তথাকথিত “ইসলামিক রাষ্ট্রের” বিরুদ্বে ওবামা বিশ্ব ঐক্যমত চান !

obama_war_funding_titled_medium

(llbangla.org)

গত বুধবার, আমেরিকার রাষ্ট্র প্রধান ওবামা সিমীত আকারে তথাকথিত “ইসলামিক রাষ্ট্রের” বিরুদ্বে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তাঁর দেশের কংগ্রেসের অনুমোদন চেয়েছেন। ওবামার বিবৃতি অনুসারে নতুন ভাবে সৈন্য প্রেরন করে মধ্য প্রাচ্যে আরো একটি যুদ্ব শুরু করা নয়, বরং যারা আছে তাদের নিয়েই আই এস এর বিরুদ্বে আগামী তিন বছর যুদ্ব করার কথা বলা হয়েছে। ওবামা দাবী করেন আগামী তিন বছরের মধ্যেই ইসলামী রাষ্ট্রের “পতন হবে”।

আমাদের যতেস্ট সন্দ্বেহ আছে ওবামার তিন বছর সময় নিয়ে। আমাদের জানা আছে, বিগত ১৯৯০ সাল থেকে আমেরিকা ইরাকে লড়াই করে আসছে। প্রাথমিক ভাবে আমেরিকা ইরাকে আগস্ট, ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯১ এর ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এবং এরপর ১৯৯১ সাল এক দশক আকাশ পথে লড়াই চালাচ্ছিল। এই যুদ্ব ছিলো ইরাকের অবকাঠামো বিনষ্ট করা এবং তাদেরকে দর্বল করে দেয়া। এটা ছিলো ইরাকীদের প্রতি এক ধরনের শাস্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ইরাকে ২০০৩ সালে আমেরিকা এক আগ্রাসী অভিযান চালায়, তা ২০১১ সালে সমাপ্তি হলে ও পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে যা এখনো অব্যাহত আছে। এখন এই দেশটি আরো বেশী মাত্রায় যুদ্বের পায়তারা করছে “ইসলামী রাষ্ট্রে” দমনের নাম করে। তাই ওবামার সাম্প্রতিক ঘোষনা কোন নতুন বিষয় নয়। তাঁর ঘোষনাটি হলো ইরাকে তাদের সাম্রাজ্যবাদী নীতি কার্যকরী করার জন্য একটি আইনী স্বীকৃতি আদায় করা।

ওবামা প্রসাশনের সাম্রাজ্যবাদি ভন্ডামীর একটি প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই তাঁর সাম্প্রতিক ভাষনে। সাম্রাজ্যবাদি চক্রই মূলত তাদের একটি নীল নক্সার অংশ হিসাবে ‘আরব বসন্তের’ সূচনা করেছিলো। উদেশ্য ছিলো তাঁর কর্তৃত্ব আরো বাড়ানো। সাম্রাজ্যবাদ চেয়েছিলো একটি অস্থির অবস্থা সৃজন করে সেখানে ন্যাটোর গোপন অভিযান চালিয়ে যাওয়া । ২০০৯ সালে তারা একেই কাজ করতে চেয়েছিলো লিবিয়ার গাদ্দাফীকে সরানোর মাধ্যমে কিন্তু তা পরে ব্যার্থ হয়ে যায়। ২০০৩ সালে ইরানের আহমদি নেজাদকে ও সরিয়ে দেবার কাজ তারা করতে গিয়ে অনেকটা সফল হয়েছে। তারাই সিরিয়ায় বিপুল পরিমান অস্ত্র, অর্থ দিয়ে এবং নানা দেশ থেকে যুদ্বা সংগ্রহ করে আসাদের বিরুদ্বে বিদ্রোহের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সুন্নি- শিয়াহ সহ নানা প্রকার দল উপদলের সৃষ্টি করছে। তাদের গন মাধ্যম নানা ভাবে প্রচার প্রপাগান্ডা করছেন এই বলে যে “ স্বাধীন সিরিয়ান আর্মীরাই” আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র কায়েম করবে। সেই চরম পন্থার অনুসারী বিদ্রোহীরা যে যুদ্ব কৌশল অনুসরন করছে তা হলো আল কায়দার যুদ্বনীতি। ইহা ইরাক থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। তাদের নীল নক্সা হলো সিয়াহ – সুন্নি দ্বন্দ সৃষ্টি করে ক্ষমতায় যাওয়া। সেই কারনেই এখন সিরিয়ান দ্বন্দ্বটি বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে। ইরান, ইরাক, লিবিয়া, ইসরায়েল, তুরস্ক সহ নানা দেশে। এই ভাবে সাম্রাজ্যবাদ সাধারন জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য ইসলামিক রাষ্ট্র নামে একটি দলের সৃষ্টি করেছে। যারা আসাদকে ইরান পন্থী ও শিয়া মতবাদী বলে আখ্যায়িত করে তাঁর ধ্বংসের জন্য কাজ করছে। তাই আমরা দখছি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ইসলামিক রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসার জন্য ইরাক ও সিরিয়ার দিকে হাত বাড়িয়েছে। এর পরিনাম যে কত ভয়াবহ হতে পারে নাজির ইউটিউব দেখলেই বুঝা যাবে। বন্দ্বি মাথা কাটা, শোল বিদ্ব করা, নারীদেরকে পাথর মেরে খুন করা, চাদের উপর থেকে নিচে নিক্ষেপ করা, আগুনে পুড়িয়ে মারা, শিশুদেরকে হত্যা করা, মেয়েদেরকে যুদ্বের টুপ হিসাবে ব্যবহার করা, স্কুলের মেয়েদেরকে যৌন দাসী হিসাবে বিক্রি করে দেয়া ইত্যাদি গা শিউরে উঠা বর্বরতার দৃশ্য এখন সেই সকল অঞ্চলের জন্য ঘটনা।

সম্পতি, ইসলামী আইন লঙ্গন করে, ইসলামিক রাষ্ট্র একজন জর্ডানী পাইলটকে আগুনে জিবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। যদি ও পালটরা নির্দোষ নয়, তারা ও আকাশ থেকে বোমা নিক্ষেপ করে গ্রাম ও শহরের মানুষকে পুড়িয়ে মারে । তবু, মানুষ পুড়িয়ে ইউটিঊবে ছবি বানিয়ে প্রকাশ করা ও একটি ভিন্নরকম সন্ত্রাসের লক্ষণ, যা মানুষের মন ও মগজকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ করে। ইসলামিক রাষ্ট্র সাধারন মানুষের মনে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তৎপর রয়েছে। কিন্তু এতে কি তারা ক্ষমতা দখলে সফল হবে ?

ইসলামিক ষ্টেট হলো সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্ট ফ্রাংকেস্টাইনের একটি দানব । ইহা কোন ভাবেই মানুষের মুক্তি দিবে না। ইহা কেবল মানুষকে ধ্বংসই করবে। মধ্য প্রাচ্যকে ‘বিভক্ত কর আর জয় কর’ এই নীতি বাস্তবায়নের জন্যই সাম্রাজ্যবাদ নানা পন্থা অনুসরন করছে। সাম্রাজ্যবাদ একের পর এক দানবের জন্ম দিচ্ছে। ইরাক আগ্রসনের পর থেকে আজ পর্যন্ত কয়েক দশক চলে গেল কোন কিছুর সমাধান হলো না। কেবল ধ্বংস, হত্যা আর খুনের মিছিল চলছে। এখন সিরিয়ায় চলছে সেই একেই অবস্থা । সাম্রাজ্যবাদ এখন সিরিয়ায় অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষন দিয়ে তুরুষ্কে, সিরিয়ায়, ইসরাইলে নয়া নয়া দানব সৃষ্টি করছে। তারা নানা দেশে নানা রূপে দানবের জন্ম দেয়। তারা আবার এক দানবকে দিয়ে অন্য দানবকে বিনাশ করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা হিজবুল্লাহ,আসাদ,ইরাক,ইরান চক্রকে দুর্বল করে দিবে। তারা সেই সকল দেশের মানুষকে শিয়াহ- সুন্নি ও নানা গৌত্রে ভাগ করে দুর্বল করে দিবে। আর সাম্রাজ্যবাদ আপন সূখে শাসন করতে থাকবে। দানবদের কু কর্মের কারনে একের পর এক দেশ দখল করা যৌক্তিকতা ও তারা খুজে নিবে। তারা মানবাধিকার, গণতন্ত্রের রক্ষক হিসাবে বিভিন্ন দেশে গমন করবেন। সত্যিকার অর্থে ইসলামিক ষ্টেট কোন ভাবেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দল নয়। দৃশ্যত তাদেরকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী হিসাবে দেখা গেলে ও আসলে তারা তৃতীয় বিশ্বের প্রতিরোধ ক্ষমতা বিনাশের কাজে লিপ্ত। এরা এখন দুনিয়ার হিরু সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে ভিলেনের ভূমিকায় অবতির্ন হয়েছে। ইসলামকে ব্যবহার করে নানা খেলায় মেতে আছে ।সময় হলেই তারা আবার এর রাশ টেনে ধরছে।

আমরা অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদের সকল চক্রান্তকে না বলব। আমরা অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সৃষ্ট “ইসলামিক ষ্টেট” কে না বলব। আমরা ইরাক ও সিরিয়ায় সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের বিরুধিতা করব। সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়ায় সমস্যার জন্ম দিয়েই চলেছে। তারা ইহার সমাধান চায় না । তাদের স্বার্থেই তারা সমস্যাকে জিয়িয়ে রাখতে চায়। আমরা বিরুধিতা করি জাতিগত, ধর্মগত, বর্নগত ও সম্প্রদায়গত বিভক্তির। যারাই সত্যিকার ভাবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে কাজ করবেন – আমরা তাদেরকেই সমর্থন করি। তবে যারা জাতির ভেতরে, দেশের ভেতরে নানা ভাবে বিভক্তি সৃষ্টি করে সাম্রাজ্যবাদকে ঢেকে আনতে চায় আমরা তাদের সমর্থন করিনা । “ইসলামিক ষ্টেট” সাম্প্রদায়িক বিভক্তি সৃষ্টি করছে। মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে নিয়ে এসেছে, কেবল ধ্বংস যজ্ঞ চালাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদের যেমন সমাধান নেই তেমনি বিকৃত ইসলামেও কোন সমধান নেই। সমাধান আছে কেবল আলোকিত সত্যে। জয় হোক জনতার।

Leave a Reply