উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক অস্ত্র পরিক্ষা সংক্রান্ত সমালোচনা

______korea

(llbangla.org)

সংবাদে জানা গেল যে উত্তর কোরিয়া আরো একটি পারমানবিক অস্ত্রের পরিক্ষা চালিয়েছে । উত্তর কোরিয়া কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যানুসারে তারা এবার যে বোমাটির  পরিক্ষা চালিয়েছেন তা কোন সাধারন বোমা নয়, ইহা একটি হাইড্রোজেন বোমা। এর আগে যত গুলো পরিক্ষা করা হয়েছে এদের মধ্যে এইটাই হলো সব চেয়ে  বেশী শক্তিশালী। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্বে বেশী সমালোচনা হয়েছে এই কারনে যে তারা দাবী করেছেন এবারেটা ছিলো আসলে হাইড্রোজেন বোমা। তবে অনেক আনন্তর্জাতিক বিষেশজ্ঞ বলেছেন সাম্প্রতিক সময়ে যে পরিক্ষাটি চালানো হয়েছে তা সত্যিকার হাইড্রোজেন বোমা থেকে অনেক ক্ষুদ্র । তারা ধারনা করছেন এইটা ছিলো একটি খুবই সাধারন বোমা। এখন বিশ্বে এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে যে উত্তর কোরিয়া কিছু একটা করলেই সাম্রাজ্যবাদী মোড়লরা নিন্দাবাদে সরব হয়ে উঠেন।

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্বে সকল সমালোচনার নেতা হলো আমেরিকা, যে দেশটি তার জন্ম লগ্ন থেকেই কোনা কোন যুদ্বের জড়িয়ে আছে, যাদের হাতে এখন ১,৯০০ সয়ংক্রিয় ওয়ারহেড রয়েছে। মার্কিনিরা তাদের জাতীয় জীবনের সূচনাই করেছিলো তাদের প্রতিবেশীদের সাথে যুদ্ব দিয়ে। তারা ইতিমধ্যে তাদের সেই প্রতিবেশীদেরকে এখন পর্যন্ত প্রায় নির্মূল করে ফেলেছে। এরা আস্ত একটা মহাদেশের মানুষকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে।  মার্কিনিরা তাদের যুদ্বের ঐতিহ্য হিসাবেই গণহত্যা সকল দেশেই অব্যাহত রেখেছেঃ বিশ্ব যুদ্বে, কোরিয়ার যুদ্বে, ভিয়েতনামের যুদ্বে এবং সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্বে এরা মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে খুন করেই চলেছে এরা।  মধ্যপ্রাচ্য এবং আফগানিস্তানেও তারা একেই ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে।

মানব জাতির মধ্যে কেবল মাত্র একটি জাতি পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহার করেছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের শেষ প্রান্তে এসে ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে, মার্কিনীরা জাপানের হিরুশিমা ও নাগাসাকীতে পারমানবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যার হুলি খেলতে শুরু করে। সেই বোমায় তাৎক্ষণিক ভাবে মারা যায় প্রায় ১২৯,০০০ থেকে ২৫০,০০০ মানুষ। যাদের মধ্যে প্রায় সকলেই ছিলেন সাধারন নাগরিক।

দুনিয়ায় যুদ্বকালিন সময়ে কেবল একবারই পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। মার্কিনিদের মতে, এই অস্ত্র জাপানীদেরকে আত্মসমর্পন করানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়েছিলো। অথচ আসল সত্যি ঘটনা হলো এই অস্ত্র ব্যবহারের আগেই জাপানীরা আত্মসমর্পনের ঘোষণা দিয়েছিলো। আসলে সেই সময়ে মার্কিনীদের উদ্দেশ্য ছিলো এই অস্ত্র ব্যবহারের পরিনাম কি হয় তা বাস্তবে দেখা, আর তার সাথে সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হুশিয়ার করা । অথচ সেই সময়ে যুদ্বের রীতি অনুসারে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করার কোন দরকারই ছিলো না এবং তা ছিলো বে আইনী।

কেবল জাপানীরাই সেই পারমানবিক অস্ত্রের শিকার হয়নি, আরো অনেকেই হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মার্কিনীরা বিকিনি এটুলের আদিবাসীদেরকে বিতারনের জন্য ও সেই বিস্ফুরক ব্যবহার করে । সেখানে মার্কিনীরা ২৩ টি ওয়ারহেড ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করে। ফলে বহু আদিবাসী মানুষ স্বপরিবারে রংগারিক এটুল এবং কিলি এটুল দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে যায়, সেই সকল স্থানে খাদ্যাভাব চরমরূপ ধারন করায় তাদের পক্ষে  সেখানে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যদি ও পরবর্তীতে আদিবাসীদেরকে বিকিনি এটুলে ফিরিয়ে আনার ওয়াদা করা হয়েছিলো কিন্তু পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করার কারনে সেই দ্বীপমালা আর বসবাস করার উপযোগী থাকেনি। পারমানবিক অস্ত্র হলো এপর্যন্ত আবিস্কৃত অস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গনহত্যাকারী অস্ত্র। সেই মানুষদের কে আরো অপমান করতে সাম্রাজ্যিক ব্যবসায়ীরা নারীদের জন্য সংকিপ্ত পোষাকের নামকরন করে “বিকিনি” যা যৌন উত্তেজক হিসাবে পরিগনিত হয়। সেই গণহত্যা্র কাহিনীকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এবং মানুষকে ভূলিয়ে দেবার জন্য “বিনিকি” শব্দটির প্রচলন করা হয়।

স্বাভাবিক ভাবেই, সাম্রাজ্যবাদের সকল দুষররা, দুনিয়ার বড় বড় খুনিরা এখন একেই সুরের উত্তর কোরিয়ার সমালোচনায় উঠে পড়ে লেগেছে। অথচ রাশিয়ার হাতে ১৭৮০, ব্রিটেনের হাতে ১৫০, ফ্রান্সের হাতে ২৯০, চীন  ও ইস্রায়েলের হাতে বহু সয়ংক্রিয় ওয়ারহেড  আছে যা ৪০ থেকে ৬০০ পর্যন্ত হতে পারে । তাদের ব্যাপারে কেউ টু শব্দটি ও করছে না ।

উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক অস্ত্র পরিক্ষার পর সারা দুনিয়ায় নাড়া পড়ে গেছে। কারন হলো উত্তর কোরিয়া যখন পরীক্ষা চালালো তখন দুনিয়ার বড় বড় যুদ্ববাজ অপরাধীরা তাদের প্রচন্ড সমালোচনায় মেতে উঠলো, অথচ সেই যুদ্ববাজরা তাদের হাতে বিশাল অস্ত্রের ভান্ডার মওজুদ করে রেখেছে । ফলে তাদের সমালোচনার প্রতি উত্তর কোরিয়ার কর্নপাত করার প্রশ্নই উঠেনা । প্রকৃত পক্ষে উত্তর কোরিয়া ও ইরানের মত রাষ্ট্র গুলো অপেক্ষাকৃত শান্তি পূর্ন পন্থায় তাদের পারমানবিক প্রযুক্তিকে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। তাদের লক্ষ্যই হলো নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার নিশ্চিত করা। উত্তর কোরিয়া ও ইরান যদি সফল ভাবে পারমানবিক অস্ত্রের মালিকানা অর্জন করে নিজেদের প্রতিরক্ষাকে নিশ্চিত করতে পারে, তবে তৃতীয় বিশ্বের আরো বহু দেশ সেই উদাহরন অনুসরণ করতে পারবেন। এবং তাদের জনগণের স্বাধীকার নিশ্চিত করতে পারবেন। সাম্রাজ্যবাদী চক্র সেই জিনিস বুঝতে পেরেই উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুধীতায় মত্ত্ব হয়েছে। সারা দুনিয়ার আলোকিত সাম্যবাদি ও শান্তিবাদি ভালো লোকেরা তৃতীয় বিশ্বের মানুষ এবং উত্তর করিয়া ও ইরানের জনগণের অধিকারের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছে। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্বে নিরিহ মানুষের পক্ষে দাড়িয়েছেন। আমরা অবশ্যই উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পারমানবিক প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রতি সমর্থন জানাই।

Leave a Reply