প্রথম বিশ্ববাদি ফ্রান্সের গঞ্জালোপন্থীদের বক্তব্যের জবাব

10625116_323618171160183_2647895843394915060_n(llbangla.org)

সম্প্রতি,প্রথম বিশ্ববাদি ফ্রান্সের গঞ্জালোপন্থীদের মতামত সহ খুবই বিভ্রান্তিমূলক একটি দলিল প্রকাশিত হয়েছে। “এই দলিলটি আন্তর্জাতিক সাম্যবাদি আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিপদজনক হয়ে উঠতে পারেঃ ‘তৃতীয় বিশ্ববাদ’ ।” (১) সেই দললে লিডিং লাইটের উল্লেখ করে উদাহরন হিসাবে “তৃতীয় বিশ্ববাদ” বুঝাবার প্রায়াস ছিলো। তাদের সেই দলিলে আরো বহু ভূল তথ্য আছে যা সংশোধন করার মত সময় আমাদের নেই। আর তা তেমন দরকার ও নেই। আমরা তাদের বক্তব্যের জবাব দেবার স্বার্থে আমাদের বক্তব্যকে দুই ভাগে ভাগ করতে চাই। তাদের মতান্দ্বতা, অধিবিদ্যক ভাবনা ও ধর্মীয় ধারায় বিপ্লবীপনা এবং সত্যিকার বিপ্লবী বিজ্ঞান কি, আলকিত সাম্যবাদ কি সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হবে ।

অংশ ১ঃ গঞ্জালোপন্থীদের দলিলে ভূল, বিভ্রান্তি ও মিথ্যাচার প্রসঙ্গ

বাংলাদেশে মুক্তি সংগ্রামে লিডিং লাইটের ভূমিকা, লিডিং লাইট মনে করে ইহা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ উপনিবেশ ছিলো।

প্রথমত, তাদের একটি ডাহা মিথ্যাচার হলো যে, “তৃতীয় বিশ্ববাদিরা” বলেন তৃতীয় বিশ্বে কোন উপনিবেশ নেই। ফ্রান্সের গঞ্জালোপন্থীদের মতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কালে তৃতীয় বিশ্ববাদের সমর্থকরা পাকিস্থানের সমর্থক ছিলো। এটা সম্পূর্ন মিথ্যাচার ও ভূল তথ্য।

আলোকিত সাম্যবাদি “তৃতীয় বিশ্ববাদি”, কোন কালেই এমন কথা বলে নাই যে তৃতীয় বিশ্বে উপনিবেশবাদ নেই। প্রকৃত সত্য হলো, আমরা সর্বদাই বলে আসছি যে বাংলাদেশ পাকিস্থানের একটি উপনিবেশ , যদি ও উভয়ই তৃতীয় বিশ্বের দেশ। আমরা সকল সময়েই বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামকে সমর্থন করে এসেছি। আমাদের ইতিমধ্যে প্রকাশিত নানা দলিল পত্রে তার দেখতে পাওয়া যাবে । এই প্রসংগে বলতেই হয়, মাও বলেছিলেন, “অনুসন্দ্বান না করে কথা বলার অধিকার নেই!”

“এই প্রসঙ্গে আমরা অতীতের কিছু বিষয় স্মরন করতে চাই। আমাদের দেশ স্বাধীন হবার আগে ইহা পাকিস্তানের একটি উপনিবেশ ছিলো আবার একেই সাথে সাম্রাজ্যবাদের  প্রভাবও ছিলো প্রবল। বলা যায় এই দেশটা একটি কলোনীর ও কলোনী ছিলো। পুঁজিপতি ও ভূমিমালিকিরাই ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু ছিলো এই পাকিস্তানে। তারা নিজেদের ক্ষমতা কাঠামো ঠিকিয়ে রাখার জন্য  সমাজের পশ্চাৎপদ অংশটিকে ব্যবহার করে নানা রকমের কুৎসিত কর্মকান্ড চালিয়ে গেছেন। সেই অংশটি ইসলামিক সংগঠনের নামে সাধারন মানুষের উপর সন্ত্রাসী কর্যক্রম চালিয়েছে। বহু ত্যাগ তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যুদ্বকালিন গন হত্যা সময়ে আমাদের কত লোক মারা গেছেন তা সঠিক ভাবে বলা সহজ নয়। তবে পরিসংখ্যান বলছে পাকিস্তানী ও তাদের দোসররা প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ নির্বিচারে হত্যা করেছে। ছাত্র/ছাত্রী, রাজনৈতিক কর্মী, সাধারন শ্রমিক ও কৃষক সহ সাধারন মানুষকে ওরা হত্যা করেছিলো। তারা পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগীতার জন্য আল বদর, আল শামস গঠন করেছিলো আমাদের দেশের মেধাবী মানুষ ও বুদ্বিজীবীদেরকে বিনাশ করে দেবার জন্য। পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পনের ঠিক আগে, ঢাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, রাজাকার ও বদর বাহিনী আমাদের শ্রেস্ট সন্তান ডাক্তার, প্রকৌশলী, অধ্যাপকগণকে অপহরন করে তাদেরকে হত্যা করে গণকবরে নিক্ষেপ করে যায়। যুদ্বের পর সেই সকল গন কবর সমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সকল গনকবরে আমাদের শত শত মা, বোন, কন্যাকে নির্মম ভাবে ধর্ষন করে হত্যা করে পুতে রেখে গেছে নর পশুর দল। মুক্তিযুদ্বের সময় আমাদের দেশ থেকে প্রান বাঁচানো জন্য প্রায় এক কোটি মানুষ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। যুদ্বের সময় আর্থিক কারনে অনেক লোক মারা যায়।  এ ছাড়া ও ১৯৭০ সালে আমাদের দেশে সাইক্লোনের সময় পাকিস্তানীদের রিলিফ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কারনে অগনিত মানুষ মারা যায়। এই দেশে কি চলছে তা চাপা দেয়ার জন্য সাংবাদিক ও লিখকদেরকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে পাকিস্তানীরা । পাকিস্তানের রাস্ট্রপতি ইয়াহীয়া খান ঘোষনা করেছিলো,  “ বাংগালীদেরকে হত্যা কর, আর যারা বেঁচে থাকবে তারা আমাদের হাতে খাবে”। সেই সময়ে পশ্চিমা দেশ সমূহ ও চীন পাকিস্তানের সকল অপকর্মকে এবং গনহত্যাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলো। সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন গোপন দলিলে দেখা যায়, বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনকে বিনাশ করে দেবার জন্য “পরিকল্পিত গণহত্যা” চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। হেনরী কিসিঞ্জার মাওয়ের সাথে মিটিং করে বাংলাদেশের নেতৃত্বকে চিলির সালভেদর আলেন্দের সাথে তোলনা করে তাদেরকে দমন করার সিদ্বান্ত নেয়। সেই সময়ে চীন পশ্চিমাদের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের সাম্রাজ্যবাদি নীতির সমর্থক হয়ে উঠেন। দুঃখের বিষয় হলো লিন পিয়াংয়ের মৃত্যুর পর চীন নিরিহ মানুষের উপর আক্রমনের সমর্থক হয়ে উঠে।” (২)

আমরা সকল সময়ই বলে আসছি যে বাংলাদেশ ছিলো, “ একটি আভ্যন্তরীণ সেমি কলোনী”। এই অবস্থার কারনে বলতেই হবে বাংলাদেশ ছিলো একটি “কলনীর কলনী”। এই কথার মধ্যে কোন প্রকারের পার্থক্য করা সমিচীন নয়। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্বে বাংলাদেশের মুক্তির লড়াইকে অবশ্যই সমর্থন করি। কেননা এটা ছিলো একটি সেমী কলোনী। এই ক্ষেত্রে মাওবাদি সিরাজ সিকদার, জাসদ ও মুক্তিহাহিনীর ভূমিকাকে আমরা প্রসংসা করি। তারা আওয়ামীলীগের সমান্তরাল থেকে ও চমৎকার ভূমিকা পালন করেছে । এই ধরনের দৃষ্টি ভঙ্গী মাওবাদি ও মাওবাদের প্রভাবিতরা পোষন করতেন যে, বাংলাদেশের মানুষের মক্তির সংগ্রাম সফল করতেই হবে। এই ধারায় সকল দেশ প্রেমিক, ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবীদরা ও সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামের প্রশ্নে আওয়ামীলের নিউক্লিয়াস, সিরাজ সিকদারের মাওবাদি আন্দোলন মাওয়ের সংশোধনবাদি ধারা থেকে সরে এসে মুক্তি যুদ্বে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এরা পাকিস্তান বা পশ্চিমাদের কথায় কান দেননি। এমন কি মাওয়ের কথার বিপরীতে লিনপিয়ের “তৃতীয় বিশ্ববাদের” লাইনে আন্দোলনের পথ বেঁচে নেন। তারা ভারতীয় আধীপত্যবাদের বিরুধীতা ও করতে থাকেন । আমরা বাংলা এলাকার লিডিং লাইটের মতামতের গুরুত্বকে বিশেষ ভাবে বিবেচনায় নিয়েছি। আমাদের বর্তমান বিপ্লবী লক্ষ্য কেবল বাংলাদেশ নয় বরং পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার মানুষের সামগ্রীক মুক্তির জন্য বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে  চাই। এবং এর পর সমগ্র দুনিয়া সাম্যবাদের আলো ছড়িয়ে দিতে  আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ।

লিন পিয়াং ও মাওসেতুংয়ের ঐতিহাসিক কর্মের বর্ননা:

লিন পিয়াংয়ের ভাষ্য “দির্ঘজীবী হোক গন সংগ্রাম !”, তার এই ভাষ্য ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হলে তা চিনের বিদেশ নীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে । সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাল ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ এ তা খুবই জন প্রিয় হয়ে উঠে ।  ১৯৭১ সালে লিনের মৃত্যু পর্যন্ত তা বিপ্লবী মানুষের প্রেরনা হিসাবে কাজ করতে থাকে । লিনের বক্তব্য বিশ্ব বিপ্লবের পথ নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করেঃ

“ সারা দুনিয়া সম্পর্কে চিন্তা করতে গেলে বলতে হয়, উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরূপ হলো ‘বিশ্বের নগর এলাকা’, আর ‘এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা হলো বিশ্বের গ্রাম অঞ্চল’। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের পর থেকেই নানা কারনে উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশ সমূহে সাম্যবাদি আন্দোলন নানা ভাবে পিছিয়ে পড়ে । তবে এশিয়া, আফ্রিকা, ও লাতিন আমেরিকায় ব্যাপক ভাবে প্রসারন ঘটতে থাকে । এক অর্থে সেই ব্যবস্থায় দেখা যায় শহরকে কেন্দ্র করে গ্রামীন এলাকায় আন্দোলন গড়ে উঠে । সেই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিলো সামগ্রীক ভাবে সাম্যবাদি আন্দোলনের বিকাশ ঘটানো। সেই আন্দোলনে সমাজতান্ত্রিক দেশ সমূহ চলমান আন্দোলনে সহায়তা করতে থাকে” ।

এবংঃ

“ বর্তমান অবস্থায় ও চলমান আন্দোলন সংগ্রামে সারা দুনিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দালাল চক্রের বিরুদ্বে রুখে দাঁড়ানোর প্রবনতা লক্ষ্যনীয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় একেই প্রবনতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন সারা দুনিয়া সাম্রাজ্যবাদের কারনে নানা প্রকার যন্ত্রনার শিকার হচ্ছে বা ঝুকিপূর্ন অবস্থায় অবস্থান করছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের পর থেকেই আমরা দখতে পাচ্ছি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে লড়াই চলছে। এক দিকে মার্কিন সাম্রজ্যবাদ অন্যদিকে এশিয়া, আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকার জনগণ এক অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব চালু রেখেছে। সেই দ্বন্দ্ব বিকশিত হয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে তাদের দালাল ও চা চাটাদের বিপরীতে জনগণের লড়াই”।

লিন পিয়াংয়ের দৃষ্টিভঙ্গী ছিলো দুনিয়ার যেখানেই বিপ্লবী প্রলেতারিয়েত আন্দোলন বিকশিত হবে সেখানেই সকলের সমর্থন দেয়া দরকার। দুনিয়া জুড়ে যে স্বাধিকার আন্দোলন ও  গন-সংগ্রাম চলছে তার সাথে একাত্ম হয়ে আপোষহীন ভাবে সহযোগীতা অভ্যাহত রাখতে হবেঃ

“ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের পর পর এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাতিন আমেরিকায় সংগ্রামী চেতনার বিকাশ দেখা যায়। সেই সময়ে চীন, কোরীয়া, ভিয়েতনাম, লাউস, কিউবা, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া সহ অনেক দেশের জনগণ লড়াই শুরু করে সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দালালদের বিরুদ্বে এবং তারা অনেক ক্ষেত্রে জয়ীও হয়। এই সময়ে শ্রেনী ভিত্তিক লড়াইয়ে সাধারন মানুষকে পরিচালনা করা ও সহজতর হয়ে উঠেছিলো। সাম্রাজ্যবাদিরা ও সেই সময়ে দেশেহারা হয়ে পড়েছিলো। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিশ্ব যুদ্ব চালিয়ে যাবার পরিকল্পনা থাকলে ও তারা তাদের বিপরিতে শান্তির আন্দোলনের প্রভাবের কারনে সেই অবস্থা থেকে ফিরে আসে”। (৩)

লিন পিয়াংয়ের লাইন ছিলো সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে এবং সোভিয়েত সংস্কারবাদিদের বিপরীতে কিন্তু চীনের অনেক নেতাই সেই সময়ে এই মতের বিপক্ষে ছিলেন। কিউবা এবং আলজেরিয়াতে ও লিন পিয়াংয়ের মতানুসারী ছিলেন। এই ক্ষেত্রে লিন পিয়াংয়ের মতামত ছিলো কেবল স্বাধীকার আন্দোলনকে চীনের প্রতি সমর্থন ও সোভিয়েত বিরুধীতা নয় বরং তাকে সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে দাড় করিয়ে দেয়া । ১৮ই অক্টোবর, ১৯৬৪ সালের লিনের বক্তব্যের পর ফিদেল ক্যাস্ট্রো চীন দূতাবাসে সরাসরি সাক্ষাত করতে চলে আসেন। তিনি সেই সময় নিজে ক্রুশ্চেভের পতনের পরই চিন ও সোভিয়েতের মাঝে একটি মৈত্রী গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি স্বল্পকাল পরেই বুঝতে পারেন যে চীন ও সোভিয়েতের মাঝে ঐক্য সম্ভব নয়। তাই তিনি চীনের বিরুদ্বে প্রচন্ড বিরুধীতা করে মার্চ, ১৯৬৬ তে বক্তব্য রাখেন। (৪) কিউবার সাথে চীনে সম্পর্কের অবনতি ঘটে । তবে লিন পিয়াং কিঊবার সংগ্রামকে জন যুদ্ব হিসাবে  অবহিত করেন  । লিন পিয়াং এর নীতি ছিলো সকল সময়ে ই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের স্বাধিকার  আদায় করা । চীনের মাও সহ অনেক নেতাই লিন পিয়াংয়ের এই নীতকে মানতে পারেন নাই। তারা তারা এর বিপরীতে অন্তর্জাতিক প্রলেতারিয়েত বনাম সংকির্ন জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব হাজির করেন কিন্তু পশ্চিমা ঘেঁষা নিতি গ্রহন করতে থাকেন। ১৯৬৯ সালের পার্টির নবম কংগ্রেসের পর থেকেই মাও ডান পন্থার দিকে ঝুকতে থাকেন। মাও চীনের কূটনীতিকে পশ্চিমা ধাঁচে গড়ে তুলার প্রচেস্টা চালান। যা ছিলো সোভিয়েত বিরুধী। এই ক্রম পরিবর্তন ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত চলতে থাকে । এরই মধ্যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্বকালে লিন পিয়াং এর নীতি অনুসারে তৃতীয় বিশ্বের প্রতি সমর্থন বাধা প্রাপ্ত হয়। আজকে আমরা যে নীতিকে ‘তৃতীয় বিশ্ববাদ’ বলি। অভিজ্ঞ মহলের ধারনা হলো লিনকে এই সকল কারনেই হত্যা করা হয়েছে। পশ্চিমা ও সোভিয়েতের বিরুধিতাই ছিলো তার জন্য কাল। লিনের মৃত্যুর পর পর ই তার নীতি ও পরাজিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে চীন পাকিস্তানের পক্ষ নেয় । চৌ এন লাই ও তার সহযোগীরা পাকিতানের সমর্থন করে তাদেরকে চিঠি প্রদান করে। (৫) এমন কি জাতি সঙ্ঘের সভায় চিন বাংলাদেশের বিরুধীতা করে ভোট প্রদান করে। ১৯৭১ সালে নিক্সন ও চীন বাংলাদেশ বিরুধীতায় বলিস্ট ভূমিকা গ্রহন করে। তাদের কারনে বহু মাওবাদি বাংলাদেশে ও অন্যান্য দেশে চীনের পক্ষ নিয়ে বাংলার মানুষের মক্তির সংগ্রামকে বিরুধিতা করে। পক্ষান্তরে, লিন পিয়াং চীন ও মার্কিনীদের মৈত্রী গড়ে তুলা সহ তৃতীয় বিশ্ব বিরুধী কার্যক্রমের বিরুধীতা করেন। তিনি তা তার মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন।

“তৃতীয় বিশ্ববাদ” হলো তিন বিশ্ব তত্ত্বের বিপরীত

ফ্রান্সের সাম্যবাদি মাওবাদিরা যে দলিল প্রকাশ করেছেন তাতে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রচুর স্ববিরুধিতা   রয়েছে। তারা সংকির্ন আদর্শিক দৃষ্টি ভংগী থেকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, মাও পাকিস্তান ও পশ্চিমাদের সাথে মিলে মিশে যে ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মৈত্রী গড়ে তুলেছিলেন তা ছিলো “মাওয়ের তৃতীয় বিশ্ব তত্ত্ব” । তবে ইহা কোন ভাবেই লিন পিয়াংয়ের “তৃতীয় বিশ্ববাদের” মত নয়। সত্যিকার অর্থে “তিন বিশ্ব তত্ত্ব” ছিলো লিন পিয়াংয়ের “তৃতীয় বিশ্ববাদের” বিপরীত ধারা। “তিন বিশ্ব তত্ত্বে” ছিলো তৃতীয় বিশ্বের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি কৃত্তিম সমর্থন। যা প্রকৃত পক্ষে সেই আন্দোলনকে বিনাশ করা শামিল। বাংলাদেশ কেবল ডান পন্থীদের হিংসার শিকার ছিলো না তা বামপন্থীদের দ্বারা ও আক্রান্ত হয়েছিলো। চিলির নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সরকারকে যখন সি আই এ পতন ঘটালো তখন অনেক প্রগতিশীল, বাম পন্থীরা পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রিত পিনুচেটকে সমর্থন দেয়। আর সেই ক্ষেত্রে চিন ছিলো অগ্রগামী তারা সেই সরকারকে সমর্থন ও সহযগীতা করে । কিন্তু লিন পিয়াং, জাসদ, সিরাজ সিকদার, লিডিং লাইট ও তৃতীয় বিশ্ববাদি ইত্যাদী দল সমূহ চীনের এই নীতির সাথে এক মত ছিলো না । তারা তাদের তথা কথিত “তিন বিশ্ব তত্ত্ব” ও গ্রহন করেন নাই।

লিডিং লাইট ও জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন

ফ্রান্সের গঞ্জালো পন্থীগন আমাদের সম্পর্কে বলেন যে, আমরা নাকি তৃতীয় বিশ্বের মুক্তি সংগ্রামে সমর্থক নই। আসলে তা সঠিক নয়। আমরা বরাবরই আত্মনিয়ন্ত্রনাধীকারের সংগ্রামকে সমর্থন করি। আমরা বলি “ যখনই কোন জাতি নিজেদেরকে অন্যের কলনী” ভূক্ত মনে করবেন তখনই তারা তা থেকে মুক্তি পাবার অধিকারী। আমরা তা “তৃতীয় বিশ্বের ঐক্যের জন্য ছয় দফার প্রস্তাব করেছিঃ একটি ক্ষুদ্র জাতি স্বত্বার অধিকার অন্য একটি বড় জাতির কেরে নেবার অধিকার নেই”। আমরা তৃতীয় বিশ্বের ঐক্যের জন্য কাজ করছিঃ

“ আলোকিত সাম্যবাদ তৃতীয় বিশ্বের ঐক্য কামনা করে। এই ঐক্য প্রথম বিশ্বের পরাজয় সাধন করবে, তৃতীয় বিশ্বের জাতীয় পরিধি ও ক্ষমতা বাড়াবে, এই ঐক্যের ধারা ঐতিহাসিক ভাবে এখনো বহাল আছে । তবে তাকে আরো কার্যকরী করতে হবে”।

উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশ ও “একটি উপনিবেশের উপনিবেশ হিসাবে ছিলো” ফলে স্বাধীকার ও মুক্তির প্রশ্নটি ছিলো একটি জরুরী বিষয়ঃ

“ আলোকিত সাম্যবাদ নিপিড়িত জাতি সমূহকে আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার আদায়ে এগিয়ে নিতে চায়। আত্মনিয়ন্ত্রন হল একটি খন্ডিত বিষয় হলে ও, তাদের অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে শোষন নিপীড়ন থেকে মুক্ত করতে চায়। চরম ভাবে নিপিড়িত, নির্যাতিত ও শোষিত জাতি সমূহ নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রন আদায়ের মাধ্যমে সামাজিক যে মূল দ্বন্দ্ব সাম্রাজ্যবাদ ও নিপিড়িত জাতি সমূহের দ্বন্দ্বকে তিক্ষন করতে চায়। কেবল একটি নিপিড়িত জাতি একক ভাবে এগিয়ে যেতে পারবে না তার সাথে আরো যারা নিপিড়িত হচ্ছে তাদেরকে ও এগিয়ে আসতে হবে…”(৬)

পাকিস্তান সরকার ছিলো সাম্রাজ্যবাদের পুতুল সরকার, যারা বাংলাদেশকে নানা ভাবে নিপিড়ন করেছে । ফলে সাধারন জনগণ মুক্তি সংগ্রামে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত হয়েছেন। তবে এর পাশা পাশি এটা ও আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, মার্কিন সি আই এ যখন কোন প্রকার ভন্ডামীর কাজ করে তা সত্যিকার স্বধীকার নয়। যেমন- নিকারাগুয়ায় মিস্কিতুর মুক্তি চায়। এটা ছিলো তাদের শয়তানী । কন্ট্রাদেরকে তারা সহযোগীতা করে সারা ল্যাতিন আমেরিকায়  ১৯৮০ সালে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। এই সন্ত্রাসী কাজের ভেতর দিয়ে মার্কিনীরা তৃতীয় বিশ্বের মুক্তির লড়াইকে পরাজিত করতে চেয়েছিলো। বাংলাদেশের মানুষের স্বধীকার আন্দোলন তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে মুক্তির দিশা দিয়েছিলো।  এই সকল বিষয় নিরপেক্ষ ভাবে মূল্যায়ন করলে এটা পরিস্কার হয় যে, লিডিং লাইট, লিন পিয়াং, জাসদ, এবং তৃতীয় বিশ্ববাদিরাই সঠিক রাজনৈতিক লাইনে ছিলেন। পক্ষান্তরে, মাওসেতুং , নিক্সন চক্র আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে সম্পূর্ন ভূল ছিলো।

অধ্যায় ২ঃ প্রথম বিশ্ববাদি গঞ্জালোপন্থী বনাম লিডিং লাইট

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয় যে, সকলের নিকট প্রথম বিশ্ববাদ ও ঐইতিহাসিক মিথ্যাচার সম্পর্কে  সঠিক ধারনা তুলে ধরা দরকার। তা ছাড়া এখন গঞ্জালো পন্থার প্রথম বিশ্ববাদ ও লিডিং লাইট বিষয়টি ও পরিস্কার করা দরকার। আমাদের দেখা দরকার আমাদের সমালোচক ফ্রান্সের বন্দ্বু ও আমাদের মাঝে প্রধানত কি কি পার্থক্য বিদ্যমান আছেঃ তাদের ও আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং জ্ঞান তত্ত্ব এক নয়। আমরা আশা করি উক্ত দুইটি বিষয়ে আমাদের নিম্নের আলোচনা থেকে সাধারন পাঠকগন আমাদের ও গঞ্জালোবাদি ফ্রান্সের বন্দ্বুদের মাঝে কিকি পার্থক্য তা বুঝতে পারবেন।

রাজনৈতিক অর্থনীতিঃ প্রথম বিশ্ববাদ বনাম “তৃতীয় বিশ্ববাদ” বা আলকিত সাম্যবাদ

ফ্রান্সের গঞ্জালোবাদি, প্রথম বিশ্ববাদিদের মতই মনে করেন যে, প্রথম বিশ্বে একটি প্রলেতারিয়েত শ্রেনী আছে এবং সেখানে বিপ্লবের সামাজিক ভিত্তি আছে। তারা গভীর ভাবে বিশ্বাস করেন যে, মার্কিন মুল্লুক সহ প্রথম বিশ্বে বিপ্লবের বাস্তব পরিস্থিতি তৈরী হয়ে আছে। কেবল দরকার একটি উপযুক্ত দল গঠন করার। তারা গভীর ভাবে বিশ্বাস করেন যে আদর্শিক চেতানায় সমৃদ্ব একটি সংগঠন গড়ে তুলতে পারলেই প্রথম বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সাধিত হয়ে যাবে । তাদের এই রূপ গভীর বিশ্ব থাকলেও আমরা মনে করি এই ধারনা একেবারেই সঠিক নয়। যতই সংগঠন করুন আর আদর্শ চর্চা চালান প্রথম বিশ্ব এই ব্যবস্থায় বিপ্লব সম্ভব নয়। যদি তাই সত্য হয়ে থাকে তবে প্রথম বিশ্বের দেশ হিসাবে গঞ্জালো পন্থীরা কেন সেখানে তাদের দাবী মোতাবেক নিজ মাতৃভূমিতে বিপ্লব সাধন  করছেন না, গন যুদ্ব  ও চালাচ্ছেন না কিন্তু নানা ভাবে গল্প কবিতা আর প্রবন্দ্ব লিখেই চলেছেন। যদি প্রথম বিশ্বে বিপ্লবের পরিস্থিতি বিরাজ করেই থাকে তবে তো গন বাহিনী তৈরী করে বিপ্লবী কাজকে এগিয়ে নেয়া দরকার। গঞ্জালো নিজেও চেষ্টা করে প্রথম বিশ্বে উল্লেখ যোগ্য তেমন কিছুই করতে পারেন নাই । তার ফ্রান্সীয় বন্বুরা ও তেমন কিছুই করতে পারেন নাই । প্রকৃত সত্য হলো প্রথম বিশ্বের জনগণ আদতে বিপ্লব করতেই চান না ।  সততার সাথে বিষয়টি দেখলে এটা পরিস্কার হয় যে, বর্তমানে প্রথম বিশ্বের মানুষ যে অবস্থায় আছেন তারা সেই অবস্থা থেকে পিছু হঠতে চান না – এটাই তাদের জন্য উত্তম জীবন। একটি উদাহরন দেখা যাক- একজন আমেরিকান যার বয়স  ২৫ + বছর । তার বার্ষিক আয় হলো কমপক্ষে ৩২,০০০ ডলার। (৭) পক্ষান্তরে, তৃতীয় বিশ্বের মানুষ মাত্র গড়ে ১০০০ ডলারে সারা বছরে আয় করে জীবন যাপন করতে বাধ্য হন। ভারতে তো বহু মানুষ এক ডলারের ও কম দিনে আয় করেন। (৮) আর বাংলাদেশে এখন মাত্র ১১১৪ ডলার হলো বাৎসরিক মাথা পিছু আয়। (৯) ভালো করে হিসাব করলে বাংলাদেশের মানুষে মাঝে এখন ও অনেকেই বছরে ৬২০ ডলার ও আয় করতে পারেন না । সাধারন আমেরিকানদের মাঝে, যারা সাধারন ধনী মানুষ তারা এখন আর কোন প্রকার কায়িক বা উৎপাদন মূলক কাজে জড়িত নন । তারা এখন আর কোন কারখানা বা খামারে কাজ করেন না । বরং তারা এখন অনুতপাদনশীল খাতে কাজ করেন । কোন অফিসে, বিক্রয় কেন্দ্রে বা কোন ব্যবস্থাপনায় তারা এখন নিয়োজিত আছেন।  আমেরিকায় এখন ওল-মার্ট বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মচারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। কার্ল মার্ক্স যেমন শ্রমিকের কথা বলেছিলেন তারা কিন্তু তাদের মত নয়। এরা কিছুই উৎপাদন করেন না । ওল-মার্ট কেবল বিতরন কর্মের কাজে নিয়জিত। তারা যা যা বিতরন করেন এর  সকল কিছুই উৎপাদন হয় তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে। ইহা কিছুই উৎপাদন করেন না । ইহা অনেক উচ্চ মাত্রার বেতন প্রদান করে থাকে । এছাড়া ও এরা কর্মীদেরকে প্রচুর সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে যা তৃতীয় বিশ্বের বহু পুঁজিপতি আয় করতে পারেন না । অধিকন্ত, আমেরিকার সাধারন পুজিপতিরা ক্ষুদ্র ব্যবসা, বিনিয়োগ, ( স্টক ব্যবসা, বন্ড, অবসর ভাতা ইত্যাদি) এরা এসব কিছু পায় সামগ্রীক ভাবে মার্কিন নাগরিক হবার কারনে । ইহা প্রথম বিশ্বের নাগরিক হবার ফায়দা । ওরা অধুনিক অবকাঠামো ব্যবহার করে যা তৃতীয় বিশ্বে তা চিন্তা ও করা যায় না । মার্কিনীদের সাম্রাজ্যবাদি হবার সুবাদে তারা তৃতীয় বিশ্ব শোষণের ও ভাগ খেয়ে থাকে । সাধারণ আমেরিকানরা ও বুর্জোয়া মানসিকতা পোষন করেন, তারা সেই মতে জীবন যাপন ও করে থাকেন; তাদের প্রত্যেকেরই আছে কম্পিউটার, ভিডিও গেইম, ওভেন, ফ্রিজ, টেলিভিশন, খেলাধুলার সামগ্রী ও গান বাজনা করার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি । আমেরিকান জনগণের খাবার দাবারের কোন অভাব নেই । সাধারন একজন আমেরিকান যে খাবার খায় তা দুনিয়ার অন্যান্য এলাকার ধনির সন্তানরা ও তা খেতে পারেন না । উদাহরন হিসাবে বলা যায় আমেরিকান রা তাদের ছুটির দিনে যে পরিমান বাজার হাট করেন তা যোগ করলে বাংলাদেশের মত একটি দেশের বার্ষিক জাতীয় আয়ের সমান। (১১) ভোগবাদের এই ডামা ডোলে প্রলেটারিয়ান আপনি কোথায় পাবেন। মার্কিনিরা সাধারন সাপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করে থাকেন। শনি ও রবিবার তারা ছুটিতে জীবনকে উপভোগ করে থাকেন। মার্কিনীরা বছরে দুই সপ্তাহ বেতন সহ ছুটি ভোগ করেন। তারা অবসর যাপনের জন্য ব্যাপক সহায়তা পেয়ে থাকেন। মার্কিনীদের সন্তানরা ১২ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ পান । আমেরিকায় উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিদ্যমান । অন্য দিকে তৃতীয় বিশ্বে প্রচুর মানুষ মারা যায় খারাপ স্যানিটেশনে কারনে নানা রোগ ব্যাধিতে । মার্কিনীরা স্বভাবগত ভাবে পরিস্থিতির কারনে বুর্জোয়া হয়ে বেড়ে উঠছেন। উদের মাঝে শৃঙ্খল ভাংগার কোন দরকার অনুভূত হয় না । দরকার ও নেই।

পক্ষান্তরে, লিডিং লাইট কার্ল মার্ক্সের সাথে একমত যে সর্বহারা শ্রেনীর শৃঙ্খল হারানো ছাড়া আর হারাবার কিছু নেই। সর্বহারা তো তাদেরকেই বলে যারা জাতীয় সম্পদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন। যারা বিপ্লব চায় নিজেদের জীবন বদলাতে, যা তাদের জন্য বাস্তব সম্মত, নিজস্ব পছন্দের ও চেতনের ব্যাপার। যারা মাত্র অল্প কিছু রোজগার করে বেঁচে থাকার জন্য। যাদের নিরাপদ পানি নেই পান করার জন্য। যাদের সুযোগ নেই শিক্ষা গ্রহনের। যাদের মধ্যে প্রায় সকলেই বসবাস করেন তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে। তাদের আমরা সাক্ষাত পাই দুনিয়ার উদিয়মান দেশ সমূহের মেগা সিটি সমূহের গড়ে উঠা বস্তি সমূহে। তারা এখন রিফিউজি, অভিবাসী হিসাবে পরিচিত হচ্ছেন। এ ছাড়া আদিবাসি সম্প্রদায় যাদের ভূমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। এখন সত্যিকারের সর্বহারা লোকেরা সাম্রজ্যবাদের সন্ত্রাসবাদের শিকার। সন্তাসবাদ এখন তাদেরকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

সামাজিক উৎপাদিত পন্য সমতার আওতায়, সাম্যবাদের আওতায়, বা অসাম্রাজ্যবাদের আওতায় বন্ঠন করা হলে বেশীর ভাগ প্রথম বিশ্বের মানুষ এমন কি প্রথম বিশ্বের কর্মজীবী শ্রমিক শ্রেনী ও ব্যাপক ভাবে তাদের চলমান সুযোগ সুবিধা হারাবেন । তারা তাদের আয়ের পরিমান ঠিক রাখতে পারবেন না । প্রথম বিশ্ববাদি জীবন মান ও উপভোগ হারাবেন। তাদেরকে বাধ্য করা হবে ইতিমধ্যে তৃতীয় বিশ্ব থেকে সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে যে লুণ্ঠন করেছেন তা তাদেরকে ফেরত দিতে হবে । এ ছাড়া প্রথম বিশ্ববাদি জীবন যাত্রা একেবারেই পরিবেশ সম্মত নয়। সাম্যবাদি সমাজ বিপ্লবের ভেতর দিয়ে এই পরিস্থিতির সমাপ্তি হওয়া প্রয়োজন। প্রথম বিশ্বের মানুষ ও এই সকল বিষয়ে সম ভাবে অবগত আছেন। আর এই সকল কারনেই প্রথম বিশ্বের জনগণ বিশ্ব প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর সহায়ক হতে চায় না । আর এ সকল কারনেই দেখা যায় প্রথম বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার বিপ্লব সাধন করা সম্ভব হয়নি। ইহা ১৯৬৮ সালের ফরাসী বিপ্লবের সময় ও প্রমানিত হয়েছে । শ্রমিকগন তাদের কাজের দুই সংখ্যার মজরী  ফিরে গিয়েছিলো। তাদের অর্থ গ্রিদনুতার কারনেই তাদের প্যারিসের বিপ্লব বিফলে যায়, ১৯৬৮ সালে সত্যিকার কোন বিপ্লব সংগটিত হতে পারে নাই, বরং প্রথম বিশ্বের শ্রমিক শ্রেনী তাদের সুবিধাদী আদায়ের জন্য তাদেরি সাম্রাজ্যবাদি চক্রের সাথে একটি বুঝা পড়ায় নেমেছিলো। সত্যিকার অর্থে ওরা তো তাদেরি অংশ। পক্ষান্তরে, আমরা তৃতীয় বিশ্বে কি দেখতে পাই। সেখানে একের পর এক বিপ্লব সাধিত হয়েছে । কিন্তু প্রথম বিশ্ব বাদি ফ্রান্সের গঞ্জালো পন্থীরা এই পরিস্থিতিকে বরাবরই অবজ্ঞা করে এসেছেন। তারা আসলে কল্পনার জগতে বসবাস করছেন। তারা মার্ক্সের দেখা প্রায় দেড় শতাব্দি আগের দুনিয়ায় এখনো পড়ে আছেন। সেই সময়কার ইংল্যান্ড ও ইউরূপীয় দেশ সমূহের পরিস্থিতিতে। দুনিয়া বদলে গেছে । এঙ্গেলস বলেছিলেন বুর্জোয়া করনের কথা আর লেনিন বলেছিলেন অভিজাত মজুরের কথা । আর সেই কারনেই তারা বলেছিলেন বিপ্লবের কেন্দ্র হবে “পূর্বে”। তাদের সময় কাল থেকেই প্রথম বিশ্বে বুর্জোয়া করনের প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছে ব্যাপক হায়েছে। সামগ্রীক ভাবে বলা যায় প্রথম বিশ্ব এখন বুর্জয়া সমাজেই পরিনত হয়েছে ।

অধিবিদ্যা বনাম বিপ্লবী বিজ্ঞান

ফ্রান্সের গঞ্জালো পন্থী ও প্রথম বিশ্ববাদিরা প্রকৃত পক্ষে অধিবিদ্যাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। তাদের মতান্দ্বতা ও শ্রেনী বিশ্লেষণ মূলত জ্ঞান বিজ্ঞানের বেড়াজালে আটকে আছে। তাদের কাজের কেন্দ্রে কোন বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক পন্থা কাজ করছে না ।  তাদের কাজের নিয়ন্ত্রক হলো অধিবিদ্যা। তারা বোকারমত অবৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনায় ভারাক্রান্ত। তারা আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানকে পার্শ্ব ফেলে রেখেছে এবং মাওয়ের নিকট চুটছে অধুনিক মহা বিশ্বের নানা সমস্যার সমাধান করতে । তারা সকল জ্ঞান বিজ্ঞান ও সময়ের একমাত্র বিজ্ঞানী বা নায়ক নন বা এদের কাজে এমন কোন প্রমান ও নেই । তারা প্রচীন ভারত ও গ্রীক জ্ঞান বিজ্ঞান বিষয়ে অবহিত ছিলেন। তাদের বহু বর্ননাই প্রমান সাপেক্ষ ছিলোনা । তা কেবলই বর্ননা । তারা যথাযথ কোন তথ্য বা সর্বজন গ্রাহ্য উল্লেখ যোগ্য মতামত ও দিয়ে যেতে পারেন নাই। বেশীর ভাগ কথাই ছিলো কনফুসিয়ান ভাবধারার । জিজ্ঞাসা আকারে যাদের প্রকাশ পেয়েছে । মার্ক্স এই কথা বলেছিলেন। গঞ্জালো সেই কথা বলেছিলেন।  মাওসেতুং নিজে “পুস্তক” পুজার বিরুধীতা করে গেছেন । এই ধরনের মনোভাব একজন ধর্মতান্ত্রিকের জন্যই সাজে । ধর্মবাদিতা প্রায়স মহান চিন্তার জগতকে বোকামীসুলভ ভঙ্গীতে প্রকাশ করে থাকে। তাদের সাথে তখন আর বিতর্ক করা চলে না । তারা চিন্তা ও “ইজম” কে গুলিয়ে ফেলে । এরা মাওয়ের প্রতিরক্ষামূলক গনলড়াইকে ভূল ভাবে প্রাকাশ করেছেন। তাদের ধার্মিক সূলভ ভাবনা চিন্তা নিজেদের মাঝে উপদলীয় কোন্দলের ও জন্ম দিয়েছে ; তাদের মধ্যেই একটি দল ভলিবিয়ার সেভেজকে নানা ভাবে বিরুধীতাকরে তাকে আমলাতান্ত্রিক ও পরজীবী সর্বহারার শত্রু হিসাবে অবহিত করেছেন। অথচ  আমরা জানি মার্কিন সি আই এ বার বার নানা ভাবে ভেনিজুয়েলার সরকারকে পতন ঘটানোর চেষ্টা করেছে। ফ্রান্সের গঞ্জালোপন্থীরা নানা কারনে এখন রাজনৈতিক ভাবে অন্দ্বত্বে ভোগছেন। তারা সত্যিকার ভাবে জানেনই না আসলে গঞ্জালো শান্তি চান না কি অন্য কিছু। কেননা তিনি এখন শত্রুদের হাতে বন্দ্বি। তারা এখনও আব্দুল্লাহ ওকালিন এর বিরুধিতা করে যাচ্ছেন। তিনি এখন আর বিপ্লবের পথে নেই। ১৯৯০ সালে পেরুতে একটি ক্ষুদ্র দল ছিলো যারা বিপ্লবী পথের অনুসারী ছিলেন। তাদের মধ্যে এখনো তেমন কোন পরিবর্তন আসে নাই । গঞ্জালোর প্রতি গুরুবাদি মানসিকতা সত্যিকার বিপ্লবের দিকে তাদেরকে এগুতে দিচ্ছে না । উত্তম পন্থা তো হলো অতীতের নেতাদের নিকট থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান বিজ্ঞানকে উন্নত করা – কোন ভাবেই তাদেরকে আইকন বানিয়ে পূজা না করা । গঞ্জালো পন্থীরা তাই করছে যা কোন বিপ্লবী দলের প্রতি কাম্য নয়। লিডিং লাইট এই পন্থার অনুসারী নয় ।

চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা হয়েছিলো প্রায় অর্ধ শাতাব্দি আগে । এখন আমাদের সর্ব শেষ বিপ্লবটি নানা কারনে সমস্যায় আক্রান্ত। এখন সৌভিয়েত ইউনিয়ন ও আর নেই। প্রথম বিশ্বে উল্লেখ যোগ্য প্রলেতারিয়েত নেই। চীনে ও মাওবাদিরা ক্ষমতায় নেই। তবে তৃতীয় বিশ্বে এখন ও চরম দারিদ্র অবস্থা বিরাজমান । বিশ্ব ব্যাপী অসাম্য বেড়েই চলছে । স্বাধীকারের লড়াই ও এখন স্থিমিত। দুনিয়া পালটে গেছে। এই পাল্টানোর ধারা অব্যাহত আছে । এর পর ও মার্ক্সবাদি-লেনিনবাদি, মাওবাদি ও গঞ্জালোবাদিদের মাঝে গোঁড়ামির কোন কমতি নেই। যা সত্যিকার ভাবে বিপ্লবী আন্দোলনে নানা সংকটের সৃজন করছে । আর সেই সকল কারনেই সাম্রাজ্যবাদ দিনে দিনে আরো শক্তি শালী হয়ে উঠছে। নিপিড়নের বিজ্ঞান কোন ভাবেই স্তব্দ হচ্ছে না । সাম্রাজ্যবাদীরা সেই নিপীড়নের বিজ্ঞানকে আরো শক্তিশালী করছে – তাদের সেনা বিজ্ঞান,সাংগঠনিক বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, রষায়ন, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি ।- এর এ সকলকেই মানুষের বিরুদ্বে ব্যবহার করছে । প্রকৃত সত্য হলো যে, মার্ক্সবাদি-লেনিনবাদি, মাওবাদি বা গঞ্জালোপন্থীরা শ্ত্রুদেরকে সেই আগের অবস্থায় রেখেই কর্ম কৌশল নির্ধারন করছেন। অথচ শ্ত্রুদের বিজ্ঞান অনেক উন্নত ও বিকশিত হয়েছে ।  পক্ষান্তরে,মার্ক্সবাদি-লেনিনবাদি, মাওবাদি বা গঞ্জালোপন্থী্রে,সেই ভাবে অগ্রসর হতে পারেন নাই। লিডিং লাইট এসবের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। সত্যের প্রতি অনুরাগী হয়েছে । আমরা অনুসরন করি অতীতের সকল লিডিং লাইটকে যেমন – মার্ক্স, লেনিন, মাও ও গঞ্জালোকে। তবে একজন বিপ্লবী বিজ্ঞানী হিসাবে তাদের মধ্যে ও যে সকল ভূল রয়েছে তা আমরা বর্জন করি। আমরা অতীতকে আক্রে থাকতে পারিনা । তাদের নামে আমরা মতান্দ্বতায় ভোগতে পারিনা । যা যুক্তিসম্মত তাই আমরা গ্রহন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমরা তো তাদেরই উত্তারধিকার। লিডিং লাইট প্রচলিত সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল কিছুকে ব্যবহার করতে চায়। আমরা সকলের প্রত আহবান জানাই আপনারা আমাদের দলিল পত্রের সাথে নিজেদের টা ও মিলিয়ে দেখুন । আমাদের কোন ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দিন । আমরা বিশ্বাস করি আদর্শই হলো আমাদের আসল অস্ত্র।

আমরা আমাদের সকলের প্রতি আহান জানই তারা যেন আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদেরকে আলোকোজ্জল পথে ফিয়ে আনেন। বিপ্লবের পথকে যেন আর প্রসারিত করে তুলেন। সুন্দর আগামীর জন্য যেন আলোকিত সাম্যবাদকে গ্রহন করেন। আমাদের যে সকল দলিলাদি ওয়েব সাইটে আছে তা পড়ে দেখার অনুরুধ করছিঃ

Questions about Maoism and Leading Light Communism

Revisiting value and exploitation

Equality and Global Alignments

Real versus Fake Marxism on Socialist Distribution

The Slum within the Global  Countryside

Perceptions of Crime Rates

“Third Worldism,” epistemology, art, socialism

Plato’s cave, First and Third World, science and epistemology

Sailing the seas depends on a helmsman

Comments on First Worldism and Popper’s challenge

Religion, Addiction, Epistemology, Revolution

Smashing idols

Seas are rising, Clouds and Waters Raging Part 1 to 8

Was Lin Biao plotting a coup?

Dissent, science, and a healthy world Part 1 and Part 2

Jackal bites Jackal

আমরা জনগনের প্রতি আমাদের দায়িত্বকে ভূলে যাবনা । প্রকৃত সম্মান ও ক্ষমতা জনগণের জন্য। আমরা আমাদের সকল সামালোচকদেরকে  জেগে উঠার জন্য আহবান জানাই। আপনার কান থাকলে শুনুন। চোখ থাকলে দেখুন ! জনগণের সেবা করুন, বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিনঃ লিডিং লাইট কমিউনিজম।

তথ্য

  1. http://lesmaterialistes.com/english/joint-declaration-third-worldism-and-description-three-worlds
  2. http://llco.org/jackalbitesjackal/
  3. https://www.marxists.org/reference/archive/lin-biao/1965/09/peoples_war/
  4. http://www.ucis.pitt.edu/ncta/pdfiles/ChengJnlColdWarStudiesArticle.pdf
  5. http://www.ranganayakamma.org/linpiao.htm
  6. http://llco.org/six-points-on-third-world-unity-smaller-nations-within-multi-national-formations/
  7. http://pubdb3.census.gov/macro/032006/perinc/new03_001.htm
  8. http://llco.org/united-states-rich-india-poor-so-called-international-communism-movement-deaf-and-dumb/
  9. http://data.worldbank.org/indicator/NY.GDP.PCAP.CD
  10. www.riazhaq.com/2015/03/comparing-median-incomes-of-bangladesh.html
  11. http://llco.org/black-friday-2015-americans-wage-a-jihad-of-consumption-spend-almost-the-same-as-the-gnp-of-bangladesh/

Leave a Reply