(llbangla.org)
সম্প্রতি বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামীর কয়েকজন শির্ষ নেতার ফাসির আদেশ ঘোষিত হয়েছে। তাদেরকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দুষি সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই বিচার নিয়ে নানা প্রকারের বিতর্কের অবতারনা করেছে জামাত সহ বিরোধী দল সমূহ। এই ফাসির হুকুমকে কেন্দ্র করে নতুন ভাবে দেশে রক্ত পাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই ইসলামী রাজনৈতিক শক্তিটি বরাবরই অন্ধকার যুগের বর্বরতাকে অনুসরন করেছে। প্রদর্শন করেছে নিস্টুরতা। অন্যদিকে আওয়ামি লীগ দেশের যেকোন প্রকারের সামাজিক ও রাজনৈতিক গন্ডগুলকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ক্ষমতার ভিতকে পাকাপুক্ত করতে চায়। সাম্রাজ্যবাদ এই দুই শিয়ালকেই জনতার বিপক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছে। সাম্রাজ্যবাদের কৌশলই হলো বাংলাদেশকে যেকোন মূল্যে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এখানে রক্ত ক্ষরন চলছেই…
বর্তমানকে বুঝার জন্য অতীতকে পর্যালোচনা করা দরকার। আমাদের স্বাধীনতার আগে দেশটি পাকিস্তানিদের উপনিবেশ ছিল। তা আবার পশ্চিমাদের ও উপ উপনিবেশ হিসাবে কাজ করত। এই উপনিবেশিকতার সুযোগ নিয়ে পুঁজিবাদী ও সামন্তবাদিরা নিজেদের শক্তি ও সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন করেছেন। পাকিস্তান আমলটা এ ভাবেই কেটেছে। তারা তাদের ইচ্ছেমত নির্মম নিপীড়ন ও শোষন কর্ম চালিয়েছে। কোন কোন সময়ে তারা ইসলামি সংগঠনের সন্ত্রাসীদেরকে জনগণকে নিপীড়নের কাজে ব্যবহার করেছে। আমরা আমরাদের মহান স্বাধীনতাকে অনেক মূল্যদিয়ে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অর্জন করেছি। যদিও এখন শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা বলা যাবে না – তবে নানা তথ্য থেকে জানা যায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্বে প্রায় ত্রিশ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিলেন। যাদের মধ্য ছিলেন- ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, ডাক্তার, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতারা। তারা কৃষকের রক্তে রঞ্জিত করেছে বাংলার সবুজ মাঠ, জেলেদের রক্তে রঞ্জিত করেছে পদ্ম, মেঘনা যমুনার পানি আর ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত করেছে বিদ্যালয়ের পবিত্র শিক্ষা চত্বর। পাকিস্তানীদের দুষর আল বদর, আল সামছ এদেশের স্বাধীনতার ‘মাস্টার মাইন্ড’ বুদ্বিমান মানুষের প্রান কেড়ে নিয়েছে –হত্যা করেছে নিস্টুর ভাবে। স্বাধীনতার সুর্য যখন উঠি উঠি করছে – বিজয় যখন বাঙ্গালীর দ্বার প্রান্তে তখন পাকিস্তানীদের এদেশীয় দালালেরা আমাদের চিন্তাবিদ, লিখক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ হাজার হাজার মানুষকে বাড়ী থেকে তোলে নিয়ে হত্যা করে গনকবরে ফেলে যায়। ইতিমধ্যে দেশে অসংখ্য গন কবর আবিস্কার করা হয়েছে। হাজার হাজার মা বোন ও কন্যারা পাকিস্তানী মুসলিম নামদারী পশুদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন। দেড় কোটির মত মানুষ নিজেদের বাড়ী ঘর ফেলে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানী ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদিদের চক্রান্তের কারনে বাংলাদেশে সাইক্লোনের পর বহু লোক মারা গিয়েছিলেন। যুদ্ব জনিত কারনে অর্থনৈতিক কর্মের অস্বাভাবিক পরিস্তিহিতে না খেয়ে বহু লোক প্রান হারান। সেই সময়েই পরিকল্পিত ভাবে আমাদের লিখক ও সাংবাদিকদেরকে হত্যা করা হয়েছিল যেন বাংলা ও বাংগালীর দুঃখ কষ্টের কথা চাপা পড়ে যায়। তৎকালীন পাকিস্তানের খুনি প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষনা করেছিলেন “ সামনে যত বাঙ্গালী পাবে সকলকে মেরে ফেল” “আমি কেবল মাটি চাই – হোক তা পুড়া মাটি” – প্রথম বিশ্বের রাষ্ট্র গুলো ও চীন সেদিন পাকিস্তানীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। অ্যামেরিকার গোপন দলিলে প্রকাশ পেয়েছে বাংলীদের আন্দোলনকে বিনশ করে দেবার জন্য “ গন হত্যা চালাও” – এটা তাদের আভ্যন্তরীণ সিন্দ্বান্ত ছিলো। সেই সময়ে হেনরি কিসিঞ্জারের সাথে চিনের মাওসেতুং মিটিং করে বাংলাদেশীদেরকে হত্যার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তারা বাংলাদেশের নেতা বংগবন্দ্বু কে এল সালবাদরের আলেন্দের সাথে তুলনা করেছিলেন। যে আলেন্দেকে মর্কিনিদের সহায়তায় পরে হত্যা করা হয়েছিল। চীন নৈতিক ভাবে সাম্রাজ্যবাদিদের সাথে গলা মিয়ে বাংলাদেশ ও সালবাদরের ক্ষেত্রে একই ভূমিকা পালন করেছিল। চীন হলো তো সেই দেশ যারা পিনুচেটের শাসনকে ও স্বীকৃতি দিয়েছিলো। ১৯৭২সালের ২৫শে জানুয়ারী জাতি সংঘের মিটিং এ বাংলাদেশের বিরুদ্বে ভোট দিয়েছিলো। দুর্ভাগ্য হলো মাও তার নিজের আদর্শ ও বিপ্লবের বিপক্ষে চিনকে টেলে দেন। ১৯৭১ সালে লিন পিয়াং এর তিরোধানের পর চীন সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ে। লিন পিয়াং সর্বদাই নিপীরিত জাতি সমূহের স্বাধিকার আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। লিন পিয়াং এর ভাষ্যঃ
” পৃথিবী যে দেশ সমূহে স্বাধিকার আন্দোলন চলছে এবং যা মার্কিনীদের বিপক্ষে পরিচালিত হচ্ছে – তা সাম্রাজ্যবাদের পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে হবে। এই স্বাধিকার আন্দোলন গুলো জনগণকে ভুমির অধিকার ও অঞ্চলের কর্তৃত্ব দিবে, এর সংখ্যা বাড়তে থাকলে সাম্রাজ্যবাদী অ্যামেরিকার ক্ষমতা সঙ্কুচিত হবে। সাম্রাজ্যবাদিদের আগ্রসনের সুযোগ কমে আসবে। তারা তাদের দালালদের ক্ষমতা হ্রাস হতে দেখে দুর্বল হতে থাকবে। আর এই সুযোগে সারা দুনিয়ার নিপিড়িত মানুষ আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত হবে – এবং চূড়ান্ত ভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে পরাভূত করবে”।
” এখন অনেক কিছুই পরিস্কার যা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ করেই চলেছে। তাদের খেলা শেষ করতে হলে তাদেরকে বিভক্ত করে পরাজিত করতে হবে। আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকার মানুষেরা তাদেরকে খন্ড খন্ড করে বিনাস সাধন করে দিবে। কেউ তাদের মাথায় আবার কেউ তাদের পায়ে আঘাত করে ছাড়বে। তাই অ্যামেরিকা একটা জিনিষকে ভয় পায় তা হোল সারা দুনিয়ায় যেন কোন ভাবেই গন যুদ্বের সুচনা না হয়, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেইকাকে তারা ভয় পায়। তারা মনে করে গন যুদ্বের ভিত্তি ও নৈতিকতা অনেক শক্ত – তাই তারা মনে করে এক বার তা শুরু হলে তাদের শয়তানি খেলা খতম”।
এবং
“ চূড়ান্ত বিশ্লেষনে দেখা গেছে, এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী – যদি তারা বিপ্লব সাধন করে বসে তবে সারা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রন অ্যামেরিকার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে”।
দুঃখজনক ভাবে, দেখা যায় যে লিন পিয়াঙ্গয়ের মৃত্যুর পর ১৯৭০ সাল থেকে চীন উল্টো পথে চলতে শুরু করেছে। তারা দেশের ভেতর ও বাহিরে ডান পন্থা অনুসরন শুরু করে। যদি ও মাওসেতুং মহান এক বিপ্লব সাধন করেছিলেন কিন্তু এর পর ও তিনি ক্রমাগত ভুল সিদ্বান্ত নিতে থাকেন। দুনিয়ার মানুষ দেখতে পেল আমাদের মাটিতে রক্তক্ষরন হচ্ছে। আমাদের ক্ষত গুলো এখন ও শুকিয়ে যায় নাই। বড় বড় সাম্রাজ্যবাদিরা আমাদের এই হত্যা আর রক্তক্ষরন কে সমর্থন দিতে লাগলেন। অন্যান্য স্থানের মত পাকিস্তানীদের রক্ত ঝড়ানো, তাদের দুষরদের খুন হত্যাকে আমরা সমর্থন দিতে লাগল। বড় বড় সন্ত্রাসীরা সারা দুনিয়ার নিপিড়িত মানুষের উপর সন্ত্রাস করতেই লাগল। ইসলামের নামে মানুষ মারা, তাদেরকে দাসে পরিণত করাকে চীন সমর্থন দিয়ে গেল।
শিয়াল বনাম শিয়াল
ট্রাইব্যুনাল জনতার পক্ষে সুবিচারের কথা বললেও সরকারের নানা প্রকার কায়েমী স্বার্থবাদের ও কৌশলের কারনে যথাযথ ভাবে কাজ করতে পারছেনা। ফলে নানা মহল থেকে সমালোচনা হচ্ছে। এটা এখন সঠিক বিচারের মাধ্যম কি না তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাশীন চক্রটি এক সময়ে আমাদের জনগণকে সৌভিয়েত ও ভারতীয়দের স্বার্থে ব্যবহার করেছে – এখনো করছেন। এখন পশ্চিমা উদারতাবাদি ও ভারতীয় এবং চীনাদের কাছে আমাদের নানা স্বার্থ বিক্রি করছে। বিক্রি করাই তাদের মৌলিক নীতি। পক্ষান্তরে, তথাকতিত জাতিয়তাবাদি ইস্লামি দল গুলো আধা সামান্তবাদি বা সামন্তবাদিদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আমাদের জনতাকে দাসে পরিণত করতে চাইছে। পাকি-মুল্লাতন্ত্রের গোলামে আমাদেরকে বেধে রাখতে চাইছে। ভন্ড মুল্লাতন্ত্র “পশ্চিমাদের পতন” চাইলেও তারা তাদের দুধ কলা খেয়েই বেঁচে আছেন। তাদের অর্থ সাহায্যই মুল্লাহ গুষ্ঠির এক মাত্র অবলম্বন। সৌদি- মার্কিন চক্র মুল্লাহদের আসল পথ প্রদর্শক। তারা আমাদের ভাই বোনদেরকে চীরদিনের জন্য গরু ছাগলের মত গোলামে পরিণত করতে চায়। উরা নৈতিকতার নামে- ধর্মের নামে মানুষের মাথা কাটছে। স্বর্গীয় সনদ বিক্রির নামে বর্বরতাকে ফিরিয়ে আনতে চায়। উরা সাম্রাজ্যবাদের বন্দ্বু।
আজ এখানে যে সামাজিক ক্ষত সৃজন হয়েছে তা সত্যিকার ন্যায় বিচার কায়েম না করে সামাজিক শান্তি প্রতিস্টা করা সম্ভব নয়। কোন আইন ই সাম্রাজ্যবাদকে থামাতে পারবেনা। পুঁজিবাদের তৈরী আইন পুঁজিবাদকে দমাতে পারবে না। মধ্য যুগীয় আইন সামান্তবাদকে বিনাস করতে পারবে না। এই আইনে সিত্যকার জবাবদিহিতার সুযোগ নেই। যারা জনগণের বিরুদ্বে অপরাধ করেছে তাদেরকে জনতার সামনেই জবাব দিহি করতে হবে। সকল নিপীড়ক, শোষক ও সাম্রাজবাদিদেরকে জনতার সামনে দাড়াতেই হবে। বর্তমান শাসক চক্র দোষী, বিরোধী চক্র দোষী এমন কি আমাদের সামগ্রীক ব্যবস্থাটাই দুষি। পুরাতন ব্যবস্থায় আমাদের সমাধান নেই- এটা পচে গেছে। এটাকে বিদায় করতে হবে। সকল অপরাধীদেরকেই বিচার করতে হবে।
আমরা প্রচলিত ব্যবস্থার ত্রুটি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পেরেছি। সত্যিকার ন্যায় বিচার আমাদের কাছেই আছে। শ্রমিকের চাইতে, কৃষকের চাইতে, সংগ্রামী বুদ্বিজীবিদের চাইতে বড় কোন যুদ্বা নেই। তাঁরাই আমাদের ভুমির ও ভবিষ্যতের হেফাজত করতে পারেন। সত্যের চাইতে আর বড় কোন তরবারি নেই। বিপ্লবী বিজ্ঞান ই হোক আমাদের পাথেয়। আমাদের সকলেরই দায়িত্ব হলো নতুনের উত্থান ঘটানো, নতুন দুনিয়া গড়ে তোলা। আলোকিত সাম্যবাদের পথে এগিয়ে যাওয়া। আমরা লড়ছি আমাদের সন্তানদের জন্য- তাদের সন্তানদের জন্য । আমাদের ভাইদের জন্য- বোনদের জন্য । পিতার জন্য- মাতার জন্য । একে অন্যের জন্য – দুনিয়ার সকল ধর্মের – সকল দেশের – সকল জাতির মানুষের মুক্তির জন্য।