সাক্ষাৎকার: “তৃতীয় বিশ্ববাদ”, জ্ঞানতত্ত্ব, শিল্প ও সাম্যবাদ

hqdefault-300x225(llco.org)

১. আপনার সাথে কথা বলতে পেরে আমি সম্মান বোধ করছি। অনেকেই আপনাকে “তৃতীয় বিশ্ববাদি” হিসাবে পরিগনিত করেন, যা একজন মাওবাদি হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থেকে। আপনি কি নিজেকে তাই মনে করেন?

আমরা তো এমন একটি বিপ্লবের কথা বলছি যা দরিদ্র মানুষের দুঃখ, কষ্ট লাগব ও শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিবে। এক কথায় বললে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের মুক্তি আসবে। এটা তো সত্য যে মহান কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন যে, “ সর্বহারাদের কেবল শৃংখলটা ছাড়া হারাবার আর কিছুই নেই। তাদের সামনে আছে পুরো বিশ্ব জয় করার জন্য”। আমরা যদি সত্যি নির্মূহ ভাবে থাকাই তবে দেখতে পাব যে, প্রথম বিশ্বে মানুষ শৃংখল হারানোর মত অবস্থা থেকে বহু দূরে অবস্থান করছেন। তারা জীবন যাত্রার ক্ষেত্রে এক প্রকার ভোগবাদি ও বিলাশী জীবন যাপন করছেন।তারা আরাম দায়ক স্থিতিশীল, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ সামাজিক ভাবে সু সম্মানের সাথে দিন গোজরান করছেন। নির্মূহ ভাবে মার্ক্সীয় শর্তাবলী প্রয়োগ করলে, তাকে ও কি আমরা তৃতীয় বিশ্ববাদি বলতে পারি না ? সামগ্রীক ভাবে সকল কিছু বিবেচনায় আনলে আমরা দেখব সেই লোকেরা কথায় থাকেন যারা কেবল ঠিকে থাকার জন্য তাদের শ্রম বিক্রি করেন? সেই লোকেরা কথায় বসবাস করেন যারা এমন অবস্থায় আছেন, “যাদের শৃংখল ছাড়া হারাবার কিছু নেই” ? বর্তমান দুনিয়ায় প্রধানত সেই সকল মানুষ বাস করেন তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমূহে। আমরা কি অতীতের মেধাবী বিপ্লবী নেতাদের অবদানকে স্বীকার করব না ? কার্ল মার্ক্স ছিলেন এখন লিডিং লাইট। হ্যা, ভ্লাদিমির লেনিন ছিলেন একজন লিডিং লাইট। হ্যা, একজন সত্যিকার বিজ্ঞানীর মতই আমরা সকল ভালো ভালো দিক গুলো গ্রহন করব আর মন্দ দিক গুলো পরিত্যাগ করব। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদী ঐতিহ্যকে যথাযথ ভাবে লালন করব। তবে, বিশেষ চিহ্ন বা লেবেল অনেক সময় কোন বিষয়কে পরিস্কার ভাবে তুলে ধরতে না ও পারে। এই চিহ্নটি অনেক ক্ষেত্রে ভালো ও হতে পারে। তৃতীয় বিশ্ববাদের লেবেলটির সাথে কিছু পুরাতন ভূল ধারনা ও জড়িত আছে। তবে সেই বিষয়টি এই ক্ষেত্রে সামগ্রীক ভাবে প্রযোজ্য নয়। আসলে আমরা কি করছি তাই হলো বড় কথা । আমরা যা করছি সেই সম্পর্কেই সবিশেষ অবগত নন। আলোকিত সাম্যবাদের বিষয়টি আগের যে কোন চিন্তাধারার চেয়ে অগ্রসর। বিপ্লবের জন্য, সামগ্রীক ভাবে ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য এটা ধারুন এক কর্মকৌশল। এর নাম আলোকিত সাম্যবাদ।

আসুন বাস্তবতা যাচাই করে দেখি। ইতিহাসের দিকে থাকান। লিন পিয়াং যিনি ছিলেন মাওসেতুংয়ের ঘনিস্টজন, প্রধান সেনাপতি, এবং ঘোষিত যোগ্য উত্তারাধিকার। তিনি ১৯৬৯ সালের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নবম কংগ্রেসে ঘোষনা করেছিলেন যে, “ আজকের দুনিয়ায় প্রধান প্রবণতা হলো বিপ্লব সাধন করা”। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় আমি বলতে চাইছি সেই ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ বা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ের কথা, যখন লিন পিয়াং জন যুদ্বের ভেতর দিয়ে মানবতার বিজয়কে তরান্বিত করে ফেলেছিলেন, যা দেখে মাওসেতুং বলেছিলেন যে, এখন মানুষের শক্তি আর পুঁজিবাদের শক্তি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। ইহা চুড়ান্ত পরিনতির দিকে এগোচ্ছে। মাওসেতুং শিক্ষা দিয়েছেন পুঁজিবাদের নেতৃত্বে বিশ্ব ব্যাপী অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাই সাম্যবাদকে বিজয়ী করতেই হবে। সেই দৃস্টি ভঙ্গীতে দেখলে আমরা দেখব যে, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ বা মোড়লদের মাঝে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সকলেই নিজেদের প্রচলিত ব্যবস্থা নিয়ে সঙ্কটে নিপতিত হয়েছেন। তারা ও এর অবসান চান। তারা কতিপয় সংস্কার ও সংশোধনের পথ ধরতে চাইছেন। তাই গন সংগ্রামের সূচনা করে প্রকৃত মার্ক্সবাদ ও সংশোধনবাদের পার্থক্যটা আমরা তুলে ধরতে পারি। আমরা লিন পিয়াংয়ের সেই মতের সাথে আমরা ও একমত পোষন করে থাকি। প্রথম বিশ্বে ও এমন অনেক লোক আছেন যারা গন সংগ্রাম ও গন যুদ্বের কথা বলেন কিন্তু সত্যিকার ভাবে উরা কোন দিনই এগিয়ে আসেন না । আমরা তাদেরকে বলি “ কাপুরুষ সিংহ”। এটাকে আজকের যোগের সবচেয়ে বড় সংশোধন বাদ বলা যেতে পারে। তাই, লিন পিয়াং চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় সারা দুনিয়ায় গন সংগ্রামের আহবান করেছিলেন যেন বিশ্ব ব্যাপী বিপ্লব সাধন করে সাম্রাজ্যবাদকে পরাজি

ত করা যায় । এটা কিন্তু চে র আহবানের মত ছিলো নাঃ “দুই,তিন বা অনেক গুলো ভিয়েতনাম” সৃষ্টির ধারনার মত নয়। কারন সাম্রাজ্যবাদ এখননেক শক্তিশালী, তারা আগের মত দূর্বল নয়, তাদেরকে নানা দিক থেকে আক্রমন করে পরাজিত করার কৌশল নিতে হবে। কিন্তু অনাকাংখিত হলে ও সত্যি যে তা যথাযথ ভাবে সংগঠিত করা যায়নি। চীনারা সেই দায়িত্ব নিতে চেয়েছিল। তা বিশ্বের সকল জায়গায় পজিবাদের পতনের কথা বলেছিলেন। পূর্ব এবং পশ্চিম সকল জায়গায়। এর অর্থ হলো কূটনৈতিক ভাবে এদেরকে একঘরে করে দেয়া । আজ সেই পরিস্থিতি ও নেই।

এটা স্বীকার করতেই হবে যে চীনাদের ধারনাগত ভূল ছিলো ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০ সালের সাম্রাজবাদ প্রতিরোধের জন্য সাম্যবাদিদের সেই শকতি ছিলো না । মাও নিজে এবং তাঁর ডান পন্থী লোকেরা পশ্চিমাদের প্রতি ঝুকে পড়েছিল। লিন পিয়াং এবং তাঁর পক্ষের শক্তি যারা গন সংগ্রামের কথা বলতেন তাদেরকে পরিকল্পিত ভাবে ১৯৭১ সালে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলো। ১৯৭০ সাল থেকেই চীন কূটনৈতিক ভাবে গন সংগ্রামের প্রতি সমর্থনের পরিবর্তে গতানুগতিক কূটনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়ে। নিজেদেরকে অনেক ক্ষেত্রে গুটিয়ে ফেলে। এটা ছিলো এক ধরনের লৌহযবনিকার আড়ালে মাওয়ের চলে যাওয়ার মত অবস্থা, তিনি সৌভিয়েত ইউনিয়নকে এক কালে সমালোচনা করেছিলেন সাম্রাজ্যবাদের সাথে “শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের”। কিন্তু তিনি নিজেই এক সময় সেই পথ ধরলেন। ১৯৭০ সালে একেবারে ক্রুশ্চেভের মতই আন্তর্জাতিক নীতি গ্রহন করে বসেন। সৌভিয়েত ইউনিয়ন যেভাবে পশ্চিমাদের সাথে মিলে ল্যাতিন আমারিকাকে বেচা কেনা করছিলো, একেই কর্ম করার জন্য চীন ও তাদের সাথে যক্ত হয়। আর সময়েই চীন পিনু চেটের মত একটি রক্ত চোষা শাসককে সমর্থন দিয়ে সর্বহারার রাষ্ট্রটি কে কলংকিত করে। এই ক্ষেত্রে মনে পড়ে চীনা এমব্যাসির সেই ঘটনার কথা যখন চিলির খুনি সরকার মানুষ খুন করছিলো তখন তারা ছাত্র, শ্রমিক, ও সাধারন আন্দোলন কারীদেরকে নুন্যতম সাহায্য করেনি। তারা সেই সময় তাদের দরজা একেবারে বন্দ্ব করে দিয়েছিলো। বাংলাদেশ – ১৯৭১ হলো আরো একটি জ্বলন্ত উদাহরন। মাওসেতুং পাকিস্তানী ও পশ্চিমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেছিলেন। অথচ ঠান্ডা মাথায় পাকিস্তানীরা বাংলাদেশে গন হত্যা চালাচ্ছিলো। মাওয়ের জীবনে এই ঘটনা গুলো অবশ্যই ভূল ছিলো। এর পর ও আমরা বলি যে। মাওসেতুং একজন মহান বিপ্লবী। একজন লিডিং লাইট। তবে অত্যন্ত সততার সাথে আমাদেরকে তাদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে আগামী দিনের বিপ্লবের জন্য।

আমরা এই সকল ক্ষেত্রে যা বলতে চাইছি তা হলো অনেকে কিছুই পরিবর্তীত হয়েছে। পরিস্থিতি নানা ভাবে পাল্টে গেছে। আজকে সারা দুনিয়াই বিপ্লবী আন্দোলন অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এখন কোন সমাজতান্ত্রিক দেশ ও নেই। সৌভিয়েত ইউনিয়নের চূড়ান্ত পতনের বহু আগেই সেখানে সমাজতন্ত্র তিরোহিত হয়ে গিয়েছিলো। আর ১৯৭০ সাল থেকেই চীন সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে পুঁজিবাদের দিকে আস্তে আস্তে যাত্রা করেছে। চীন এখন একটি শ্রম বাজারে পরিণত হয়েছে। যারা নানা জাতের দ্রব্যাদি তৈরী করছেন, ভোগ্যপন্য সর্বরাহ করছেন আমেরিকা সহ অন্যান্য প্রথম বিশ্বের দেশে দেশে। চীনের শ্রম বাজার এখন সর্বহারাদেরকে শোষণ করে প্রথম বিশ্বের মানুষের তৃষনা মিটাচ্ছে। কিছু দিন আগেও এই পরিস্থিতিকে চীনে ভালো চোখে দেখা হত না, অনেক বই পুস্তক এর বিরুদ্বে প্রকাশ করা হয়েছে। “ প্যাক্স আমেরিকানা” “ বিশ্বকে মুক্ত করুন” “ ইতিহাসে মোড় ঘড়িয়ে দিন” “ বড় বড় ধারনার যুগের অবসান করুন” “ সাম্যবাদের মৃত্যু” ইত্যাদি।

আমরা কোন ভাবেই মাওবাদকে খাট করে দেখতে চাই না । রাজনৈতিক অর্থনীতি, মাওবাদ এ সংশোধনবাদি ভাবনার বিরুদ্বে আমরা কথা বলছি। প্রথম বিশ্ববাদি চিন্তাবিদগন মনে করেন যে, প্রথম বিশ্বে উল্লেখযোগ্য হারে সর্বহারা রয়েছেন। তারা মনে করেন সেই সর্বহারা শ্রেনী বিপ্লব সাধন করবেন। তারা সেই বিপ্লবের কথা বলতে গিয়ে অতীতের বিপ্লবী শব্দাবলী ব্যবহার করেন, বিপ্লবী নায়কদের নাম ব্যবহার করেন। সৌভিয়েত আমলে ও তাই করা হয়েছে। “চিন্তার জগতে” নিজেদেরকে প্রতিস্টিত করতে গিয়ে নানা প্রতীক ও চিহ্ন ব্যবহার করে জায়গা করে নেয়া একটা প্রবনাতা সকল সময়েই দেখা গেছে। এই সকল চিন্তা চেতনায় বিজ্ঞান মনষ্কতার অভাব লক্ষ্যনীয়। তা কেবল একটি বিশেষ ক্ষেত্রেই নয়, তা সর্বত্রই দেখা গেছে। তাদের মাঝে রাজনৈতিক অর্থনীতি, এবং ইতিহাস বিচারে ও বিভ্রান্তি লক্ষ্যনীয়। এছাড়া সাংস্কৃ

তিক বিশ্লেষণ, মেধার বিকাশ সাধন, শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাদের মারাত্মক দন্যতা ধরা পড়েছে। তাদের মাঝে অগ্রসর বিপ্লবী চিন্তার ক্ষেত্রে অজ্ঞতা বিদ্যমান। নিজেদের প্রতিভা বিকাশে প্রাগ্রসরতার অভাব, সবুজ বিপ্লব সাধনে অক্ষমতা, প্রানী বিদ্যা, বস্তুবাদ, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে তারা তেমন কোন ভূমিকাই রাখতে পারেন নাই ।

আমি খুবই অভাক হই যখন দেখি ঐতিহাসিক বস্তুবাদ গ্রহন করার পর একজন মানুষ মতান্দ্বতায় আক্রান্ত হচ্ছেন, লেনিনের কথা বলছেন অথচ তাঁর বিপ্লবী চেতনাকে ধারন করছেন না। বিপ্লবের বার্তা প্রচার প্রচারনার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে গবেষণার মাধ্যমে যে সকল পন্থা আবিস্কৃত হয়েছে তা ব্যবহারে তাদের মাঝে হীন মন্যতা দেখা যায়। আমি একেবারেই অবাক হই না যখন দেখি বাম পন্থার লোকেরা ইসলামী আন্দোলনের কাছে নিজেদেরকে সপে দিচ্ছেন। অন্যদিকে সামরিক পন্থার কার্যক্রমে ও ভাটা পড়েছে। এক সময় যে পন্থা অত্যন্ত কার্যকরী ছিলো আজ তা অনেকাংশেই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এখন কোথাও বিপ্লব বিজয়ে কথা শোনা যায় না । এমন কি এগিয়ে যাচ্ছে তা ও নয়। এর পিছনে জ্ঞান তত্ত্বের সমস্যা রয়েছে বলেই আমরা ধারনা । মতান্দ্বতাই মনে হচ্ছে এখন প্রধান সমস্যা । এছাড়া নতুনত্বের অভাব, মেধাবী বিজ্ঞানী ও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাবার যোগ্যতার অভাব। দুনিয়া বদলে গেছে, আমাদেরকে ও বদলাতে হবে, যদি সত্যি আমরা বিজয় কামনা করি। এমন ও কিছু মানুষ আছেন যারা বিজয়ের চাইতে মতান্দ্বতাকে বেশী পছন্দ করেন। আবার, এখন এমন মানুষ আছেন যারা “ সাম্যবাদি” নামে নিজেকে প্রকাশ করতে এত বেশী উৎসাহ দেখান যা অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু। এই ক্ষেত্রে আমরা একটু ব্যাতিক্রম। আমরা একান্ত ভাবেই মতান্দ্বতাকে না বলি। আলোকিত সাম্যবাদ হলো এই সময়ে অগ্রসর বিজ্ঞান।

আমরা কোন একটি মাত্র বিষয়ে অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ করিনা । আলোকিত সাম্যবাদ কেবল একটি রাজনৈতিক অর্থনীতি নয়। ইহা হলো সামগ্রীক ভাবে বিপ্লবের সকল দিকেরই বিজ্ঞান। আমরা কেবল অর্থনৈতিক মক্তির কথা বলিনা। আলোকিত সাম্যবাদ মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের পরিবর্তনের কথা বলে সামগ্রীকতাকে বিবেচনা করে- সকল অবৈজ্ঞানিকতাকে বিতারিত করতে চায়। সেই জন্যই আমরা বলি আমাদের নেতা কেবল একজনঃ আলোকিত সাম্যবাদের সত্য। সেই জন্যই আমরা সাধারন বিজ্ঞান নিয়ে খোলামেলা কথা বলি। সাথে সাথে উচ্চতর বিজ্ঞান ও আমাদের আলোচনার বিষয় বস্তু। সকল বিপ্লবেই সাধারন বিজ্ঞানকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমার জানা মতে আমরাই প্রথম সামগ্রীক ভাবে বিপ্লবের মহানত্ব ও বিপ্লবীদের খ্যাতি নিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা করেছি। সাধারন বিজ্ঞানকে গন মানুষের সামনে হাজির করেছি। অত্যন্ত দৃঢ় ভাবে, “ব্যাক্তিবাদের” সম্পর্কে কথা বলেছি। এত দিন যা মানুষের অজ্ঞাত ছিলো আমরা তা প্রকাশ করে দিয়েছি। যদি কোন বিষয় সাধরন জনগণের মাঝে আলোচিত হয় তবে তা কিভাবে কাজ করে, জনগণকে সেই প্রক্রিয়া অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দেয়া হয়। তারা মুক্ত ভাবে সেখানে অংশ গ্রহন করতে পারেন। আবার কেহ কেহ তা শুনে হাসতে ও পারেন। আবার কেহ কেহ উট পাখির মতই নিজের মাথা বালির ভেতর ঢুকিয়ে বসে থাকতে পারে। তারা কে কিভাবে নিজেদের প্রতিক্রিয়া দেখাবেন ? সামগ্রীক ভাবে আলোকিত সাম্যবাদ হলো কোন কঠিন বিষয়কে সহজ ভাবে দেখার একটি অগ্রসর পদক্ষেপ। আমরা ক্রমে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এবং সত্যিকার বিজ্ঞানকে কমান্ডে স্থাপিত করছি। আমরা সকল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে অনুসরন করা পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে মার্ক্সবাদ হলো সকল কিছুর প্রানশক্তি। আমরা বিপ্লবী বিজ্ঞানের আরো একটি নতুন স্তরে উন্নিত হবার কথা বলছি। জনগণকে অদর্শিক অস্ত্রে সজ্জিত করে বিপ্লবের মাধ্যমে আলোকিত সাম্যবাদের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞা বদ্ব হয়েছি। প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের মাঝে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের অনেকেই এখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করে নাই। যদি কোন মানুষ পিপাসায় কাতর হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয় তবে তাকে নোংরা পানি পান করতে দিলেও সে তাই পান করবে। কিন্তু, যদি নোংরা পানির পাশা পাশি যদি পরিষ্কার পানি দেয়া তবে অবশ্যই সে পরিষ্কার পানি পান করবে। আমরা আশা করছি, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সর্বত্র পরিষ্কার পানি বা খাঁটি বিপ্লবী বিজ্ঞানের বক্তব্য হাজির করা হবে।

আমরা ইতিমধ্যেই আদর্শগত লড়াইয়ে বিজয় লাভ করেছি। আমাদের আদর্শের পতাকা এখন সকলের উপরে অবস্থান করছে। নিতসে লিখেছিলেন, একটি পাহাড় থেকে অন্য একটি পাহাড়ে যেতে হলে তোমাকে লম্বা লম্বা লাফ দিতে হবে। বলষেভিক বিপ্লব হলো একটি পাহাড় চূড়া। মাওবাদি বিপ্লব হলো আরো একটি পাহাড় চূড়া। আমরা অন্য

একটি পাহাড় চূড়া নির্মানের জন্য কাজ করছি। অনেক লোকই লাফ দিতে পানে না। তাদের সেই পা ও নেই। বহু লোক এখন ও অতীত নিয়ে পড়ে আছেন। তারা সেই দিকেই অন্য পাহাড় চূড়া নির্মানে ব্যাস্ত। তারা আদর্শগত ভাবে একটি মরু ভূমিতে বাস করছেন। এটা নিষ্প্রান। উচ্চতর বিজ্ঞানের জগতে ও আমরাই জয়ী। আমরা সেই জগত নিয়ে কাজে মত্ত্ব আছি। সংশোধনবাদিরা যাই বলুক না কেন আমরা রাজনীতিকে অবশ্যই কমান্ডে স্থাপন করব।

২. “রাজনীতি কমান্ডে” এই কথাটি কি এসেছে চীন বিপ্লব থেকে? আমরা “ রাজনীতি কম্যান্ডে” এ সম্পর্কে আপনার ব্যাখ্যা শোনতে চাই ।

হ্যা, মাওসেতুং বলিস্ট ভাবে বলেছিলেনঃ

“ আদর্শিক ও রাজনৈতিক সঠিকতা সকল কিছুই নির্ধারন করে দেয়। যদি পার্টির লাইন সঠিক হয় তবে তাঁর হাতে সব কিছুই আসতে বাধ্য। যদি তাঁর অনুসারী না থাকে, তবে ইহার অনুসারীর সংখ্যা বাড়বে; যদি তাঁর অস্ত্র সশস্ত্র না থাকে তা ও এসে যাবে; যদি রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকে তবে তা ও আসবে। যদি ইহার লাইন ভূল থাকে, তবে তা তাঁর পরাজয় অনিবার্য”।

বিপ্লব মানে কিন্তু কোন অন্দ্ব অভিযান নয়। ইহা কোন দুর্ঘনা । যোশেফ স্ট্যালিন একবার বলেছিলেন, জনগণই বিপ্লবের নৌকা সাম্যবাদের বেলাভূমিতে ভিড়িয়ে দিবে, নেতৃত্ব থাকুক বা না থাকুক। কেহ কেহ মনে করেন প্রাকৃতিক ভাবেই বিপ্লব সংঘটিত হয়ে যাবে, আমাদের বিপ্লব বুঝি এটমের বিধি অনুসারে ঘটে যাবে, এটাকে অনেকে অনিবার্য মনে করেন। ইহা একটি যান্ত্রিক ধারনা মাত্র। ইহা হল উৎপাদন বাদি ও প্রকৌশল কেন্দ্রীক প্রবনতার প্রকাশ যা প্রতিবিপ্লবকে ডেকে আনে। আবার কেহ কেহ এমনও মনে করেন যে সাম্যবাদ তো আসবেই এর কোন ব্যাতিক্রম হতেই পারেন না। কেহ কেহ মনে করেন, প্রযুক্তিগত উন্নতি হলেই চলবে তার জন্য সচেতনতা বা পরিপক্ষ নেতৃত্বের দরকার নেই। আপনা আপনি মানুষ সচেতন হয়ে যাবে এবং সাংস্কৃতিক ভাবে ও ক্ষমতা গত ভাবে পরিস্থিতি বদল হয়ে যাবে। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে দুটি পক্ষ লড়াই করে যাচ্ছে। এর একটি হলো বিপ্লবী আর অন্যটি হলো প্রতিবিপ্লবী শক্তি। চীনের সমাজে আমরা দেখছি তাদের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে এক দিকে ছিলো সাম্যবাদি শক্তি অন্য দিকে ছিলো পুঁজিবাদী শ্রেনী। বিপ্লব মোটেই কোন অনিবার্য বিষয় নয়, কেবল প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধন করে বিপ্লব করা যাবে না। বিপ্লব হলো কোন একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্দিস্ট কিছু কার্য সাম্পাদন করা । তার জন্য অবশ্যই একটি আদর্শ থাকতে হবে। বিপ্লবী বিজ্ঞান অবশ্যই চর্চা করতে হবে। রাজনীতি এর একটি অনিবার্য অঙ্গ। নেতৃত্ব অতি দরকারী একটি বিষয়। আদর্শ, নেতৃত্ব, বিজ্ঞান ও রাজনীতি ছাড়া কোন ভাবেই বিপ্লবের নৌকায় বাতাস লাগবে না। জনগণের নাও কূলের লাগাল পাবে না । আমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই মহান নেতা, মহান আদর্শ ও আলোকিত সাম্যবাদের পথ অনুসরন করতে হবে । আমরা সকল আন্দোলনের মধ্য উত্তম আন্দোলনের সূচনা করতে চাই। পৃথীবির নানা প্রান্ত থেকে মেধাবী নেতৃত্ব বেড় করে আনতে চাই। দুনিয়ার বুক থেকে শোষন, নিপীড়ন, দারিদ্রতা খুন ও ধর্ষনে অবসান ঘটাতে চাইলে আমাদেরকে শক্তিশালী গনসংগ্রামের সূচনা করতেই হবে।

বিশেষ করে, “ রাজনীতি হলো একটি কম্যান্ড” ইহা একটি শ্লোগান হিসাবে লিন পিয়াংয়ের আমলে “চারের মধ্যে প্রথম” হিসাবে জনতার সামনে আসে। ইহা ছিলো মূলত মাওসেতুংয়ের একটি মহান শিক্ষা। এই নীতি টি পেং ডিহুই এর পতনের পর ও মহা উল্মফনের পর বিকশিত হয়। মনে রাখতে হবে লিন পিয়াং ছিলেন মাওশেতুংয়ের একজন বিশ্বস্থ বিপ্লবী সহচর। লোসান সম্মেলনে যখন মাওসেতুং মহা উল্ম

ফনের কারনে সমালচনার সম্মোখিন হন তখন লিন পিয়াং এই তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন। লিন পিয়াং বলছিলেন মহান উল্লম্ফনের সময় তা মাওসেতুংয়ের আদর্শের উপর দৃঢ় ভাবে প্রতিস্টিত ছিলো না । তিনি চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় প্রধান মূখপাত্র ছিলেন। তিনি মাওসেতুংয়ের আদর্শের একজন খাঁটি সৈনিক ছিলেনঃ মাওয়ের খাঁটি ভাব শিষ্য হিসাবে তার খ্যাতি ছিলো। তাই মাওতাকে তার যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন।

যদি কোন বক্তব্য অস্পস্ট থাকে তবে তা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। ভেবে দেখুন । রাজনীতি একটি কম্যান্ডে থাকে এর অর্থ হলো যে, এক জনব্যাক্তি নিজে কঠোর পরিশ্রম করেন আরো বেশী ভূগ্য পন্য ক্র্য করার জন্য। এই সকল ক্ষেত্রে রাজনীতি এমন এক ধারা প্রবাহিত হয় যা বিপ্লবের বিপরীতে চলে যায়। তখন দেখা যায় রাজনীতি সর্বদা কমান্ডে থাকে না। রাজনীতিতে আসে বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তি তখন অনেকে বলেন যে, “মাওসেতুংয়ের চিন্তা ধারাই হলো একটি কম্যান্ড”!

এখন, সাম্যবাদিরা বলছেন “বিজ্ঞান হলো একটি কম্যান্ড”! বা “ লিডিং লাইট কমিউনিজম হলো একটি কম্যান্ড” এর অর্থ হলো আমরা আমাদের ব্যাক্তিবাদ, ইগোবাদ, নিচূতা, মতান্দ্বতা পরিহার করে চলব। আমরা কোন প্রকার নাটকীয়তার আশ্রয় নিব না । ভণ্ড বন্ডামী করবে। মিথ্যুক মিত্যাচার করবে। সত্যিকার অর্থে উদের স্থান সমাজে নেই। আমরা জানি আমরা কারা। আমরা পরিস্কার হ্রদয় নিয়ে এসেছি। আমরা চলমান অবস্থার অবসান ঘটাতে চাই। বিপ্লবী বিজ্ঞানকে লিডিং লাইটের আওতায় নিয়ে অগ্রসর করতে চাই। এর মানে এই নয় যে আমি একাই এই সকল কথা বলছি। এটা এখন সকলেরই কথা। আসলে জনগণের আকাঙ্ক্ষাই আসল কথা। লিডিং লাইটের সত্যের চাইতে আর কোন বড় অস্ত্র নেই। ভেবে দেখুন সেই বিপ্লবী দিন গুলোর কথা, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা। তখন বলা হয়েছিলো যে, সকল জায়গায় উচ্চতর বিপ্লবী বিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কাছে। এই সময়ে লিডিং লাইট ঠিক সেই কাজটিই করে যাচ্ছে। ইহা কোন প্রকার সমালচনার তোয়াক্কা করছে না । আমরা সকলে মিলে পথ খুজছি কি করে সংগ্রামের পথ কে আরো প্রসস্থ করা যায় ?

৩. আপনি মতান্দ্বতার সমালোচনা করেন। তা কি একটু ব্যাখ্যা করবেন? একটি তত্ত্ব আরো একটি তত্ত্ব থেকে কিভাবে উত্তম হতে পারে? উদাহরন দিয়ে কি বুঝিয়ে বলবেন যে লিডিং লাইট দ্বান্দ্বিকতা থেকে কিভাবে উত্তম?

একটি অধিবিদ্যক ভূল ধারনা প্রচলিত আছে যে, প্রকৃত সত্য আমাদের সাধ্যের “বাহিরে” অবস্থান করে। এই ধারনা অনুসারে, বিজ্ঞানের কাজ হলো যে টুকু জানা যায় তা লিপিবদ্ব করা । এই দৃস্টি ভঙ্গিতে আদর্শ বিজ্ঞান হলো “প্রকৃতির বইয়ের” উপস্থাপনা । ইহা এও বলে যে সত্যিকার তত্ত্ব হলো প্রকৃতির কাছাকাছি সত্যকে হাজির করা। তবে বিজ্ঞানের কিছু উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব চালু আছে । এর মধ্যে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অন্যতম। ইহাকে বিপ্লবী তত্ত্ব ও বলা হয়মতান্দ্বতা অনুসারে দ্বন্দ্ববাদকে একটি সুপার বিজ্ঞান ও দাবী করা হয়। “ প্রকৃতির পুস্তক”টি কি সেই প্রশ্ন নিয়ে ও এই মতবাদ কাজ করে।

বিজ্ঞান নিয়ে কিছু স্থুল ধারনা ও চালু আছে। প্রথমতঃ “ প্রকৃতির পুস্তক” কথা একটি অতি অস্পষ্ট ও দূর্বল বক্তব্য। এই ধরনের কথা বার্তার পেছনে কোন সত্যিকার ভিত্তি নেই। পদার্থ বিদ্যা, জীব বিজ্ঞান, পানি বিজ্ঞান, রাষায়নিক বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় হেগেল না পড়ে ও বুঝা যায়। আপনি যদি অসুস্থ্য হয়ে ডাক্তারের নিকট যান তবে কি প্রথমে জিজ্ঞাসা করবেন যে, ডাক্তার সাহেব হেগেল পড়েছেন কি না । বা তার উপদেশ নিবেন কি না । যদি আপনার কোন টিউমার হয় তা হলে কি আপনি কোন হেগেল পড়া লোককে খুজবেন না কি একজন সার্জনকে ডাকবেন ? যারা বিজ্ঞান নিয়েকাজ করেন তাদের অনেকেই হেগেলকে চেনেনই না । তাই যারা মনে করেন যে দ্বন্দ্ববাদ ছাড়া বিজ্ঞান হয় না তাদের কথা এখানেই অসার প্রমানিত হয়।

দ্বিতীয়তঃ বিজ্ঞান, তত্ত্ব, ভাষা ও সত্য সম্পর্কে বহু রকমের ভূল ধারনা বিদ্যমান আছে। দ্বন্দ্ববাদ প্রকৃতির উপস্থিতি সম্পর্কে কোন সাধারন বক্তব্য হাজির করে না । আমি সেই কথিত “ প্রাকৃতির পুস্তক” সম্পর্কে বলছি। তত্ত্ব ও বিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই না ও মিলতে পারে । ত্বত্ত্ব হলো একটি টুল মাত্র। অনেক সময়ে তত্ত্ব তেমন কোন অর্থ ও দাড় করাতে পারে না । ইহা “ প্রকৃতির পুস্তক” বিষয়টিকে অনেক সময় একটি প্রবচন হিসাবে বিবেচনা করে থাকে । তত্ত্ব বিশ্বকে নানা

ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে, যেমন এই কথা ও বলতে পারে যে এই বিশ্বের পিছনে আরো একটি বিশ্ব আছে। তবে মার্ক্স এই কথায় একমত না হয়ে ভিন্ন পথে এগিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, জ্ঞানীরা কেবল দুনিয়াকে নানা ভাবে বাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পরিবর্তনের কথা বলেন নাই। আমরা এমন কন সুপার বিজ্ঞানের কথা নিয়ে মাথা ঘমাতে আগ্রহী নই। আমরা বরং এই সমাজের বাস্তব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। আমরা যখন বলি একটি তত্ত্ব ভালো এর অর্থ হলো ইহা আমাদের ব্যবহার উপযোগী। বিজ্ঞান হলো এমন একটি বিষয় যা কোন সময় বর্ননা করা যায় আবার কোন কোন সময় তা বর্ননা যোগ্য নয়। ইহাওনেক ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ বানী যোগ্য আবার ব্যাখ্যা যোগ্য ও বটে। ইহা কোন কোন সময় কবিতা, গল্প, বা সমালোচনার আকারে সাহিত্যে প্রকাশিত হতে পারে।

সাহিত্য ও বিজ্ঞান হতে পারে, এমন কি বিপ্লবী বিজ্ঞান হিসাবে ও পরিগনিত হতে পারে । আমরা এই ক্ষেত্রে উল্লেখ করতে পারি উচ্চতর বিজ্ঞান চর্চক এরিস্ট্যাটল, নর্ত্রফ্রে, জর্জ লোকাস, ওল্টার ব্যাঞ্জামিন, থিউডুর এন্দ্রো, পাউএল, জুলিয়া খ্রিস্তিভা প্রমূখ। আমরা কেবল সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়কার সাধারন মাওবাদি আলোচনায় সীমাবদ্ব থাকতে চাই নাআমরা বরং অন্যান্য বিজ্ঞানের বিষয়কে ও আলোচনায় আনতে আগ্রহী। যদি ও বিপ্লবী আলোচনার জন্য মাওবাদ খুবই উপযোগী তবু এর অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্বতা আছে।

সাধারন ভাবে বলতে গেলে বলতেই হয় যে কবিতা ও শিল্পের মত মত প্রকাশের জন্য বিজ্ঞান তেমন কার্যকরী নয়। তাই বলছি দ্বন্দ্ববাদ কোন বিজ্ঞান নয় যেমন কবিতা নয় কোন বিজ্ঞান। দ্বন্দ্ববাদ কোন ভবিষ্যৎ বানী করে না বরং ইহা কিছু তথ্যাদি প্রকাশ করে । ইহা রিচার্ডের কবিতার মতই। তিনি ছিলেন অধুনিকতাবাদ ও স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের একজন অগ্রনী নায়ক। তিনি ধারনা দেন যে অধিকারের ক্ষেত্রে নৈতিকতার ও রাজনীতির কোন প্রকার বাঁধা থাকতে পারে না । তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে হেগেলের সাথে সহ মত পোষন করে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। তিনি অধিবিদ্যক ও যুক্তির ধারনাকে ও নাকচ করেছেন।

সকল বিজ্ঞান ই এক একটি টুল, বিপ্লবী বিজ্ঞান, আলকিত সাম্যবাদের বিজ্ঞান। তাই আমরা বলি আলোকিত সাম্যবাদের বিজ্ঞান হলো নিপিড়িত মানুষের জন্য একটি চমৎকার অস্ত্র। ইহা নানা ভাবে বিকশিত হচ্ছে। অন্যান্যদের তুলনায় সাম্যবাদের ধারনাকে চমৎকার ভাবে ব্যাখ্যা করে চলছে। ইহা বিজ্ঞান সম্মত ভাবে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে সকলের সামনে তুলে ধরছে। আমরা বলতে পারি আলোকিত সাম্যবাদের নিকটই সত্য আছে। সেই “সত্য” বুঝে নিতে অনেকেরই সময় লাগবে। কান্ট যেমন বলেছিলেন জ্ঞান অর্জনের জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা চাই । চিন্তা করে দেখুন, প্রথমিক অবস্থায় হেগেল, মার্ক্স, নিতসে প্রমূখ ইতিহাসকে কিভাবে বুঝে ছিলেন এবং পরবর্তীতে তাদের অভিজ্ঞতা তাদেরকে কি পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছিলো। আর ফ্রেডের অবচেতন মনের বিজ্ঞান কি ভাবে বিকশিত হয়েছিলো। সেই ক্ষেত্রে ভাষায় ও ভিন্নতা দেখা দেয়। নোয়াম চমস্কির “ কার্টিষিয়ান ভাষা” সহ নানা বিজ্ঞানের নানা ভাষা ও মানব সমাজে নানা খালা খেলেছে। আমরা আরো দেখি যে জে এল অস্টিন তার ভাষায় ও রয়েছে ভিন্নতা, তিনি সামাজিক পরিমন্ডলে সূখী অসূখী হবার বিষয়ে কিছু কথা বলেছেন। ইহা তেমন কোন সত্যকে হাজির করে না বরং একটি পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে থাকে। কোন ঘটনা প্রবাহ সত্যের আভাস দেয় কিন্তু কোন সত্যকে “নিজেই” ধারন করে না । বিপ্লবী আলোকিত সাম্যবাদি ধারনা কোন বিষয়ের ভবিষ্যৎ হাজির করে বলে যে তা কি ভাবে এগোতে পারে । সমাজের শোষণ নিপিড়ন দূর করে মানুষের হীন মন্যতাকে বিদূরীত অরে একটি সুন্দর দুনিয়া গড়ে তুলার কথা বলে । ইহা দেশ বিদেশে সকল দরিদ্র মানুষের উপকারে ভূমিকা রাখে। কৃষকদের, শ্রমিকদের ও জ্ঞানীদের সুষ্টু ব্যবহার নিশ্চিত করে আমাদের আগামীকে ও আমাদের সন্তানদেরকে সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে চায় ।

৪. আপনি আনেক আন্তঃ বিষয়ের সত্যি নিয়ে কথা বলেছে্ন। এটা কি হতে পারে যে একটি সত্য অন্যটির সাথে সাংঘর্সীক উঠেছে?

হ্যা, অবশ্যই। ইহা একটি শৈল্পিক বিষয় ও বটে। প্রচলিত দুনিয়ায় যে সকল সমস্যার উদ্ভব হয়েছে

তা দূরী করনের জন্য ইহা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবর্তন শীল দুনিয়ায় লুডভিগ ভন ভেটুপেন হলে একটি উদাহরন। তার সময়ে উলফেং এডামাস মুযার্ট, রিচার্ড উইঙ্গার এমন কি শেক্স পিয়ার একেই ভূমিকা রেখেছেন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে। তারা আমাদের জ্ঞানত অগ্রসর স্তরে ছিলেন।

সপোক্লিস এর এন্টিগো হলো একটি চমৎকার উদাহরন। ইহা ছিলো দুই ধরনের বিশ্ব দৃষ্টি ভংগী, দুই ধরনের নৈতিকতা ও দুই প্রকারের সমাজ চিন্তার মধ্যে একটি দ্বন্দ্ববাদ। এক দিকে এন্টিগো তার ভাইয়ের কবর দিলেন রাজ আদেশকে অমান্য করে আবার নৈতিক ভাবে তা ছিলো তার অবশ্য কর্তব্য। তার ভাই রাজার বিরুদ্বে বিদ্রোহের কারনে রাজ আদেশ অনুসারে কবর দেবার উপযুক্ততা হারিয়ে ফেছিলো। কিন্তু এন্টিগো সেখানে তার আপন চাচা রাজের আদেশের চেয়ে নৈতিকতাকে বেশী গুরুত্ব প্রাদান করেন। আপনাকে ও বেঁচে নিতে হবে আপনারপরিবারে নৈতিকতা বা সমাজের নগরের রিতিনীতি। সপোক্লিস চমৎকার ভাবে এন্টগোর চরিত্র চিত্রায়ন করেন একটি মনোরম ঘটনার বর্ননা দিয়ে। এন্টিগো তার ভাইকে কবর দিতে গিয়ে নিজেই মৃত্যুর মুখোমুখি হন। নগর রাজ্যকে রক্ষা করতে গিয়ে রাজাও তার রক্তের সম্পর্কীয় বিদ্রোহীকে হত্যা করতে চাইলেন। একেই সময়ে এখানে ফুটে উঠলো কেমন করে পরিবার ও ব্যাক্তি গত স্বার্থ বৃহত্তর স্বার্থের কাছে হার মেনে গেলো। এন্টিগোর সামনে এসে দাড়ালো এক দিকে তার পরিবার অন্য দিকে সমাজ। রাজার সামনে এসে দাড়ায় এক দিকে রাজ্য অন্য দিকে পরিবার। এই ঘটনার বর্ননায় এটা স্পস্ট হয় যে একটি পরিবারের বিষয় কিভাবে সামাজিক, নাগরীক ও রাষ্ট্রীয় হয়ে উঠেছে।

যদি ও প্লাটো সামাজিক চুক্তির বিষয়টি কে পুরাতন ধ্যান ধারনা হিসাবে বাদ দিতে চেয়েছিলেন, তিনি অবশ্য অনেক জায়গায় সক্রেটিসকে ও বাতিল করেছেন। তবে এই ধারনা পুঁজিবাদের সূচনা লগ্নে বিশেষ করে বুর্জোয়াদের বিকাশের ক্ষেত্রে তা সবিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। চুক্তি হলো বুর্জোয়াদের জীবনের একটি অতি মূল্যবান দিক । চুক্তির বিষয়টি খোলাসা করার জন্য ইতিহাসের পরমপরা, বিশ্ব ব্যবস্থা, ও সামাজিক ভার্সাম্যের বিষয়টি বুরজোয়ারা সর্বদাই সামাজের সামনে নিয়ে আসে। তারা বাম পন্থা ও সামন্তবাদের বিরুদ্বে কাজ করতে গিয়ে সকল প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্বে যুক্তি তুলে ধরে। তবে এখন বুর্জোয়ারা আর এসবের পরোয়া করেন না । সময়ের সাথে সাথে সকল কিছুরই বদল হয়। লেনিন সকলের দৃষ্টি আকর্শন করে বলেছিলেন যে, বুর্জোয়ারা এখন আর কোন প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেন না । পুঁজিবাদ এখন পশ্চাৎ মূখী। ইহা ক্ষয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদীরা এখন আর তাদের পক্ষে কোন প্রকার যুক্তি তুলে ধরতে পারেন না । পুজিবাদকে উরা এখন মানুষের স্বাভাবিক প্রবনাতা হিসাবে দেখে থাকে। পুজিবাদকে এখন আর আগের বুর্জোয়াদের সাথে সেই ভাবে তুলনা করা যায় না । এটা এখন অনেকটা বেটুফেন বা বিকনের মতই। ইহা রুশু বা চিত্তুর মতই।

একটি ভূল ধারনা চালু আছে যে, আগের দিনের উচ্চতর শিল্প এখনো বুর্জোয়া সমাজে চালু আছে। দ্রপদি সঙ্গীত অবশ্যই পুঁজিবাদীদের সঙ্গীত নয়। বা সামন্ত প্রভুদের ও নয়। বরং সাধারন চটুল পপ সঙ্গীত হলো বুর্জোয়াদের সঙ্গীত। দ্রুপদি সঙ্গীত আধুনিক মানুষের ও সঙ্গীত। ইহা হয়ত অনেকেরই বুঝতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ইহা বুঝতে হলে কিছু প্রাসংগীক বিষয়ে পড়া লিখা ও করতে হবে । ভেবে দেখতে হবে যে বুর্জোয়ারা পুরাতন জিনিষের প্রতি আকৃষ্ট হলো কি ভাবে। উরা নিজেদের ব্যবসায়ের জন্যই চমক তৈরী করতে চায় আর এই সুবাধে বিজ্ঞাপনের বহর ও হাজির করতে উৎসাহিত হয়। তারা শোনাতে ও দেখাতে চায় । পপ কে তারা একটি বিজ্ঞাপনের মতিই ব্যবহার করছেন। উরা মানুষকে ভাবাতে চায় না । নগদ নগদ ক্রয় বিক্রয়ে উরা বেশী আগ্রহী। মানুষের মাঝে প্রতিরোধের চর্চাকে বিনাশ করতে আগ্রহী থাকে।

চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কালে মাওবাদিরা প্রচলিত সাংস্কৃতির সমালোচনা করেছিলেন। তারা শ্রেনী সংগ্রাম ও বিপ্লবী চেতনার বিকাশের পক্ষে কথা বলেছিলেন। চীনের নিজস্ব সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ব একটি বিষয়। তাদের আগের দিনের গল্প গুলোতে নানা চরিত্রে প্রকাশ আছে যা সত্যি প্রশংসনীয় । যা সর্বহারার পক্ষের বিষয় বস্তু ধারন করে। সেখানে ভালোকে ভালো । আর মন্দ কে মন্দ হিসাবে দেখানো হয়েছে। মাওবাদিরা প্রকাশ্যেই “মধ্যযুগীয়” চরিত্রের বর্ননা করেছেন। জেন কুইন তার যাত্রা পালায়

তাদের অনেক চরিত্রকেই উপস্থাপন করেছেন। তিনি অনেক ক্ষেত্রেই সত্যিকার নায়কের উপর আলোক পাত না করে ভিলেনদের উপর আলো ফেলেছেন। মাওবাদিরা প্রতিক্রিয়াশীলতার সমালোচনা করেছেন। মাওবাদিরা চীনের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক চরিত্র গুলোকে তুলে এনে সমাজিক পরিবর্তনে ও মানুষের মন এবং মানসিকতার গঠনে কাজে লাগিয়েছেন।

চিন্তার ক্ষেত্রে ভ্রান্তি অনেক সময়ে শিল্পের জগতে নাড়া দিতে পারে। অনুষ্ঠানিকতা ও প্রতিক্রীয়াশীলতাকে শীতিল করে দিতে পারে। শিল্প তো শিল্পের জন্যই। তবে তা আমাদেরকে ভাবতে হবে সর্বহারার উপযোগী করে। আমাদেরকে বিজ্ঞান ভিত্তিক ভাবে তার উদ্ভাবনে চিন্তা করতে হবে । সঙ্গীত সাহিত্য নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরিক্ষা হয়ে থাকে । পুঁজিবাদ একে নিয়ে বানিজ্য করতে আগ্রহী। তারা সর্বহারার সংস্কৃতিকে অনেক সময় রাজনৈতিক বক্তব্য হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। আমরা যারা সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশাস করি আমরা কি চাই সকল রংয়ের বিকাশ, সকল সংস্কৃতির বিকাশ ? কেবল সমাজতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক আবহই আমাদেরকে একটি প্রগতিশীল সংস্কৃতিক পরিমন্ডল উপহার দিতে পারে। এই সংস্কৃতি ই হলো আলোকিত সাম্যবাদের পথ। আমরা এমন এক প্রকারের সন্সকৃতি চাই যা মানুষকে চিন্তা করতে শেখায়, তা কে ডুবিয়ে রাখে না । আমরা মানুষের মগজকে শুন্য মনে করি না । আমরা মানুষকে শৃজনশীল চিন্তার সাথে পরিচিত করাতে চাই। আমরা এমন এক প্রকার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে চাই যা মানুষকে নতুন নতুন ভাবনার চ্যালেঞ্জ গ্রহনে এগিয়ে নিবে। কিন্তু পজিবাদ মানুষকে ভোগবাদের দিকে ঠেলে দেয়।

সাংস্কৃতিক সঙ্ঘাতের কথাযদি বলেন তবে আমি বলতে চাই যে , সেই সংঘাত সর্বদাই চলছে। এই সময়ে একটি বিপ্লবী বিজ্ঞানের ধারনা সকলের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইহাকে আমরা বলছি “আলকিত সাম্যবাদ”। ইহাকে আমরা বলতে চাইছি একটি পুর্নাংগ বিপ্লবী পথ। ইহা সব জাগায় সর্বত্র শক্তি শালী হয়ে উঠছে। ইহা আগাম কোন ভবিশ্যত বানী দিতে চায় না । তবে এই টুকু বলা যায় যে, আর আগে এমন কোন পথ কেহ হাজির করতে পারেন নাই। হতে পারে এই পথ টি অনেক ক্ষেত্রেই বৈরী পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে চলছে। তবে এর পথ দিনে দিনে আলোকিত হচ্ছে। তা পুঁজিবাদের পথকে নয় সাম্যবাদের পথকে প্রসস্থ করছে। এই গোড়ামীবাদের কোন প্রকার স্থান নেই ।

৫. আপনি সমাজতান্ত্রের কথা বলছেন যা বিজ্ঞান ও শ্লিপের বিকাশ ঘটিয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আলোকিত সাম্যবাদের অবধান কি কি ?

এটা নতুন কোন প্রশ্ন নয়, ইহা একটি পুরাতন জিজ্ঞাসা। উন্নত নাগরিকতা নিয়ে অনেক দার্শনিক ব্যাক্তি ও এই রকমের প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। প্লাটো, আরিস্টোটল, সেন্ট অগাস্টা, জন লক, জেন –জেকেই, রশো, কান্ট, হেগেল এমন কি কার্ল মার্ক্স ও এই প্রশ্নের জবাব খোজেছেন। নাগরিকতা আর মানুষ এখন একাকার হয়ে গেছে। সম্ভবত প্লাটোর রিপাবলিক হলো একটি উন্নততর উদাহরন। কিন্তু মার্ক্স আরো জানতে চেয়েছে এক জন শ্রমিক কি ভাবে তার শ্রমের মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। হারায় তার ন্যায় সঙ্গত অধিকার। আর সেই কারনে তার অবসানের জন্য মার্ক্স গ্রহন করেন বিপ্লবের প্রকল্প। এই জন্য বাস্তব জ্ঞান ও অনুশীলন অতি দরকারি বিষয়।

সক্রেটিস প্রকৃতির আত্মার সন্দ্বান করেছিলেন। তিনি দুইটি কাল্পনিক ঘোড়ার আবস্কার করেন। আর এ গুলো হলো কালো ঘোড়া। তারা বস্তুবাদি সম্পদের জন্য প্রতি নিয়ত দৌড়াচ্ছে। ওখানে একটি সাদা ঘোড়া ও আছে। তা প্রতিনিধিত্ব করে “তাইমুসে” এর তিনি একে আবার “ আত্মাহিসাবে” ও বর্ননা করেছেন। সাদা ঘোড়ার মানেই হলো বিজয় বা স্বিকৃতি। ইহা বুদ্বিমত্ত্বার ও পরিচায়ক। প্লাটো এর পরিবর্তন করে তাকে মানুষের আত্মার আবিস্কার করেন। মানবাত্মা নিয়ে নানা তর্ক হলে ও ইহা যে নানা জনের নানাকম তা তিনি স্বীকার করেন। তাই প্লাটো তার রিপাবলিকে মানুষকে নানা শ্রেনীতে ভাগ করে দেখিয়েছেনঃ দস্তা, রূপা ও স্বর্নাত্মার কথা বলেছেন। আমরা প্লাটোর সেই ধারনা গ্রহন না করলে ও মানুষ যে শ্রেনী বিভক্ত তা পরিস্কার। মার্ক্সবাদি রাজনৈতিকরা এটা ভালো করেই বুঝেছেন পুঁজিবাদীরা সমাজকে নানা ভাবে বিভাজন করে নানা পথ, মত ও আত্মার জন্ম দিয়েছে। তাই মাওবাদিরা বলে যে সমাজে বিপ্লবী

রাজনীতি নেই সেই সমাজ মৃত।

আজকের দুনিয়ায় পুঁজিবাদ কিন্তু একনাকতন্ত্র দিয়ে চলে না তারা নানা উদারতাবাদের জন্ম দিয়েছে। তারা ভোগবাদের বিকাশ ঘটিয়েছে। তারা এখন আর ফ্যাসিবাদে ও মত্ত নয়। তারা এখন আর নায়কচিত ভূমিকার জন্য লালায়িত নয়। তা এখন তাদের অবসরের বিনোদনের বিষয় মাত্র। তারা এর জন্য ব্যবহার করেন সকল জাতির সংস্কৃতি, পরিচয় ও কল্পনা ভিত্তিক গল্প ও কাহিনী। হার্ভারট মার্কুস মার্টিন হাইডেগার থেকে ধার করে বলেছেন যে এখন মানুষ সামাজিক জীবের চেয়ে সামাজিক যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। তাদের দৃষ্টি ভংগী এখন এক পেশে । পুঁজিবাদ যদি ও এখন সমাজের একটি অংশ হয়ে পড়েছে কিন্তু সেখানে এখন ডিস্কু, পপ গান, ফ্যাশন, ও পুতুলের সমাহার উপস্থিত। তারা এখন নানা প্রকার কল্প কাহিনিতে মত্ত্ব হয়ে আছেন। বর্ব দৃশ্য চিত্রায়ন করে নিজেরাই তা উপভোগ করেন। তবে যারাবলেন ওখানে এখোনও বিপ্লবী পরিবেশ বিদ্যমান তারা ভূলের মধ্যেই নিপতিত হয়ে আছেন। তারা স্বপ্ন দেখেন বলশেভিক ও মাওবাদিদেরই মত। আসলে এই গুলো একেবারেই অর্থহীন ও অবাস্তব কল্পনা । পুঁজিবাদীরা এমন এক প্রক্রিয়ায় দিনাতিপাত করছেন যেখানে পুঁজিবাদী সংস্কৃতি তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। ম্যানুফেস্টুতে বলা হয়েছিলো যে , পুঁজিবাদ অন্যান্য সকল সংস্কৃতি , ধর্ম, পরিবার ও ঐতিহ্যকে অবজ্ঞা করবে কিন্তু পুঁজিবাদ এখনেই গুলোকে বলছে পবিত্র জিনিস।

আমরা দেখতে পাচ্ছি যা নেতিবাচক ভাবে বিবেচিত হবার কথাছিলো তা কিন্তু হচ্ছে না । তা এখন সামাজিক জীবন যাপনের জন্য নানা অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এখন নারী ও পুরুষেরা প্রথম বিশ্বে কাজে কর্মে নায়কের ভূমিকায় অবতির্ন হয়েছেন। এই খানে উল্লেখ্য যে, মাওবাদি ধারনার বিশ্লেষণ করলে যা পরিস্কার হয় তা হলো, লিন পিয়াং বলেছিলেন “ গন বাহিনীর নিকট থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে”, যুদ্বাদের রীতিনীতি আমাদেরকে বাস্তব জিবনে প্রয়োগ করে চলতে হবে। দায়িত্ব বোধ, ত্যাগ, সম্মান, আনুগত্য ও বিপ্লবী ইমেজ ধারন করতে হবে। সাধারন নারী ও পুরুষ নায়ক হয়ে উঠেছে। আমাদের আগের সমাজতান্ত্রিক চর্চায় এর ব্যাপক কমতি ছিলো। উদাহরন হিসাবে সোউভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলতে পারি। তারা প্রকৃতির চয়নকে গ্রহন না করে বোকার মত পথ গ্রহন করেছিলেন। আর মাওবাদ তো “ম্যালতাসিয়ান” মতবাদ গ্রহন করেছে নির্লজ্জের মত। উরা বিজ্ঞানের নামে গ্রহন করেছিলেন মতান্দ্বতাবাদকে। আলকিত সাম্যবাদ এই ক্ষেত্রে একটি পথ নির্দেশিকা । মানবতা তখনই বিকশিত হবে যখন বিজ্ঞান হবে একটি সত্যিকার কম্যান্ড। যেখানে মানুষ পুর্ন স্বাধিনতা পাবে দার্শনিক, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিক, কৃষক, শ্রমিক ও শিল্পী হয়ে উঠার জন্য। আলোকিত সাম্যবাদ তাই মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে চায়।

প্রথম বিশ্বের বিপ্লবী কর্মীরা মূলত পুঁজিবাদের সূরেই কথা বলেন। তারা নানা প্রকার উদারতাবাদের কথা বলেন। যা আদতেই কোন সাম্যবাদি চেতনাজাত নয়। তারা পুঁজিবাদের বিরুদ্বে কথা বললেও মূলত তারা পুজিবাদেরই প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তারা নেত্বত্ব নিজেদের হাতেই রাখতে চান। তাদের মাঝে নেতৃত্ব হস্তান্তরের কোন মনোভাব দেখা যায় না । সত্যিকার ভাবে প্রথম বিশ্ব কোন প্রকার বিপ্লবী ক্ষেত্র বা পরিস্থিতি নেই। আমরা এই বক্তব্য নানা জায়গায় ব্যাখ্যা করেই চলেছি। সি .এস লুইস বলেছেন,

“ আমরা মানুষ তৈরী করছি কিন্তু এদের হ্রদয় নেই… আমরা সম্মান পেলে খুশি হই। এবং কষ্ট পাই খারাপ আচরন করলে। আমরা পরাজিত করেই বেশী আনন্দ উপভোগ করি”

যদি ও প্রথম বিশ্বে বিপ্লবী ভিত্তি নেই কিন্তু ধারনা করুন প্রথম বিশ্বের এক জন বিপ্লবীর কেমন হওয়া উচিৎ। তাদেরকে আমরা দেখছি কাপুরুষের ভূমিকা পালন করছেন। যদি সেইখানে কোন প্রকারে বিপ্লব করা সম্ভব ও হয় তবে সেখানে কি ধরনের সমাজ গড়ে উঠবেঃ এমন এক ধরনের সমাজতন্ত্র যেখানে কোন প্রকার আকাংখ্যা বা মেধার অস্থিত্ব থাকবে না । যেখানে কোন প্রকার আত্মা ও থাকবেনা । সমাজতন্ত্রের সমাজেই তাই গঠবে এখন পুজিবাদে যা ঘটছে। বিপ্লবের জন্য যে সামাজিক পরিবর্তন করা দরকার তাই না করতে পারলে তা কোন দিনই সম্ভব নয় । বিপ্লবের জন্য সাধারন জনগণের জাগরন দরকার । বড় বড় লোকদেরকে স্ব স্ব স্থানে রেখে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব অসম্ভব। জনগণের নেতৃত্ব কায়েমের মাধ্যমেই সাম্যবাদ আসতে পারে। সেখানে জঙ্গ

নই হবেন আসল নেতা । প্রকৃত সমাজতন্ত্র একটি নতুন সমাজ বিনির্মান করবে। যেখানে মানুষকে মহান করে গড়ে তুলবে। সমাজে সৃজনশিলতার চর্চা করে মানুষের মেধার বিকাশ ঘটিয়ে সর্বহারার সাংস্কৃতির উতকর্ষ সাধন করবে। আমরা সকল স্থরে সেনাবাহিনীর শৃংখলা মেনে চলব। আমরা সকলেই লিডিং লাইট হয়ে উঠব।

Leave a Reply