নাইজেরিয়া ও তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পড়ার লক্ষনই হলো কলেরার মহামারীর প্রাদুর্ভাব

cholera_thumb_africaarchive(llbangla.org)

২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে আফ্রিকান দেশ সমূহকে বিশেষ করে নাজেরিয়াকে সম্ভাব্য কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে সতর্ক থাকার হুসিয়ারী দিয়েছে। নাজেরিয়ায়, কলেরাকে মারাত্মক “ নাগরিক হুমকী” হিসাবে দেখা হয়ে থাকে। ২০১৫ সালের অন্য একটি রিপোর্টে বলা হয়েছেঃ

“ কেবল নভেম্ভর মাসে,  এক দিনে ৯৪৯ জন আক্রন্ত ও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার সিএফার হলো ১.৮। সেখান কার মানুষের মাঝে এই ধরনের রোগে আক্রান্তের সঙ্খ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে – বর্তমানে অন্যান্য কারনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ % হলে ও আগে এর পরিমান ছিলো ৩৩%”।

যদি ও কলেরাকে প্রতিরোধের প্রচেস্টা চলছে কিন্তু তা এখন বেড়েই চলছে। নাইজেরিয়ার ইতিহাসে এটা একটি মারাত্মক ব্যাধি। মাত্র কয়েক বছর আগে, ২০০৯ সালে, একদিনে মারা গিয়েছিলো ৮৭ জন আর আক্রান্ত হয়েছিলো ১,৩১৫জন। দেশের উত্তর প্রান্তের বাউচি ও বরনো বেশী আক্তান্ত হয়। ২০০১ সালে ১০০০ মানুষ কলেরায় মারা যায়। এবং ১৯৯৬ সালে মারা গিয়েছিলো ১৩০০জন মানুষ।

কলেরা একটি পানি বাহিত রোগ বিধায়  নাইজেরিয়াতে বৃষ্টির মৌসুমে বেশী আক্রমণ করে থাকে । খাদ্যের সংক্রমন ও এর বিস্তার ঘটায়।  সত্যিকার কারন হলো নাইজেরিয়ার পশ্চাৎ অর্থনৈতিক অবস্থাই আর জন্য দায়ী, বিশেষ করে খারাপ স্যানিটেশন ও দুষিত পুকুর ও কুপসমূহ। ২০০১ সালের মুক্তারী সাগরী, যিনি পানি উন্নয়ন মন্ত্রী, তিনি মন্তব্য করেছিলেনঃ

“  সামান্য পানির জন্য অনেক উচু মূল্যদিতে হয় সাধারন দরিদ্র মানুষকে, কলেরা পানির উৎস থেকেই ছড়িয়ে পড়ে, দূরবর্তী স্থান থেকে পানি সংগ্রহের কারনে, স্বাথ্যের ক্ষতি হয়, অনেক ক্যালোরী নষ্ট হয়, জীবন যাত্রার অবনতী ঘটে এমন কি জীবন নাশ হয়”।

তৃতীয় বিশ্বের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির সাথে জড়িয়ে আছে- নিরাপদ পানির অভাব, নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, এবং চরম দারিদ্রতার আঘাত। এখন ও প্রায় ১.১ বিলিয়ন মানুষ উন্নয়নশীল দেশ সমূহে বসবাস করে থাকেন, যাদের নিকট আজো নিরাপদ পানির ব্যবস্থা পৌছায়নি। ২.৬ বিলিয়ন মানুষের কাছে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।  তাদের মধ্যে ৩ জনের মাঝে ২ জনের বেঁচে থাকার জন্য ২ দোলার আয় ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা হয়নি। এবং ৩ জনের মাঝে ১ জন এখন দিনে ১ ডলারের ও কম আয় করে বেঁচে থাকেন। ৬৬০ মিলিয়নের ও বেশী মানুষ এখনো দৈনিক ২ ডলারের ও কম আয় করেন, ৩৮৫ মিলিয়ন মানুষ আছেন যারা দৈনিক ১ ডলারের ও কম রোজগার করে দিন কাটান। ২৪০০০ শিশু প্রতিদিন দারিদ্রতা জনিত কারনে মৃত্যু বরন করে থাকেন। প্রায় ২৭-২৮ % শিশু যারা তৃতীয় বিশ্বে বাস করেন তাদের কাঙ্ক্ষিত ওজন নিয়ে বেড়ে উঠতে পারছে না । এখন সারা দুনিয়ায় ১ বিলিয়ন মানুষ লিখতে ও পড়তে জানেন না । পাইপের পানি যারা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে গড়ে ৮৫ % এর মাঝে ২০% ই হলো ধনিক শ্রেনীর মানুষ। অন্যদিকে ২৫% গরীবের মধ্যে ২০ এর পাইপের পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা আছে। ফলে এখনো ১.৮ মিলিয়ন শিশু কেবল ডায়রিয়ার কারনে প্রতি বছর মারা যায়। প্রধানত তৃতীয় বিশ্বেই এই হতভাগা মানুষেরা বসবাস করেন। দরিদ্র দেশ সমূহের প্রায় অর্ধেক মানুষ নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ইত্যাদির কারনে নানা রোগে ভূগে থাকে। তৃতীয় বিশ্বের নারীরা বহু সময় ব্যয় করে কেবল পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহের জন্য । অথচ প্রথম বিশ্বে কত পানি যে অপচয় করা হয়ে থাকে তার ইয়ত্তা নেই। উদাহরন হিসাবে বলা যায় একজন মার্কিন দেশের মানুষ একবার গোসল করার জন্য যে পরিমান পানি ব্যবহার করে – তৃতীয় বিশ্বের আস্ত একটি পরিবার ও সারা দিনে সেই পরিমান পানি ব্যবহার করতে পারেন না । নিরাপদ পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবহার করে প্রথম বিশ্বের লোকেরা পানিবাহিত অন্যান্য রোগ সহ কলেরার বিনাশ সাধন করে দিয়েছে । তারা এখন এই জাতীয় অসুখ বিসুখ থেকে সম্পূর্ন মুক্ত।

এখন বিশ্ব ব্যবস্থা এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে পানিবাহিত রোগের কারনে মানুষের মৃত্যু হবার কোন কারন নেই। কলেরা এবং ডায়রিয়ায় মানুষের প্রচুর বুমি ও পাতলা পায়খানা হয় যা মানুষকে পানি শূন্যতার দিকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে ।  এর সঠিক চিকিৎসাই হলো শরীরের যে সকল পানি বেড়িয়ে যায় তা পুন প্রবেশ করানো। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত হলে ও সত্য যে, তৃতীয় বিশ্বে মানুষের জন্য সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। অধিকন্তু, সাম্রাজ্যবাদ কৌশলগত ভাবেই দরিদ্র মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদাকে অস্বীকার করে আসছে, যেমন নিরাপদ পানীয় জল, স্যানিটেশন যা মানুষের মাঝে  কলেরাসহ পানি বাহিত রোগের সৃষ্টি করে থাকে । সমস্যা হলো ক্ষমতা। পুঁজিবাদ পরিচালিত হয় মূল্যতত্ত্বের মাধ্যমে। এরা দেখে মুনাফা, মানুষ দেখে না । পুঁজিবাদ হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা মানবের চাহিদার উপর মুনাফার অবস্থান থাকে । সেই সমস্যা গুলো কার্ল মার্ক্স পুজিবাদে উৎপাদনের নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবিস্কার করেছিলেন। পুঁজিবাদ উৎপাদন করে কেবল বাজারের জন্য, ইহা কোন ভাবে সাধারন মানুষের চাহিদা মেটাতে কাজ করে না । পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে চালু রাখার জন্য বিশ্ব অসমতা, সহিংসতায় আজ বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়ে আছেন। তৃতীয় বিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের দুর্ভোগের ভেতর দিয়ে পুঁজিবাদ এখন ও ঠিকে আছে। তৃতীয় বিশ্বের মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেলেই পুঁজিবাদ আর কাজ করতে পাবে না । প্রথম বিশ্বের লোকেরা উন্নত জীবন যাপন করতে পারছেন কারন তৃতীয় বিশ্বের মানুষ এখন ও সেই সম্পর্কে উদাসীন হয়ে আছে বলেই । মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে পারলে পুজিবাদে উৎপাদনে যে নৈরাজ্যিক অবস্থা চলছে তা তিরোহিত হয়ে যাবে। তৃতীয় বিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ বর্তমান অবস্থার অবসান চায়। কেবল মাত্র প্রলেতারিয়ান শক্তিই উৎপাদন ব্যবস্থার একটি যৌক্তিক কাঠামো স্থাপন করতে পারে, মানব চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে জনগণের সেবাকে নিশ্চিত করতে পারে। এগিয়ে যাবার পথ তো পরিস্কারঃ দুনিয়া জুড়ে গনসংগ্রাম করে তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে সাথে নিয়ে প্রথম বিশ্ববাদি ও তাদের দালাল চক্রকে পরাজিত করা ।

তথ্য সূত্রঃ

  1. http://www.ngrguardiannews.com/2015/07/who-raises-alert-on-cholera-outbreak-in-nigeria-elsewhere/
  1. http://news.yahoo.com/s/afp/20100816/wl_africa_afp/nigeriahealthcholera
  2.  http://www.doctorswithoutborders.org/news/issue.cfm?id=2390
  3. http://water.org/learn-about-the-water-crisis/facts/
  4. http://monkeysmashesheaven.wordpress.com/2010/06/14/shrinking-glaciers-caused-by-first-world-will-harm-third-world/
  5. http://www.wsws.org/articles/2001/dec2001/nige-d11.shtml
  6. http://www.who.int/vaccine_research/diseases/diarrhoeal/en/index3.html
  7. http://reliefweb.int/report/nigeria/nigeria-humanitarian-situation-report-1-november-2015

Leave a Reply