তা কিন্তু বড় কিছু ও নয়। পরিবর্তনই প্রধান বিষয়। গুরুত্বপূর্ন বস্তু গুরুত্বপূর্ন নয়। অনেক কম গুরুত্বপূর্ন বিষয় আরো বেশী গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠতে পারে। এগুলো বুঝতে পারা কি কোন বিশাল আবিষ্কার ? না , এটা একেবারেই একটি স্বাভাবিক বিষয়ে এটা একজন শিশু ও বলতে পারে। কোন কিছু পরিবর্তনের পরিকল্পনা করলে প্রথম স্তর ও দ্বিতীয় স্তর নির্ধারন করলেই তা বিজ্ঞান ভিত্তিক হয়ে যাবে না। নির্ধা্রন করা মানেই কিন্তু ভবিষ্যৎ বানী করা নয়। ইহা বর্ননা করতে গিয়ে কতিপয় পরিভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। এর বর্ননায় থাকতে পারে সুনির্দিস্ট কোন বিষয় বা অধিবিদ্যক কোন তথ্যাবলী। এটা আবার পরিবর্তীত ও হতে পারে। বিজ্ঞান কিন্তু এরকম কিছু নয়। দ্বন্দ্ববাদ যদি বিজ্ঞান হয়ে থাকে তবে তা সুনির্দিস্ট ভাবে ভবিষ্যৎবানী দেবে ব্যবহারিক পন্থায় তা প্রমান করা ও সম্ভব হবে। যেমন- যদি কোন একজন দ্বন্দ্ববাদি ব্যাক্তিকে বলা হয় যে , দয়া করে আমাদেকে বলুন তো প্রাথমিক অবস্থা কিভাবে পরিবর্তিত হয়ে দ্বিতীয় অবস্থায় পরিণত হবে? আমাদেরকে বলুন ক খ গ প্রথমিক অবস্থা থেকে কোন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় স্তরে উন্নিত হবে ? এমন কি কোন পরিস্থিতিতে এই গুলো তৃতীয় স্তরে রূপান্তর ঘটবে ? দ্বন্দ্ববাদ যদি আমাদেরকে বলতে না পারে যে কখন/কোথায়/কিভাবে পরিস্থিতির বদল ঘটবে, তবে তা কিন্তু বিজ্ঞান হিসাবে ঠিকতে পারে না । পক্ষান্তরে, উদাহরন হিসাবে আমরা দেখতে পাই যে, অধিবিদ্যক বক্তব্যে বলে যে বস্তুর পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু দ্বন্দ্ববাদ সুনির্দিস্ট ভাবে বলে দেয় কোন বস্তু কোন পরিস্থতিতে তাঁর রূপ পাল্টে যাবে। রসায়নের নিয়ম অনুসারে বিজ্ঞান কাজ করে”। (১)
আপনাদের সুবিধার জন্য আমি কিছু বিষয়ের উল্লেখ করতে পারি। “দ্বন্দ্ববাদ.. দেখা.. নথি ভূক্তকরা.. পক্ষাবলম্বন করা.. বর্ননা করা”.. আপনাদের কথায় যে সকল দাবী উত্থাপন করা হয়েছে তা এই গুলো বিষয় অনুসরন করলে তা একটি অর্থ খোঁজে পারে।
চতুর্থতঃ প্রকৃত বিচারে দ্বন্দ্ববাদ মার্কসবাদের মৌলিক কোন ভিত্তিনয়। মার্কসের কার্যপদ্বতী বরং দ্বন্দ্ববাদের চেয়ে ও বেশী বিজ্ঞান বিত্তিক ছিলো। মার্কসের কাজকে আমরা তাঁর জীবীত কালিন সময়ে বিচারে বিশ্লেষণ করতে চাই। তিনি যখন লিখছিলেন সেই সময়ে হেগেলীয় চিন্তাবিদিদের প্রভাব ছিলো অত্যন্ত প্রবল। তিনি তাদের সমসাময়িক বক্তব্যের প্রক্ষিতে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে ছিলেন। মোটকথা মার্কসের কাজের ভিত্তি কিন্তু দ্বন্দ্ববাদ ছিলো না । বরং তিনি তাঁর কাজে গানিতিক সূত্র ব্যবহার করে সামাজিক বিপ্লবের তত্ত্ব তোলে ধরেছিলেন। তিনি ক্ষমতা কাঠামো, অর্থনীতি এবং ঐতিহাসিক পরিবর্তনের বক্তব্য হাজির করেন। মার্ক্স তাঁর অধিবিদ্যা সংক্রান্ত বক্তব্যে সত্যিকার বিজ্ঞান কি তা ব্যাখ্যা করে গেছেন। ইহা সত্যি যে মার্ক্স নিজে তাঁর কাজের প্রাথমিক অবস্থায় দ্বন্দ্ববাদকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও শেষ জীবনে এর গুরুত্বকে স্বীকার করেছেন। এটা অনেকটা আইজ্যাক নিঊটনের মতই । নিউটন একজন বিজ্ঞানের মেধাবী মানুষ। তিনি বস্তুজগতের গবেষণায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে গেছেন। এটা আমাদের ভূলে গেলে চলবে না যে নিউটন নিজেই তাঁর গবেষণা কর্মকে “প্রকৃতিক দর্শন” মনে করতেন না । নিউটন বরং বাইবেলের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে পৃথিবী কবে শেষ হবে তাঁর গানিতিক হিসাব কষতেন। তা হলে নিউটন তাঁর কোন কাজের প্রতি বেশী গুরত্ব দিতেন । একেই ভাবে মার্কস দ্বন্দ্ববাদে বিশ্বাস করতেন বা অধিবিদ্যায় বিশ্বাস করতেন তা অনেকটা মাওসেতুংয়ের দ্বন্দ্ববাদের ব্যাখ্যার মতই। সেই ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও প্রকৃত বিজ্ঞানের মধ্যে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান আছেঃ
“ যুক্তিবিজ্ঞান নিজেই একটি আলাদা বিজ্ঞান হিসাবে তৈরী হয়েছে। যেমন তৈরী হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান বা বিপ্লবী বিজ্ঞান। সেই গুলো আবার নিজদেরকে অবস্থার সাথে সঙ্গতী রেখে ও সময়ের সাথে তাল মিলাতে পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তুত রেখেছে। অপরদিকে প্রচলিত দ্বন্দ্ববাদ হলো, যা মাওসেতুং প্রায় অর্ধশতাব্দি আগে ‘ নেতির নেতি করনের নিয়ম’ সংক্রান্ত বিষয়ে কতিপয় গুরুত্বপূর্ন দিকের উন্নয়ন ঘটিয়ে ছিলেন। ইহা ও একধরনের অধিবিদ্যক বন্দ্বাত্যতা যা বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মের সাথে সঙ্গতি পূর্ন নয়। অধিবিদ্যার চেয়ে বিজ্ঞান সম্পূর্ন একটি আলাদা বিষয়। বিজ্ঞানের মধ্যে একটি বাস্তবতা ও ব্যবহারিকতা বিদ্যমান থাকে। বিজ্ঞান অপরিবর্তনশীলতাকে অনুমোদন করে না। ইহা নিয়ত পরিবর্তনশীল একটি বিষ্য”।(২)
দ্বন্দ্ববাদ উচ্চতর বিপ্লবী বিজ্ঞানের অংশ নয়। ইহা কিন্তু আবার খুব উন্নত ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও নয়, ভালো গানিতিক বিজ্ঞান ও নয় ফলে মধ্যম শ্রেনীর বুদ্বিজীবীদেরকে অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। একেই ভাবে হয়ত গোল্ডের মত বা লিউ অন্থিনের মত যারা কেবল জীব বিজ্ঞান নিয়েই ঘটা ঘাটি করেন যারা আদতে কোন দার্শিনিক বা জ্ঞান বিজ্ঞানী নন তাঁরা ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। যারা দ্বন্দ্ববাদ নিয়ে কাজ করেন তাদের মধ্যে কোন দিনই সৃষ্টি তত্ত্ব বা বিবর্তনবাদের তত্ত্ব নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হননি। এই বতর্ক কিন্তু সত্যিকার দার্শনিকদের মাঝে ও দেখা যায়নি। এখন ও আপনারা দুনিয়ার নানা জায়গায় হেগেলীয় দর্শন নিয়ে কাজ করেন এমন প্রচুর মানুষ পাবেন যারা দ্বন্দ্ববাদ বা সক্রেটিসীয় আমলের দ্বন্দ্ববাদ নিয়ে কাজ করছেন। তবে এই সকল বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করার প্রবনাতা তাদের মধ্যে (ব্যাতিক্রম ছাড়া) একেবারেই অনুপস্থিত। সেলভোজ জিজাক, যিনি জেক লিকান এবং হেগেলীয় দর্শন নিয়ে কাজ করা ব্যাক্তিদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর লিখনী পড়ে পাঠক খুশি হন। তাঁর লিখায় অন্তর দৃষ্টি আছে। আবার তাঁর লিখা পাঠ করে পাঠক চমৎকৃত ও হয়ে থাকেন। তাঁর লিখায় দ্বন্দ্ব আছে। নোয়াম চমস্কি সম্প্রতি তাঁর লিখা পাঠে জানালেন এতে কোন তাত্ত্ব না থাকলে ও মানুষের জ্ঞান পিপাসা মেটাতে ও পাঠককে আনন্দ দিতে তাঁর লিখা সত্যি বেশ কার্যকরী।
সর্বপরি বলতে হয়, মার্কসবাদ কোন অতি বিজ্ঞান নয়। ইহা সামাজিক দ্বন্দ্ব এর কারন ও গতি প্রকৃতি সমূহ বিশ্লেষণ করে পারমানবিক বোমার মত সামাজিক বিস্ফোরন ঘটিয়ে দিয়ে ছিলো। মাও এর মতে দ্বন্দ্ববাদ সামাজিক পরিবর্তনের মৌলিক নীতির মতই গড়ে উঠেছে। মাওয়ের মতে, একটি পারমানবিক বোমা কিভাবে কাজ করে তা একজন রষায়নবিদ, পদার্থবিদ বা প্রকৌশলীর চেয়ে অন্য সাধারন মানুষ বেশী জানবে না । জার্মানীতে ও এই রূপ কথার প্রচলন আছে। এর অর্থ হলো যে কেউকে আমরা পরমানু বিজ্ঞানী বলতে পারিনা । সত্যিকার মার্কসবাদ হলো আলোকিত সাম্যবাদের পৌছার একটি সরল ও সহজ পন্থা বা পথ। ইহা মানুষের সামগ্রীক স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে, সকল প্রকার শোষণ ও বঞ্চনাকে নির্মূল করে দেয়। নিরেট বিজ্ঞান দ্বান্দ্বিক নয়।
মাওসেতুং পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষকে শৃংখল মুক্তির দিকে দাবিত করেছিলেন। কেউই বলবেন না যে তিনি দ্বন্দ্ববাদের নামে অধিবিদ্যাকে অনুসরন করেছিলেন। মাও বিজ্ঞান ও দর্শনের সকল খুটি নাটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন এমন কথা বলা ও ঠিক নয়। মাওয়ের মেধা ছিলো বিপ্লবী বিজ্ঞানে । রনকৌশল উদ্ভাবনে।মাও বিজ্ঞ ছিলেন নেতির নেতী নিয়মে এককে দুইয়ে বিভক্ত করেছিলেন, তা সত্যি সাধারন মানুষের ক্ষমতায়নে সহায়ক ছিলো। আসলে এটা ছিলো ব্যাক্তিবাদের নামান্তর। সাধারন মানুষের দরকার হলো সত্যিকার বিজ্ঞান। সাধারনের জন্য দরকার নেই কোন ভোতা অস্ত্রের বরং তাদের জন্য দরকার হলো সত্যিকার ধারালো আস্ত্রের। আলোকিত সাম্যবাদ পারে মানুষকে সত্যিকার ক্ষমতায়ন করতে এবং তাদের জন্য একটি গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করতে।